কক্সবাংলা ডটকম(৩ অক্টোবর) :: নৌকা ছাড়া এদেশের উন্নয়ন কেউ করবে না- এমন মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা জনগণের জন্য কাজ করি, দেশের উন্নয়ন করি। তাই জনগণ ভোট দিলে ক্ষমতায় আছি, না দিলে নাই। তবে যে উন্নয়ন আমরা করেছি, আমার বিশ^াস মানুষ আমাদের ভোট দেবে। কিন্তু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমরা কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকব না। গণভবনে বুধবার বিকেলে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে যোগদানশেষে দেশে ফেরার পর সফরের বিস্তারিত তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনে আসেন তিনি। এসময় মঞ্চে তার সঙ্গে বসা ছিলেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম।
প্রায় সোয়া ঘণ্টাব্যাপী সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এসময় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার, সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার সাম্প্রতিককালে বিভিন্ন মন্তব্যের জবাব, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন, জোট-মহাজোট, নির্বাচনকালীন সরকার, রোহিঙ্গা সংকটে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মনোভাবসহ সমসাময়িক নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
নির্বাচনে সব দলের অংশ নেয়া নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন হবে। দেশের মানুষও ভোট দেবে। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। নির্বাচনে কোন দল আসবে, আর কোন দল আসবে না, সে সিদ্ধান্ত তো আমরা নিতে পারি না। তবে আমাদের আশা, সব দলই নির্বাচনে আসবে।
২০১৪ সালের নির্বাচন প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, আমার চেষ্টা ছিল ওই নির্বাচনে সবাই অংশ নিক। কিন্তু নির্বাচন ঠেকানোর নামে পুড়িয়ে মানুষ মারা হলো। আপনারা যাদের নির্বাচনে চাইছেন, তারা মানুষ পুড়িয়ে মারে। আর যারা মানুষ পুড়িয়ে মারে, তাদের জন্য এত কান্নাকাটি কেন- প্রশ্ন রাখেন তিনি। এসময় বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনে ৩ হাজার ৯শ পোড়া মানুষ কি অবস্থায় জীবনযাপন করছে- তাদের খোঁজ নিয়ে প্রতিবেদন লিখতে সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন সরকার প্রধান।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নিয়ে সাংবাদিকদের উদ্বেগের বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোনো সাংবাদিক ‘মিথ্যা তথ্য’ না দিলে এ আইন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। উদ্বিগ্ন তারা বেশি হবে, যারা আমাদের বিরুদ্ধে একটার পর একটা লেখা তৈরি করে বসে আছে। কখন ছাড়বে সেটার অপেক্ষায় আছে তারা। তিনি বলেন, কারো বিরুদ্ধে কোনো তথ্য কিংবা সংবাদ প্রকাশ করলে তা প্রমাণ করতে হবে। প্রমাণ করতে না পারলে সেই সাংবাদিক কিংবা সংশ্লিষ্টদের শাস্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমার বিরুদ্ধে কত মিথ্যা খবর লেখা হলো। পদ্মা সেতু নিয়ে এত মিথ্যা নিউজ হলো। যার বিরুদ্ধে লেখা হলো, সেটা যদি পরে মিথ্যা হয়, তখন যার বিরুদ্ধে লেখা হলো, তার তো যা ক্ষতি হওয়ার হয়ে যায়, কিন্তু যারা লিখে তারা তো বহাল তবিয়তে থেকে যায়।
নতুন আইনের যৌক্তিকতা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, ফৌজদারি কার্যবিধিতে বিভিন্ন অপরাধের বিচারের বিষয়ে বলা ছিল, সেগুলোর সঙ্গে ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার করে অপরাধের বিষয়গুলো যুক্ত করা হয়েছে নতুন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। বিভিন্ন দেশের আইনও আমরা দেখেছি। অনলাইনে ছিল। অনেক আলোচনাও হয়েছে। এরপর এসে হঠাৎ উদ্বিগ্ন হয়ে গেলেন, কিসের জন্য? এ আইন নিয়ে যারা আলোচনায় গেছে, আমি দেখেছি। যারা একটার পর একটা লেখা তৈরি করে আছে, কখন ছাড়বে আমার বিরুদ্ধে।
এসময় সরকারের করা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে বিষোদ্গার ও নোংরামির বিরুদ্ধে লড়তেও কাজে লাগবে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, সাইবার সিকিউরিটি প্রতিটি দেশেই একটি বিরাট সমস্যা হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক জায়গায় সামাজিক, পারিবারিক সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। নানা ধরনের ক্রাইম, জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং পর্ন- নানা ধরনের ঘটনা দেখা দিচ্ছে। সেজন্য সকলেই এ ব্যাপারে উদ্বিগ্ন। এই সমস্ত নোংরামি যাতে না হয়, সেটা মাথায় রেখেই সাইবার সিকিউরিটি আইনটা করা হয়েছে।
সমাজে মৌলবাদী দর্শনের বিস্তার ও তা ঠেকাতে সরকারের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বিষয়ে অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে বিশ্বাস করে এবং আমরা অসাম্প্রদায়িকতায় বিশ্বাস করি। হ্যাঁ এটা তো ঠিক র্যাডিক্যালিজম তো আছে, একেবারে নাই- তা নয়।
তবে যারা এই ধরনের কাজ করে তারা আসলে বিকৃতমনা। এদের কোনো নীতি নেই। এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে সমাজকে আরো সচেতন করে তোলার এবং সাংবাদিকদের তাতে অগ্রণী ভূমিকা রাখার ওপর জোর দেন তিনি।
সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নানা দুর্র্নীতির মামলা ও বিচার প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান বলেন, ‘ল উইল টেক ইটস ওউন কোর্স’। আর কিছু বললে তো বলবেন, বেশি বলি। এ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেন, ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় থেকে বিচারপতি সিনহাকে বিচারাঙ্গনের সর্বোচ্চ পদে নিলেও তিনি তার ‘মান রাখতে’ পারেননি।
ইভিএম প্রসঙ্গে অপর এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল যুগ। নির্বাচনে আমি ইভিএম ব্যবহারের পক্ষে। আপনারা মোবাইলে ঠিকই টাকা পাঠাতে পারেন। টাকা সবার প্রিয় জিনিস। ভোটটাও সবার প্রিয়। তাহলে ভোট ইভিএমে হতে সমস্যা কোথায়। বরং এমন একটি প্রযুক্তি তৈরি করা উচিত, যেন মোবাইল থেকেও মানুষ ভোট দিতে পারে। তাহলে আর ভোটকেন্দ্রে যাওয়া লাগবে না। ইভিএমটা হোক। আমরা একনেকে ইভিএম প্রকল্প যখন পাস করেছি। তাহলে বুঝতেই পারেন আমাদের মানসিকতা কী। জনগণের প্রতি আমাদের আস্থা আছে, বিশ্বাস আছে। জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেবেন।
শত ফুল ফুটতে দিন : ২০ দলীয় জোট সম্প্রসারণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা জোট হচ্ছে আমি খুব খুশি। তাদের জোট করার জন্য যদি সহযোগিতা করা লাগে তবে তা আমি করব। সমাবেশে লোক লাগলে লোকও দেব। কারণ, আমরা জানি বাংলাদেশে ভোট আছে দুপক্ষে। একটি হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও আরেকটি হলো এ্যান্টি আওয়ামী লীগ। এখন এ্যান্টি আওয়ামী লীগ ভোটগুলোকে তো একটি জায়গায় যেতে হবে। তাদের জন্য একটি জোট হচ্ছে এবং সেখানে বড় বড় মানুষও আছে। জোট হওয়া তো ভালো কথা। আমার কথা হচ্ছে, শত ফুল ফুটতে দিন।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে সরকারপ্রধান বলেন, চারদিকে অনেক বড় বড় জোট-মহাজোট হচ্ছে। এসবের মধ্যে আমাদের জোটের কলেবর বাড়ানোর তেমন কোনো চিন্তা নেই। এরপরও কেউ যদি আমাদের সঙ্গে আসতে আগ্রহী থাকে, তখন আমরা বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করতে পারি।
নির্বাচনকালীন সরকার গঠন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সংসদ বহাল রেখে কীভাবে নির্বাচন আয়োজন করা যায় সে বিষয়ে আমরা কথা শুরু করেছি। আমাদের জোটের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কয়েকটির সঙ্গে কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতির নির্দেশনাও নেয়া হবে। এ ছাড়া যেসব দেশে পার্লামেন্টারিয়ান ডেমোক্রেসি রয়েছে তাদের সঙ্গে নির্বাচন বিষয়ে কথা বলেছি। তারা বলেছেন, সরকার যেভাবে থাকে সেভাবে রেখেই পাঁচ বছর পূর্ণ হওয়ার আগের তিন মাসে নির্বাচন আয়োজন করে।
তবে কোনো কারণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দিতে হলে তারা সংসদ ভেঙে দিয়ে পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করে। এটাই আসলে বিশ্বব্যাপী সমাদৃত নিয়ম। আমরা ওই নিয়মেই নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করব। এক্ষেত্রে ক্যাবিনেট ছোট করে নিয়ে কাজ করা হবে। কারণ, নির্বাচনের সময়ে আরপিও অনুযায়ী চলাচলে বিভিন্ন সমস্যা থাকে।
Posted ১:৫৬ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৪ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta