কক্সবাংলা রিপোর্ট(৭ ডিসেম্বর) :: কক্সবাজার সাগর পারের পর্যটন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত বিলাস বহুল হোটেল শৈবালও এবার বেসরকারি খাতে দেয়া হচ্ছে। অভিযোগ উঠেছে, প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি দিয়ে দেয়া হচ্ছে মাত্র ৬০ কোটি টাকায়।
ইতিমধ্যে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপি) আওতায় দেশের অন্যতম ব্যবসায়ী কম্পানি ওরিয়ন গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ওরিয়ন ট্যুরিজম অ্যান্ড এন্টারটেইনমেন্ট লিঃ নামের প্রতিষ্ঠানটির সাইনবোর্ডও টাঙ্গানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের ঐতিহ্যবাহী হোটেল শৈবাল বন্ধ করে দিয়ে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ৪ হাজার ৬৯০ কোটি টাকার সম্পত্তি ওরিয়ন গ্রুপ নামে একটি প্রাইভেট কম্পানির কাছে ৫০ বছরের জন্য ৬০ কোটি টাকায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। অভিযোগে উঠেছে, এক প্রকার গোপনীয়তার মাধ্যমে এ সংক্রান্ত টেন্ডার প্রক্রিয়াও সম্পন্ন হয়েছে। পর্যটন কর্পোরেশনের এই পদক্ষেপ পর্যটন শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।
জানা গেছে, ১৯৬৫ সালে সাগরিকা রেস্তোরাঁ চালুর মধ্য দিয়ে কক্সবাজার পর্যটনে হোটেল শৈবালের যাত্রা শুরম্ন হয়। সেই থেকে সাগরিকা নামের রেস্তোরাঁটি ভোজন রসিকদের মাঝে ব্যাপক সাড়া জাগিয়ে টিকে রয়েছে। পরে ১৯৮৫ সালে রেস্তোরাঁ সংলগ্ন তিন তারকা বিশিষ্ট হোটেল শৈবাল (আবাসিক) প্রতিষ্ঠান চালু করা হয়। চড়ায়-উত্রাই পেরিয়ে পর্যটক ও স্থানীয়দের কাছে হোটেল শৈবাল বেশ সুনাম কুঁড়িয়েছে। আজও হোটেল শৈবাল পর্যটন শিল্প বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে।
হোটেল শৈবালের মোট জমির পরিমাণ ১৩৫ একর। তার মধ্যে ১৩০ একর জমি পিপিপি প্রকল্পের আওতায় হস্তান্তর করা হবার কথা রয়েছে।
একই সঙ্গে ১৩০ একর জমি ছাড়াও হোটেল শৈবালের অত্যাধুনিক তিন তলা ভবন, সাগরিকা রেস্তোরাঁ ভবন, সুইমিংপুল ভবন, লাইভ ফিস রেস্তোরাঁর দোতলা ভবন, শৈবালের গলফ বার ভবনসহ মোট ১৪০ কোটি টাকার ভবনও হস্তান্তর করা হবে। পর্যটন এরিয়ার প্রাইম লোকেশনে হোটেল শৈবালের প্রতি শতক জমির মূল্য ন্যূনতম ৩৫ লাখ টাকা ধরা হলে ১৩০ একর জমির মূল্য প্রায় ৪ হাজার ৫৫০ কোটি।
এছাড়া হোটেল শৈবালের ভবনসহ আশপাশের অন্যান্য ভবনের মূল্য ১৪০ কোটি টাকা। কিন্তু পিপিপি প্রকল্পের আওতায় ওরিয়ন গ্রম্নপকে মাত্র ৬০ কোটি টাকায় শৈবালের সমস্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের খবরে জনমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশীপ (পিপিপি) ধারণা নিয়ে পিপিপি দপ্তরটি শুধুমাত্র বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের বিভিন্ন জেলায় অবস্থিত জায়গা নিয়ে কাজ করছে। প্রকল্পের শুরুর দিকে কক্সবাজারে আয়োজিত একটি সভায় হোটেল শৈবালের ভবন ও আশপাশের খালি জায়গায় বিভিন্ন কটেজ ও এমিউজমেন্ট পার্ক করা হবে বলে ধারণা দেয়া হয়। কিন্তু সম্প্রতি জমি ও ভবন দখল নিয়ে গোপনীয়তার মাধ্যমে পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয়ের পস্ন্যানিং ডিভিশন পিপিপি’র প্রস্তাবটি প্রস্তুত করে বলে কক্সবাজারের পর্যটন কর্পোরেশনের কর্মচারীরা অভিযোগ করেছেন।
এ ব্যাপারে পর্যটন কর্পোরেশনের কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ মহসিন জানান, ওরিয়ন গ্রুপের কাছে হোটেল শৈবাল হস্তান্তর করা হলে বিপুলসংখ্যক চাকরিজীবী চাকরিচ্যুত হবেন। চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুতির বিষয়ে প্রতিবাদ করলেও কর্পোরেশনের কেন্দ্র থেকে সাশানো হচ্ছে।
‘ তিনি জানান, প্রাইভেট কম্পানির কাছে হোটেল শৈবাল হস্তান্তরের প্রক্রিয়া ব্যাপকভাবে টেন্ডারের মাধ্যমে প্রচার করা হলে আরো অনেক প্রতিষ্ঠান বিনিয়োগে অংশ নিতে পারত। এতে হয়তোবা আরো বেশি অংকের টাকা পাওয়া যেত। কিন্তু গোপনে একাজটি করায় কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি পানির দরে হস্তান্তর করা হচ্ছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল শৈবালের বিভিন্ন পয়েন্টে ওরিয়ন গ্রম্নপের সাইনবোর্ড সাটানো হয়েছে। সাইনবোর্ড লাগাতে গেলে শৈবালে কর্মরত কর্মকর্তাদের সঙ্গেও বাড়াবাড়ি হয়। তবে ওরিয়ন গ্রুপের কোন কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সেখানে পাওয়া যায়নি।
এসব ব্যাপারে পর্যটন কর্পোরেশন কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া জানান, ওরিয়ন গ্রুপের কাছে হোটেল শৈবাল হস্তান্তরের বিষয় নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে কোন চিঠি পাইনি। তবে ওরিয়ন গ্রুপের কর্মচারীরা এখানে সাইনবোর্ড লাগিয়ে গেছেন। এ সময় কক্সবাজারের পর্যটন এবং ওরিয়ন গ্রুপের কর্মচারীদের মধ্যে তর্কাতর্কির ঘটনাও ঘটে। পরে পিপিপি ও পর্যটন কর্পোরেশন থেকে ফোন করে তাদের সাইনবোর্ড লাগাতে বাঁধা না দেয়ার জন্য বলা হয়। ‘
Posted ১:৫৮ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০৮ ডিসেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta