কক্সবাংলা রিপোর্ট(৩০ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজারের টেকনাফ,মহেশখালী ও পার্শ্ববর্তী নাইক্ষ্যংছড়িতে ২৪ ঘন্টায় ৯ জনের অস্বাভাবিক মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে পুলিশের সঙ্গে কথিত পৃথক ‘বন্দুকযুদ্ধেই’ নিহত হয়েছেন ৬ জন। পুলিশের দাবি তারা মদক ব্যবসায়ী ও ডাকাত।
রোববার ভোরে জেলার মহেশখালী ও টেকনাফ উপজেলায় ২ জন,নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারিতে ৩ জন এবং শনিবার কক্সবাজারে ১ জন নিহতের ঘটনা ঘটে। এছাড়াও রবিবার টেকনাফ ও রামুতে দুইটি খুন সহ রামুতে হাতির আক্রমনের এক নিহতের ঘটনাও ঘটেছে।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো প্রতিবেদনে বিস্তারিত তুলে ধরা হল…..
টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নে রোববার ভোরে বন্দুকযুদ্ধে ইমরান প্রকাশ ওরফে পুতিয়া মিস্ত্রী নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। নিহত ইমরান উপজেলার নীলা পশ্চিম শিকদার পাড়ার আজিজুল হকের ছেলে। পুলিশের দাবি, নিহত ইমরান একজন মাদক ব্যবসায়ী।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, মিয়ানমারে থেকে ইয়াবার একটি বড় চালান এনে হ্নীলার দর্গারপাড়া এলাকায় মজুত করে রাখা হয়েছে, এমন সংবাদের ভিত্তিতে ভোরে অভিযান চালায় পুলিশ।
এ সময় পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালায় মাদক ব্যবসায়ীরা। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। এক পর্যায়ে মাদক ব্যবসায়ীরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থল থেকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ইমরান প্রকাশের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশের চার সদস্য আহত হয়েছেন।
তিনি আরও জানান,ঘটনাস্থল থেকে ৩টি বিদেশি অস্ত্র ও ৭ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। নিহতের মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে।
মহেশখালীতে ‘বন্দুকযুদ্ধ’ অস্ত্র ব্যবসায়ী নিহত
এদিকে একই দিন মহেশখালীতে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ মোহাম্মদ করিম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এ সময় পুলিশের ৫ সদস্য আহত হয়েছেন।রোববার ভোরে উপজেলার ছোট মহেশখালীর সোনারামের ঘোনা এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত মোহাম্মদ করিম ওই এলাকার ইউছুফের ছেলে। আহতরা হলেন মহেশখালী থানার এসআই দীপক, এএসআই সনজিব, কনস্টেবল আবতাফ, উদ্দীন ও ইব্রাহীম।
মহেশখালী থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, মোহাম্মদ করিম দীর্ঘদিন ধরে মাদক ব্যবসা ও সড়কে ডাকাতি করে আসছিল। শনিবার সড়কে ডাকাতি করে দুর্বৃত্তরা সোনারামের পাহাড়ে অবস্থান নিয়েছে, এমন খবরে রোববার ভোরে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়।
এ সময় ডাকাতরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়ে। পরে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। ঘন্টাব্যাপী বন্দুকযুদ্ধের পর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে গেলে ঘটনাস্থলে মোহাম্মদ করিমের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
তিনি জানান, এছাড়াও ঘটনাস্থল থেকে ৮টি বন্দুক, দুই হাজার ইয়াবা ও ২০ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ। নিহত করিমের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে।
টেকনাফের তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদারের মৃতদেহ উদ্ধার
এর আগে ২৯ সেপ্টেম্বর অপর ঘটনায় কক্সবাজারের পাহাড়ে টেকনাফের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদার শামসুল আলম মার্কিনের গুলিবিদ্ধ মৃতদেহসহ অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পোস্ট মর্টেম শেষে পরিবার লাশ গ্রহণ করে স্থানীয় গোরস্থানে দাফন করে।
জানা যায়, ২৯সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৮টারদিকে খবর পেয়ে কক্সবাজার সদর থানা পুলিশের একটি দল কলাতলীস্থ কাটা পাহাড়ে গিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় এক ব্যক্তির গুলিবিদ্ধ লাশ, একটি দেশীয় অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করেন। তবে ইয়াবার প্রকৃত সংখ্যা জানা যায়নি। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করে কক্সবাজার মর্গে প্রেরণ করে।
এদিকে গত ২দিন আগে কক্সবাজার যাওয়ার পথে নিখোঁজ হওয়া সাবরাং ইউনিয়নের নয়াপাড়ার মৃত মৌলভী আলী হোছাইনের পুত্র, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকাভূক্ত ইয়াবা গডফাদার শামসুল আলম মার্কিন (৪৮) নিখোঁজ থাকায় পরিজন খোঁজ করে ছবি দেখে তার লাশ বলে সনাক্ত করে। নিহতের ভাই আব্দুস সামাদ মর্গ হতে তার ভাইয়ের মৃতদেহ গ্রহণের সত্যতা স্বীকার করেন।
নিহত শামসুল আলম মার্কিন দীর্ঘদিন ধরে সাবরাং ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। রাত সাড়ে ৮টায় সাবরাং নয়াপাড়া খেলার মাঠে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।এরপর গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়েছে।
বাইশারীতে তিন ডাকাতের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার
অপরদিকে রবিবার কক্সবাজারের পার্শ¦বর্তী বাইশারীতে তিন ডাকাতের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। রবিবার ভোরে নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীর সাম্রা ঝিড়ি এলাকার ৩নং রাবার বাগান বাড়ি থেকে তাদের লাশ উদ্ধার করে।
এসময় ঘটনাস্থল থেকে তিনটি একনলা বন্দুক ও একটি শটগান উদ্ধার করা হয়। নিহতরা হলেন- ডাকাত গ্রুপের প্রধান আনোয়ার প্রকাশ আনাইয়্যা, মো. হামিদ ও মো. পারভেজ বাপ্পি।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, রবিবার ভোর ৫টার দিকে ৩নং রাবার বাগান বাড়িতে গোলাগুলির শব্দ শুনে বাগান এলাকার শ্রমিকরা বাড়ির ভেতরে গিয়ে তিন ডাকাতের লাশ দেখতে পায়। পরে তারা পুলিকে খবর দিলে ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে। ভাগভাটোয়ারা নিয়ে তাদের নিজেদের মধ্যে এই গোলাগুলি সংগঠিত হয়েছে বলে জানান তরা।
এ বিষয়ে বাইশারী ইউপি চেয়ারম্যান মো. আলম জানান, সম্পত্তির ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ৩নং রাবার বাগান বাড়িতে ডাকাতের মধ্যে গোলাগুলি হয়। পরে গুলির শব্দ শুনে শ্রমিকরা গিয়ে তিন ডাকাতের লাশ দেখতে পেয়ে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে তিন ডাকাতের লাশ উদ্ধার করে।
নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলমগীর শেখ বলেন, ‘ডাকাতদের নিজেদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে।
রামুতে চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাই
কক্সবাজারের রামুতে চালককে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে।
রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে রামু জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়নের রাবার বাগান এলাকায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পাশে বাগানের ভিতর মরদেহ দেখতে পায় স্থানীয় জনতা।
নিহত সিএনজি (অটোরিক্সা) চালক দুদু মিয়া (৫৮) কক্সবাজার সদর উপজেলার পিএমখালী ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা।
খবর পেয়ে রামু থানা পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অজ্ঞাত ব্যক্তি হিসেবে মরদেহ উদ্ধার করে এবং তা অনলাইন ও ফেসবুকে ছবি প্রকাশ করে। ছবি দেখে নিহতের স্বজনরা রামু থানায় ছুটে এসে মৃতদেহ শনাক্ত করেন।
রামু থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আবুল মনছুর জানিয়েছেন, নিহত দুদু মিয়া সিএনজি চালক।
শনিবার দিবাগত রাতে একটি সংঘবদ্ধ চক্র তাকে হত্যা করে সিএনজি গাড়িটি ছিনতাই করে নিয়ে যায়।
তিনি আরো জানান, কক্সবাজার শহরের বাহারছড়া এলাকা থেকে সিএনজি গাড়িটি ছিনতাই হয়েছিলো। পরে ছিনতাইকারিরা চালক দুদু মিয়াকে হত্যা করে রামু রাবার বাগানে মৃতদেহ ফেলে দেয়। এ ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জোয়ারিয়ানালা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল শামসুদ্দিন আহমেদ প্রিন্স জানান, খবর পেয়ে রবিবার সকাল দশটায় তিনি রাবার বাগানের পাশর্^বর্তী স্থানে গিয়ে মৃতদেহটি দেখতে যান। তবে ওই সময় কেউ মৃত ব্যক্তির পরিচয় পায়নি। নিহত ব্যক্তির দেহে আঘাতের চিহ্ন আছে এবং গলায় সাদা রশি পেছানো ছিলো।
নিহত দুদু মিয়ার স্বজনরা জানান, দুদু মিয়া প্রতিদিন সিএনজি (অটোরিক্সা) চালিয়ে বাড়ি ফিরতেন। শনিবার রাতে তিনি বাড়ি না ফেরায় পরিবারের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। রবিবার অনলাইন নিউজ ও ফেসবুকে ছবি দেখে তারা থানায় গিয়ে এ ঘটনা জানতে পারেন।
এদিকে চালককে নৃসংশভাবে হত্যা করে সিএনজি ছিনতাইয়ের খবরে সর্বত্র চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে আতংকিত পরিবহন চালক-শ্রমিকরা এ ঘটনায় জড়িতদের অবিলম্বে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন।
টেকনাফে ভাইয়ের হাতে ছোট ভাই খুন
রবিবার ভোরে অপর ঘটনায় কক্সবাজারের টেকনাফে পরকীয়ার জের ধরে ছোট ভাই মোহাম্মদ ইসমাইলকে (২৮) জবাই করে হত্যা করেছে তার বড় ভাই।এ ঘটনার পর থেকে অভিযুক্ত বড় ভাই ফরিদ আহাম্মদ পলাতক রয়েছে।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রঞ্জিত কুমার বড়ুয়া ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। নিহত ইসমাইল ও হত্যাকারী ফরিদ আহাম্মদ টেকনাফ সদর ২নং ওয়ার্ড জাঁহালিয়া পাড়ার মৃত নাজির হোসেনের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ফরিদ আহমদ সৌদি প্রবাসী ছিলেন। ফলে তার স্ত্রীর সঙ্গে দেবর নিহত ইসমাইলের পরকীয়ার সম্পর্ক গড়ে উঠে। ফরিদ দেশে ফিরে তাদের পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারে। এ ঘটনা জানার পর রবিবার ভোরে ফরিদ মোহাম্মদ ইসমাঈলকে জবাই করে হত্যার পর পালিয়ে যায়। হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশটি উদ্ধার করে।
ওসি জানান, হত্যাকারীকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তদন্ত করার পর হত্যাকান্ডের কারণ জাআন যাবে। উল্লেখ্য, নিহত মোহাম্মদ ইসমাইল মালয়েশিয়া ও ঘাতক ফরিদ আহমদ সৌদি প্রবাসী ছিলেন।
রামুতে বন্য হাতির হামলায় নিহত ১
রামুতে ২৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০ টায় রামুর রাজারকুল-সোনাইছড়ি সড়কের পাশে দক্ষিণ ঘোনা এলাকায় বন্য হাতির আক্রমনে এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত জহুরলাল পাল (৬০) রামু উপজেলার রাজারকুল ইউনিয়নের রামকুটপাড়া এলাকার মৃত অনিল পালের ছেলে। নিহতের ছেলে রিংকু পাল জানান, সকালে তাঁর বাবাসহ ৬/৭জন ব্যক্তি শুকনো লাকড়ী কুড়ানোর জন্য ওই এলাকায় যান।
এসময় একটি বন্য হাতি লোকালয়ে তেড়ে আসলে সবাই পালাতে শুরু করে। কিন্তু বৃদ্ধ হওয়ায় তার বাবা হাতিটির কবলে পড়েন। একপর্যায়ে হাতিটি পা দিয়ে তার বাবাকে পিষ্ট করে।
এতে তার বাবার নাড়ি-ভুড়িও বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় রামু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়ার পথে তিনি মারা যান। খবর পেয়ে রামু থানা পুলিশ এবং রাজারকুল বন বিটের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
রাজারকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান জহুরলাল পালের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, নিহত জহুরলাল পাল এলাকায় সজ্জ্বন ব্যক্তি ছিলেন। তিনি ২ ছেলে, ১ মেয়ের জনক। ইউপি চেয়ারম্যান মুফিজুর রহমান আরো জানান, সাম্প্রতিক সময়ে রাজারকুল ইউনিয়নে বন্য হাতির উপদ্রব বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত কোথাও না কোথাও হাতির পাল হামলা ও ভাংচুর চালাচ্ছে। এতে মানুষের প্রাণহানি ছাড়াও বসত ঘর এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। এ ব্যাপারে বন বিভাগের ব্যবস্থা গ্রহন জরুরী হয়ে পড়েছে।
Posted ৬:৪৯ অপরাহ্ণ | রবিবার, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta