নজরুল ইসলাম,কুতুবদিয়া(২৭ আগস্ট) :: কক্সবাজারের সাগর বেস্টিত দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ায় গত কয়েক মাস ধরে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলেছে।আর গত ২৪ ঘন্টায় তিন শিশুর মৃত্যূর ঘটনা হওয়ায় আতংক বেড়েছে সচেতন নাগরিক ও অভিভাক মহলে।
কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়,২৬ আগস্ট সকাল ১১টায় পুকুরে ডুবে মৃত্যু বরণ করেছে উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের আলী আকবর পাড়ার বদিউল আলমের একবছরের শিশুপুত্র বাবু।এর ২৪ ঘন্টা পার না হতেই ২৭ আগস্ট সোমবার দুপুরে পুকুরের পাশে খেলার সময় পা পিছলে উপজেলার বড়ঘোপ ইউনিয়নের মিয়ার পাড়া গ্রামের মোঃ মফিজের ছেলে হাবিব (৭) এবং উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের মিয়ারা কাটা গ্রামের মোশারফের ছেলে মোঃ রফিক (২) পানিতে ডুবে দুই শিশুর মৃত্যু হয়েছে।
এনিয়ে দ্বীপ উপজেলায় ২৪ ঘন্টার ব্যবধানে তিন শিশুর মৃত্যূর ঘটনা ঘটল।এর আগে গত ৭ জুলাই পুকুরে ডুবে মৃত্যু বরণ করেছে উপজেলার উত্তর ধুরুং ইউনিয়নের মনছুর আলী হাজীর পাড়ার ফারুকের শিশুপুত্র ফাহিম (১৮ মাস) এবং গত ৩০ জুন পুকুরে ডুবে মৃত্যু বরণ করেন ১৬ বছরের কলেজ পড়ুয়া এক ছাত্র।
কুতুবদিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দেয়া তথ্য অনুসারে কুতুবদিয়া উপজেলায় প্রতিমাসে গড়ে ১৫-২০ জন শিশু পুকুরে ডুবে মৃত্যু বরণ করছে কুতুবদিয়ায়। তাদের মধ্যে অধিকাংশ শিশুর বয়স ৬-১৫ বছর। তারমধ্যে আবার ১৮ মাস বয়স থেকে ৫ বছরের শিশুও রয়েছে। সব মিলিয়ে চলতি বছরের জানুয়ারী মাস থেকে ২৭ আগস্ট পর্যন্ত পুকুরে/জ্বলাশয়ে ডুবে শতাধিক শিশুর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কুতুবদিয়ায় ঘন ঘন শিশুর মৃত্যুর ঘটনাকে অনেকেই এর জন্য অভিভাবকের অসচেতনতাকে দায়ী করলেও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা বলেছেন দ্বীপে জ্বীনের উপদ্রবের কথা।
কুতুবদিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পঃপঃ কর্মকর্তা ডাঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শুধু অভিভাবকের অসচেতনতাই নয় কুতুবদিয়ার জ্বলাশয়গুলোতে জ্বীনের উপদ্রবও রয়েছে। যে কারণে জেলার অন্যান্য উপজেলাগুলোর চেয়ে কুতুবদিয়ায় বেশীর ভাগ পানিতে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ মানুষ ও জ্বীন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। সুতরাং জ্বীনকে অস্বীকার করার উপায় নেই।
কুতুবদিয়া জ্বলাশয়ে কি সত্যি জ্বীনের উপদ্রব আছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি আবুল কালাম বলেন, পাঠ্যবইয়ের গল্পে কাঠুরিয়া ও জলপরীর গল্প শুনেছি। বাস্তবে কখনো দেখি নাই। তবে আমি যখন ছোট ছিলাম তখন বাড়ির মুরব্বিরা নিচের গল্পটি শুনাতেন। পুকুরে বা জলাশয়ে “জইক্ক্যা’’ নামের এক দৈত্য থাকে। ঠিক দুপুর বেলা কিংবা একা একা পুকুর কিংবা জলাশয়ে দ্বারে গেলে ঐ “জইক্ক্যা” শিশুদের ফুল দেখিয়ে পানিতে নামায়। তারপর তার বিশাল লম্বা কালো চুল দিয়ে পেঁচিয়ে পানির গভীরে নিয়ে যায় এবং মেরে পেলে।
তিনি বলেন, এটাত নিছক গল্প। শিশুদের ভয় দেখানোর গল্প। যাতে শিশুরা একাএকা পুকুরে কিংবা জলাশয়ে না যায় সে জন্য এ ধরনের গল্প শুনানো হতো। কিন্তু এখনো অনেকেই এই গল্পকে বিশ্বাস করে বলেন, জলাশয়ে সতীই জ্বীনের উপদ্রব আছে।
কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুজন চৌধুরী বলেন, জেলার অন্যান্য উপজেলার চেয়ে কুতুবদিয়ায় পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা আশংকাজনকহারে বেড়েছে।এটা অবশ্যই একটি উদ্বেগের বিষয়। এর জন্য তিনি অভিভাবকের অসচেতনাকে দায়ী করেছেন। তিনি বলেন, অভিভাবকরা সচেতন হলে শিশুরা পানিতে যাওয়ার সুযোগ পাবে না। তার সাথে সুর মিলিয়েছেন উপজেলা শিক্ষা অফিসারসহ আরো অনেকেই।
কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের সচেতন নাগরিক, নাইক্ষংছড়ি উপজেলা শিক্ষা অফিসার আবু আহমদ বলেন,অভিভাবকদের অসচেতনতার পাশাপাশি সাঁতার না জানার কারণে ৬ বছরের উর্দ্ধের শিশুরা পানিতে ডুবে মৃত্যু বরণ করছে। কুতুবদিয়া যেহেতু দ্বীপ এলাকা তাই শিশুদের সাঁতার শেখানোর জন্য এখনই উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এটি.এম. নুরুল বশর চৌধুরী বলেন, উপজেলায় প্রতিমাসে গড়ে ১৫-২০ জন শিশু পুকুরে/জলাশয়ে ডুবে মৃত্যু বরণ করছে। যা সতিই আতংকের বিষয়। তিনি বলেন, শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবকদের আরও সচেতন হতে হবে। তাদের সময় দিতে দিবে এবং সাঁতার শেখানোর ব্যবস্থা করতে হবে।
Posted ৯:০৭ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta