রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বসতিতে সাড়ে ৪ হাজার একর এলাকার পাহাড় সাবাড় : উজাড় হচ্ছে বন

শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৭
1004 ভিউ
কক্সবাজারে রোহিঙ্গা বসতিতে সাড়ে ৪ হাজার একর এলাকার পাহাড় সাবাড় : উজাড় হচ্ছে বন

কক্সবাংলা রিপোর্ট(৫ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফ সড়ক। দু’পাশে যতদূর চোখ যায় দেখা গেল অসংখ্য ঝুপড়িঘর। কালো রঙের পলিথিন দিয়ে বানানো। পাহাড় কেটে, ধাপে ধাপে গড়ে ওঠেছে এসব ঝুপড়ি। সবুজ পাহাড়-বনাঞ্চল উধাও। মনে হলো সবুজ পহাড়ের পিঠে কালো আলকাতরা ঢেলে দিয়েছে কেউ। মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও নির্যাতনের হাত থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা কোনোরকমে মাথা গোঁজার জন্য গড়ে তুলেছে এই ঝুপড়ি।

বন বিভাগের হিসাব অনুযায়ী এ আবাসনের জন্য কাটা পড়েছে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার একর এলাকার পাহাড়। এভাবে পাহাড় কর্তন ও বনাঞ্চল উজাড়ে ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু ভারী বৃষ্টিপাত হলেই ধস নামতে পারে পাহাড়। হতাহত হবে বহু মানুষ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক মাকসুদ কামাল বলেন, ‘মানবিক কারণে আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি। কিন্তু পাহাড়গুলো কেটে তারা যে আবাসস্থল বানাচ্ছে তাতে আমাদের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে গেল। একসময় হয়তো রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান হবে, নতুন করে হয়তো গাছও লাগানো যাবে, কিন্তু পাহাড়গুলোর ক্ষতি আর পূরণ করা যাবে না। অন্যখান থেকে মাটি এনে তো আর পাহাড়ের কাটা জায়গা পূরণ করা যাবে না।

এই পাহাড়গুলো ১৫-২০ মিলিয়ন বছরের (দেড় থেকে দুই কোটি বছর) পুরনো। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পাহাড়গুলো কাটার ফলে এখন বৃষ্টি হলে পাহাড়ের মধ্যে পানি ঢুকে পড়বে। এতে যেকোনো সময় পাহাড়ে ধস নামতে পারে। ঘটতে পারে ভয়াবহ বিপর্যয়।

এই অধ্যাপক বলেন, ক্ষতি যা হওয়ার তা তো হয়েছেই। আর যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে নজর দিতে হবে। এখনই ব্যবস্থা না নিলে আমাদের এই ক্ষতি আর পূরণ করা সম্ভব হবে না।

কক্সবাজার জেলা বন কর্মকর্তা মোঃ আলী কবির বলেছেন, উখিয়া রেঞ্জে কুতুপালং, থাইংখালী ও আশপাশের পাহাড়ের প্রায় তিন হাজার একর জায়গায় রোহিঙ্গারা আশ্রয়কেন্দ্র করেছে। এ ছাড়া টেকনাফ রেঞ্জে ৪৫০ একর, পুটিবুনিয়া রেঞ্জের ৫০ একর এবং শিলখালী রেঞ্জের ৩৭৫ একর পাহাড়ি বন কেটে রোহিঙ্গারা বসতি গড়েছে। মোট পাহাড়ি জমির পরিমাণ সাড়ে ৪ হাজার একর।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা টেকনাফের নেচার পার্ক, বাহারছড়া, শাহপরীর দ্বীপ, মোচনী, দমদমিয়া, জাদিমুরা, মেরিন ড্রাইভ এলাকা এবং উখিয়ার জামতলীসহ বিভিন্ন স্থানে ছড়ার পাশে ঝুপড়িঘর তুলে ছোট বড়-মাঝারি আকারের বসতি স্থাপন করছে।

কক্সবাজার এলাকার পাহাড় ও বন নিয়ে গবেষণা করছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি এন্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক ড. দানেশ মিয়া।

সমপ্রতি বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, পরিবেশ এবং বনভূমির কথা চিন্তা করলে রোহিঙ্গাদের জন্য বিকল্প জ্বালানির ব্যবস্থা করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। সবাইকে রান্না করে খেতে হচ্ছে। এক লক্ষ চুলা যদি থাকে, সেই এক লক্ষ চুলার জন্য প্রতিদিন যদি ন্যূনতম পাঁচ কেজি জ্বালানি ধরি, তাহলে প্রতিদিন পাঁচ লক্ষ কেজি কাঠ পুড়ছে। এগুলো কোনো না কোনোভাবে আমাদের উখিয়া-টেকনাফের জঙ্গল থেকে যাচ্ছে। এই অবস্থা অব্যাহত থাকলে বনভূমির বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে।

স্থানীয় পরিবেশবাদীদের হিসাব অনুসারে, পাহাড়ের আশপাশের জায়গা ধরলে রোহিঙ্গাদের বসতির জায়গার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার একর। এই বিপুল পরিমাণে পাহাড় কাটায় এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশবাদী ও স্থানীয় ব্যক্তিরা। যেকোনো সময় বড় রকমের পাহাড় ধস ঘটার আশঙ্কায় তারা উদ্বিগ্ন।

উখিয়ার কুতুপালং পাহাড়ের ৭৭ একর জায়গায় ১৯৯১ সালে রোহিঙ্গাদের জন্য করা হয়েছিল সরকার-নিবন্ধিত আশ্রয়কেন্দ্র। আশ্রয়কেন্দ্রের পাশেই টেলিভিশন উপকেন্দ্র। উপকেন্দ্রের কাছে একটি অনিবন্ধিত আশ্রয়কেন্দ্র ছিল। এখন পুরো পাহাড়ই রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রায় তিন লাখ রোহিঙ্গা এখানে বাস করছেন। পাশের থাইংখালী পাহাড়ে গাছপালা কেটে সেখানে প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা ঝুপড়িঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেছে।

স্থানীয় দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, একসঙ্গে বিপুল সংখ্যক রোহিঙ্গা দেশে ঢুকে পড়ায় তাত্ক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি সামাল দেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে রোহিঙ্গারা যে যেখানে পেরেছে ঝুপড়িঘর বানিয়ে বসবাস শুরু করেছে। রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশে ঢুকে পড়ে তখন ছিল বৃষ্টির মৌসুম। ফলে স্থানীয় কর্মকর্তারাও মানবিক বিবেচনায় তাদের বাধা দিতে পারেননি। এখন অবশ্য সব রোহিঙ্গাকে কুতুপালংয়ে এক জায়গায় নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বলেছেন, সব রোহিঙ্গাকে কুতুপালংয়ে এক জায়গায় ক্যাম্পের ভেতরে নেয়ার কাজ শুরু হয়েছে। ধীরে ধীরে সবাইকে সেখানে নেয়া হবে।

তিনি বলেন, সীমান্তবর্তী কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে তিন হাজার একর এলাকা নিয়ে ক্যাম্প করে সাময়িকভাবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ক্যাম্পকে ২০টি ব্লকে ভাগ করে প্রতিটি ব্লকের জন্য একটি প্রশাসনিক ও পরিষেবা ইউনিট ও একটি গুদাম স্থাপন করা হচ্ছে, যাতে সব ধরনের সেবা দেওয়া সম্ভব হয়।

পরিবেশবাদীরা বলছেন, রোহিঙ্গা বসতির কারণে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। দ্রুত পরিবেশ বিপর্যয়কারী এই প্রক্রিয়া বন্ধ না করলে বড় রকমের প্রাকৃতিক ও সামাজিক বিপর্যয় ঘটবে।

গত বুধবার দুপুরে সরেজমিন ওই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নতুন করে যারা এসেছেন তারাও ঝুপড়িঘর বানাচ্ছে। উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের বালুখালী ঢালার মুখ, তাজনিরমারছড়া, শফিউল্লাহ কাটা, হাকিমপাড়া, টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের পুটিবনিয়া, রইক্ষ্যং এলাকায় বনাঞ্চল ধ্বংস করে রোহিঙ্গারা আবাস গড়ে তুলছেন।

প্রতিদিনই এসব এলাকায় পাহাড় ন্যাড়া করে বসতি বানানো হচ্ছে। সেখানে বনের গাছপালা উজাড় করে, পাহাড় কেটে সমতল করছে তারা। যত দূর দেখা যায় পাহাড়ের চূড়ায়, পাদদেশে শত শত পলিথিনের ছাউনিযুক্ত ঘর। কেউ ঘর তৈরি করে বিশ্রাম নিচ্ছে, কেউ নতুন ঘর গড়ার কাজ করছে।

1004 ভিউ

Posted ১০:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ অক্টোবর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com