বিশেষ প্রতিবেদক(৯ আগস্ট) :: কক্সবাজার পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে মারধরের ঘটনায় বিতর্কিত কাউন্সিলর জাবেদ মো: কায়সার নোবেলের বিরুদ্ধে ৯ আগষ্ট বুধবার সকালে কক্সবাজার মডেল থানায় মামলা দায়ের হয়েছে।
তাকে গ্রেফতারের দাবি ও পৌরসভা কার্যালয় নিরাপদ রাখার দাবিতে কর্মবিরতি চলছে। বাংলাদেশ পৌর কর্মকর্তা – কর্মকর্তা এসোসিয়েশন কক্সবাজার শাখা কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।
৯ আগষ্ট বিকাল ৫ টায় মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।বুধবার থেকে কক্সবাজার পৌরসভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি পালন করছে কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।
বিক্ষোব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো: নুরুল আলম, সচিব রাসেল চৌধুরী, উপ-সহকারি প্রকৌশলী টিটন দাশ, মনতোষ চাকমা, হিসাব রক্ষক আবদুল মালেক, লাইসেন্স পরিদর্শকমো: নুরুল হক ও কর আদায়কারি ও জেলা পৌর কর্মকর্তা – কর্মচারি এসোশিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাবুদ রাজন।
এদিকে কর্মবিরতি পালনের কারনে পৌর নাগরিকরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছে।তবে অন্দোলনকারীরা বুধবার বিকাল ৫টায় পৌরসভায় এক সংবাদ সম্মেলনে জানান,রাত ১০টা পর্যন্ত হালনাগাদ ভোটার কার্যক্রমে তারা কাজ চালিয়ে যাবেন।
অপরদিকে মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত মঙ্গলবার বেলা ২টার দিকে হঠাৎ করে প্রশাসনিক কর্মকর্তার কক্ষে গিয়ে উত্তেজিত হয়ে প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলমকে মারধর শুরু করেন ১০নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নোবেল। এসময় পৌরসভায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।পরে পৌরসভার অন্যান্য কর্মচারিরা এগিয়ে এসে তাকে উদ্বার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে দেয়।
কাউন্সিলর জাবেদ মো: কায়সার নোবেল এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন-‘ প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে কাজের জন্য জবাবদিহিতা চাওয়া হয়েছে, মারধর করা হয়নি।
কক্সবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রনজিত বড়–য়া জানান-‘ কাউন্সিলর নোবেলকে আসামী করে মামলা দায়ের করেছেন প্রশাসনিক কর্মকর্তা খোরশেদ আলম। দায়ের করা অভিযোগের প্রেক্ষিতে ব্যবস্থা গ্রহন করা হচ্ছে।এ ঘটনায় কক্সবাজার পৌরসভার কর্মকর্তা – কর্মচারিরা কর্মবিরতি পালন করছেন।
পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারি এসোসিয়েশন কক্সবাজার জেলা শাখা সাধারণ সম্পাদক আবদুল মাবুদ রাজন জানান-‘ আহত খোরশেদ আলম কক্সবাজার জেলা শাখার সভাপতি ও কেন্দ্রিয় কমিটির যুগ্ন সম্পাদক। তার উপর ন্যাক্কারজনক হামলার প্রতিবাদে কেন্দ্রিয় কমিটির নির্দেশ মোতাবেক কক্সবাজার পৌরসভায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্ম বিরতি পালন করা হচ্ছে। এই হামলার সুষ্ঠ বিচার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিসহ নানা কর্মসূচি পালন করা হবে।
কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী মাবু বলেন-‘ বর্তমানে কাউন্সিলর নোবেল এর আতঙ্কে পৌরসভার কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ রয়েছে। তাকে দমিয়ে রাখা যাচ্ছেনা।
উল্লেখ্য জাবেদ মো: কায়সার নোবেলের হাতে একের পর এক মারধরের শিকার হচ্ছেন পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। গত এক বছরে অন্তত অর্ধডজন কর্মকর্তা-কর্মচারী এ কাউন্সিলরের হাতে প্রহৃত হন। তিন মাস আগে সচিব রাসেল চৌধুরীকে মারধর করেন নোবেল।
ওই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয়েছে। এর আগে সাবেক সচিব শামসুদ্দিনকেও একই ভাবে মারধর করেন নোবেল। তার হাতে মারধরের শিকার হয় সাবেক অর্থ কর্মকর্তা ফারুক। তাকে প্রকাশ্যে অস্ত্র দিযে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করে নোবেল।
তথ্য সেবা কেন্দ্রের অপারেটর আনিসকে মারধর করা হয় এবং কম্পিউপিটার ভাঙ্গচুর করা হয়। স্টোর কিপার কবিরসহ মারধরের শিকার হয় আরও বেশ কয়েকজন কর্মচারী। কিন্তু ভয়ে অনেকেই মুখ খোলার সাহস পান না।
এছাড়া একমাস আগে সরকারি কাজে বাধা দান ও পাহাড় কাটার অভিযোগে কক্সবাজার সদর মডেল থানায় মামলা হয় এ কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে। শুধু মারধর নয়, চাঁদাবাজিতেও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন এ কাউন্সিলর। সম্প্রতি বঙ্কিম বড়–য়া নামের এক ঠিকাদার নোবেলের দাবিকৃত ৫ লাখ টাকা চাঁদা দিতে না পারায় কাজ ফেলে পালিয়ে গেছেন। গত ২৩ জুলাই ঠিকাদার বঙ্কিম বড়–য়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে লিখিতভাবে ঘটনা অবহিত করেছেন।
বঙ্কিম বড়–য়া জানান, কক্সবাজার শহরে ৫ কিলোমিটার এলাকায় পাইপ লাইন স্থাপনের কাজ পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু কাজ করতে গিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবী করেন কাউন্সিলর নোবেল। চাঁদা দিতে না পারায় বিভিন্নভাবে হুমকি দেন। শুধু বঙ্কিম বড়–য়া নয়, বিভিন্ন জনের কাছ থেকে বেপরোয়া চাঁদাবাজি করে বেড়ান এ কাউন্সিলর। কিন্তু ভয়ে কেউ মুখ খুলে না।
Posted ৯:১৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ০৯ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta