সাইফুল ইসলাম(৫ এপ্রিল) :: একদিকে গরম,অন্যদিকে যানজটে অস্থির।পর্যটন শহর কক্সবাজার। এরই মধ্যে আবার শহরজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেপরোয়া চাঁদাবাজি। সবমিলিয়ে পর্যটন নগরী কক্সবাজার যানজটে ভরপুর। পাশাপাশি এ যানজটে অতিষ্ঠ হয়ে আছে নাগরিক জীবন। আর এ ভয়াবহ দুর্ভোগ পোহাতে হয় স্থানীয়দের সাথে বেড়াতে আসা দেশী-বিদেশী পর্যটকরাও।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত যেন যানজট লেগেই থাকে জনগুরুত্বপূর্ণ এই শহরে। ছোট-বড় গাড়ির যত্রতত্র পার্কিং, দিনের বেলায় বড় বড় গাড়ি প্রবেশ, প্রধান সড়কের দুই পাশে ভ্রাম্যমাণ দোকান, ফুটপাতে দোকান, প্রধান সড়কের আশপাশে সিএনজি, টমটম ও বড় বড় বাস দাঁড়িয়ে থাকার কারণে শহরটিতে যানজট স্থায়ীভাবে রুপ নিতে যাচ্ছে বলে দাবী পৌরবাসীর। দিনের প্রায় ১ থেকে ২ ঘন্টা সময় যানজটের কারণে থমকে থাকে জনজীবন।
ইদানিং দেখি কক্সবাজার কলাতলী এলাকার সুগন্ধা পয়েন্টে ট্রাফিক পুলিশের পুলিশ বক্স থাকায় দিনের বেলায় বেশির ভাগ ট্রাফিক পুলিশ ওখানে গিয়ে আড্ডায় থাকে। বক্স সৃষ্টি হওয়ার পরে থেকে শহরের ভিতরের তেমন কোন ট্রাফিক পুলিশও দেখা যায়নি।
এদিকে কক্সবাজারে পর্যাপ্ত ট্রাফিক পুলিশ না থাকলেও যে কয়েকজন রয়েছে তারাও শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে গাড়ি ধরা ও চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত রয়েছে বলে জানান অনেকেই।
শহরের পিটিস্কুল থেকে টমটম যোগে বাজারঘাটা আসতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ মিনিট এই যানজটের কারণে প্রতিদিন প্রায় ১ ঘন্টারও বেশি সময় চলে যায় বলে জানান অনেক যাত্রী।
তারা জানান, ট্রাফিক পুলিশ ইচ্ছা করলে শহরকে যানজটমুক্ত করতে পারেন। কিন্তু এরা প্রতিনিয়তেই যানজট নিরসনের চেয়ে সিএনজি, টমটম, মোটরসাইকেল ও অনুমোদনহীন গাড়ি থেকে টাকা আদায়েই ব্যস্ত থাকেন।
অভিযোগ আছে-ট্রাফিক পুলিশ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যেসব গাড়ি অবৈধ বলে আটক করে থাকেন সে গাড়ি মাগরিবেব পর মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেন। এ গাড়ির জন্য প্রতিদিন সন্ধ্যার দিকে অনেকই ভোগছে।
প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্রসহ সবকিছু ঠিক থাকলেও টমটম ও সিএনজি থেকে ৫ থেকে ১০ হাজার আদায় করে ট্রাফিক পুলিশ। সপ্তাহ যেতে না যেতেই আবারও আটকের ফাঁন্দে পড়তে হয় ওই গাড়িটিকে।
এছাড়াও মোটরসাইকেলের লাইসেন্স বা কোন কাগজপত্র না থাকলেও ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিলে লাইসেন্স ও কাগজপত্র দেখতে হয়না। রাতের প্রায় সাড়ে ১১ টা থেকে ১২ টার মধ্যেই একটি গাড়িও দেখা যায়নি ট্রাফিক বিভাগের আশপাশে। সব গাড়িই টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেয় হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, বাসটার্মিনাল গোল চত্বরে, পেট্রোল পাম্প, শহীদ স্মরণীর চৌঁরাস্তার মোড়, কলাতলী মোড় ও সুগন্ধা পয়েন্টসহ আরো বেশ কয়েকটি মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ জড়ো গাড়ি থেকে চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত থাকায় পৌরবাসী প্রতিনিয়তেই যানজট নিয়ে ভুগছে।
এদিকে কোথায় যানজট হচ্ছে তার কোন মাথা ব্যাথাও নেই ট্রাফিক পুলিশের। বামির্জ মার্কেট থেকে পৌরসভা পর্যন্ত যে কয়েকজন দায়িত্ব পালনে ট্রাফিক পুলিশ থাকে। তারাও আশপাশের চায়ের দোকানে আড্ডা দিয়ে সময় কাটায়।
এবিষয়ে কক্সবাজার সাউথ ইস্ট ব্যাংকের কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, “সরকারী বন্ধ ছাড়া রুমালিয়ারছড়া থেকে প্রতিদিন আমাকে ব্যাংকে যেতে হয়। যে ব্যাংকে যেতে ৮ থেকে ১০ মিনিট সময় লাগে, সেখানে প্রায় ১ ঘন্টা পূর্বে বাসা থেকে বের হতে হয়। তা না হলে ঠিক মতো একদিনও ব্যাংকে উপস্থিত হতে পারিনা”।
ঢাকা থেকে বেড়াতে আসা এক পর্যটক দম্পতি জানান, যে কয়েকজন ট্রাফিক পুলিশ দেখা যায় তারা আবার আশপাশের চায়ের দোকানে আড্ডা ও চাঁদা আদায়ে ব্যস্ত থাকেন। সড়কে এতো যানজটের মাঝেও সংশ্লিষ্ট উর্ধতন মহলের কোন মাথা ব্যথা না থাকাটা খুবই দু:খজনক। এভাবে কখনো বিশ^মানের পর্যটন নগরী হয়ে উঠবেনা কক্সবাজার।
মো. মনিরুল ইসলাম নামে এক আইনজীবী জানান, যানজটতো মানুষের জন্য নিত্যদিনের সঙ্গী হয়ে রয়েছে। এ যানজটের কবলে পড়ে প্রতিদিন কর্মজীবন থেকে ২ থেকে ৩ ঘন্টা অপচয় হচ্ছে।
তিনি বলেন, পেশাগত কাজে আদালতে যেতে অর্ধ ঘন্টা সময়ের জায়গায় এখন লাগে প্রায় ২ ঘন্টা। অসহনীয় যানজটের কারনে অনেক সময় কর্মস্থলে উপস্থিতও হতে পারিনি।
কক্সবাজার শহরের ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর কামরুজ্জামানের বলেন, পর্যটন নগরী হিসেবে চাহিদা অনুযায়ী ট্রাফিক পুলিশ নেই। শহরে মাত্র ২০ জন মতো ট্রাফিক পুলিশ রয়েছে।
Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৬ এপ্রিল ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta