বিশেষ প্রতিবেদক(২৬ জানুয়ারী) :: ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী ও কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দি বিএনপি না হামিদুর রহমান আযাদ এনিয়ে রাজনীতিতে চলছে অনেক জটিল হিসাব-নিকাশ। কারন এ আসনে বাস্তবায়ন হচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ প্রকল্প কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ অন্তত এক ডজন মেগা প্রকল্প। এলাকায় উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই উজ্জীবিত আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাদের মতে, আগামী নির্বাচনে এ আসনে ভোটাররা নৌকাতেই ভোট দেবে।
এদিকে, জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা মনে করছেন, বিএনপির সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে এ আসনটি তারা পাবে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে এখানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোটের মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন দাঁড়িপাল্লার হামিদুর রহমান আযাদ।
আগামী নির্বাচনেও বিএনপি আসনটি জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদকে ছেড়ে দেবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।তিনি বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন বলে তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
অপরদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ-কোন্দলে এ আসনে দুর্বল হয়ে পড়েছে । দল থেকে এর আগে বহিস্কৃত হয়েছেন সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদ। সম্প্রতি ঘোষিত জেলার নতুন কমিটিতেও স্থান পাননি সাবেক এই এমপির অনুসারী নেতারা। এতে আবারও বিরোধ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে মহেশখালী উপজেলা বিএনপিতে। এ অবস্থায় স্থানীয় কোনো নেতাকে প্রার্থী না করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির
সদস্য ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদকে প্রার্থী করার চিন্তা করছে দলের একাংশ। তবে সালাহ উদ্দিনের প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি এখনও অনিশ্চিত। কারণ, তিনি প্রায় এক ডজন মামলার আসামি। তাছাড়া ভারতে অবস্থান করে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা লড়তে হচ্ছে তাকে।
আওয়ামী লীগে কোন্দল না থাকলেও মনোনয়নের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন একাধিক প্রার্থী। তাদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান এমপি আশেক উল্লাহ রফিক, পরিবেশ বিজ্ঞানী অধ্যাপক আনসারুল করিম ও দলের জেলা সভাপতি অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। তাদের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আশেক উল্লাহ রফিকের মনোনয়ন পাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।
এ প্রসঙ্গে এই নেতা বলেন, মহেশখালীতে হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ হলে তার নির্বাচনী এলাকাসহ গোটা দেশের চেহারাই বদলে যাবে। মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় বাস্তবায়িত মেগা প্রকল্পগুলোর সুফলও মানুষ পেতে শুরু করেছে।
ভূমি অধিগ্রহণ ক্ষতিপূরণের অর্থমূল্য তিন গুণ করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের নানা সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি পুনর্বাসনও করা হচ্ছে। এই উন্নয়ন কার্যক্রমের কারণে মানুষ আবারও আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।
২০০৮ সালের নির্বাচনে এ আসনে আওয়ামী লীগের টিকিট পেলেও গত নির্বাচনে পাননি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ড. আনসারুল করিম। তবে আগামী নির্বাচনেও তিনি দলের মনোনয়ন চাইবেন।
তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা তাকে আবারও প্রার্থী হিসেবে দেখতে চাইছেন। কারণ সঠিক নেতৃত্বের অভাবে এলাকার অনেক কাজ হচ্ছে না। বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তরা এখনও ক্ষতিপূরণের টাকা পাননি। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে।
১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছিলেন অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা। আগামী নির্বাচনেও দলের মনোনয়নের প্রত্যাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, দলের জেলা সভাপতি হওয়ার পর তিনি সাংগঠনিক ভিত্তি আরও মজবুত করতে নিরলস কাজ করছেন। এর সুফল আগামী নির্বাচনে পাওয়া যাবে।
তিনি বলেন, ব্যাপক উন্নয়নের কারণে কক্সবাজারে সরকারের ভাবমূর্তি অনেক বেড়েছে। দলের নেতাকর্মীরাও অনেক উজ্জীবিত। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চাইলে প্রার্থী হবেন বলে জানান তিনি। তবে মনোনয়ন না পেলেও নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন।
বিএনপি এ আসনে কোন্দল-বিরোধে বিপর্যস্ত। জেলা কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে সাবেক এমপি আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজুল্লাহ ফরিদের সঙ্গে বিরোধ দেখা দিয়েছে মহেশখালী উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আবু বক্কর সিদ্দিক ও কুতুবদিয়া উপজেলার চেয়ারম্যান এটিএম নুরুল বশর চৌধুরীর। এর পরও দলীয় মনোনয়নের ব্যাপারে আশাবাদী দু’বারের সাবেক এমপি আলমগীর ফরিদ।
তিনি বলেন, দলের তৃণমূল পর্যায়ে তার কর্মী ও সমর্থক রয়েছে। ভোটারদের মধ্যেও তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়।
মহেশখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদকে এ আসনে প্রার্থী করার চিন্তা রয়েছে। সালাহ উদ্দিনের আসন পেকুয়া-চকরিয়া থেকে আগামী নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন তার স্ত্রী সাবেক এমপি হাসিনা আহমেদ।
মহেশখালী ও কুতুবদিয়া আসনে প্রার্থী হবেন সালাহ উদ্দিন। মামলাজনিত কারণে তিনি প্রার্থী হতে না পারলে আবু বক্কর সিদ্দিক নিজেই দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।
প্রায় একই কথা জানালেন এ আসনে বিএনপির আরেক সম্ভাব্য প্রার্থী দলের জেলা সহ-সভাপতি এ টি এম নুরুল বশর চৌধুরী।
তিনি বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমদের বিরুদ্ধে মামলাগুলো এখনও বিচারাধীন। একটি মামলায় সাজা হলেও সেটিতে আপিল করা হয়েছে। সুতরাং তার নির্বাচন করার সম্ভাবনা রয়েছে। কোনো কারণে তাকে প্রার্থী করা না গেলে এটিএম নুরুল বশর চৌধুরী নিজেই দলের মনোনয়ন চাইবেন।
দীর্ঘদিন নিখোঁজ থাকার পর সাবেক প্রতিমন্ত্রী সালাহ উদ্দিন আহমদকে পাওয়া যায় ভারতের শিলং শহরে। অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে সেখানে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এখনও ভারতে অবস্থান করছেন তিনি। মামলা নিষ্পত্তি হলেই তিনি দেশে ফিরবেন বলে জানিয়েছেন।
জেলা জাতীয় পার্টির সাবেক সভাপতি কবির আহমদও নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটগতভাবে নির্বাচন হলে এই আসন জাতীয় পার্টিকে ছেড়ে দেওয়ার দাবি জানানো হবে।
Posted ৩:১২ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta