সোমবার ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩০শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ১৩ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

চকরিয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের রাজ্যে সবজি চাষ

বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯
161 ভিউ
চকরিয়ায় পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের রাজ্যে সবজি চাষ

এম.জিয়াবুল হক,চকরিয়া(১১ ডিসেম্বর) :: পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের ভয়াবহ আগ্রাসনে গেল দুইযুগ ধরে জর্জরিত ছিল কক্সবাজারের চকরিয়ার মাতামুহুরী নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠা ছোট্ট গ্রাম কাকারা। গ্রামটিতে তামাকের আগ্রাসন বিদ্যমান থাকলেও গত দুই-তিন বছর ধরে এই কাকারা এখন সবজি চাষে বিপ্লব ঘটাচ্ছে। প্রতিদিন ভোর থেকেই সকাল দশটার মধ্যে দেশের বিভিন্নপ্রান্তে যাচ্ছে অন্তত ১৫টি ট্রাকভর্তি সবজি।

এই সবজি চকরিয়া উপজেলা সদর থেকে সরাসরি পৌঁছে যাচ্ছে একশ কিলোমিটার দূরের চট্টগ্রামের রিয়াজউদ্দিন বাজার এবং কুমিল্লার নিমসা আড়তে। মূলত ভালো সড়ক যোগাযোগের কারণে এবছর উপজেলার প্রতিটি অঞ্চলে সবজি চাষে বিপ্লব হয়েছে।

বিশেষ করে তামাক চাষ অধ্যুষিত জনপদ উপজেলার কাকারা, সুরাজপুর-মানিকপুর, লক্ষ্যারচর ও কৈয়ারবিল ইউনিয়নে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাক চাষের বদলে কয়েকবছর ধরে কৃষকরা সবজি চাষে উৎসাহী হয়ে উঠেছেন। পাশাপাশি ভালো দাম পাওয়ায় কাকারা ও সুরাজপুর-মানিকপুর ইউনিয়নের পাহাড়ি পতিত জমিতে যেখানে আগে তামাক চাষ হতো বর্তমানে সেখানে মিষ্টিপানের চাষ শুরু করেছেন কৃষকরা। উপজেলার কাকারা ইউনিয়নে কৃষি বিভাগের অধীন মাইজকাকারা ব্লকে গিয়ে দেখা গেছে, অন্যের দেখাদেখিতে একাধিক কৃষক পান চাষ করেছেন।

প্রাকৃতিক পরিবেশ অনুকুলে থাকায় বরজে পান চাষ বাম্পার ফলন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন কৃষি বিভাগের উপ-সহকারি কর্মকর্তা এসএম জসিম উদ্দিন মিজান। তিনি ওইসময় মাইজকাকারা ব্লকে একটি পান উৎপাদন প্রদর্শণী দেখিয়ে এধরণের অভিমত প্রকাশ করেছেন।

স্থানীয় কৃষকেরা জানান, কাকারা ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে সদ্য নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা জহিরুল ইসলাম ছিদ্দিকী সড়কটি প্রতিদিন সকালে ভরপুর হয়ে উঠে রকমারি সবজিতে। আবার অনেক কৃষক উৎপাদিত সবজি ভালো দাম পেতে নিয়ে যাচ্ছে উপজেলা সদরের কয়েকটি বড় হাচে। স্থানীয় কৃষকরা ক্ষেত থেকে সবজি তুলে কাঁধে নিয়ে সড়কের ওপর রাখছেন। আর নির্ধারিত ট্রাক এসে সেগুলো ভর্তি করে নিচ্ছে। এর আগেই দাম নির্ধারণ করে মাপা হচ্ছে ওজন।

কৃষকরা বলছেন, প্রতিদিন এই ওয়ার্ডেই ১০ হাজার কেজির বেশি সবজি উৎপাদন হচ্ছে। সেগুলো শীতের আগাম সবজি। শীতের মৌসুম আসবে আরো অন্তত ১৫ দিন পর। তখন উৎপাদন আরো বাড়বে। এখনকার সবজির মধ্যে আছে ঝিঙে, চিচিঙা, তিতকরলা, ঢেঁড়স, লাউ, কুমড়া, বরবটি, মুলা, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি।

তারা জানান, কয়েক বছর আগেও এলাকার কৃষকরা সড়ক যোগাযোগ ঠিক না থাকায় ভালো দাম না পেয়ে পার্বত্য লামা ও আলীকদমের পাহাড়ে গিয়ে সবজি চাষ করতেন। এখন সেই কৃষকরাই গ্রামে ফিরে এসেছেন এবং সবজি চাষে বিপ্লব ঘটিয়েছেন।

স্থানীয় কৃষক মোহাম্মদ তাহের ও মোহাম্মদ শামীম বলেন, একসময় তামাকের আগ্রাসনের পাশাপাশি সড়ক যোগাযোগ না থাকায় পাহাড়ে গিয়ে সবজির আবাদ করেছি। কয়েকবছর ধরে সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় পাহাড়ের বদলে এখন নিজের গ্রামে সবজির আবাদ করছি। এতে অনেক বেশি লাভবান হচ্ছি। এখানে লামা-আলীকদমের মতো পথে-পথে চাঁদা দিতে হয় না। পাহাড়ের চেয়ে অনেক ভালো দাম পাচ্ছি।

স্থানীয় কৃষকদের পাশাপাশি বর্তমানে পরিবেশ বিধ্বংসী তামাকের রাজ্যে সবজি চাষ করছেন প্রবাস থেকে দেশে ফেরা যুবক মোহাম্মদ এহেসান। তিনি বলেন, ‘খুবই আগ্রহ নিয়ে চাষ করছি। উৎপাদন ভালো, মুনাফাও ভালো পাচ্ছি।’

স্থানীয় কল্লোল আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক শাহাদাত হোসেন ছিদ্দিকী বলেন, চকরিয়া উপজেলা সদরের সাথে যোগাযোগের প্রধান সড়কটি চার বছর আগেও ছিল বিধ্বস্ত-বিচ্ছিন্ন। এই সড়কের কারণে এলাকার বাসিন্দারা গ্রাম ছেড়ে পৌরসভায় গিয়ে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। তখন সবজি চাষ এবং বিপণনের কথা চিন্তাই করতে পারেননি এলাকার কৃষকরা। পরে গ্রাম ছেড়ে তারাও পাহাড়ে গিয়ে সবজি চাষ করেছেন। কয়েক বছরে সবজি চাষের জমি ঘিরে মুক্তিযোদ্ধার নামে সড়কটি এলাকার এই অভাবনীয় পরিবর্তন এনে দিয়েছে।

স্থানীয় মেম্বার নাছির উদ্দিন নাছু বলেন, ‘একমাত্র ওই সড়কটি মানুষকে কৃষিচাষে উদ্বুদ্ধ করেছে। এখন কাঁধে করে সবজি বিক্রি করতে হয় না। সাত নম্বর ওয়ার্ডের ঘুনিয়া থেকে মিনিবাজার পর্যন্ত পুরোটাই এখন সবজি গ্রাম।

চকরিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এসএম নাছিম হোসেন বলেন, একসময়ে তামাকের রাজ্য কাকারা ইউনিয়নে বর্তমানে ২০০ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করা হয়েছে। তন্মধ্যে এবছর সবজি বিপ্লব ঘটেছে ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডে। এখানে প্রায় ৫০ হেক্টর জায়গায় সবজির উৎপাদন চলছে। এতে প্রতিদিন কম করে হলেও ১০ টন উৎপাদিত সবজি দেশের বিভিন্নপ্রান্তে যাচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন প্রান্তিক কৃষক।’

তিনি বলেন, উপজেলার আরো কয়েকটি ইউনিয়নে এবছর প্রাকৃতিক পরিবেশ ভালো থাকায় সবজি উৎপাদনে অতীতের রের্কড ভঙ্গের সম্ভাবনা রয়েছে। আশাকরি উৎপাদিত ফসল বিক্রি করে প্রান্তিক কৃষকরা এবছর আর্থিকভাবে বেশ স্বাবলম্বি হবে। তবে কৃষি কর্মকর্তা উৎপাদিত ফসল মজুদ রেখে সারাবছর বিক্রি করতে ব্যবস্থা গ্রহনে একটি হিমাগার স্থাপন করা জরুরী বলে মনে করেন।

জানতে চাইলে কাকারা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান শওকত ওসমান বলেন, ‘আমাদের ইউনিয়নটি তামাকের জন্য বিখ্যাত থাকলেও আস্তে আস্তে সেই তকমা মুছতে শুরু করেছে। এখন বাজারে সবজির ভাল দাম পাওয়ায় এবং সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হওয়ায় সবজি চাষে বিপ্লব ঘটাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকেরা।

161 ভিউ

Posted ১:৪০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com