কক্সবাংলা ডটকম(১৬ মে) :: নয়া দিল্লিতে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সিতারামন সাংবাদিকদের এই বলে অবাক করে দেন যে ‘ভারত মহাসাগরে ভারত ও চীনের নৌবাহিনীর মধ্যে কোনো উত্তেজনা নেই।’
ভারত মহাসাগরে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের জন্য কথিত ‘লড়াই’ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সিতারামন বলেন, ভারতের উপকূলীয় এলাকায় চীনের গণমুক্তি ফৌজের নৌবাহিনী (পিএলএএন) কোনো হুমকি নয়। তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে অস্বীকৃতি জানান।
ভারতের নিরাপত্তা মহলের সবাই মন্ত্রীর এই মূল্যায়নের সাথে একমত হবেন না। গত কয়েক বছর ধরে চীন দ্রুততার সাথে ভারত মহাসাগরে তাদের নৌবাহিনীর উপস্থিতি বাড়ানোর ফলে ভারতের কৌশলগত সম্প্রদায়ের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
চীন কেবল দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের ঐতিহ্যবাহী প্রভাব-বলয়েই ঢুকে পড়েনি, সেইসাথে ভূ-রাজনৈতিক সুবিধা লাভের জন্য তাদের জলদস্যূ মোকাবেলার নামে যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের বিষয়টি কাজে লাগিয়ে আঞ্চলিক দেশগুলোর কল্যাণকামী মিত্র হিসেবে তাদের সাথে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলেছে।
আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, ভারত মহাসাগরে চীন তার কৌশলগত অবস্থান মজবুত করেছে। চীনের জলদস্যূ-দমন বাহিনীতে এখন নিয়ন্ত্রিত ক্ষেপণাস্ত্র ফ্রিগেট, অত্যাধুনিক ডেস্ট্রোয়ার ও বিশেষ অভিযান বাহিনীও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জিবুতিতে নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপন করার মাধ্যমে চীন এখন ভারত মহাসাগরের কৌশলগত অবস্থানগুলোতে প্রবেশ করতে চাইছে।
নয়া দিল্লির জন্য ভারত মহাসাগরে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ আসছে চীনা সাবমেরিনগুলো থেকে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীনা জলদস্যূ-দমন বহরে অনিবার্যভাবে সাবমেরিনের উপস্থিতি থাকছে। জলদস্যূ দমন অভিযানের নামে চীনা সাবমেরিনগুলো ভারত মহাসাগরের অভিযানগত পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে নিচ্ছে। তারা দক্ষিণ এশিয়ার সাগরগুলোতে তন্নতন্ন করে সব তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে।
আর চীনা বাহিনীকে সহায়তা করছে পাকিস্তান নৌবাহিনী। এটি ভারতের জন্য আরো বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত বছর দোকলামে ভারত ও চীনের সামরিক অচলাবস্থার সময় চীন একটি সাবমেরিন মোতায়েন করে রেখেছিল বলে খবর পাওয়া গেছে। তারা পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছিল।
ভারত মহাসাগরে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার জন্য নয়া দিল্লি এখন ওয়াশিংটন ও টোকিওয়ের দ্বারস্থ হয়েছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান মালাবার নৌমহড়ায় অংশ নিচ্ছে। কিন্তু ভারত এতে অস্ট্রেলিয়াকে অন্তর্ভুক্ত করতে রাজি হচ্ছে না।
অবশ্য নয়া দিল্লি বেশ সফলতার সাথে পশ্চিম ভারত মহাসাগরে চীনাদের সাথে সমান তালে অবস্থান করতে পেরেছে। তারা ওমান ও ফ্রান্সের সাথে চুক্তি করেছে। মরিশাস ও স্যালেশস, মোজাম্বিক ও মাদাগাস্কারের সাথে চুক্তি করেছে। ২০১৮ সালের এপ্রিলে ভারতের রাষ্ট্রপতি রাম নাম কোবিন্দের পূর্ব আফ্রিকা সফর এ দিক থেকে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ছিল।
তবে চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ নিয়ে উদ্বেগের কিছু বিষয় রয়েছে। চীন যদিও বলছে, এটি স্রেফ বাণিজ্যিক উদ্যোগ, কিন্তু তারা একে সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করতে পারে।
নয়া দিল্লি জানে, ভারত মহাসাগরে প্রভাব বাড়াতে চীন বেশ দক্ষ। বেইজিং ভারতকে আশ্বাস দিয়েছে, ভারত মহাসাগরে তারা ভারতীয় স্বার্থে কোনো হুমকি সৃষ্টি করবে না। ভারতীয় সার্বভৌমত্বে তারা কোনো ধরনের সমস্যা সৃষ্টি করবে না।
কিন্তু তারপরও জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এক্ষেত্রে সমাধান হতে পারে দুই দেশের মধ্যে আচরণবিধি প্রণয়ন। এ ধরনের চুক্তি করতে পারলে ভারতীয় নৌবাহিনী খুশিই হবে। তবে সম্ভবত চীনের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না।
ভারতের জন্য পুরো ভারত মহাসাগরে টহল দিয়ে বেড়ানো খুবই কঠিন কাজ। অন্যদিকে হাবভাবে চীনারা বুঝিয়ে দিয়েছে, তারা ভারত মহাসাগরে এসেছে সেখানে অবস্থান করার জন্যই।
এমন প্রেক্ষাপটে ভারতের জন্য সুবিধাজনক কাজ হয় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নতুন করে বিন্যস্ত করা এবং চীনা নৌবাহিনীর সাথে সহযোগিতামূলক আচরণ করা। তা নাহলে নিজের কৌশলগত আঙিনাতেই অনেক হুমকির মুখোমুখি হতে প্রস্তত থাকতে হবে ভারতকে।
Posted ৯:২৩ অপরাহ্ণ | বুধবার, ১৬ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta