সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৩শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ৬ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চকরিয়ার যুবক রহমানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আকুতি

শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮
281 ভিউ
চকরিয়ার যুবক রহমানের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে আকুতি

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(২৬ জানুয়ারী) :: সমাজের অন্যদশ জনের মতো স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে চান চকরিয়া উপজেলার পুর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের বাসিন্দা টগবগে যুবক আবদুর রহমান। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে পরিশ্রম করে আয়ের টাকায় পরিবার নিয়ে সুন্দর পৃথিবীতে বেঁেচ থাকতে যত ইচ্ছা তাঁর। কষ্ঠের জীবন নিয়ে তিনি আর ভিক্ষা করতে চান না। আগের মতো সুন্দর পরিবেশে ভালভাবে চলাফেরা করতে চান। কিন্তু নিয়তি বড়ই নির্মম।

মাত্র ২৮বছর বয়সের এই যুবক এখন পরাজিত হচ্ছেন মরণব্যধি জটিল রোগে। শরীরের নীচের অংশে তাঁর মাংস পেশি বেড়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। প্রায় ত্রিশ কেজি ওজনের অতিরিক্ত মাংসপেশি নিয়ে চিকিৎসা খরচ যোগাতে এবং সংসারের ঘাণি টানতে যুবক আবদুর রহমান এখন ভিক্ষার থলে হাতে নিয়েছেন। ঘুরছেন উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। তবে শরীরের এত পরিমাণ অতিরিক্ত ওজন নিয়ে ভালভাবে চলাফেরা করতেও পারছেনা হতভাগা এই যুবক।

জন্মের পর দীর্ঘ ১৬বছর ধরে যুবক আবদুর রহমান জটিল এ রোগের সাথে লড়াই করে চলতে চলতে বর্তমানে তার শরীরের অবস্থা খুবই নাজুক। অভাবগ্রস্থ পরিবারে তাকে চিকিৎসা করানোর মতো সামর্থ্যও নেই। চিকিৎসকদের অভিমত, যুবক আবদুর রহমানকে স্বাভাবিক জীবনে ফেরাতে হলে এই মুহুর্তে প্রয়োজন তার উন্নত চিকিৎসা। এই জন্য দরকার বিপুল টাকা। যুবক আবদুর রহমান সুন্দর পৃথিবীতে বেঁেচ থাকতে চান। আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে চান। সেই জন্য তিনি সরকার প্রধান দেশরত্ম শেখ হাসিনা, সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় ও দেশের বিত্তমান মানুষদের কাছে সহযোগিতা চান।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, চকরিয়া উপজেলার পূর্ববড় ভেওলা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের আনিসপাড়া গ্রামে যুবক আবদুর রহমানের বাড়ি। বাবা টুনু মিয়া মারা গেছে তাঁর জন্মের অন্তত ১২বছর পর। পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুবই নাজুক। বাড়িভিটা ছাড়া পরিবারে অন্য কোন সম্পদ নেই। বলতে গেলে পরিবারটি একেবারে নি:স্ব।

পরিবার সদস্য ও প্রতিবেশীদের ভাষ্যমতে, কিশোর বয়সে আবদুর রহমান অন্য দশজনের মতো কাজ করে আয়ের টাকায় সংসারে ভরণপোষণ করতো। ১২বছর বয়সে বাবা মারা যাওয়ার পর মা ও ভাই বোনের খাবার জোগাড় করতে দৈনিক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো খাবার হোটেলে।

কিন্তু ষোল বছর আগে অর্থ্যাৎ ২০০২ সালের দিকে এসে শরীরে দুরারোগ্য ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত হন যুবক আবদুর রহমান। এরপর থেকে আস্তে আস্তে বড় হতে থাকেন শরীরের নীচের অংশে অতিরিক্ত মাংসপেশী। প্রথমদিকে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে মা-ভাইয়েরা তাঁর চিকিৎসা চালালেও পরে সামর্থ্য হারিয়ে ভিক্ষা করতে নামে আবদুর রহমান।

ফাইলেরিয়া রোগে আক্রান্ত যুবক আবদুর রহমান জানান, তার বয়স যখন ১৩বছর তখন হোটেলে দৈনিক মজুরী হিসেবে কাজ করে সংসার চালাতেন। একদিন শরীরে জ্বর অনুভব করেছিল। এরপর ডাক্তারের কাছে গেলে পরীক্ষার পর ধরা পড়ে তার ম্যালেরিয়া রোগ। ভূলের কারণে শরীরের ফোলা জখমের ঔষূধ খাওয়ান তার পরিবারের সদস্যরা।

এরপর থেকে শরীরের পুরো অংশ ফোলা দেখা দেয়। আস্তে আস্তে তা সারা শরীরে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে এবং বড় হতে থাকে। চিকিৎসকের শরানাপন্ন হলে শরীরের উপরের অংশ কোন রকম ভাল হলেও কোমরের নীচ থেকে পা পর্যন্ত গোলাকৃত রকমের ফোলা রয়ে যায়। সংসারে মা-ভাই বোনের তাড়নায় ইচ্ছা থাকলেও আর্থিক দৈন্যদশার কারনে ভাল চিকিৎসা করতে পারেনি।

ছেলের রোগ সর্ম্পকে মা হাজেরা খাতুন বলেন, প্রায় ষোল বছর আগে আবদুর রহমানের শরীরে প্রথমে ধীরে ধীরে গুটি উঠে ফোলে যায়। কোন রকম ঔষধ খেলে তা আস্তে আস্তে শরীরে মধ্যে বুকে ও পিঠের অংশ গুলো কমে যায়। কিছুদিন যেতে না যেতেই শুধুমাত্র কোমর থেকে পায়ের গোড়ালী পর্যন্ত গুটি উঠে ফোলা দেখা দেয়।

এ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে স্থানীয় হোমিওসহ এ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারের চিকিৎসা নিয়ে থাকলেও তাতে কোন উপকার পাইনি। প্রথমদিকে গুটি গুলো নরম ছিল। তখন তেমন জ্বালা যন্ত্রণা হতো না। এখন গুটি গুলো বড় হয়েছে। এতে বেড়েছে জ¦ালা যন্ত্রনাও। বর্তমানে যন্ত্রণায় কাতর হয়ে চিৎকার করলে বাড়ির আশ-পাশের লোকজনে ঘুম ভেঙ্গে যায়। অতিরিক্ত মাংসপেশি নিয়ে রাতে বিছানায় ভাল করে ঘুমাতেও পারেনা যুবক রহমান।

তিনি বলেন, পরে অবস্থা দিনদিন অবনতি হলে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গিয়ে পরীক্ষা করি। তাতে ধরা পড়ে আবদুর রহমান ফাইলেরিয়া (গোদ) রোগে আক্রান্ত হয়েছে। ওইসময় চিকিৎসার জন্য চকরিয়া জমজম হাসপাতাল, মালুমঘাট মেমোরিয়াল খ্রীষ্টান হাসপাতালের অনেক ডাক্তারও দেখিয়েছি। তাতেও ভাল হয়নি। পরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে হাসপাতালে ভর্তি দেয়।

সেখানে ১৫দিন চিকিৎসা নেয়ার পর টাকার অভাবের কারণে আর চিকিৎসা নেয়া সম্ভব হয়নি। পরিবারের যা ছিল এবং মানুষের কাছ থেকে ভিক্ষা করে ওইসময় তাঁর চিকিৎসা করার ব্যবস্থা করেছিলাম। এখন তো তাকে চিকিৎসা করানোর মতো আমাদের সামর্থ্য নেই।

যুবক আবদুর রহমানের রোগ সর্ম্পকে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলা সদর হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) ডা: কবির আহমদ বলেন, রোগটির নাম হচ্ছে ফাইলেরিয়া (গোদ)। এ রোগের ভাল চিকিৎসা রয়েছে। তবে তাঁর জন্য বিপুল টাকার প্রয়োজন।

তিনি বলেন, শরীরে ফোলে বেড়ে যাওয়া মাংসপেশি বিচ্ছিন্ন করতে হবে। তাঁরজন্য ক্ষতস্থানে প্লাস্টিক সার্জারি করতে হবে। ভাল চিকিৎসা পেলে যুবক রহমান আবারও আগের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারবে।

 

281 ভিউ

Posted ১:১৩ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ২৭ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com