জে,জাহেদ বিশেষ প্রতিবেদক(১৭ ডিসেম্বর) :: আগামী ২০১৮ সালে ভোটের মাঠে লড়তে নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে রাজনৈতিক দলগুলোতে। চলছে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ। মনোনয়নের আশায় মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন মনোনয়ন প্রত্যাশী দলীয় নেতারা।
পর্যটননগরী কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বড় রাজনৈতিক দলগুলোর নেতাকর্মীরা মাঠে আওয়াজ তুলতে শুরু করেছে। দলীয় কোন্দলে সুবিধা করতে না পারা আ:লীগের কারিশমায় জাপার হাতে যদিও কক্সবাজার-১ আসনটি।
অন্যদিকে জেলার অধিকাংশ মানুষ মনেকরে আসনটি বরাবরই বিএনপির খাঁচায় বলে চোখবন্ধ মন্তব্য করে। যার কারন হিসাবে জনগণের দাবি সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ এমপি ক্ষমতা থাকালে যে কাঠামোগত উন্নয়ন করেছেন সেটাই বিপরীত হিসাবে তুলে ধরছে।
স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে ১৯৯১ সালে যদিও আওয়ামী লীগের টিকিটে আসনটিতে এমপি নির্বাচন করেছিলেন অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম। সে সময়ে নির্বাচনে নানা ঘটনা শেষে আসনটিতে জয় লাভ করেছিলেন জামায়াত এর এমপি মোঃ এনামুল হক। এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রামে অধীনে হয়তো আসনটিতে এক সময় লীগের এমপি ছিলেন।এরপর ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর পেকুয়ার অবকাঠামোগত অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছেন। এবং মন্ত্রীত্বের স্বাদ পেয়েছেন পেকুয়ার সন্তান বিএনপি সরকারের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এপিএস ও বর্তমান কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সালাহউদ্দিন আহমদ।
এ আসনের বিএনপি’র প্রার্থিতা নিশ্চিত হয়ে থাকে বরাবরেই ধানের শীষ প্রতীকে এপিএস সালাহ্ উদ্দিন আহমেদ এর পরিবারের কেউ। ওয়ান-ইলেভেনের পর স্বামী কারাঅভ্যন্তরীণ থাকলেও স্ত্রী হাসিনা আহমদই বিএনপি’র প্রার্থী হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
সালাহউদ্দিন আহমদ বর্তমানে ভারতের শিলংয়ে সেখানকার সরকারের নজরবন্দি থাকলেও কক্সবাজারের বিএনপি’র দলীয় রাজনীতি তারই ইশারায় পরিচালিত হচ্ছে বলে নেতা-কর্মীদের অভিমত। তবে মনোনয়ন বিষয়ে সালাহউদ্দিনের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত বলে উল্লেখ করে একটি সূত্র।
অপরদিকে স্বাধীনতা পরবর্তী সময় থেকে কক্সবাজার অবকাঠামোগতভাবে অবেহেলিত থাকলেও আওয়ামী লীগ সরকারের টানা দু’সময়ে অভূতপূর্ব উন্নয়ন যজ্ঞ চলছে এ জেলায়। চলমান এসব কাজ নির্বিঘ্নে বাস্তবায়ন করতে ভূমিকা থাকবে সংসদ সদস্যের। এ কারণে কক্সবাজারের ৪ টি আসনে দলের সংসদ নিশ্চিত করতে চায় ক্ষমতাসীন দল আ:লীগ।
কক্সবাজার-১ আসন থেকে আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নের আশায় মাঠে রয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহউদ্দিন আহমদ সিআইপি,সুচিন্তার বাংলাদেশ চট্টগ্রাম বিষয়ক সমন্বয়ক ও কক্সবাজার জেলা আ:লীগের মানব সম্পদ বিষয়ক সম্পাদক তরুণ নেতৃত্ব আশরাফুল ইসলাস সজীব, বর্তমান চকরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাফর আলম এমএ, সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি রেজাউল করিম ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য রাশেদুল ইসলাম।
বিএনপি থেকে সম্ভাব্য প্রার্থী হতে পারেন দুবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী বর্তমান বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য সালাউদ্দিন আহমদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী ও সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রীর সহধর্মীনি সাবেক সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ।
জাতীয় পার্টি থেকে বর্তমান সংসদ সদস্য মোহাম্মদ ইলিয়াছ ও জাতীয় পার্টি (জেপি) থেকে সাবেক সংসদ সদস্য সাবেক কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বর্তমান (জেপি) প্রেসিডিয়াম সদস্য এ এইচ সালাউদ্দিন মাহমুদ।
এদিকে দলীয় নিবন্ধন হারালেও এ আসনে জামায়াত নেতা সাবেক ছাত্র শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য এনামুল হক মঞ্জু প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি ১৯৯১ সালে আওয়ামী লীগ প্রার্থী এ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলামকে পরাজিত করে উক্ত আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এদিকে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট, জোটগতভাবে জেলার চারটি আসনে নির্বাচন করলে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির আসন পরিবর্তন হতে পারে।
আসন ভাগাভাগিতে অনেক সময় পুর্বের মতো আসনটি জাতীয় পার্টির ঝুলিতে গেলে মাঠের চিত্র ভিন্ন ও হতে পারে। কেননা বিএনপি ঘেঁষা এলাকা বলে পরিচিত। নৌকার পালে আসনটি উড়ানো অনেক কঠিন হয়ে পড়বে বলে স্থানীয় জনগণ মন্তব্য করেন।
অতীতের তথ্যমতে, আ: লীগের সালাউদ্দিন আহমদ সিআইপিকে অতীতে একাধিকবার টিকেট দেওয়া হয় তবে প্রতিবারই হেরেছেন।
জাফর আলম এমএ অতীতে বার বার দলীয় টিকেট দাবি করে বঞ্চিত হলেও চকরিয়া পৌরসভা নির্বাচনে মেয়র হিসেবে বিজয়ী হন। গত উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এখনো দায়িত্ব পালন করছেন।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান কৃষক নেতা রেজাউল করিম সম্প্রতি জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পদ পাওয়ার পর দলীয় ও সামাজিক প্রোগ্রামে অংশ নিয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। এবং ২০০৭ সাল হতে আশরাফুল ইসলাম সজীব দীর্ঘদিন মাঠে সক্রিয় থেকে মিছিল মিটিংয়ে সাংগঠনিক ভাবে দলকে চাঙ্গা করে রেখেছেন বলে জানা যায়।
তৃণমূলের ভাষ্যমতে রাজনৈতিক প্রাজ্ঞতা ও নিজের কর্মকাণ্ডে চকরিয়া-পেকুয়াসহ পুরো জেলায় একটি ভাল ইমেজ রয়েছে সজীবের। তিনি এলাকার রাজনৈতিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে প্রতিনিয়ত সরকারের উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরছেন। আর এতে নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হচ্ছে সজীবের হাত ধরে হারানো ঐতিহ্য আর এ আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করা সম্ভব বলে স্বপ্ন দেখছেন।
পেকুয়া উপজেলার মোঃ শামীম বলেন,” সরকারের উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় পুরা আসনে নির্মাণযজ্ঞ চলছে। তবে আওয়ামী তৃণমূল মনে করে ত্যাগী সৎ ও তারুণ্য নির্ভর ক্লিন ইমেজের কাউকে প্রার্থী করা হলে আসনটি পুনঃরুদ্ধার হতে পারে”।
এদিকে কক্সবাজার-১ আসনের তৃণমূল নেতাকর্মীরা তা মনে করেন। যেহেতু দীর্ঘদিন বিএনপির দখলে ছিলো আসনটি। এবারে আ:লীগ মরণ কামড় দিতে পারে বলে ধারনা পাওয়া যাচ্ছে।মাঠে একাধিক তরুণ প্রার্থীর সম্ভার রয়েছে।
এক্ষেত্রে সুচিন্তার বাংলাদেশ চট্টগ্রাম সমন্বয়ক কক্সবাজার জেলা আ:লীগের মানবসম্পদ বিষয়ক সম্পাদক আশরাফুল ইসলাম সজীব বলেন, বিগত ইতিহাসে স্বৈরশাসকের পতনের পর বাংলাদেশে প্রথম সুষ্ঠ নির্বাচন হয়। এ সুষ্ঠ নির্বাচনে আ:লীগ থেকে প্রার্থী হয়েছিলেন এড: জহিরুল ইসলাম। যদিও ১৯৯১ সালে তিনি বিজয়ী হতে পারেনি।
আমি অতীতে যাবোনা তবে রিসেন্টলি বলি, ২০১৮ সালে যেহেতু নির্বাচন সেহেতু নির্দিষ্ট সময়ে মাঠে কাজ করার জন্য সবুজ সংকেত দেওয়া জরুরী। কেননা দীর্ঘদিন যাবত সাংগঠনিক দুর্বলতা ছিলো তা কাটিয়ে তোলা দরকার”। এবং যদি আসনটিতে গ্রহনযোগ্য ইমেজ সমপন্ন কোন তরুণ উদ্যোমী প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয় তবে জেতা সম্ভব বলেও মনে করেন তিনি।
কেন বার বার আসনটি নৌকার হাত ছাড়া হচ্ছে,এবং কি রকম প্রার্থীকে বাচাই করলে জেতা সম্ভব এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, “আওয়ামী লীগ হতে যারা ৩/৪ বার নমিনেশন পেয়েও জিততে পারেননি, ঐ ধরনের প্রার্থীকে আবারো প্রার্থী করা হলে আসনটি পুনরুদ্ধার হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ । তরুণ সৎ উদ্যমী, কথায় আর কাজে মিল আছে এমন কোন প্রার্থীকে দেখতে চায় জনগণ”।
কথা প্রসংগে আমাদের প্রতিবেদক আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া কিংবা দল হতে কোন সবুজ সংকেত পেয়েছে কিনা জানতে চাইলে আশরাফুল ইসলম সজীব জানান,”আমি অবশ্যই আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার ব্যাপারে খুব আশাবাদী। যার লক্ষ্যে গত ২০০৭ সাল হতে আমি এলাকায় কাজ করে যাচ্ছি। নির্বাচনের আগে নেত্রী অবশ্যই সবাইকে মাঠে কাজ করতে বলেন। আসলে নিজেদের কাজের বিবেচনা এবং জনগণের গ্রহনযোগ্যতা দেখে দল মনোনয়ন দেয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
যদিও তিনি জানান, বিগত ১৫/২০ বছরে এ আসনে আ:লীগের সাংগঠনিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিলো। যার কারনে আসনটি জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দিতে হয়। তবে বর্তমানে এ আসন হতে আ:লীগের অনেকেই আছেন যারা বিজয়ী হবার ক্ষমতা রাখে।
মাঠ জরিপে জানা যায়, আগামী নির্বাচনে কক্সবাজার-১ আসনে নৌকার বিজয় নিশ্চিত করতে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ মরিয়া। কেননা গত তিনটি সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিজয় ঘরে তুলতে পারিনি দলটি। আগামীতে তারা আর ভুল করতে চায়না। অন্যদিকে বিএনপি যদি নির্বাচন বয়কট না করে, অংশগ্রহন করে তবে আসনটি পুনরুদ্ধার করা যেকোন প্রার্থীর জন্য কঠিন হতে পারে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাফর আলম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যাকে মনোনয়ন দেবেন তার পক্ষে নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ করে যাবেন তিনি। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে দলীয় কোন্দল ত্যাগ করে সবাইকে নৌকার পক্ষে কাজ করার ও আহ্বান জানান।
ইতিহাস রয়েছে অতীতে আসনটিতে জামাতের সাংসদ ছিলেন আর বর্তমানে দলের নিবন্ধন যেহেতু বাতিল হয়ে পড়েছে তবুও কিন্তু কৌশলে সংঘঠিত হচ্ছে তারা। তবে এগিয়ে রয়েছে বিএনপি।
বর্তমানে জোটগত আসনে জাতীয় পার্টি (এরশাদ) সমর্থিত হাজী মোহাম্মদ ইলিয়াছ এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি বিনাভোটে এমপি নির্বাচিত হন। আগামীতেও যদি জোটবদ্ধ নির্বাচন হয়ে এবং মনোনয়ন পান তিনি তবে বিশেষ একটা সুবিধা করতে পারবে বলে মনে করেনা স্থানীয় জনগণ। তাই কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রেখে নীরবে কাজ করছে তাদের নেতাকর্মীরা।
