দীপক শর্মা দীপু
আমিসহ আমার পরিবারের প্রথমে চারজন করোনা আক্রান্ত হই। এর দুদিন পর আরো দুজনের করোনা পজিটিভ রিপোর্ট আসে। পরিবারের মোট ছয়জন করোনা আক্রান্ত রোগী। তিনদিনেও যখন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে চিকিৎসার ব্যাপারে যোগাযোগ করল না। আমাদের কি করতে হবে সরকারের কোনো দপ্তর যোগাযোগ করল না, পরামর্শ দিল না। তখন সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা ছয় জন হোম আইসোলেশনে থাকবো। কঠোর মনোবল নিয়ে আমরা ঘরে থাকলাম।
৬ জনের ছয় রকম উপসর্গ। তবে সবারই একটা মিল আছে সেটা হচ্ছে স্বাদ, গন্ধ কারো ছিল না। চিকিৎসার জন্য আমার বন্ধু কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শাহজাহান নজিরের শরণাপন্ন হলাম। তিনি ছয়জনের উপসর্গ দেখে ছয় রকমের ওষুধের প্রেশক্রিপশন দিলেন। গরম ভাপ নেয়া, গাগল করা, গরম খাবার খাওয়া, ফল সবজিসহ পুষ্টিকর খাবার খাওয়া। সব রুটিন মাফিক।
প্রথম কয়েকদিন ভালো ভালোই কাটলো। পরে নানা সংকট দেখা দিল। কারণ ঘরের সবাই আক্রান্ত। ঘর থেকে কেউ বের হতে পারেনি। অনেক কিছু প্রয়োজন হয়ে পড়ে কিন্তু বাইরের থেকে আনা কঠিন হয়ে পড়ে। ছয়জনের চিকিৎসা ওষুধ খাবার আরো কত কি প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ঘরে থেকে করোনা চিকিৎসা কঠিন তখনই হয়ে পড়ে যখন একই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হয়। সবাই বাঁচবো, এমন চিন্তাই আমরা অদম্য ছিলাম। ঘরের সবার নির্ভরতা আমার উপর ছিল। আর আমার নির্ভরতা ছিল মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে।
করোনার আতঙ্ক মানসিকভাবে প্রভাব ফেলে। আমি নিজেকে সাহসী মনে করতাম আগে যাদের করোনা হয়েছিল তাদের সাহসও দিয়েছি। কিন্তু নিজে যখন আক্রান্ত হই তখন আতঙ্কিত হই। অজানা ভয় কাজ করে মনে। দিনের বেলায় ভয় আতঙ্ক কাজ করে না। যত রাত হয় ততো অজানা ভয় মনের মধ্যে দানা বাঁধে। মনে হতে থাকে ৬ জনের মধ্যে কারও না কারও শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, নিঃশ্বাস নিতে পারছে না, গলা ব্যথা বেড়ে গেছে, বুকে ব্যথা পাচ্ছে। এমন ভাবতে ভাবতে মনে হয় নিজেরও অক্সিজেন লেভেল কমে যাচ্ছে। তখন হার্টবিট বেড়ে যায়। রাতে ঘুম হয়না।
সকালের সূর্যের আলো দেখলে মনটা আবার স্বাভাবিক হয়ে যায়। রাত আসলে আবার ভয় কাজ করে। এমন ভয় দূর করতে প্রয়োজন একটি পালস অক্সিমিটার। ৬ দিনের মাথায় রাতে ঘুমানোর আগে সবাই অক্সিমিটার দিয়ে অক্সিজেন লেভেল এবং হার্টবিট মাত্রা দেখি। ঘরের সবার অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিক আছে।
আমারও অক্সিজেন লেভেল স্বাভাবিক। কিন্তু আমার হার্টবিট বাড়া থাকে। এর থেকে বুঝতে পারলাম ইয়াং যারা তারা আতঙ্কে হার্ট অ্যাটাকে মারা যায়। তখন মনোবল শক্ত করলাম, স্বাভাবিক হলাম। তবে একই পরিবারের সবাই আক্রান্ত হলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা অনেক কঠিন।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে নানা সংকট মোকাবেলায় সহযোগিতা করেছেন ঝিনুকমালা খেলাঘর আসর, জেলা খেলাঘর আসর, কক্সবাজার সাংবাদিক ইউনিয়ন।আমি কৃতজ্ঞ শ্রদ্ধেয় আবু তাহের চৌধুরী, জাহেদ সরওয়ার সোহেল, নজিবুল ইসলাম নজিব, সুবিমল পাল পান্না, ডাক্তার চন্দন কান্তি দাশ, আবুল কাশেম বাবু, কলিমুল্লাহ ,নয়ন চক্রবর্তী রাজিব দেবদাশ, ডাক্তার রঞ্জন বড়ুয়া, ডাক্তার এনি পাল বাপ্পি, বিশ্বজিৎ বড়ুয়া, নমিতা বড়ুয়া, জয়ন্তী দে জবা। বিশেষ কৃতজ্ঞ বন্ধুবর ডাক্তার শাহজাহান নজির।
৬ জুলাই,কক্সবাজার
Posted ৯:০৮ অপরাহ্ণ | সোমবার, ০৬ জুলাই ২০২০
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta