কক্সবাংলা ডটকম(৫ আগষ্ট) :: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে থাকা ছাত্রদের ওপর হামলার গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের বিভ্রান্ত করার চেষ্টা চালিয়েছে সংঘবদ্ধ কয়েকটি চক্র। তারা ফটোসপে এডিট করা বিভিন্ন হামলার ছবি, ও অশ্লীল ভাষার প্ল্যাকার্ড তৈরি করে ফেসুবকে ভাইরাল করেছে। এতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পুলিশ ও সরকারের মুখোমুখি করে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।
কেউ ফেসবুকে এসে লাইভে জানিয়েছে ধানমন্ডিতে ২ জন মারা গেছে, কেউ কান্নকাটি করে বলেছে চারজন শিক্ষার্থী ধর্ষণের শিকার হয়েছে, কেউ বলেছে আইডিয়াল স্কুলের ফারদিন ফাহিম নামে এক শিক্ষার্থী পুলিশের হামলায় মারা গেছে, আবার কেউ কেউ বলেছে ছাত্রলীগ পিটিয়ে হত্যা করেছে।
তবে এ সব সংবাদের কোনোটিরই সত্যতা পাওয়া যায়নি। অনেক ফেসবুক আইডি থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থীর মৃত্যুর গুজব, নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ, প্রধানমন্ত্রীর ভুল বার্তা ইত্যাদি দেয়া হয়েছে। এ সব গুজবের ভিডিও দেখার পর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আরো ফুঁসে ওঠে। চলমান আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার উদ্দেশ্যে এ সব গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
গুজব ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়িয়ে ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমের উসকানিদাতা হিসেবে ২৮টি ফেসবুক ও টুইটার আইডি শনাক্ত করেছে প্রশাসন। এ সব আইডির মালিক ও অ্যাডমিনদের আইনের আওতায় আনতে শনিবার রাত থেকে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ অভিযান শুরু করেছে। ইতোমধ্যে এ ২৮টি ফেসবুক আইডির বিরুদ্ধে রমনা থানায় একটি মামলা করেছে পুলিশের সাইবার ক্রাইম বিভাগ।
সবচেয়ে বেশি আলোচিত অভিনেত্রী নওশাবা
যারা গুজব ছড়িয়েছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আলোচিত ‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদ ফেসবুক লাইভের বিষয়টি। কারণ, অন্য যে মেয়েরা এই লাইভে এসে এই গুজব ছড়িয়েছে তারা সবার মুখ ঢেকে কথা বলেছে। একজন ছিল বোরকা পরা এবং বাকি দুই জন কলেজের পোশাক পরা। কিন্তু মুখ ঢাকা।
অভিনেত্রী নওশাবা হাঁপাতে হাঁপাতে কান্নামুখর হয়ে বলছেন জিগাতলায় একজনের চোখ তুলে ফেলা ও দুই জনকে মেরে ফেলা হয়েছে।
‘আমি কাজী নওশাবা আহমেদ, আপনাদের জানাতে চাই। একটু আগে ঝিগাতলায় আমাদেরই ছোট ভাইদের একজনের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে। আপনারা সবাই একসাথে হোন প্লিজ। ওদেরকে প্রোটেকশন দেন, বাচ্চাগুলো আনসেভ অবস্থায় আছে, প্লিজ। আপনারা রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন, প্লিজ রাস্তায় নামেন এবং ওদেরকে প্রোটেকশন দেন।’
‘সরকার প্রোটেকশন দিতে না পারলে আপনারা মা-বাবা, ভাই-বোন হয়ে বাচ্চাগুলোকে প্রোটেকশন দেন, এটা আমার রিক্যুয়েস্ট। এদেশের মানুষ-নাগরিক হিসেবে আপনাদের কাছে রিক্যুয়েস্ট করছি যে, ঝিগাতলায় একটি স্কুলে একটি ছাত্রের চোখ তুলে ফেলা হয়েছে এবং দুইজনকে মেরে ফেলা হয়েছে এবং ওদের অ্যাটাক করা হয়েছে। ছাত্রলীগের ছেলেরা সেটা করেছে। প্লিজ ওদের বাঁচান প্লিজ। তারা ঝিগাতলায় আছে।’
যা বলেছেন নওশাবা
ঘটনার পরপরই যোগাযোগ করা হয় এই অভিনেত্রীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘জিগাতলা শুধু সমস্যা বিশাল সমস্যা। আপনারা মিডিয়া কাভারেজটা ওই দিকে দেন। বাচ্চা বাচ্চা ছাত্রদের গুলি করা হচ্ছে।’
কোন সাইটে এই ঘটনা ঘটছে জানতে চাইলে নওশাবা বলেন, ‘এটা জিগাতলার দিকে বিজিবির ওই সাইটে হচ্ছে।’
ওটা তো কিছুক্ষণ আগে ছিল এখন তো নিয়ন্ত্রণে এমন প্রশ্নে উত্তরে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘আপনার কি মনে হচ্ছে সব নিয়ন্ত্রণে।’
‘আমার জানা মতে যতটুকু শুনেছি চারজনকে রেপ করা হয়েছে। আপনারা যদি ওখানে কাভারেজটা দেন তাহলে ভালো হয়।’
‘আপনারা ছাত্রদের ভালো সময় থাকবেন খারাপ সময় থাকবেন না তা তো হয় না। ওখানে আরো মেয়ে আটকা আছে তাদের হেল্প করেন। অনেককে কোপানো হয়েছে তারা ঢাকামেডিকেলে ভর্তি সেখানে যান খোঁজ নেন। আপনারা যা তথ্য চান দিচ্ছি কীভাবে নেবেন বলেন।’
বোরকা পরা তরুণীর চিৎকার
রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে এক তরুণী চিৎকার করে বলতে থাকেন, ‘জিগাতলাতে তাদের পার্টি সেন্টারে অনেক অনেক মেয়েকে রেপ করা হচ্ছে। প্লিজ কিছু করেন।’
মেয়েটির মুখ এমনিতেই ঢাকা ছিল। কিন্তু রেকর্ডিংয়ের সময় তার সেই মুখেও ক্যামেরা ধরা হয়নি।
চিৎকার করে ওই তরুণী যা যা বলতে থাকেন তার সব বুঝা যায় না। যতটুকু বুঝা যায় সেটুকু হলো, ‘ওরা গুলি করতেছে, ওরা কি ছাত্র? ওরা কি আদৌ কোনো ছাত্র?’
এটি যখন রেকর্ড করা হচ্ছিল, তখন দুই তরুণকে পেছন থেকে দেখা যায়। তবে তারা ক্যামেরার সামনে আসেনি। ফলে তাদের চেহারা দেখা যায়নি।
মেয়েটি বলতে থাকেন, ‘জিগাতলা পার্টি সেন্টারে প্রতিটা ছাত্ররে ঢুকাইয়া ঢুকাইয়া গুলি করতাছে, প্লিজ।’
মেয়েটি দাবি করতে থাকে, সেখানে সাধারণ মানুষসহ অনেকের রক্ত ঝরেছে এবং তাতে তিনি নিজেও ছিলেন। তবে কার্যালয়ের ভেতরে আহত হলে তিনি কীভাবে বের হলেন, সেটা বলেননি।’
পপুলারের ভেতর থেকে ঢাকা আরেক তরুণীর রেকর্ডিং
এই তরুণী দাবি করতে থাকেন আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে মারা হয়েছে সাত জনকে, ধর্ষণ করা হয়েছে চার জনকে।
এই তরুণী কথা বলেছেন একটি কাঁচ ঘেরা কক্ষে। পরে তিনি নিজেই জানান ধানমন্ডিতে পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে দাঁড়িয়ে কথা বলছেন।
এই তরুণী বলতে থাকেন, ‘ছাত্রলীগের কর্মীরা বস্তি থেকে ছেলেদেরকে নিয়ে এসে তাদেরকে স্কুলের পোশাক দিয়েছে, তাদের আইডি কার্ডও দেয়া হয়েছে।’
‘আবদুর রউফের স্টুডেন্ট ছিলাম’
আরেকজন তরুণের কথা ফেসবুকে ছড়িয়েছে যিনি একটি সাক্ষাৎকারের মতো দেন। নিজের পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নাম বলেননি। বলেন, ‘আমি বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক স্কুলের স্টুডেন্ট ছিলাম, এখন পরীক্ষা দিয়ে বাইর হয়ে গেছি।’
এই তরুণের বর্ণনা পুরোপুরি অবিশ্বাস্য। বলেন, ‘আমাদের ওপর প্রথমে জিগাতলায় হামলা হয়েছে। চারজন মেয়ে ডাইরেক্ট রেইপড।’
‘আমি খবর পাইছি চার জনকে গুলি করা হয়েছে। একজন মারা গেছে।’
‘আমাদের ভিডিওটা ভাইরাল করেন’
একসঙ্গে দুইজন তরুণী রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে সাক্ষাৎকার দেন। একজন বলেন, ‘চাইরজনকে রেইপড করা হয়েছে।’
আরেকজন তরুণী বলেন, ‘মিডিয়া এখানে আসছে না কেন। এই ভিডিওটা ভাইরাল করেন।’
Posted ২:০২ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta