কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৯ জুন) :: বানের পানির মত কক্সবাজার জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে নোবেল করোনাভাইরাস। যেমন শহর তেমন গ্রাম। সবদিকেই করোনার শক্ত ছোবল।এ কারণে দেশের করোনাক্রান্ত জেলাগুলোর মধ্যে চার নম্বরে অবস্থান করছে কক্সবাজার।এর সত্যতা মিলে গত তিন মাসে (২ এপ্রিল থেকে ২৯জুন পর্যন্ত) কক্সবাজার জেলায় ২ হাজার ৫৬১ জনের শরীরে ধরা পড়েছে প্রাণঘাতি করোনা। তন্মধ্যে সদর উপজেলার পৌসভাতেই পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি করোনা রোগী এবং মৃত্যূর খবর। জেলার ৭ উপজেলায় যেখানে মোট ৩৮ জনের মৃত্যূ হয়েছে সেখানে সদরেই মৃত্যূ হয়েছে ১৯ জনের। যাদের বেশির ভাগই শ্বাসকষ্ট জনিত। আর ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালে করোনা ভাইরাসের অসুখের চিকিৎসা শুরু থেকেই হচ্ছিল। তবে তা পরিপূর্ণ ছিল না। যার কারনে জেলার অনেক পরিচিত মুখ সহ ৩৮জনের মৃত্যূ হয়েছে করোনার উপসগ নিয়ে। শুরু থেকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে যদি আইসিইউ,ভেন্টিলেটর ও হাই ফ্লো অক্সিজেন ন্যাজাল ক্যানোলা সুবিধা থাকলে হয়ত অনেক করোনা রোগীর প্রাণ রক্ষা করা সম্ভব হতো।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে হবে সেখানে আইসিইউতে ভেন্টিলেশন,হাই ফ্লো ক্যানুলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন সহ অন্যান্য সুবিধা থাকতে হবে। অবশেষে করোনা মহামারির ৩ মাস পর হলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন অনুযায়ি সে সক সকল সুবিধা নিয়ে পরিপূর্ণ হলো ২৫০ শয্যার কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের চিকিৎসা ব্যবস্থা। এর ফলে দেশের প্রথম জেলা হিসাবে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা ক্রমশই উন্নত থেকে উন্নততর হচ্ছে।
জানা যায়,করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিতসায় জাতিসংঘের আন্তজাতিক শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইসচিআর ৩৫ কোটি টাকা অর্থায়নে গত ২০ জুন চালু হয়েছে ৭টি ভেন্টিলেটর সহ ১০ শয্যার আইসিইউ ও ৮ শয্যার এইসডিইউ। অপর জাতিসংঘের আন্তজাতিক সংস্থা ইউনিসেফের ৫৭ লাখ কোটি টাকা ব্যায়ে হাসপাতাল সম্মুখে নির্মিত হয়েছে সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট।যা দিয়ে পুরো হাসপাতালে ২৪ ঘন্টা অক্সিজেন সরবরাহ করা যাবে। আর করোনা চিকিৎসায় অতিগুরুত্বপূণ হাই ফ্লো ক্যানুলা যার মাধ্যমে তীব্র শ্বাসকষ্টে ভুগতে থাকা রোগীদের স্বাভাবিক করে তুলে সেটিও ৩টি যুক্ত হতে যাচ্ছে ৩০জুন। এছাড়াও সৈকত পাড়ে চালু হয়েছে কক্সবাজারের প্রথম পরিপূর্ণ করোনা আইসোলেশন হাসপাতাল।
কক্সবাজার সদর হাসপাতালের সুপারিন্টেন্ডেন্ট ডাঃ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন সোমবার রাতে কক্সবাংলাকে বলেন,কক্সবাজার জেলায় করোনা রোগীর সংখ্যা ও মৃত্যূ বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রক্ষিতে জেলা প্রশাসন ,সিভিল সাজন,শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং ইউএনএইচসিআর-এর সহযোগিতায় ১০ শয্যার আইসিইউ ও ৮ শয্যার এইসডিইউ দক্ষ জনবল নিয়ে চালু করতে পেরে আমরা খুবই আনন্দিত।পাশাপাশি ইউনিসেফের সহযোগিতায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট‘র কাজও সম্পন্ন হয়েছে।দু-তিন দিনের মধ্যে এটিও চালু হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, অক্সিজেন সিলিন্ডার বোতল এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন থাকলেও করোনায় তীব্র শ্বাসকষ্টে থাকা রোগীদের অক্সিজেন সেচুরেশন নেমে গেলে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা দরকার বেশি। যেটি আমাদের ছিল না। তবে সেটিও আমরা পেতে যাচ্ছি। ৩০ জুন সকাল ১১টায় জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২টি ও ঢাকাস্থ কক্সবাজার জেলা সমিতির উদ্যেগে ১টি সহ মোট ৩টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা (HFNC) আমাদেরকে হস্তান্তর করা হয়েছে।এছাড়া আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইসচিআরও আরও ৩টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দেওয়ার কথা রয়েছে। এর ফলে করোনাক্রান্ত রোগীদের জরুরী ভিত্তিতে সবধরনের চিকিতসায় দিতে সম্ভব হবো। তিনি বলেন. সদর হাসপাতালে বতমানে আইসিইউতে ৩জন এবং এইসডিইউতে ৮ জন রোগী চিকিতসা সেবা নিচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন,আমি যোগদাদের (স্বল্পসময়) একবছরের মধ্যে সদর হাসপাতালে অত্যাধুনিক জরুরী বিভাগ,ভেন্টিলেটর সহ ১০ শয্যার আইসিইউ ও ৮ শয্যার এইসডিইউ,হাই ফ্লো অক্সিজেন ন্যাজাল ক্যানোলা ও সেন্ট্রাল অক্সিজেন প্লান্ট ব্যবস্থা করতে পেরে আমি খুবই সন্তুষ্ট।বাংলাদেশের জেলা সগর হাসপাতালের মধ্যে যা প্রথম করা হলো।স্বাধিনতা পরবর্তী সময়ে যা কোন জেলায় কখনো সম্ভব হয়নি। এজন্য তিনি জেলা প্রশাসন ও আরআরআরসি,জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক সংস্থা, জনপ্রতিনিধি ও সর্বোপরি জেলাবাসীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, সাম্প্রতিক করোনা চিকিৎসায় শেষ ভরসা ভেন্টিলেটর ব্যবহারের পূর্ব পর্যায়ে হাই ফ্লো অক্সিজেন ও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন খুবই কার্যকরি প্রমাণিত। সদর হাসপাতালের ভবনে ১৮টি শয্যায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে। সংযোগ বর্ধিত করে আরও বেশি পরিমাণ শয্যার জন্য হাই ফ্লো অক্সিজেন ও নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে অধিকতর সংখ্যক রোগীকে কার্যকর সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যাবে।
আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণা বলছে, কভিড-১৯ এ আক্রান্ত মোট রোগীর ৮০-৮২ শতাংশ সাধারণ চিকিৎসাতেই সুস্থ হয়ে ওঠেন। বাকি ১৮-২০ শতাংশ রোগীর চিকিৎসা নিতে হয় হাসপাতালে। এদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ রোগীর জন্য প্রয়োজন হতে পারে কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস সুবিধা বা ভেন্টিলেটর। আর জটিল ৫ শতাংশের জন্য লাগতে পারে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা রোগীদের মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত থাকায় আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আইসিইউ, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট ছাড়া করোনা রোগীদের চিকিৎসা খুব মুশকিল। কারণ করোনায় শ্বাসকষ্টের রোগীর যেকোনো সময় অবস্থা খারাপ হতে পারে। ভেন্টিলেশন ছাড়া চিকিৎসার প্রস্তুতি শূন্যের কোঠায়।
Posted ৩:২৬ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ৩০ জুন ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta