কিন্তু উপায় নেই । ঘরে থাকাটাই সকলের জন্যে আপাতত কল্যাণকর! অনলাইনে বাজার করার সুযোগ থাকায় বাজারেও যেতে হচ্ছে না।বলা হচ্ছে, এই ভাইরাস হাওয়াতেও অন্যুন চার ঘন্টা বেঁচে থাকতে পারে। তার মানে – পথে চলার সময়ে ভাইরাস পজিটিভ কেউ একটা হাঁচি কিংবা কাশি দিয়ে চলে গেলেও বাতাসে সেই ভাইরাসটি ছড়ায় এবং চার ঘন্টা বাতাসে ভাসতে থাকে। সেই পথে যে কেউ এই চার ঘন্টার মধ্যে হাঁটলে তার মধ্যেও এই ভাইরাস সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা রয়ে যায় ।
তাই সবচাইতে নিরাপদ ভূমিকা হচ্ছে, ঘর থেকে একেবারেই বের না হওয়া । সম্প্রতি একটা অডিও ক্লিপ এলো ম্যাসেজে। অনেকেই পাঠালেন একই ক্লিপ। ভারতীয় কেউ একজন চীনের উহান সিটি থেকে পাঠিয়েছেন এটি। ক্লিপে তিনি তাঁর অভিজ্ঞতা জানিয়েছেন । বলছেন যে, উহান সিটি যেখানে মূলত: এই ভাইরাসের প্রথম প্রাদুর্ভাব – সেখানে এখনও ঘরে ঘরে এই ভাইরাস আক্রান্ত রোগী আছে, কিন্তু কেউ আর হাসপাতালে দৌড়াচ্ছে না। কারণ, তারা জেনে গেছে – এই ভাইরাসের সহজ নিরাময় । তারা দিনে চারবার গরম জলের ভাপ নিচ্ছে ও দিনে অন্তত: চারবার গরম দুধ, গরম জল, বা চা পান করছে । আর এতেই আক্রান্তরা নিরাময় হয়ে যাচ্ছে ।
একটু বিচিত্র শোনালেও সত্য যে, ২০১৮’র জুলাই মাসে ভারতের এলাহাবাদ ও গয়ায় গিয়ে প্রচন্ড গরম এবং ধুলোতে ভয়াবহ নিউমোনিয়া আক্রান্ত হয়ে কোলকাতায় এসে অ্যাপেলো হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আইসিইউ তে ছিলাম, তখনও অন্য সব ট্রিটমেন্ট এর সাথে গরম জলের ভাপ নেবার ব্যবস্থা ছিল। প্রায় কেটলির মতই দেখতে চীনামাটির একটি বিশেষ পাত্রে টাটকা গরম জল নিয়ে, তাতে একটু লবণ মিশিয়ে ভাপ নেবার ব্যবস্থা দিয়েছিল । তাতে যে বিশেষ উপকার আমি পেয়েছি – তা সর্বাংশে সত্য।
শোনা যাচ্ছে, এই ভাইরাসটি আক্রমণ করছে ফুসফুস, তাহলে এই গরম ভাপ নেবার তরিকাটি সন্দেহাতীতভাবেই যে ফলদায়ক হবে তা’ বলাই বাহুল্য । আমেরিকার চিকিৎসা পদ্ধতিতেও এখন ভারতীয় সংস্কৃতির যোগাসন, ধ্যান, আয়ুর্বেদীয় চিকিৎসা পদ্ধতির বেশ কদর বেড়েছে । এরাও বুঝতে পারছে এইসব প্রাকৃতিক পদ্ধতির নিরাময় কৌশলের কোনরকম পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নেই। নেই কোন দীর্ঘসূত্রীয় ভোগান্তিও !
ঘরবন্দী এই সময়টাতে উৎকণ্ঠিত কত স্বজনেরাই এখানকার সময়ের পার্থক্য না বুঝেই মধ্যরাতেও কল করছেন, কত জনে কতভাবে খোঁজ নিচ্ছেন। আপন মানুষের প্রাণের পরশ যে মিলছে – এই গৃহান্তরিতকালে তাও তো কম পাওয়া নয়। ফেসবুক, ওয়াটসঅ্যাপ প্রভৃতি সেই যোগাযোগের সুযোগ আরও সহজ করেই দিয়েছে। এখন আর বাইরে ফোন করার জন্যে কার্ড কিনতে হয় না। অতিসহজেই পৃথিবীর এ প্রান্ত থেকে অপরপ্রান্তে থাকা স্বজন, বন্ধুর খোঁজ নেয়া যায় ।
এক ভয়াবহ বিষাদময়, আতঙ্কের সময় কাটছে সচেতন সবারই সারা পৃথিবীতে। তবে এই আতঙ্ক ছুঁতেই পারেনি এমন সংখ্যাও নেহাৎ কম নয়। সামাজিক দূরত্ব রক্ষার দায় এদের মনে রেখাপাতও করেনি, সমানে রাস্তায় হাঁটছে, বাজারে যাচ্ছে, পার্কে ঘুরছে, পাশাপাশি বসছে নানান সামাজিক কার্যক্রমে। অথচ, বুঝতেই পারছে না, এই ভাইরাসটির বহনকারী হতে পারে পাশে বসা মানুষটিই, যা সে নিজেও জানে না।
আমেরিকার সব শহরেই এই ভাইরাসটি বিপুলহারে ছড়িয়ে পড়ছে। ধারণা করা হচ্ছে এক লক্ষ বা দুই লক্ষ মানুষের মৃত্যু হতে পারে শুধু আমেরিকাতেই । পার্কে, স্কুলে, জাহাজে, তাঁবুতে অস্থায়ী হাসপাতাল, আইসিইউ রুম তৈরী করা হচ্ছে। ডাক্তার, নার্সেরাও আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন বিপুলহারে। নিউইয়র্ক শহরে পাঁচহাজারেরও অধিক পুলিশ বিভাগের লোক আক্রান্ত ! এই রোগে আক্রান্ত কয়েকজন সিনেটর। মারা গেছে স্পেনের রাজকুমারী, এই ভাইরাসের আতঙ্কে আত্মহত্যা করেছেন জার্মানের অর্থমন্ত্রী। আক্রান্ত যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীও!
এই মুহূর্তে মুহূর্মুহূ এমারজেন্সী মেডিকেল এ্যাম্বুলেন্সের গগনবিদারী আওয়াজে জানলার কাঁচের শার্সিও কেঁপে উঠছে ! রাস্তায় সার করে থাকা গাড়িগুলো বিগত কদিন স্টার্ট দেয়নি কেউ। কেটে যাচ্ছে রাতের পরে রাত নির্ঘুম,নিদ্রাবিহীন। একটা পাখির ডাকও শোনা যাচ্ছে না কোথাও। কাঠবেড়ালের প্রাত্যহিক দৌড়ঝাঁপও দেখা যাচ্ছে না। পথিকশূন্য রাস্তা নীরবে পুড়ে যাচ্ছে চৈত্রের দহনে । আলখাল্লা বুড়ো এই চৈত্রেই কার চোখে যেন সর্বনাশ দেখার কথা কাতরস্বরে বলেছিলেন । আর এই চৈত্রেই বিপুল সর্বনাশের দহন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে একটি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জীবাণু, মানুষেরই শরীরে শরীরে ! পরিত্রাণও এর প্রকৃতির দেয়া জলেই ! হিন্দী ভাষায় করা নীচের অডিও ক্লিপটি শুনুন, যার সারমর্ম হচ্ছে এই:
“করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মনে হলে বা শরীরে সর্দি জ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পেলে:-
• দিনে চারবার লবণ মেশানো গরম জলের ভাপ নিন।
• দিনে চারবার অন্তত: গরম দুধ, গরম জল বা চা পান করুন।”
লেখক : স্বপন চক্রবর্ত্তী,নিউইয়র্ক,যুক্তরাষ্ট্র থেকে (কক্সবাজারের রামু প্রবাসী) ৩১ মার্চ ২০২০
Posted ১১:৫২ অপরাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩১ মার্চ ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta