সাইফুল ইসলাম(৩১ আগস্ট) :: কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় প্রকাশ্যে দিন-রাত পাহাড় কাটা চলছে। স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির নেতৃত্বে এসব পাহাড় কাটা চলছে বলে সরেজমিনে জানা গেছে।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঠিক নজরধারির অভাবে কোনো মতেই বন্ধ হচ্ছে না পাহাড় কাটা।
মাসকানিক ধরে গভীর রাত থেকে শুরু করে দিন-দুপুরেও জনসম্মুখে পৃথক পৃথক স্থানে শতাধিক শ্রমিক দিয়ে মিনি ট্রাক (ডাম্পার), ঠেলা গাড়িসহ নানা পরিবহনের মাধ্যমে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছে ভুমিদস্যুরা ও পাহাড় খেকোরা। পাশাপাশি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ার বাঁচা মিয়ার ঘোনায়, বিডিআর ক্যাম্পের পিছনে, লাইট হাউজ, সিটি কলেজ এলাকায়, আর্দশগ্রাম, চন্দিমা এলাকা, বড়ছরা, বাদশাঘোনা, পাহাড়তলী, কলাতলীর জেল গেইট এলাকা-সহ পর্যটন এলাকার বিভিন্ন স্থানে দেদারে চলছে পাহাড় কাটার মহোৎসব।
সম্প্রতি পৌরসভার দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা বাচাঁ মিয়ার ঘোনায় পাঁচ পয়েন্টে কয়েকজনের নেতৃত্বে প্রায় আড়াইশ ফুট উচু পাহাড় কেটে সাবাড় করে বসতবাড়ি নিমার্ণ করা করে হচ্ছে। এদিকে লাইট হাউজ পাড়া পশ্চিম লার পাড়ায় চলছে পাহাড় কাটা।
এদিকে শহরের বৈদ্যঘোনা খাজা মনজিল’র পাশ্ববর্তী এলাকায় বিশাল পাহাড় কেটে সাবাড় করে ফেলছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। এমনকি পাহাড় কেটে জায়গাও বিক্রি করছে বলে জানা যায়।
তবে অভিযোগ ওঠেছে কক্সবাজারের পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগের কিছু অসাধু ব্যক্তির কারণে পর্যটন এলাকায় পাহাড় কাটা বন্ধ করা যাচ্ছে না। এছাড়াও শহরের বিভিন্ন স্পটে চলছে পাহাড় কাটা মহোৎসব চলছে।
জানা যায়, পর্যটন নগরী কক্সবাজারে সম্প্রতি জমির মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ভুমিদস্যু ও পাহাড় খেকোদের বিচরণ ব্যাপক হারে বেড়ে যায়।
স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক ব্যক্তির নেতৃত্বে রাতারাতি পাহাড় কেটে দখল করে শত শত শ্রমিক দিয়ে সমতল বানিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে। বর্তমানে এ পাহাড় খেকো ও ভুমিদস্যুদের কবলে পড়ে সরকারী উচু পাহাড় সাবাড় করা হচ্ছে। যে পাহাড়গুলো কয়েক দিন পূর্বেও চারদিকে সবুজ আবরণ ঘেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর ছিল বর্তমানে পাহাড় কাটার কারণে সেই সৌর্ন্দয বিলীন হয়ে গেছে।
দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা এলাকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন জানান, শুধু পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার জন্য শহরে গড়ে উঠেছে বেশ কয়েকটি সিন্ডিকেট। তাদের সেল্টার দিচ্ছেন স্থানীয় প্রভাশালীরা। তারা বিভিন্ন লোকজনকে প্রলোভনে ফেলে এ সব পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করার কৌশল সৃষ্টি করেছে ।
সম্প্রতি জেলা প্রশাসন এ সব পাহাড়ি জমিতে উচ্ছেদ অভিযান চালালে বেকায়দায় পড়েন ক্রেতারা। পাহাড় কাটার চাইতে পাহাড় বিক্রি বন্ধ করা অতীব জরুরী। পাহাড় বিক্রি বন্ধ হলে কমে আসবে পাহাড় কাটা। এ সব কাজে প্রভাবশালীরা জড়িত রয়েছে। তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়াটাই এখন জরুরী।
মোহাম্মদ আলী আহমদ নামে এক ব্যক্তি বলেন, মানুষ কম দামে পাহাড় ক্রয় করে থাকে। বর্তমানে অনেক পাহাড় উজাড় হয়ে গেছে। বিগত সময়ের পাহাড় এখন সমতল ভুমি। ওই ভুমিতে যে পাহাড় ছিল তা বোঝার কোন উপায় নেই।
ওই সব এলাকাতে জমি ক্রয় করলে ও পাহাড় কাটলে স্থানীয় একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়। নয়তো জমি ক্রয় করা ও পাহাড় কেটে তা দখলে যাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ে।
জানা যায়, কক্সবাজারে একটি স্থায়ীবসতী গড়ে তুলতে উদগ্রীব হয়ে থাকে বিভিন্ন পেশার লোকজন। এটিকে পুঁজি করেই পাহাড় বিক্রিতে নেমে পড়ে কয়েকটি প্রভাবশালী চক্র। অনেকেই পাহাড়ের পাদদেশে গড়ে তুলছে ভবন ও বসতবাড়ি।
এবিষয়ে কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সাইফুল আশ্রাব জানান, পাহাড় কাটার বিষয়ে প্রশাসন সব-সময় শক্ত অবস্থা রয়েছে। তবে দক্ষিণ রুমালিয়ারছরা বাঁচা ঘোনাসহ শহরের বিভিন্ন স্পটে পাহাড় কাটার খবর পেয়েছি। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়া হবে।
Posted ১:২৪ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta