সেলিম উদ্দিন,খুটাখালী(১০ সেপ্টেম্বর) :: কক্সবাজার সদর উপজেলা থেকে প্রায় ৩৫ কিলোমিটার দূরের জনপদ পোকখালী ইউনিয়নের গোমাতলী গ্রাম। লবণ-মৎস্য ঘেরা এই জনপদ উপজেলার সবচেয়ে পশ্চাৎপদ ইউনিয়নের গ্রাম ধরা হয়। পাহাড়ি ফুলছড়ি খাল বয়ে গেছে গোমাতলীর পাশ গেষে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর এই গ্রামের উন্নয়নের বড় বাধা ভাঙা বেড়িবাঁধ।
পাকাকাঁচা সড়ক লন্ডভন্ড, শিক্ষা প্রতিষ্টান বন্ধ এবং গত ১৫ মাস ধরে জোয়ার-ভাটার কারনে ১০ গ্রামের ২০ হাজার বাসিন্দা নাগরিক সুবিধা বঞ্চিত। জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে প্রশাসনিক কর্মকর্তারা বলছেন, সরকার উন্নয়ন কার্যক্রম থেকে প্রায় বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার বাসিন্দারা। এ কারণে এ জনপদের মানুুষের যেন দুর্ভোগের শেষ নেই।
উপজেলা শহর কিংবা বাণিজ্যিক কেন্দ্র ঈদগাঁও বাজারে যাতায়াত ভোগান্তি চরমে উঠেছে। নিয়মিত যোগাযোগের জন্য সড়কের বেহাল দশার কারনে সিএনজি- মোটরসাইকেলে যাতায়াত করে এখানকার মানুষ। শুধুমাত্র সাপ্তাহিক হাটের দিন (শনি-মঙলবার) ছাড়া নিয়মিত গাড়ি পাওয়া যায়না এ সড়কে। দুর্ঘটনার পাশাপাশি বর্ষা মৌসুমে এ রাস্তায় যাতায়াত খুব কষ্টকর।
মাঝে মধ্যে সিএনজি চালিত অটো রিকশায় করে যাতায়াত করা গেলেও, সব সময় পাওয়া যায় না। যাতায়াতের ভোগান্তির কারণে বেশীর ভাগ শিক্ষা প্রতিষ্টানের শিক্ষক বদলি হয়ে এসে এখানে থাকতে চান না। অনেকে ডেপুটেশন নিয়ে সদর কিংবা অন্য উপজেলায় বদলি নিয়ে নেন।
ঈদগাঁও বাস ষ্টেশনের কয়েকজন সিএনজি চালক বলেন, নিয়মিত গোমাতলী সড়কে এই রুটে চলাচল করি। প্রতিদিন কমবেশী যাত্রী পাওয়া যায় তবে বৃষ্টির সময় যাত্রী কম থাকে। সন্ধ্যার পর গোমাতলীর সাথে যোগাযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। খুব জরুরী প্রয়োজন ছাড়া এই পথে গাড়ি চালানো নিরাপদ নই।
পশ্চিম গোমাতলী বাজার থেকে মোটরবাইকে চৌফলদন্ডীর পথে রওনা হতেই চোখে পড়ে সরু সড়ক। এই পথেই বর্তমানে উপজেলার মূল যাতায়াত। এখানকার মানুষকে বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করতে হয় প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে ঈদগাঁওতে গিয়ে।
পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান রফিক আহমদ বলেন, গোমাতলীর ৩টি ওয়ার্ডের প্রায় ২০ হাজার বাসিন্দা নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। ১টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৪টি প্রাথমিক বিদ্যালয় উপকুলীয় এলাকায় হওয়ার কারণে সারা বছর শিক্ষক সংকট লেগেই থাকে। তাছাড়া দূর-দূরান্তের শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ কারণে বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। বর্তমানে জোয়ার-ভাটার কারনে বিদ্যালয় যাতায়াত প্রায় বন্ধ রয়েছে।
সদর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান ও এলাকার বাসিন্দা ছলিম উল্লাহ বাহাদুর বলেন, গোমাতলীর উন্নয়নে বড় বাধা প্রশাসনের উন্নয়ন বিমুখী আচরণ। বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে এই গ্রামের অগ্রগতি হয়নি। তিনি বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থা ভংগুর, পশ্চাৎপদ শিক্ষা ও নিয়মিত জোয়ার-ভাটার কারণে গোমাতলী একটি ভূতুড়ে গ্রামে পরিণত হয়েছে। এটি বর্তমানে উপজেলার সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া গ্রাম। ২০ হাজার বাসিন্দার চলাচলের জন্য পাকা সড়কের ব্যবস্থা নেই। এখানকার সিংহভাগ বাসিন্দা লবণ-মৎস্য’র উপর নির্ভরশীল।
পোকখালী ইউপি সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমদ বলেন, যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে এই গ্রামটি পেছনে আছে। গাইট্যাখালী থেকে পশ্চিম গোমাতলী পর্যন্ত সাড়ে ৩ কিলোমিটার পাকা সড়ক এবং ঈদগাঁও থেকে র্পূব গোমাতলী ভায়া পশ্চিম গোমাতলী সংযোগ সড়ক পর্যন্ত সাড়ে ১১ কিলোমিটার সড়ক পাকা। তৎমধ্যে পশ্চিম গোমাতলী থেকে গাইট্যাখালী পর্যন্ত পাকা সড়ক জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে।
ঈদগাঁও থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে গোমাতলী রাজঘাট পাড়া। এ পাড়ার কাঁচা রাস্তা মাত্র ২ কিলোমিটার। ৪৬ বছর পেরিয়ে গেলেও আজ অব্দি বাকী ২ কিলোমিটার রাস্তা এখনো পাকা হয়নি।
Posted ১:০৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta