কক্সবাংলা ডটকম(১৬ অক্টোবর) :: পৃথিবীর দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি এবং সবচেয়ে জনবহুল দেশ চীন একদলীয় কমিউনিস্ট পার্টির শাসনে পরিচালিত হয়। চীনা কমিউনিস্ট পার্টির পঞ্চবার্ষিক সম্মেলন ১৮ অক্টোবর শুরু হতে যাচ্ছে। পার্টির ১৯তম এই সম্মেলন সামনের দিনগুলোতে চীন এবং বিশ্ব অর্থনীতি ও বাণিজ্যের দিক নির্দেশনার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি বাঁক হতে পারে। সে কারণে একই সঙ্গে আশা ও উদ্বেগ নিয়ে অপেক্ষা করছে সংশ্লিষ্টরা।
সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য নেতা নির্বাচন। ৩৫০ জনের কেন্দ্রীয় কমিটি, ২৫ সদস্যের পলিটব্যুরো এবং পলিটব্যুরো স্ট্যান্ডিং কমিটি নির্বাচন করা হবে এ সম্মেলনে। দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং এই সম্মেলনের মাধ্যমে নিজের অবস্থানকে আরো সুদৃঢ় করবেন বলে পূর্বাভাস দিচ্ছেন বিশ্লেষকরা। সে ক্ষেত্রে তিনি দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখার ক্ষেত্রে জোর দেবেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।
তবে চীনের কমিউনিস্ট পার্টি বরাবরই তাদের অর্থনৈতিক নীতি প্রচারে সতর্কতা অবলম্বন করে, যদিও মুদ্রানীতি, মূলধন নিয়ন্ত্রণ এবং রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক উদ্যোগের সংস্কারসহ বিভিন্ন বিষয়ের গতিধারা বোঝার জন্য চীনের অর্থবাজার এই সম্মেলনের দিকে আগ্রহ ভরে তাকিয়ে থাকবে।
স্থিতিশীলতা: সপ্তাহব্যাপী সম্মেলনে যাই ঘটুক না কেন, মেইনল্যান্ড চায়নার বাজার উচ্চমাত্রায় স্থিতিশীল থাকবে বলেই আশা করা যায়। ২০১৫ সালের শেয়ার মার্কেট বিপর্যয়ের সময় যেভাবে কর্তৃপক্ষ কঠোরভাবে বড় ইনডেস্কের পতন নিয়ন্ত্রণ করেছিল, পার্টির নীতি সে রকমই থাকবে। এর ফলে পার্টির যে শক্তিশালী ভাবমূর্তি সেটি অক্ষুণ্ন রাখা সম্ভব হবে।
শেয়ারবাজারে রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত বিনিয়োগকারীদের তথাকথিত ‘জাতীয় দল’ যে কোনো পরিস্থিতির জন্য সতর্ক থাকবে। এর আগে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলি, যেমন সংসদের অধিবেশনের সময় রেগুলেটররা ব্রোকারেজ ও মিউচুয়াল ফান্ডগুলোকে বিক্রি না করার জন্য মৌখিক নির্দেশনা দিয়েছে।
একইভাবে, কোনো রকম তারল্যসংকট এড়ানোর জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক মুক্তবাজার কার্যক্রমের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণে তারল্যের নিশ্চয়তা দেবে। দরকার হলে তারা ৩ দশমিক ১ ট্রিলিয়ন ডলার রিজার্ভকে এক্সচেঞ্জ রেট ঠিক রাখার জন্য ব্যবহার করবে।
সম্মেলনের পরে নীতিকাঠামো মোটামুটি একই রকম থাকবে বলে অধিকাংশ বিশ্লেষক মনে করছেন, যদিও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের বিশ্বস্ত সতীর্থের সংখ্যা আরো বাড়বেন শি জিনপিং। বেইজিংভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান গাভেকাল ড্রাগনোকমিসের আর্থার ক্রোয়েবর মনে করেন, রাজনৈতিক ফলাফল যাই আসুক অর্থনৈতিক নীতিতে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না।
রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক উদ্যোগের সংস্কার: চার বছর যাবত্ কমিউনিস্ট পার্টির নেতাদের অন্যতম অগ্রাধিকার ছিল বিশাল ও স্থবির রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক উদ্যোগগুলোর (এসওই) কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি। কেবল অতি সম্প্রতি এ বিষয়ে কিছু উন্নতি লক্ষ করা গেছে এবং আরো কর্মতত্পরতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তথাকথিত ‘মিশ্র মালিকানা’ এ ব্যবস্থা উন্নয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে। রাষ্ট্র পরিচালিত একীভবন এ ধরনের আরো একটি নীতি।
বেইজিং গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেমন— ইস্পাত, বিদ্যুত্, কেমিক্যাল এবং আরো কিছু ক্ষেত্রে এই নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করছে। সাংহাইভিত্তিক হেজ ফান্ড প্রেস্টন অ্যাসেট ম্যানেজমেন্টের হুয়াং জিওয়াওমিং বলেন, প্রতিটি ক্ষেত্রেই শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিগুলো, যেগুলোর বেশির ভাগই এসওই, কেনার একটি সহজ বিনিয়োগ কৌশল ২০১৬ সালের শুরু থেকেই গড়ের থেকে বেশি মুনাফা এনেছে।
মুদ্রানীতি: কয়েক বছর ধরে প্রবৃদ্ধি এবং অতিরিক্ত ঋণ কমানো— এই দুইয়ের ভারসাম্য আনার চেষ্টা করছে চীন। এ বছর প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা সহজেই নাগালে থাকায় ঋণের বোঝা কমানোর দিকেই বেশি মনোযোগ থাকবে। তবে প্রবৃদ্ধি বর্তমানে কিছুটা ধীর হওয়ায় মুদ্রানীতিতে কর্তৃপক্ষ কতটা কড়াকড়ি করবেন সেটি দেখার বিষয়। স্বল্পমেয়াদি হার কমানোর চেষ্টা করলে সেটি ঋণস্ফীতির জন্ম দিতে পারে। অন্যদিকে স্বল্পমেয়াদি হার বাড়ানো হলে তা প্রবৃদ্ধির জন্য হুমকি হতে পারে।
Posted ১:৪৮ পূর্বাহ্ণ | মঙ্গলবার, ১৭ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta