কক্সবাংলা ডটকম(১২ এপ্রিল) :: করোনা মোকাবিলায় যখন পুরো বিশ্ব হিমশিম খাচ্ছে, বিশ্ব অর্থনীতি যখন টালমাটাল, অনেক কোম্পানিই যখন আর্থিক ক্ষতির মুখে বন্ধ হওয়ার উপক্রম, সেই সময় কিছু তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান এ করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে ফুলেফেঁপে উঠছে। বিশেষ করে ঘরবন্দি মানুষের জন্য নানা সেবা প্রদানের মাধ্যমে বিশ্বসেরা কয়েকটি তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির আয় প্রত্যাশার চেয়ে কয়েকগুণ বাড়ছে।
এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আমাজন, গুগলের মূল কোম্পানি অ্যালফাবেট, সফটওয়্যার জায়ান্ট মাইক্রোসফট, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। মূলত ঘরবন্দি মানুষের যোগাযোগ ও প্রাত্যহিক জীবনকে আরও সহজ করে একদিকে যেমন ব্যবহারকারী বাড়ছে, তেমনি হুহু করে বাড়ছে আয়।
বিশ্বজুড়ে লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরবন্দি মানুষের প্রাত্যহিক প্রয়োজনীয় পণ্যের জন্য ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। মানুষ ঘরে বসেই প্রয়োজনীয় পণ্য অনলাইন থেকে কিনে নিচ্ছে। এ সুযোগটি নিচ্ছে বিশ্বসেরা ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আমাজন।
বিশ্বের ৩০টিরও বেশি দেশি প্রতিষ্ঠানটির সরাসরি কার্যালয় রয়েছে। আমাজনে কয়েকগুণ চাহিদা বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে সম্প্রতি এক লাখ কর্মী নিতে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি, যারা কেবল আমাজন পণ্যের সংগ্রহশালায় (গুদামে) কাজ করবে।
ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জাকারবার্গ বলেছেন, তাদের প্লাটফর্মে মেসেজিং এবং ভিডিও কলিংয়ে নতুন রেকর্ড তৈরি হয়েছে। জাকারবার্গের ফেসবুক তো আছেই, সঙ্গে হোয়াটসঅ্যাপ, মেসেঞ্জার, ইনস্টাগ্রামেরও রমরমা অবস্থা। গত এক মাসে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জার ব্যবহারকারী দ্বিগুণ হয়েছে।
অ্যালফাবেটের গুগলের ব্যবহার তো বাড়ছেই। ইউটিউবের দর্শক এখন যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। বিষয়টা এমন যে সার্ভার রক্ষণাবেক্ষণেই বাড়তি নজরদারি প্রয়োজন হচ্ছে। গুগল, আমাজন কিংবা ফেসবুকের সার্ভার ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠান ভাড়া নিয়ে ব্যবহার করত। করোনামন্দায় তাদের অধিকাংশের অবস্থায় খারাপ। তবে বর্ধিত ব্যবহারকারীর চাপ সামাল দিতে এসব ফেরতযজ্ঞ সার্ভার নিজেরাই ব্যবহার করছে শীর্ষ তিনটি কোম্পানি।
মাইক্রোসফটের অনলাইননির্ভর সফটওয়্যার ব্যবহার সপ্তাহে ৪০ শতাংশ হারে বাড়ছে। মাইক্রোসফটের ঘরে বসে অফিস করার সুযোগ দিতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ‘মাইক্রোসফট টিম’-এর ব্যবহার গড়ে সপ্তাহে ৩৭ গুণ করে বাড়ছে। প্ল্যাটফর্মটিতে প্রতিদিন ৯০ কোটি মিটিং কল করা হচ্ছে।
নিউইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মানুষের ঘরে অবস্থানকালীন বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির জন্য শাপেবর হয়ে দাঁড়িয়েছে। ই-কমার্স কোম্পানিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ও ওষুধের অর্ডার বেড়েছে।
প্রচলিত প্রেক্ষাগৃহ যখন বন্ধ বিনোদনের মাধ্যম হিসেবে ভিডিও কনটেন্ট সাইট নেটফ্লিক্সের মতো স্ট্রিমিং প্ল্যাটফর্মের চাহিদাও তুঙ্গে। ইতালিতে নেটফ্লিক্স অ্যাপ ডাউনলোড বেড়েছে ৬৬ শতাংশ, স্পেনে বেড়েছে ৩৫ শতাংশ এবং আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মটির গত এক মাসে ব্যবহারবকারী বেড়েছে ৯ শতাংশ।
বিষয়টি এমন দাঁড়িয়েছে ইউটিউব এবং নেটফ্লিক্সের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গতিময় ইন্টারনেট নিশ্চিত করাটা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য নেটফ্লিক্স ও ইউটিউবকে হাই কোয়ালিটির ভিডিও পরিবেশনে এক মাসের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন।
অনেকেই ভেবেছিল, অ্যাপলের যন্ত্রাংশ তৈরির অনেক কারখানায় চীনে অবস্থিত। চীনে ছোবলের পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে করোনা ছড়িয়ে পড়ায় অ্যাপলের অবস্থাও খারাপ হবে। তবে মোটেও সেটা হয়নি। উল্টো অ্যাপলের গানের সম্ভার আইটিউনসসহ অ্যাপস্টোরসহ ডিজিটাল বিভিন্ন সেবার ব্যবহার বৃদ্ধি পেয়েছে। এই করোনার মধ্যেই নতুন ডিভাইসও উন্মোচন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
ভিডিও কলিং প্ল্যাটফর্ম জুম যেন রাতারাতি ধনী হয়ে গেছে। জুম এখন ৪৪ বিলিয়ন ডলারের সমমানের কোম্পানি। অথচ করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের আগে এর অর্ধেকও ছিল না! চীনভিত্তিক ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম আলিবাবা এবং ইন্টারনেট কোম্পানি টেনসেন্টের প্রবৃদ্ধিও ঈর্ষণীয়।
তবে এসবের মধ্যেই উবারের মতো রাইডিং প্ল্যাটফর্মের সত্যিকার অর্থেই দুর্দিন চলছে। অনলাইন হোটেল, বিমান ভাড়ার প্ল্যাটফর্মেরও করুণ দশা। লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই গাড়ি চলাচল সীমিত কিংবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। হোটেল ব্যবসাও শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। এর ফলে বড় ধরনের ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে রাইডিং, হোটেল ও বিমান ভাড়া সংশ্নিষ্ট অনলাইন কোম্পানি। ছোট ছোট অনেক তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানির অবস্থা শোচনীয়।
এ ছাড়া বিশ্ব অর্থনীতিতে বড় ধরনের ধসের আশঙ্কা থাকায় ধারণা করা হচ্ছে, সাময়িক ব্যবহারকারী বাড়লেও গুগল, ফেসবুক, ইউটিউবের মতো বিজ্ঞাপননির্ভর প্ল্যাটফর্মকেও আয়ের প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে হিমশিম খেতে হবে।
Posted ২:২০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৩ এপ্রিল ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta