রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কথাশংকর : তুষারে তুষারে ছেয়ে

মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২০
212 ভিউ
কথাশংকর : তুষারে তুষারে ছেয়ে
স্বপন চক্রবর্ত্তী,নিউইয়র্ক(৭ জানুয়ারী) :: অনেক বছর হয়ে গেল, এসেছিলাম এই পরবাসে। কেনো যে এসেছিলাম, সেই প্রশ্ন আজও নিভৃতে নিজেকে করি । এখানে আসার আগে আমার অনেক শুভানুধ্যায়ী, আমার বাবা, আত্মীয়স্বজন, বারে বারে বারণ করেছিলেন । শুধু আমার মা বলেছিলেন, ‘গিয়ে তো দেখ, ভালো না লাগলে চলে আসবি’ ।

ভালো আমার লাগে নি কোনদিন, আজও লাগে না । কিন্তু পরিস্থিতির ছোবল এমনই যে ভালো না লাগলেও আর ফিরে যাওয়া সম্ভব হয় নি । তারপর তো বাবা মা’কে ও এখানেই নিয়ে এলাম । বাবা মা এখানেই আমাদের সাথে আছেন তাও তো এক যুগ পার হয়ে গেলো । বাবার কদিন আগে ৯০তম জন্মদিন গেলো । তাঁর খুবই ইচ্ছে, একবার দেশে যাবেন – দেশে তাঁর একমাত্র মেয়ের ঘরের নাতনীর বিয়ে হয়েছে, নাতনীর ঘরে দুটো মেয়ে, তাঁর প্রিয় বড় নাতি বিয়ে করেছে, সেই নাতির ঘরেও একটি ফুটফুটে কন্যা এসেছে । ছোট ছেলের মেয়েটিকে ৪ বছরের ছোট রেখে এসেছিলেন, সে এবারে স্কুল ফাইনাল দেবে, তারপরে ছোট একটি নাতি হয়েছে । দেখতে একেবারে রাজপুত্রের মতো। ওদের কাউকে দেখেন নি মা, বাবা – এখানে আসার পরেই জন্ম ওদের । আর তাঁদের যাওয়া হয়নি । আমিও দেখিনি -অসুস্থ বাবা মা কে রেখে আমারও যাওয়া সম্ভব হয় নি । কিন্তু বাবার শরীরের অবস্থা এমন যে, আর যাওয়াও সম্ভব হবে না । দেখাও হয়তো আর এই জীবনে হবে না ।

বেদনাতুর বাবা মা’র মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয় । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উত্তাল সময়ে বাবার জীবনযুদ্ধ শুরু হয়েছিলো । নানা ঘাত প্রতিঘাতের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে এসেছেন বাবা । ভেবেছিলাম, শেষ বয়সে বাবাকে এখানে এনে কিছুটা নিবিড় শান্তি দিতে পারবো । কিন্তু পরবাস যে শান্তি দেয় না, তা তখন বুঝতে পারিনি । কতদিন দেখিনা ছোট ভাইবোনের মুখ । প্রিয় আত্মীয়স্বজন, বন্ধুদের মুখ । দেখিনি পরিবারের, পাড়ার কত নুতন সদস্যদের, যে পাড়ার প্রায় সকলের বাড়ীতেই একসময় আমি সন্তানের আদর পেয়েছি।

ছোট ভাইটি যখন জন্ম হয়েছিল- তখন আমার বয়স আট, আর আমার ছোট বোনের পাঁচ । আমাদের পাড়ার একজন ছিলেন রমেশ জ্যাঠা – স্বর্ণকার ছিলেন , অসাধারণ ছিল তাঁর হাতের কাজ । যেই তিনি দেখতেন যে, আমরা দুই ভাইবোন হাত ধরাধরি করে স্কুলে যাচ্ছি – রমেশ জ্যাঠা উচ্চস্বরে স্বগতোক্তি করতেন , এই রে -ওরা দুই ভাইবোন তো স্কুলে চলে যাচ্ছে দেখি, এই তো সুযোগ, ওদের ছোট ভাইটাকে নিয়ে আসার’। বলেই তিনি আমাদের বাড়ীর দিকে হাঁটা দিতেন । আমরা দুজন তো তা’ দেখে মরি পড়ি করে ছুটে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ী ফিরে এসে সদ্যোজাত ফুটফুটে ভাইটাকে জড়িয়ে ধরে রাখতাম ।

যতই বাবা মা বোঝাতেন যে, রমেশ জ্যাঠা আমাদের ক্ষেপাচ্ছেন, আমরা শুনতাম না । আমার সব চাইতে আনন্দের দিন ছিল যেদিন দেখি যে, আমার ছোট ভাইটি হামাগুঁড়ি দিতে শিখেছে । কি এক অজানা আনন্দে ও উত্তেজনায় টইটুম্বুর হয়েছিলাম সেই কয়েকটি দিন । সেই ভাইবোনকেও দেখতে পাই না অনেকবছর । ডিজিটাল যুগের কল্যাণে ফেইসটাইমে বা ইমো’তে মাঝে মধ্যে দেখতে পাই শুধু । একটা হাহাকারের ঝড় সারাক্ষণ নিভৃতে বুকের মধ্যে চলছে বুঝতে পারি । পরবাসীদের বুকে এই হাহাকার যে নিত্যদিনের সাথী, তাতো আমরা জানিই ।

আজ ভোর থেকে তুষারপাত শুরু হয়েছে, বিরামহীন তুষারপাত । রাস্তায় খুব বেশী জনমানব নেই । এখানকার মানুষের জীবনযাত্রায় তুষারপাত খুব একটা ছন্দপতন ঘটায় না । আমাদের পাড়ার এক অশিতীপর বুড়ি দেখি রাস্তার একতাল বরফের মধ্যেই ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছেন বাজারের দিকে । চলতে যে তাঁর কষ্ট হচ্ছে, কোন সন্দেহ নেই । বললাম, তোমার কি বাজার থেকে কিছু লাগবে বলো, আমি বা আমার মেয়ে তোমাকে এনে দেবো । এমন বরফে তোমার তো কষ্ট হচ্ছে হাঁটতে । বয়সের তীব্র ছাপ পড়া গালে আগণ্ডবিস্তৃত হাসি মেলে বললেন , চিন্তা করো না, আমি ঠিক ম্যানেজ করে নেবো । এমন বরফ তো এবছর প্রথম পড়লো, একটু নাহয় উপভোগ করেই নিই ।

কি আর বলতে পারি, এমনই জীবন অভিলাষী মানুষকে ! মাথা নেড়ে সায় জানানো ছাড়া আর গত্যন্তর কি ! বাবাকে বললাম, বাবা – দেখবে নাকি একটু জানালা দিয়ে তুষারপাত ! একটু অবাক চোখে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে -কম্বলটা মুখের উপর আরেকটু টেনে নিয়ে বললেন, না বাবা, বরফ পড়া আর কি দেখার আছে !

জানলার কাছে এসে আমি একাই বসে রইলাম, বিরামহীন তুষারপাতে চারিদিক শ্বেতশুভ্র হয়ে আছে । গাড়ী, বাড়ী, রাস্তাঘাট, পত্রবিহীন নগ্ন বৃক্ষ শাখা – সবই তুষারে তুষারে ছেয়ে আছে । আর কানে বাজছে এই পরবাসে ভালো থাকার চেষ্টার একমাত্র অবলম্বন- আলখাল্লা বুড়োর প্রিয় গান :
আজি ঝড়ের রাতে তোমার অভিসার – পরাণসখা, বন্ধু হে আমার !

লেখক : স্বপন চক্রবর্ত্তী(রামু প্রবাসী),নিউইয়র্ক,ইউএসএ ।

212 ভিউ

Posted ১১:২৬ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ০৭ জানুয়ারি ২০২০

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com