বিশেষ প্রতিবেদক(২৪ ডিসেম্বর) :: আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের মুখে কক্সবাজারের টেকনাফ ও উখিয়া ছেড়ে যাওয়া ইয়াবা ব্যবসায়ীদের একটা অংশ এলাকায় ফিরতে শুরু করেছেন। তাঁদের কেউ কেউ নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান সাংসদ আবদুর রহমান বদির স্ত্রী শাহীন আক্তারের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন। এঁদের বেশির ভাগ সাংসদ বদির আত্মীয় ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী।
এসব অভিযুক্ত ব্যক্তির এলাকায় ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে সীমান্তে ইয়াবার চালান আটকের ঘটনাও বাড়ছে। চলতি মাসের ২২ তারিখ পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সাড়ে ৭ লাখের মতো ইয়াবা বড়ি জব্দ করেছেন।
গত ৪ মে দেশব্যাপী মাদকবিরোধী অভিযান শুরু হয়। এ সময়ে র্যাব-পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফে সেখানকার পৌর কাউন্সিলর একরামুল হকসহ ২৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে তিনজনের বাড়ি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও ময়মনসিংহে। বাকি ২২ জনের বাড়ি টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়।
সরকারের সর্বশেষ করা ইয়াবা ব্যবসায়ীদের দুটি তালিকার মধ্যে একটিতে ৭৩ জন, অপরটিতে ১ হাজার ১৫১ জনের নাম আছে। তবে চলতি বছরের জুন মাসে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের করা ৭৩ প্রভাবশালী ইয়াবা কারবারির (গডফাদার) তালিকায় সাংসদ আবদুর রহমান বদির পাশাপাশি আরও ২২ জন স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নাম রয়েছে।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহীন আক্তার মুঠোফোনে বলেন, ‘আমার সঙ্গে কোনো ইয়াবা ব্যবসায়ী নেই। আমার লড়াই তাঁদেরই বিরুদ্ধে। দোয়া করবেন, দোয়া করবেন’—বলে তিনি ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
ইয়াবা ব্যবসায়ীদের তালিকায় টেকনাফ-উখিয়া আসনের বর্তমান সাংসদ বদির পাঁচ ভাই, বড় বোনের ছেলে, ফুফাতো ভাই, বড় বোনের দেবর (বন্দুকযুদ্ধে নিহত) ও তাঁর ভাই এবং আরেক বোনের দেবরসহ ১০ স্বজনের নাম আছে।
টেকনাফ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি জাফর আহমদ ও তাঁর চার ছেলে (মোস্তাক আহমদ ২০১৩ সাল থেকে গুম) এবং এক মেয়ের জামাতা, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান রফিক উদ্দিন ও তাঁর ভাই বাহারছড়া ইউপির চেয়ারম্যান আজিজ উদ্দিন, হ্নীলা ইউপির চেয়ারম্যান এইচ কে আনোয়ারের নামও এই তালিকায় আছে।
তাঁদের বেশির ভাগ এখন টেকনাফ ও উখিয়ায় নির্বাচনী প্রচারণায় শাহীন আক্তারের পক্ষে অংশ নিচ্ছেন। ১৮ ডিসেম্বর টেকনাফের রক্তিখালি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে জাফর আহমেদ নির্বাচনী প্রচারে যোগ দেন।
জাফর আহমেদ বলেন, ‘তালিকায় আমার নাম কীভাবে এল, তা বলতে পারব না। আমি যেহেতু জনপ্রতিনিধি, সেহেতু আমার কাছে খারাপ-ভালো অনেকে আসে। এদের মধ্যে কেউ ইয়াবা ব্যবসায়ী থাকতে পারে। তবে আমাদের এলাকায় এখন আর কেউ ইয়াবা ব্যবসা করে না। সবাই নৌকার পক্ষে প্রচারে ব্যস্ত। আমিও তা–ই করছি।’
টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ‘তালিকাভুক্ত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা যে এলাকায় ফিরেছেন বা নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দিচ্ছেন, তা আমার জানা নেই। আমরা পরিস্থিতি দেখব।’
সূত্র : প্রথম আলো
Posted ১১:৩৫ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta