কক্সবাংলা ডটকম(১ সেপ্টেম্বর) :: আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রশ্নে দশটি শর্ত চূড়ান্ত করেছে বিএনপি। অচিরেই সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে এসব শর্ত ও সরকারের কাছে কিছু প্রস্তাব তুলে ধরা হবে।
শর্তগুলো হলো—
১. দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ কারাগারে থাকা নেতাকর্মীদের নি:শর্ত মুক্তি, সাজা বাতিল ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার নিশ্চিত করা।
২. নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি গ্রহণযোগ্য, অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান।
৩. তফসিল ঘোষণার আগে বর্তমান দশম সংসদ ভেঙে দেয়া।
৪. বর্তমান নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন।
৫. নির্বাচনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে ভোটের মাঠে সেনা মোতায়েন।
৬. ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) পদ্ধতি বাতিল।
৭. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সকল দলকে সমান সুযোগ প্রদান এবং সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করা।
৮. নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া।
৯. ভোটকেন্দ্রে সব ভোটারকে আসার সুযোগ করে দিতে হবে এবং
১০. নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর বিরোধী নেতাদের গ্রেফতার-হয়রানি করা যাবে না। এসব শর্তের পাশাপাশি সরকারকে সংলাপের প্রস্তাব দেয়া হবে আনুষ্ঠানিকভাবে।
দলীয় সূত্র জানায়, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা ঈদের আগে ও পরে বৈঠকে বসে এই শর্তগুলো চূড়ান্ত করেন। ঈদের পর দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত্ করে এ নিয়ে নির্দেশনা গ্রহণ করেছেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সাথেও কথা বলেছেন স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য।
স্থায়ী কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য বলেন, আমাদের শর্তগুলো পূরণ না হলে কোনো নির্বাচন হবে না। সরকার যদি সংলাপে না বসে, দাবি না মানে তাহলে কঠোর আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বাধ্য করা হবে। আমরা প্রথমে চাইব সমঝোতা। তাতে সরকার রাজি না হলে কঠোর অবস্থানে যাওয়া ছাড়া কোনো পথ থাকবে না আমাদের।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা বারবার বলেছি আমাদের নেত্রীকে মুক্তি দিতে হবে, এটা আমাদের প্রথম শর্ত; নির্বাচন করতে হলে নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে; একটা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার থাকতে হবে; নির্বাচন কমিশনকে ভেঙে দিয়ে পুনর্গঠন করতে হবে; তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙে দিতে হবে, একই সঙ্গে সমস্ত দলকে সমান সুযোগ দিতে হবে এবং সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। আর ইভিএম ব্যবহার করা যাবে না একটি কেন্দ্রেও। তফসিল ঘোষণার আগেই সকল রাজবন্দিকে মুক্ত করে দিতে হবে।
তিনি বলেন, বেগম জিয়াকে ছাড়া কোনো নির্বচন হবে না। দাবি না মানলে জনগণ রাজপথে নেমে এসে সরকারকে বাধ্য করবে। তখন সরকার তাসের ঘরের মতো ভেঙে যাবে। বাংলাদেশের মানুষ ঘুরে দাঁড়াবে। এই সরকারের পতন হবে।
দলের স্থায়ী কমিটির একজন সদস্য বলেন, বিএনপি চায় নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে একটি জাতীয় সংলাপ হোক। সেখানে সব পক্ষ বসলেই একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের উপায় বের হবে। সরকার যদি কিছুটা ছাড় দেয় বিএনপিও একই অবস্থানে বসে থাকবে না। কিন্তু সরকার এগিয়ে না এলে বিএনপি তার অবস্থানেই থাকবে। আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায় করে নির্বাচনে যাবে বিএনপি।
তিনি বলেন, সরকার ছাড় না দিলে রাজপথে আন্দোলনের মাধ্যমেই দাবি আদায়ের পরিকল্পনা আছে বিএনপির। সরকার যদি সত্যিকার অর্থে সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় নির্বাচন করতে চায়, তাহলে বিএনপিও সর্বোচ্চ ছাড় দেওয়ার কথা চিন্তাভাবনা করবে।
এদিকে সমমনা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্যের জন্য প্রাথমিকভাবে একটি প্রস্তাবমালা প্রণয়ন করেছে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্যরা। এসব প্রস্তাব আগ্রহী দলগুলোর কয়েকজন নেতার হাতে দেওয়া হয়েছে। ঐক্যের মূল উপজীব্য হিসেবে বলা হয়েছে—বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক ও কল্যাণমূলক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে মৌলিক দাবিগুলোর ভিত্তিতে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারি।
বিএনপি যে প্রস্তাবগুলোর ভিত্তিতে বৃহত্তর রাজনৈতিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করতে চায় তার মধ্যে আছে— বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর নিঃশর্ত মুক্তি, একটি গ্রহণযোগ্য ও সুষ্ঠু নির্বাচন, রাষ্ট্রকে দলীয়করণের ধারার বদলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় আইনের শাসনের প্রতিষ্ঠা, রাষ্ট্র ক্ষমতার গ্রহণযোগ্য ভারসাম্য, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও ক্ষমতা নিশ্চিত করা, সব নাগরিকের মৌলিক মানবাধিকারের নিশ্চয়তা, রাষ্ট্রের সর্বস্তরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা প্রভৃতি।
দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, ঐক্যের প্রস্তাব নিয়ে আগ্রহীরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছে। তারা মতামত দিবেন। পরে চূড়ান্ত হবে। আর সরকারকে নির্বাচনের জন্য যে শর্তগুলো দেয়া হবে সেটা বিএনপি ও ২০ দলীয় জোটের।
Posted ৩:৩৫ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta