কক্সবাংলা ডটকম(১৫ আগস্ট) :: বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। তাঁর আগে এই পদটি অলংকৃত করে গেছেন আরও ২০ কীর্তিপুরুষ। তবে সবার চেয়ে একটু আলাদা সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। যাঁর ছোট্ট নাম এস কে সিনহা। কাছের মানুষরা তাকে চিনেন আরও ছোট নামে-সুরেন।
অনেক ঐতিহাসিক রায় লিখেছেন তিনি। এইবার নিজেকে দিয়েই লিখলেন নতুন ইতিহাস। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির তালিকায় তিনিই প্রথম কোন নাম যিনি মুসলিম নন। ইতিহাসের পাতাকে বর্ণিল করেছে তাঁর জাতিগত পরিচয়। তিনি প্রতিনিধিত্ব করছেন ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীরও। ইতিহাস গড়ে হয়ে উঠেছেন পুরো মণিপুরি জাতির অহংকারের প্রতীক। তিনি বর্তমানে জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনেরও চেয়ারম্যান।
জন্ম ও শিক্ষাজীবন মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার নিভৃত এক গ্রাম তিলকপুর। উন্নয়নের ছোঁয়া থেকে অনেক দূরে থাকলেও গ্রামটিতে শিক্ষার আলো জ্বলছিল অনেক আগে থেকেই। শিক্ষার আলোয় আলোকিত হওয়ায় ‘বিদ্যাসাগর’ নামে অন্য পরিচয় ও রয়েছে গ্রামটির। শতভাগ শিক্ষিতের সে ‘বিদ্যাসাগরে’ই প্রথম সাঁতার কাটা শুরু সুরেন্দ্র কুমার সিনহার।
১৯৫১ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারি তাঁর জন্ম। স্কুল শিক্ষক ললিত মোহন সিনহা ও ধনবতী সিনহার দ্বিতীয় সন্তান এস কে সিনহা পড়ালেখার পাঠ শুরু গ্রামের রানীবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। প্রাথমিক শিক্ষা শেষে ভর্তি হন কমলগঞ্জ বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে।
১৯৬৬ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর এস কে সিনহা গ্রাম ছেড়ে আসেন সিলেটে। শিক্ষার্থী হিসেবে নাম লেখান শিলেটের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ মদন মোহন কলেজে। সেখান থেকে ১৯৬৮ সালে পাস করেন উচ্চ মাধ্যমিক। স্নাতক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৭০ সালে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি ডিগ্রী নেওয়ার পর আইন পেশায় নিজেকে নিয়োজিত করেন তিনি।
কর্মজীবন ১৯৭৪ সালের ১৯শে ডিসেম্বর আইনজীবী হিসেবে যোগ দেন সিলেট জেলা জজ কোর্টে। সিলেটের প্রথিতযশা আইনজীবী সুলেমান রাজা চৌধুরীর জুনিয়র হিসেবে প্র্যাকটিস শুরু করেন। থাকতেন নগরীর তাঁতিপাড়ায়। ১৯৭৮ সাল পর্যন্ত সিলেটেই ছিলেন। ১৯৭৮ সালে হাইকোর্টে আইনজীবী হিসেবে নাম লেখান তিনি। ১৯৯০ সালে এস কে সিনহার পরিচিতি হয় আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে।
স্বনামধন্য আইনজীবী এস আর পালের জুনিয়র হিসেবে আইন পেশা চালিয়ে যান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ নেওয়ার আগ পর্যন্ত। ১৯৯৯ সালের ২৪শে অক্টোবর হাইকোর্টের বিচারক হিসেবে যোগ দেন এস কে সিনহা। দশ বছর পর ২০০৯ সালের ১৬ই জুলাই তিনি আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান।
এস কে সিনহা স্বপ্নের শেষ সীমা ছুঁলেন ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি, বাংলাদেশের ২১তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নেন তিনি। অবসরের বয়স অনুযায়ী ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিচারপতি সিনহা প্রধান বিচারপতি হিসেবে পদে থাকবেন।
বাংলাদেশের সংবিধানের যে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে আনা তত্ত্বাবধারক সরকার ব্যবস্থা আপিল বিভাগের যে বেঞ্চ বাতিল করেছিল, এস কে সিনহা ছিলেন তার অন্যতম সদস্য। এছাড়া ২০১১ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার চূড়ান্ত রায় দেওয়া বেঞ্চেও সদস্য হিসেবে ছিলেন তিনি।
মানুষ সুরেন্দ্র কুমার সিনহা ব্যস্ত, খুব কমই অবসর সময় মেলে এস কে সিনহার। সেটাও মাপা মাপা ব্যয় করেন তিনি। অবসর পেলে গান শুনেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান বিচারপতি। রবীন্দ্র সংগীতই তার পছন্দের তালিকায়।
খাবারে তেমন বাছবিচার না থাকলেও দুর্বলতা রয়েছে বিভিন্ন ভর্তার প্রতি। কোষ্ঠী বিচারে তিনি তুলা রাশির জাতক। পোশাক হিসেবে প্রথম পছন্দ পাঞ্জাবি-পায়জামা। কাছে টানে হালকা ধরণের রঙগুলো। কেমন মানুষ এস কে সিনহা? সহপাঠী-বন্ধুদের মধ্যে ‘সুরেন’ সবারই প্রিয়। তিনি যে মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান একথাটি সবসময় স্মরণে রাখেন এস কে সিনহা।
সবসময়ই সততার প্রতি খেয়াল রেখেই এগিয়ে গেছেন। পড়াশোনায় কোন বিরতি নেই তাঁর। শত ব্যস্ততার মাঝে ফাঁক পেলেই বইয়ের পাতা চোখের সামনে মেলে ধরেন এস কে সিনহা। বিচারপতি হওয়ার পরও এতটুকু বদলে যায়নি সুরেন। শত ব্যস্ততার মাঝেও বন্ধুদের সঙ্গে নিয়মিতই ফোনে আলাপ করেন তিনি।
Posted ১:৪৯ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ১৬ আগস্ট ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta