মোঃ ফারুক,পেকুয়া(১৩ ডিসেম্বর) :: ২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচনের ভোট যুদ্ধ শুরু হয়ে ৪দিন পার হয়ে গেছে। ৩০ ডিসেম্বরের এ নির্বাচনে প্রচারণা ৪দিনে রাজনীতিক দলগুলোর মনোনীত প্রার্থীরা ঘরে ঘরে যাচ্ছে ভোট প্রার্থনায়।
আ’লীগের পক্ষ থেকে সরকারের উন্নয়নের সফলতা ও দেশকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য নৌকায় ভোট প্রার্থনা করছে প্রার্থী জাফর আলম। অন্যদিকে খালেদা জিয়া, যুদ্ধাপরাধী মামলার সাঁজাপ্রাপ্ত আসামী দেলোয়ার হোসেনকে মুক্ত করা, তারেক জিয়া ও সালাউদ্দিন আহমেদকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্য জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করছে ধানের শীষ প্রার্থী হাসিনা আহমেদ। এনিয়ে দু’প্রার্থীর ব্যাপক প্রচারণার মাঝেও নৌকার প্রার্থী জাফর আলম অনেকাংশে এগিয়ে আছে বলে দলীয় নেতাকর্মী ও সমর্থকদের ধারণা।
বিশেষ করে প্রতি পাড়া, মহল্লা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভিত্তিক প্রতিটি অলিগলিতে নৌকার পোষ্টারে চেয়ে গেলেও ধানের শীষের পোষ্টার অনেক কম চোঁখে পড়ছে। চকরিয়া-পেকুয়ার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গিয়েও এ রকম দেখা গেছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনে বাংলাদেশ আ’লীগ ও বিএনপি, স্বতন্ত্র প্রার্থীসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ৮জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে প্রতীক নিলেও মূলত আ’লীগের নেতৃত্বে মহাজোট থেকে চকরিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান উপজেলা আ’লীগ সভাপতি জাফর আলম নৌকা আর বিএনপির নেতৃত্বে ঐক্যফ্রন্ট থেকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাবেক যোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী সালাউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ ধানের শীষ নিয়ে ভোটের ময়দানে সক্রিয় হয়ে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
আ’লীগ দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নৌকার পক্ষে জাফর আলমের নেতৃত্বে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠনসহ স্থানীয় সমর্থকরা পাড়া, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভিত্তিক নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন। কেন্দ্র অনুযায়ী কেন্দ্র কমিটি গঠন করে দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকার পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছে। সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন তুলে ধরে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় আবারো নৌকাকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করার জন্যও আহ্বান জানাচ্ছেন নেতাকর্মীরা।
এছাড়াও সহযোগি সংগঠনের নেতাকর্মীরা বিভিন্ন গ্রুপে ভাগ হয়ে পাড়া মহল্লায় নারী পুরুষের কাছে ছুটে চলছে। প্রতিটি পাড়ায় পাড়ায় করছে উঠান বৈঠক। এ ক্ষেত্রে জাফর আলম কোন অনুষ্ঠানে থাকুক আর নাই থাকুক নেতাকর্মীরা ছুটে চলায় অতিত আ’লীগ প্রার্থীর চাইতে বর্তমান প্রার্থী অনেকাংশে এগিয়ে আছে। এছাড়াও বিগত ১০বছর জাফর আলম দলীয় নেতাকর্মীসহ সাধারণ জনগণের পাশে থেকে বিভিন্ন সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার প্রতিদান হিসাবে অনেক সাধারণ ভোটারেরাও তার প্রচারণায় নিজস্ব উদ্যোগে নৌকার পক্ষে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন।
এমনকি জাফর আলমের নির্বাচনী পোষ্টারে চেয়ে গেছে চকরিয়া-পেকুয়া উপজেলার বিভিন্ন অলিগলি। নৌকার পোষ্টার লাগানোর জন্য নেতাকর্মীদের মাঝে একপ্রকার প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ৪দিনের প্রচার ১মাসের প্রচারকেও হারিয়ে দিয়েছে দলীয় নেতাকর্মীরা। এমন মন্তব্য সাধারণ ভোটারদের। যার কারণে অনেক সুবিধা অবস্থায় আছে জাফর আলমের নৌকা।
এবিষয়ে জানতে চাইলে চকরিয়া উপজেলাস্থ মাতামহুরী সাংগঠনিক থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন বাবুল, চকরিয়া পৌর আ’লীগের সভাপতি জাহেদুল ইসলাম লিটু, চকরিয়া উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাইছার উদ্দিন কছির অভিন্ন শুরে বলেন, চকরিয়া-পেকুয়ায় জাফর আলমের ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। যার কারণে নেত্রী জাফর আলমকে নৌকা উপহার দিয়েছেন। নৌকাকে জিতিয়ে আনতে ৪দিনের প্রচারণায় ইনশাল্লাহ প্রতিটি পাড়া মহল্লায় আমরা ছুটে গেছি। উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরে নৌকার পক্ষে ভোট চাচ্ছি। যেখানে যাচ্ছি দলীয় নেতাকর্মীদের গণজোয়ার ও সাধারণ জনগণের অসম্ভব ছাড়া পাচ্ছি। ইনশাল্লাহ আগামী ৩০ ডিসেম্বর নৌকা বিপুল ভোটে বিজয় লাভ করবে।
পেকুয়া উপজেলা যুবলীগের সভাপতি জেলা পরিষদ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, সাবেক সভাপতি উজানটিয়া ইউপির চেয়ারম্যান, টইটং ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান জাহেদুল ইসলাম, রাজাখালী ইউপির চেয়ারম্যান ছৈয়দনুর, উপজেলা যুবলীগের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক জালাল উদ্দিন, ছাত্রলীগের সি: যুগ্ন-সাধারণ ওসমাণ সরওয়ার বাপ্পি বলেন, নৌকার পক্ষে পেকুয়া উপজেলা আ’লীগ ও সহযোগি সংগঠন ঐক্যবদ্ধ। জাফর আলমের নেতৃত্বে পেকুয়ায় নৌকার গণজোয়ার এসে গেছে। বিএনপির নেতা সালউদ্দিন আহমদের দূর্গ আমরা ভেঙ্গে দিয়েছি। অতিতে নৌকার যে ভোট ছিল পেকুয়ায় ইনশাল্লাহ তার দ্বিগুণ আমরা পাব। সাধারণ জনগণ ও মহিলা ভোটারের সাড়া পাচ্ছি বেশি। আর পেকুয়া উপজেলার প্রতিটি স্থানে জাফর আলমের পোষ্টারে চেয়ে দিয়েছি। উৎসবমুখর পরিবেশে দলীয় নেতাকর্মীরা নৌকার প্রচার চালাচ্ছে। এর ধারাবাহিকতা ভোট পর্যন্ত বজায় থাকবে।
অন্যদিকে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী হাসিনা আহমেদ তার স্বামীর অবর্তমানে দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকা, দলীয় নেতাকর্মীরা মামলা জটিলতায় দলীয় কর্মসূচি পালন করতে না পারা, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ভিত্তিক নেতাকর্মীরা ভোটের ময়দানে নামতে ভয় পাওয়াসহ বিভিন্ন কারণে প্রচারে পিছিয়ে পড়েছে। এমনিক বিগত ৪দিন নৌকার পোষ্টার অলিগলিতে লাগানো হলেও ধানের শীষের পোষ্টার হাতেঘোনা কিছু দেখা মিললেও প্রর্যাপ্ত না বলে সাধারণ জনগণের ধারণা। এছাড়াও হাসিনার সফর সঙ্গী ছাড়া পাড়া, ওয়ার্ড, ইউনিয়ন ও উপজেলা ভিত্তিক কোন নেতাকর্মীকে ভোটের ময়দানে দেখা যাচ্ছেনা। কার্যত দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকায় সাংগঠনিক দূর্বলতায় সব জায়গায় নেতাকর্মীদের দেখা মিলছে বলে জানা গেছে।
বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির প্রার্থী হাসিনা আহমেদ ভোটের রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হয়রানীকে দায়ী করছেন। তাদের অভিযোগ প্রতিটি পাড়া মহল্লায় যারা ভোট খোঁজতে যাচ্ছে পুলিশ তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হয়রানি করছে। ভোটের ময়দানে নামলে আটক করা হবে হুমকি দিচ্ছে। যার কারণে নির্বাচনের প্রচারে পিছিয়ে পড়া। এক্ষেত্রে দলীয় নেতাকর্মীরা পুলিশী হয়রানি অব্যাহত থাকলেও ভোটের মাঠ শক্তহাতে মোকাবেলা করে ধানের শীষকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করার প্রত্যাশা করছেন।
Posted ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta