বিশেষ প্রতিবেদক(১২ ডিসেম্বর) :: নেদারল্যান্ডের হেগে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) মিয়ানমারের এজেন্ট ও সরকার প্রধান অং সান সু চি বলেছেন, দেশটির রাখাইন রাজ্যের বিপুল রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর উচ্ছেদের মূলে রয়েছে একটি বিশেষ সশস্ত্র সংঘাতের ঘটনা। কোনো গণহত্যার কারণে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে পালায়নি। তবে তার এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করেছেন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। তাদের দাবি, রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যার বিষয়টি লুকানোর জন্য আইসিজেতে সু চি নির্লজ্জ মিথ্যাচার করেছেন।
দ্য আরাকান সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোহিবুল্লা দ্য অ্যাসোসিয়েট প্রেস নিউজ এজেন্সিকে বলেন, একজন চোর কখনোই স্বীকার করবে না যে সে চোর। কিন্তু প্রমাণের মধ্য দিয়ে তার বিচার করা সম্ভব। আর বিশ্ব আমাদের কাছ থেকে প্রমাণ সংগ্রহ করেছে। এর ভিত্তিতে বিশ্বই মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর ঘটে যাওয়া গণ্যহত্যার বিচার করবে।
কক্সবাজারের কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অবস্থানরত মোহিবুল্লা আরো বলেন, ‘এমনকি সু চিও যদি মিথ্যাচার করে থাকেন, তিনিও রেহাই পাবেন না। তাকে নিশ্চয়ই বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। বিশ্ব তার অন্যায়ের বিরুদ্ধে অবশ্যই পদক্ষেপ নেবে।’
কুতুপালং ক্যাম্পে আরেক রোহিঙ্গা শরণার্থী নূর কামাল বলেন, ‘মিয়ানমার সেনাবাহিনী সাধারণ রোহিঙ্গাদের ধরে নিয়ে গিয়ে গুলি করে মেরেছে, শরীরে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে- এটা কি গণ্যহত্যা নয়? এ ঘটনার বিপরীতে সু চি আন্তর্জাতিক আদালতে যা বলেছেন তা মিথ্যাচার ছাড়া আর কী?’
নুরুল আলম নামে আরেক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘হেগে আইসিজেতে সু চি গিয়েছেন শুধুই নিজের লাভের কথা চিন্তা করে। এর মধ্য দিয়ে শরণার্থীতে পরিণত হওয়া রোহিঙ্গাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে না। তিনি সেখানে গিয়েছেনই মিথ্যাচার করতে। যাতে তিনি ২০২০ সালে মিয়ানমারে আসন্ন নির্বাচনে জনসমর্থন আদায় করতে পারেন।’
রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর গণহত্যা চালানোর অভিযোগ মামলার শুনানিতে বুধবার নিজ দেশের সমর্থনে যুক্তি দিতে গিয়ে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ‘অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিমূলক’ বলে দাবি করেন অং সান সু চি।
১৯৪৮ সালের জেনোসাইড কনভেনশন লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে মামলাটি করে পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গাম্বিয়া। দ্য হেগে চলমান বিচার কার্যক্রমে মিয়ানমারের প্রতিনিধিত্বকারীর পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির রাজনৈতিক প্রধান ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি।
আদালতে সু চি স্বীকার করেন, রাখাইনে বর্মি সেনাবাহিনী হয়তো ‘অসামঞ্জস্যহীনভাবে’ শক্তি প্রয়োগ করেছে; কিন্তু পশ্চিম রাখাইন প্রদেশের পরিস্থিতি ছিল ‘জটিল ও সহজে অনুধাবনের অযোগ্য’।
তিনি বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশের প্রকৃত পরিস্থিতির একটি অসম্পূর্ণ ও বিভ্রান্তিকর চিত্র তুলে ধরেছে গাম্বিয়া।
এর আগে মঙ্গলবার গাম্বিয়ার আইনজীবীরা মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নানাভাবে সামরিক বাহিনীর হাতে নিপীড়নের শিকার হওয়ার সাক্ষ্য-প্রমাণ তুলে ধরেন। সে সময় আদালতে ভাবাবেগহীন শ্রোতার ভূমিকা নিয়ে বসেছিলেন সু চি।
Posted ১:৫১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta