কক্সবাংলা ডটকম(২১ আগস্ট) :: রাত পোহালেই ঈদুল আজহা বা কোরবানির ঈদ। রাজধানীর পশুর হাটগুলোতে এখন চলছে শেষ মুহূর্তের বেচাকেনা। শেষ মুহূর্তে ক্রেতার সংখ্যা কম থাকায় রাজধানীর অনেক হাটেই পশুর দাম পড়ে গেছে।
ছোট গরু টুকটাক বিক্রি হলেও বড় গরুর ব্যাপারীদের মধ্য চলছে চাপা কান্না। কেউ বলছেন লোকসান হলেও তারা গরু বিক্রি করে ফিরছেন। কেউ আবার গরু নিয়ে বাড়ি ফিরছেন।
মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টায় রাজধানীর একাধিক পশুর হাট ঘুরে এই চিত্র দেখা যায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পেয়ে ও পশু বিক্রি করতে না পেরে রাজধানীর কোরবানির হাটগুলোতে পশু ব্যবসায়ীরা অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সোমবার (২০ আগস্ট) পর্যন্ত পশুর দাম যথেষ্ট ভালো পেলেও মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) সকাল থেকে পশুর দাম অর্ধেকের নেমে আসে। জীবিকার তাগিদে অনেকেই অপেক্ষাকৃত কম দামে পশু বিক্রি করে দিয়েছেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী দাম না পাওয়ায় পশু বিক্রি করতে পারেননি। শেষ রাতে কম মূল্যে পশু বিক্রি করে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অনেকেই।
মানিকগঞ্জের বাগুটিয়া চর কাটারিপাড়া থেকে ১৩ জন চরবাসী মিলে ২৬টি গরু নিয়ে রাজধানীর মেরাদিয়ে হাটে এসেছেন ইউনুস আলী। সোমবার পর্যন্ত ৮টি গরু বিক্রি করতে পারলেও বাকি ১৮টি গরু বিক্রি করতে পারেননি তারা।
ইউনুস আলী বলেন,সোমবার যে গরু ক্রেতারা ৬০ হাজার টাকা বলেছে,মঙ্গলবার সেই গরুর দাম বলছে ২৫ হাজার টাকা। এই দামে গরু বিক্রি করলে লাভ তো দূরের কথা, অনেক টাকা লস হবে।’
এই ব্যবসায়ী কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার দুইটা ছেলে মেয়ে মাদ্রাসায় পড়ে। কিছু লাভের আসায় এত দূর থেকে গরু নিয়ে ঢাকায় এসেছি। কিন্তু দুটা টাকা নিয়ে যদি বাড়ি না ফিরি, তাহলে তারা ঈদের জামাতে যাবে না। বাড়ি ফিরবো কেমনে?’ বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
কুষ্টিয়া থেকে ২২টি বড় বড় গরু নিয়ে হাটে এসেছেন তবিবুর রহমান। তিনি জানান, তার প্রতিটি গরুর দাম দুই লাখ টাকা করে। মানুষ গরুগুলো দেখতে আসে। কিন্তু দাম বলে সর্বোচ্চ ৮০ হাজার টাকা করে। এ কারণে তিনি একটা গরুও বিক্রি করতে পারেননি। পরে রাত ১০টার দিকে গরুগুলো ট্রাক ভর্তি করে আবারও গ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন।
তিনি বলেন, ‘গ্রাম থেকে গরুগুলো আনতে প্রতিটির জন্য আড়াই হাজার টাকা করে মোট ৫৫ হাজার টাকা ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে। এখন বাড়ি ফেরত নিতে প্রতিটি গরুর জন্য তিন হাজার টাকা করে দিতে হচ্ছে। সব টাকাই লস। বড় গরু হওয়ায় কেউ কিনতে চায় না। দামও বলে না।’ বলতে বলতে চোখের পানি মুছতে থাকেন তবিবুর।
শুধু মানিকগঞ্জের ইউনুস আলী কিংবা কুষ্টিয়ার তবিবুর রহমান নয়, তাদের মতো শত শত পশু ব্যবসায়ী কেঁদেছেন পশু বিক্রি করতে না পেরে, কেউবা ন্যায্য দাম না পেয়ে।
সোমবার নাগরীর ২৫টি হাটের প্রায় সব কটিতেই এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারত ও মিয়ানমার থেকে গরু আসার কারণে বাজারে দেশি গরুর দাম কমে গেছে।
মঙ্গলবার সকাল থেকেই রাজধানীর কোরবানির পশুর হাটগুলোতে ছিল মন্দা। পর্যাপ্ত গরু দেখা গেলেও ক্রেতা ছিল কম। গত কয়েকদিন ধরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে দর-কষাকষির চিত্র দেখা গেলেও মঙ্গলবার তা আর ছিল না। ক্রেতারা যে দাম বলছেন তা শুনে মন খারাপ হয়ে যায় ব্যবসায়ীদের।
তারা জানান, সোমবার থেকে ভারত ও মিয়ানমারের পশু আসতে শুরু করে। তারা ধারণা করেছিলেন এবার কোনও পশু আসবে না, সীমান্তে কড়াকড়ি থাকবে। যে কারণে গত বছরের মতো এবছরও শেষ মুহূর্তে পশুর সংকট দেখা দিতে পারে। তাই এত দিন বেশি দাম হাঁকিয়ে পশু ধরে রেখেছেন। কিন্তু সোমবার থেকে ভারত ও মিয়ানমারের পশু আসতে থাকায় মঙ্গলবার পশুর অনেকটাই দাম পড়ে যায়।
এদিকে রাজধানীর ধোলাইখাল হাটে গরু কিনতে আসা কামাল হোসেন জানান, গতকাল যে গরু দেড় লাখ টাকা, আজ তা এক লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
Posted ১২:৫০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ২২ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta