এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২৯ ডিসেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকী আছে আর মাত্র দুইদিন। একেবারে শেষ মুহুর্তে এসে কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনে বেশ জমে উঠেছে নির্বাচনের প্রচার-প্রচারনা। মনোনয়নপত্র দাখিলের হিসেবে নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন আটজন প্রার্থী। তবে এরমধ্যে হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন দুইজন।
তাঁরা হলেন আওয়ামীলীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আলহাজ জাফর আলম (নৌকা) ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন ঐক্যফন্ট্রের প্রার্থী অ্যাডভোকেট হাসিনা আহমেদ (ধানের শীষ)।
হাসিনা আহমেদ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদের সহ-ধর্মীনি। তিনি এ আসন থেকে একবার সাংসদ নির্বাচিত হয়েছিলেন।
অপরদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাফর আলম সংসদ সদস্য পদে এই প্রথম নির্বাচন করছেন। আগে তিনি চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও চকরিয়া পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন।
চকরিয়া-পেকুয়া আসনে একাদশ নির্বাচনে আটজন প্রার্থী অংশ নিলেও আওয়ামীলীগ ও বিএনপির প্রার্থী ছাড়া অন্যরা ভোটের মাঠে নেই। এ আসনে মহাজোটের শরীক জাতীয় পাটির (এরশাদ) মনোনয়ন নিলেও বর্তমান এমপি হাজি ইলিয়াছ ইতোমধ্যে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জাফর আলমকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁিড়য়েছেন।
বাকি প্রার্থীদের মধ্যে ওয়ার্কাস পাটির হাজি আবু মো.বশিরুল আলম (হাতুড়ি) ও ইসলামী শাসনতন্ত্রের মাওলানা আলী আজগর (হাতপাখা) প্রতীকের কিছুটা প্রচার-প্রচারণা দেখা গেলেও তাদের নিয়ে তেমন আগ্রহ নেই ভোটারদের মধ্যে। মূলত প্রধান দুই জোটের প্রার্থীর মধ্যেই লড়াই জমবে। ভোটারদের নজরও তাদের দিকেই।
আগের পরিসংখ্যান বলছে, কক্সবাজার-১ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি। ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত সংসদ নির্বাচনে একবার দাঁড়িপাল্লা প্রতীকে জামায়াত, পরপর তিনবার বিএনপি এবং সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি হয়েছেন লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পাটির প্রার্থী। বিএনপির সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজ হলে নবম সংসদ নির্বাচনে আসনটিতে ধানের শীষে প্রার্থী হন তার স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে পরাজিত করে তিনি এমপি নির্বাচিত হন।
এবার একাদশ নির্বাচনে ধানের শীষ ও নৌকা প্রতীকের মধ্যে বেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ভারতে বন্দি স্বামী সালাহউদ্দিনের ইমেজ ব্যবহার করে সহানুভূতি টানার চেষ্টা করছেন বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ। একই সঙ্গে তিনি স্বামীর সময়কার উন্নয়ন কর্মকা- সামনে এনে জনগনের কাছে ভোট চাইছেন।
হাসিনা আহমেদ বিভিন্ন গণসংযোগে বলছেন, আপনাদের ভালোবাসার কারণেই আমার স্বামী বারবার এ আসনে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন। তার পরিবর্তে আমাকেও আপনারা বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করেছেন।
আপনারা জানেন, আমার স্বামীকে সরকার গুম করে রেখেছিল। পরে তাকে ভারতের সীমান্তবর্তী এলাকায় ফেলে দিয়ে আসে সরকারের লোকজন। সেখানে তিনি দীর্ঘদিন ধরে আটকে আছেন। তাকে আপনাদের কাছে আসতে দিচ্ছে না বর্তমান সরকার। তাই আপনাদের প্রিয় সালাহউদ্দিনকে আপনাদের মাঝে ফিরে পেতে আবারো ধানের শীষ প্রতীকে আমাকে ভোট দিয়ে এমপি নির্বাচিত করুন।
চকরিয়া পৌরসভা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক পৌর মেয়র নুরুল ইসলাম হায়দার বলেন, ‘গত ১০ বছর ধরেই তো বিএনপি নেতাকর্মীরা মামলা-হামলা মোকাবেলা করে মাঠে ছিল। সেখানে নির্বাচনের আগমুহূর্তেও একের পর এক সরকার দলের হামলা, মামলা, পুলিশের হয়রানি সহ্য করছে। এর পরেও সুষ্ঠু নির্বাচন হলে জনগণ দুঃশাসনের জবাব কড়াগ-ায় দেবে।
তিনি বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ তাদের অভিভাবক হিসেবে সালাহউদ্দিনকেই মনে রেখেছেন। বিশেষ করে চকরিয়ার মানুষ সালাহউদ্দিনের বেশি ভক্ত। এবারের নির্বাচনেও হাসিনা আহমেদকেই বিপুল ভোটে এমপি নির্বাচিত করবেন এ এলাকার মানুষ।
ভোটাররা ধারণা করছেন, বিএনপির প্রার্থী তুলনায় আওয়ামী লীগ প্রার্থী অনেক বেশী জনপ্রিয় ও শক্তিশালী। হাসিনা আহমেদ এমপি থাকাকালিন সময় পাঁচ বছর এলাকায় তেমন উন্নয়ন করতে পারেনি এবং এলাকার জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন।
পক্ষান্তরে আওয়ামীলীগের প্রার্থী আলহাজ জাফর আলম ২০১৪ সালে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে দায়িত্বপালন কালে এলাকায় ৫২টি ব্রিজ, চকরিয়া সরকারি হাসপাতালকে ১০০ শয্যা উন্নতিকরণ, চকরিয়া উপজেলা যুগ্ম জজ আদালত ভবনসহ উপজেলার মাধ্যমিক ও প্রাথমিক স্কুলগুলোতে অবকাটামোগত উন্নয়নে জাফর আলমের ভূমিকা ছিল উল্লেখ্যযোগ্য। সেসব কারনে তিনি চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষের মাঝে উন্নয়ন ও জনবান্ধব নেতা হিসেবে নিজেকে তৈরী করতে পেরেছেন। একই সঙ্গে তিনি চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার ২৫ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা এলাকায় দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম গতিশীল করতে সক্ষম হন।
চকরিয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক গিয়াস উদ্দিন চৌধুরী, মাতামুহুরী সাংগঠনিক উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মহসিন বাবুল, পেকুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম ও চকরিয়া পৌরসভা আওয়ামীলীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু অভিন্ন বক্তব্য দিয়েছেন। তাঁরা বলেছেন, বিগত তিনটি নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামীলীগ ভোটের মাঠে অংশ নিলেও প্রার্থীর ইমেজ সংকট ও জনগনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তৈরী করতে না পারার ফলে আমাদের নিশ্চিত বিজয় হাতছাড়া হয়েছে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন, এবার জাফর আলম যেমন দল এবং তৃনমুলে একজন জনপ্রিয় প্রার্থী, তেমনি সরকারের উন্নয়ন সফলতার কারনে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে নৌকার পক্ষে ব্যাপক গনজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে। নেতাকর্মীরাও এবার জাফর আলমকে প্রার্থী পেয়ে নৌকার বিজয় আওয়ামীলীগের ঘরে তুলতে সকল ভেদাভেদ ভুলে একহয়ে কাজ করছে।
বর্তমানে চকরিয়া-পেকুয়া আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী জাফর আলমও নির্বাচনী মাঠে বেশ দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি নৌকার টিকেট হাতে পেয়েই এলাকায় কোমড় বেঁেধ প্রচার-প্রচারনায় নেমে পড়েছেন। শীতের কনকনে ঠা-ার মধ্যেও তিনি প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত চকরিয়া-পেকুয়ার প্রতিটি জনপদে নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। প্রচারণার ফাঁকে ফাঁকে বিভিন্ন ইউনিয়নে জনগনের সঙ্গে কুশল বিনিময় করছেন তিনি। তাঁর সঙ্গে এখন আওয়ামীলীগের সকলস্তরের নেতাকর্মী ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার বিজয় নিশ্চিতে কাজ করছেন।
নির্বাচনী পথসভা ও গনসংযোগকালে জাফর আলম ভোটারদের কাছে বলছেন, দীর্ঘ ৪৫ বছর ধরে আমরা আওয়ামী লীগের একজন এমপি পাইনি। চকরিয়ার মানুষের ভোটে বারবার বিএনপি থেকে এমপি নির্বাচিত হওয়ায় চকরিয়ার ১৮ ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় উল্লেখযোগ্য কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাঘাটের দৃশ্যই বলে দিচ্ছে অতীতে এখানে কী কী উন্নয়ন হয়েছে। তাই উন্নয়নের স্বার্থে এবং চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ যাতে শান্তিতে বসবাস করতে পারে, সেজন্য দলমত নির্বিশেষে নৌকায় ভোট দিন।
চকরিয়া পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ারুল হাকিম দুলাল বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় এবার সুযোগ এসেছে ৪৫ বছরের পরাজয়ের গ্লানি মোচনের। এবার আমরা জাফর আলমের মতো একজন দক্ষ প্রার্থীও পেয়েছি। তাই চকরিয়া-পেকুয়ার মানুষ এবার আর সেই ভুল করবে না বলে মনে করি।
Posted ১২:১২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta