বিশেষ প্রতিবেদক(৯ জুলাই) :: গত চারদিনে কক্সবাজারে খুব সামান্যই বৃষ্টিপাত হয়েছে। এরপরও চকরিয়ার ৩ ইউনিয়ন এখনও বন্যার পানির নিচে। এসব এলাকা ছাড়াও জেলার আরো বহু এলাকার নিম্নাঞ্চলে জমে থাকা বন্যার পানির কারণে গত চারদিনেও স্বাভাবিক হয়নি মানুষের জীবনযাত্রা।এছাড়া উপকূলীয় বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হওয়ায় কক্সবাজার সদরের পোকখালীসহ কুতুবদিয়া উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা সামুদ্রিক জোয়ারে প্লাবিত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত অবকাঠামো পুর্ননির্মাণের পর কক্সবাজারকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আরো বহু সময় লাগবে।
জানা যায়,সম্প্রতি প্রবল বর্ষণ আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে কক্সবাজার জেলার আট উপজেলায় দেড় সহস্রাধিক ঘরবাড়ি, ফসলি জমি, চিংড়ি ঘের ও মৎস্য খামার, মুরগী ফার্মসহ ৯’শ গ্রাম প্লাবিত হওয়ার পাশাপাশি ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে গ্রামীণ সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার। ব্রিজ-কালভার্ট, সড়ক বিধ্বস্ত হয়ে চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়ায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে দুর্গতদের।এবারের বন্যায় জেলায় শিশুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ইতোমধ্যে এ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৫শ কোটি ছাড়িয়ে গেছে বলে বেসরকারি হিসাবে ধারণা করা হলেও সরকারি হিসাব নিরূপণ পুরোপুরি বন্যামুক্ত হওয়ার পর শুরু হবে বলে জানান জেলা প্রশাসক। গত সপ্তাহে ঘটিত নজিরবিহীন বন্যায় কক্সবাজার জেলার অধিকাংশ এলাকা ও ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়ে ১০ লক্ষাধিক মানুষ গৃহবন্দী হয়ে পড়ে। বন্যার পানিতে ডুবে ও পাহাড় ধসে মোট ১২জন মানুষ মারা যায়। যার মধ্যে বেশিরভাগই স্কুলগামী শিশু।
এছাড়া বন্যার পানির তোড়ে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত ও তিগ্রস্ত হয়। তলিয়ে যায় ফসলি মাঠও। বিশেষ করে পানের বরজের অপূরণীয় তি হয়। রাস্তাঘাট বিধ্বস্ত হয়ে গ্রামীণ সড়ক অবকাঠামো ভেঙে পড়ে। এতে কমপক্ষে ৫শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ধারণা সংশ্লিষ্ট অনেকের।
কক্সবাজার সদর–রামু আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী বিষয়ক সম্পাদক লুৎফুর রহমান কাজলের মতে, কক্সবাজারে এবারের বন্যা নজিরবিহীন। এতে কমপক্ষে ৫শ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তিনি বলেন– বন্যার পর আমরা একটা প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতির তালিকা নিরূপণ করেছি। এতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ধরা হয়েছে প্রায় ৪৬০ কোটিটাকা।
সামাজিক সংগঠন সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকাও মনে করেন বন্যায় ক্ষতির পরিমাণ ৫শ কোটি টাকার অধিক। তবে মানুষের কর্ম ঘন্টাসহ অন্যান্য ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করতে গেলে তির পরিমাণ হবে কয়েকগুণ। তবে গত চারদিনেও বন্যার পানি পুরোপুরি সরে না যাওয়ায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণ করা যায়নি বলে জানান কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন।
তিনি জানান– কক্সবাজার জেলা পুরোপুরি বন্যামুক্ত হয়নি। চকরিয়ার ৩ ইউনিয়ন ছাড়াও অন্যান্য উপজেলার আরো কিছু নিম্নাঞ্চল এখন বন্যা কবলিত। ফলে সদ্য বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে বিলম্ব ঘটছে। কক্সবাজার পুরোপুরি বন্যামুক্ত হলে স্থানীয় সরকার, সড়ক, কৃষি ও বিদ্যুৎ বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিভাগ আলাদা আলাদা প্রতিবেদন তৈরি করে তার কাছে পাঠাবে বলে জানান জেলা প্রশাসক।
কক্সবাজার জেলা আ’লীগের সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা এবারের বন্যাকে নজিরবিহীন এবং বেশ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে উল্লেখ করে বলেন– আ’লীগ সরকার বন্যায় ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছে। দুর্গতদের জন্য সরকার পর্যাপ্ত সাহায্য পাঠিয়েছে।
Posted ১০:১২ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১০ জুলাই ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta