মুকুল কান্তি দাশ,চকরিয়া(১৫ মার্চ) :: কক্সবাজার-চট্রগ্রাম মহাসড়কের কিলিং জোন খ্যাত চকরিয়া বিভিন্ন সড়কে প্রতি নিয়তই দুর্ঘটনায় হতাহতের সংখ্যা বাড়ছে। কোনোভাবেই যেন কমছে না সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু।বর্তমানে প্রায় প্রতিদিনই চকরিয়ার সড়কে ঘটছে এমন প্রাণহানির ঘটনা।গতবছর এ সড়কে রাস্তা সংস্কারের কাজ পর্যবেক্ষন করতে গিয়ে গাড়ীর চাপায় নিহত হন চকরিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের এক প্রকৌশলীর।
এভাবে একের পর এক সড়ক দুর্ঘটনায় দীর্ঘতর হচ্ছে লাশের মিছিল। দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মৃত্যুর পাশাপাশি অনেকে হচ্ছেন পঙ্গুও।
চলতি মার্চ মাসে দুই সপ্তাহে চকরিয়া বিভিন্ন সড়কে ১২ জন মর্মান্তিক দুর্ঘটনার শিকার হয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেছেন।আহতের সংখ্যা অর্ধশতাধিক। তবে প্রতিনিয়ত এ সড়কে প্রাণহানির ঘটনা ঘটলেও এখনও ঘুমিয়ে আছে দায়িত্বে থাকা দপ্তরগুলো।
এরই ধারাবাহিকতায় বুধবার বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে কক্সবাজারের চকরিয়ায় চিরিঙ্গা-বদরখালী সড়কের চকরিয়া থানার অদূরে মালবাহী লরির ধাক্কায় শিক্ষক দম্পতির ৫ বছর বয়সী শিশু নুর মোহাম্মদ তাকবীর প্রাণ হারিয়েছে।
পরে উপস্থিত জনতা চালককে পাকড়াও করে পুলিশে সোপর্দ করেছে। এনিয়ে পৃথক সড়ক দুর্ঘটনায় ২৪ ঘন্টায় তিনজন নিহত হয়েছেন চকরিয়ায়।
নিহতের পরিবার সুত্র জানায়, ডুলাহাজার বাংলা বিভাগের প্রভাষক ছৈয়দ ইসমাইল হোসেন সিরাজী ও পূর্ব বড় ভেওলা জিএনএ মিশনারী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা কাউসার জান্নাত। তাদের বড় মেয়ে নূরে নাজাত দিবা বর্ণমালা একাডেমির ৫ম শ্রেণীতে পড়ে।
বুধবার বিকালে মা কাউসার জান্নাত ছোট ছেলে তাকবীরকে নিয়ে একটি ইজিবাইকে করে মেয়েকে স্কুল থেকে নিতে যাচ্ছিল।
স্কুলের নিকটে পৌছে ইজিবাইক থেকে নেমে রাস্তা পার হওয়ার সময় দ্রুতগামী লরির ধাক্কায় ঘটনাস্থলে মারা যায় শিশু তাকবীর। মায়ের হাত থেকে ফসকে যাওয়া ছেলের মৃত্যুর দৃশ্য দেখে মা কাউছার জ্ঞান হারিয়ে সড়কে পড়ে আহত হয়।
শিশুর মরদেহ বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত চকরিয়ার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ছিল। মাকে ও ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল।
এদিকে মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফাইতং সড়কে ইট বোঝাই ট্রাকের চাপায় ৫ বছর বয়সী শিশু উম্মে হাবিবা নিহত হয়।ওই শিশু ইউনিসেফের পাঠদান শিক্ষাকন্দ্রের ১ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। অপর দিকে ৮ মার্চ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাছের সাধে ধাক্কা লেগে আহত হওয়া বাসযাত্রী মিকলঘাট এলাকার ছৈয়দ আলম (৭০) চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যায় একই দিন।
এ ব্যাপারে নিরাপদ সড়ক চাই কক্সবাজার জেলার সভাপতি জসিম উদ্দিন কিশোর বলেন, চালকদের মধ্যে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, বেপরোয়া গতিতে গাড়ি চালনা, বিপজ্জনক ওভারটেকিং, হেলপার দিয়ে গাড়ি চালানো, যাত্রীদের অসতর্কতা, ট্রাফিক আইন না মানা, চলন্ত অবস্থায় মোবাইল বা হেড ফোন ব্যবহার করা, মাদক সেবন করে গাড়ি চালানো এবং অসচেতনতার কারণেই সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে।
এ ব্যাপারে যাত্রী কল্যান সমিতির কক্সবাজার জেলার আহব্বায়ক আমিনুল হক চৌধুরী ও সদস্য সচিব চঞ্চল দাশগুপ্ত জানান,সড়ক দুর্ঘটনা তদারকির দায়িত্বে বিআরটিএ, ট্রাফিক পুলিশ ও জেলা প্রশাসন থাকলেও কোনো দপ্তরেরই এ সমস্যা রোধে নেই কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ। তাদের মধ্যে নেই কোনো সমন্বয়ও।বছরের বিভিন্ন সময় প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক মানুষ মারা গেলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই চালক বা মালিকের উপযুক্ত শাস্তির নজির নেই।
Posted ৭:৪৪ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৪ মার্চ ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta