মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য তথ্য দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো

শুক্রবার, ০৫ অক্টোবর ২০১৮
305 ভিউ
কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য তথ্য দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো

কক্সবাংলা ডটকম(৪ অক্টোবর) :: ব্যাংকের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে বর্তমানে দেশে ১৫টি আইন বা অধ্যাদেশ, ৪৬টি গাইডলাইন, ১০টি রেগুলেশন ও ৪৭৮টি প্রজ্ঞাপন আছে। এসব নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে প্রতি বছর গড়ে ২৬৩টি রিপোর্ট দিতে হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে।

যদিও প্রকৃত পরিস্থিতি গোপন রাখতে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য তথ্য দেয় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের (বিআইবিএম) এক গবেষণায় এমন তথ্যই উঠে এসেছে।

গতকাল রাজধানীর মিরপুরে বিআইবিএম অডিটোরিয়ামে ‘কস্টস ফর কমপ্লায়েন্স উইথ রেগুলেশনস ইন ব্যাংকস’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বছরে ২৬৩টি রিপোর্ট দিতে হয়। এর মধ্যে ১৬ ধরনের রিপোর্ট পাঠাতে হয় দৈনিক ভিত্তিতে। সাপ্তাহিক ভিত্তিতে দুটি, মাসিক ভিত্তিতে ১২৮টি, ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে ১০০টি, ষাণ্মাসিক ভিত্তিতে দুটি ও বার্ষিক ভিত্তিতে দুটি রিপোর্ট পাঠাতে হয়।

কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকে পাঠানো এ প্রতিবেদনের সঙ্গে বাস্তবতার কোনো মিল নেই। ব্যাংক তার সুবিধার্থে অসত্য তথ্য দেয়। এটি পুরোপুরি বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে রিপোর্টের সংখ্যা কমিয়ে সমন্বয় সাধন করতে হবে।

গবেষণায় দেখা যায়, দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কমপ্লায়েন্স পরিপালনের চাপ ও ব্যয় উভয়ই বাড়ছে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে গিয়ে ব্যাংকগুলোকে ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে। তবে দেশের ৯১ শতাংশ ব্যাংকারই মনে করেন, ব্যাংকের অভ্যন্তরে কমপ্লায়েন্সের নীতিগুলো পুরোপুরি বাস্তবায়ন করলে ঝুঁকি অনেক কমে আসবে। ব্যাংকে সুশাসন কার্যকর করার জন্য কমপ্লায়েন্সের বিধিবিধানগুলোর কার্যকর বাস্তবায়ন দেখতে চান তারা।

তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর পাঠানো তথ্যের সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন অনুষ্ঠানের আলোচকরাও। তারা বলেন, কমপ্লায়েন্স হিসেবে নিজেদের সুনাম রক্ষার জন্য অনেক সময় তথ্য গোপন করে ব্যাংক। কখনো কখনো এসব অনিয়মের কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের জরিমানা করে। আবার কখনো গোপনে সেসব নিষ্পত্তি করতে গিয়ে ব্যাংকের বড় অংকের অর্থ খরচ করতে হয়।

বিআইবিএম আয়োজিত এ গোলটেবিল বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বিআইবিএমের অধ্যাপক ও পরিচালক (গবেষণা, উন্নয়ন ও পরামর্শ) ড. প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জ্জী।

এতে বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। চার সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এ গবেষণা সম্পন্ন করে।

গবেষণা দলের অন্য সদস্যরা হলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ও বিআইবিএমের অনুষদ সদস্য মো. আব্দুল কাইউম, বিআইবিএমের সহযোগী অধ্যাপক অতুল চন্দ্র পণ্ডিত ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং রেগুলেশন অ্যান্ড পলিসি ডিপার্টমেন্টের উপমহাব্যবস্থাপক রূপ রতন পাইন।

ব্যাংকগুলোর পাঠানো প্রতিবেদনের তথ্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে উল্লেখ করে রূপ রতন পাইন বলেন, ব্যাংকগুলো যেসব রিপোর্ট আমাদের কাছে পাঠায়, তার সত্যতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। ব্যাংকগুলো বেশি রিটার্নের আশায় অনেক বেশি ঝুঁকি গ্রহণ করছে। এখান থেকেই কমপ্লায়েন্স ইসু্যুটা আসছে। এর পেছনে যে খরচ হচ্ছে, সেটা বিবেচনায় না নিয়ে এর সুবিধাগুলো নিয়ে ভাবা উচিত।

২০১৭ সালে ব্যাংকগুলোর মোট ব্যয়ের ৬৭ শতাংশই কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধে খরচ হয়েছে। ব্যয়ের ৯ শতাংশ ভাড়া, ১০ শতাংশ ইউলিটিটি ও বাকি ১৪ শতাংশ অন্যান্য খাতে ব্যয় হয়েছে ব্যাংকগুলোর।

বিআইবিএমের গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে ব্যাংকভেদে কমপ্লায়েন্স পরিপালন শাখার সর্বোচ্চ ব্যয় ছিল ৬ কোটি ৭৬ লাখ ৮১ হাজার টাকা। অন্যদিকে খাতটিতে সর্বনিম্ন ১ লাখ ১০ হাজার টাকাও ব্যয় করেছে কোনো কোনো ব্যাংক।

সব মিলিয়ে ২০১৭ সালে দেশের ব্যাংকগুলোর কমপ্লায়েন্স শাখার গড় ব্যয় ছিল ২ কোটি ৬৩ হাজার টাকা, যদিও শাখাটির গড় ব্যয় ২০১৬ সালে ১ কোটি ৭৩ লাখ ৮৪ হাজার ও ২০১৫ সালে ১ কোটি ৮৯ লাখ ৯৯ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ ছিল। সে হিসেবে বলা যায়, প্রতি বছরই ব্যাংকগুলোর কমপ্লায়েন্স শাখার ব্যয় বাড়ছে।

গোলটেবিল আলোচনায় সভাপতির বক্তব্যে বিআইবিএমের মহাপরিচালক ড. তৌফিক আহমদ চৌধূরী বলেন, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে কোনো আপস করা চলবে না। ব্যাংকগুলো কমপ্লায়েন্স নিয়ে অনেক স্লোগান দেয়। যেমন— কমপ্লায়েন্স ফার্স্ট, প্রফিট নেক্সট। কিন্তু আসলে ঘটনা ঘটছে ঠিক তার উল্টো।

বিআইবিএমের চেয়ার প্রফেসর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. বরকত-এ-খোদা বলেন, কমপ্লায়েন্সের খরচ কমানোর কথা না বলে যৌক্তিক করার বিষয়ে ব্যাংকগুলো কথা বলতে পারে। কিছু প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ খরচ রয়েছে, যেগুলো আলাদা করে হিসাব করলে কমপ্লায়েন্সের প্রকৃত খরচ বের হয়ে আসবে। কমপ্লায়েন্সের কোনো বিকল্প নেই।

এটি থেকে কী সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে বা এর থেকে কী পরিমাণ লোকসান কিংবা অর্থদণ্ড থেকে রেহাই পাওয়া যাচ্ছে, সেটাই দেখার বিষয়। তিনি আরো বলেন, ব্যাংকের কর্মীসহ সব পর্যায়ের অংশীজনদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ব্যাংকগুলোকে কমপ্লায়েন্স জোরদার করতে হবে।

পূবালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক হেলাল আহমদ চৌধুরী বলেন, প্রযুক্তির উন্নয়ন ঘটায় ব্যাংকের রিপোর্টিংয়ে এখন কোনো সমস্যা নেই। নন-কমপ্লায়েন্স থাকার সুযোগ নেই। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাত-আটটি বিভাগ একই ধরনের তথ্য চায় । এটি সমন্বয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক ও বিআইবিএমের সুপারনিউমারারি অধ্যাপক মো. ইয়াছিন আলি বলেন, ব্যাংকগুলোর সুদ কমানোর কারণে প্রফিট মার্জিন কমছে। অন্যদিকে কমপ্লায়েন্সের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু সুদ কমিয়েছেন কারা? ব্যাংকের মালিকরাই এটা কমিয়েছেন। তারা সবাই কম-বেশি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত।

কম সুদে ব্যাংক থেকে যে ঋণগুলো যাচ্ছে, তার অর্ধেকই পাচ্ছেন ব্যাংকের মালিকরা। এ কারণে আমানতকারীদের স্বার্থ রক্ষায় কেন্দ্রীয় ব্যাংককে হস্তক্ষেপ করতেই হবে। সবার আগে জনগণের স্বার্থ। তাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গাইডলাইন সঠিকভাবে পরিপালন করতে হবে ব্যাংকগুলোকে।

ব্যাংকগুলোর কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যাংকের বেশকিছু চ্যালেঞ্জের কথা উঠে এসেছে বিআইবিএমের গবেষণায়।

এতে বলা হয়েছে, কমপ্লায়েন্সের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হলো, ব্যাংকগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে যে তথ্য প্রদান করে, তার বিশ্বস্ততা ও নির্ভরযোগ্যতা। অনেক ক্ষেত্রেই ব্যাংকগুলো কেন্দ্রীয় ব্যাংকে অসত্য তথ্য সরবরাহ করে। তাছাড়া ব্যাংকগুলোর দেয়া তথ্য যাচাই করার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ ব্যাংকের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অন্য চ্যালেঞ্জগুলো হলো— ব্যাংকগুলোর ভুল তথ্য সরবরাহ করার ফলে নীতি প্রয়োগে বাধা, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞ জনবল না থাকা, ব্যাংককর্মীদের প্রযুক্তিগত জ্ঞানের অভাব।

এছাড়া ডাটা সংগ্রহ, বিশ্লেষণ, স্থানান্তর, বর্ধিতকরণ ও অ্যানালাইসিসের ক্ষেত্রে ব্যাংককর্মীদের সর্বশেষ মডেল, পদ্ধতি ও সফটওয়্যার সমস্যাও কমপ্লায়েন্স ঘাটতির কারণ বলে বিআইবিএমের জরিপে উঠে এসেছে।

305 ভিউ

Posted ২:০৯ অপরাহ্ণ | শুক্রবার, ০৫ অক্টোবর ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com