কক্সবাংলা ডটকম(১ সেপ্টেম্বর) :: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী মোকাবেলা করা আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ততোই বাড়ছে।
বর্তমানে ৩০০ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ৪ হাজার নেতা। গড়ে প্রতি আসনে ১৩ জন নৌকার টিকিট পেতে আগ্রহী। মনোনয়ন না পেলে অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ার প্রস্তুতিও নিচ্ছেন।
বিগত নির্বাচনে বিদ্রোহীদের শাস্তি পরিবর্তে পুরস্কৃত করায় আগামীতেও দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে অনেকেই প্রার্থী হতে উত্সাহী হচ্ছেন। বিষয়টি দলকে ভাবিয়ে তুলছে। তাছাড়া অতীতে কখনো মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। তাই এবার জয়ের ক্ষেত্রে গলার কাঁটা হতে পারে বিদ্রোহীরাই।
দলীয় সূত্র জানায়, এবার চূড়ান্ত মনোনয়নের আগে মনোনয়ন প্রত্যাশী সবার সঙ্গে কথা বলবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার মনোনয়ন প্রত্যাশীদের কাছ থেকে করিয়ে নিবেন দলের হাইকমান্ড।
জানা গেছে, দলের বিরুদ্ধে এমপি নির্বাচনে অংশ নেওয়া আওয়ামী লীগ নেতারা এখনও বহাল-তবিয়তে আছেন। জেলা পরিষদ নির্বাচনে অনেক বিদ্রোহী প্রার্থী চেয়ারম্যান হয়েছেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যাওয়ার কারণে তাদের কোন শাস্তি দেওয়া হয়নি। শাস্তি হয়নি উপজেলা নির্বাচনের বিদ্রোহী নেতাদের।
পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি ছিল। অনেকে জয়ী হয়েছেন। নির্বাচন নিয়ে নিজ দলের নেতাদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া হয়েছে। নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় আওয়ামী লীগের হিসাবে বহিষ্কারের সংখ্যাও একেবারে কম নয়। তবে এসব বহিষ্কারে কেন্দ্রের সায় না থাকায় বহাল-তবিয়তে আছেন বিদ্রোহীরা। অনেক স্থানে দলের অনুগতরাই বিদ্রোহী নেতাদের ভয়ে তটস্থ থাকেন।
এ অবস্থায় একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে দলীয় প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করার চেয়ে ক্ষমতাসীনদের ঘর সামলানো কঠিন হবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করছেন সংশ্লিষ্টরা। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে দুই বছর আগে থেকেই এই অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছেন। দলীয় এমপিদের বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছেন। বিষয়টি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী মোটেও ভালভাবে নেননি।
তৃণমূল নেতাদের গণভবনে ডেকে এনে শেখ হাসিনা বলেন, প্রার্থী হতে গিয়ে দলের বিরুদ্ধে দুর্নাম সৃষ্টি করা যাবে না। এটা সহ্য করা হবে না। আওয়ামী লীগের দুজন প্রেসিডিয়াম সদস্য জানান, বিদ্রোহী প্রার্থীরা দলের জন্য অস্বস্তিকর। তারা দলকে বিব্রতকর পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দেয়। দলের সিদ্ধান্তের বাইরে নির্বাচন করা নেতাদের কেউ পছন্দ করে না। বিদ্রোহীরা দলেও বিতর্কিত হয়।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি দলীয় ফোরামের একাধিক বৈঠকে বলেছেন, দল করতে হলে দলের সিদ্ধান্ত মেনে চলতে হবে। মনোনয়ন অনেকে চাইতে পারেন। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষে সবার ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। নইলে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আওয়ামী লীগের দুজন সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জানান, ‘দলের মধ্যে এই অশুভ প্রতিযোগিতা বন্ধ না হলে আগামী নির্বাচনে আরো ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। স্থানীয় নির্বাচনের মতো জাতীয় নির্বাচনেও খুনাখুনি হবে। এটা মোকাবেলা করাই আওয়ামী লীগের বড় চ্যালেঞ্জ।
জানা গেছে, সবাই এখন এমপি হতে চান। থানা, ইউনিয়ন এমনকি অনেক আসনে ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতারাও এমপি মনোনয়ন প্রত্যাশী। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, শত ফুল ফুটতে দিন, সেখান থেকে ভালটাকে বেছে নেওয়া হবে। দলের হাইকমান্ডের এমন ঘোষণার পর মনোনয়ন প্রত্যাশীর সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে।
সরকারি চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন, ছাত্রজীবনে রাজনৈতিক দলের আদর্শের প্রতি কমিটমেন্টও ছিল না, ভূমিকা দূরে থাক; তারাও নেমেছেন এমপি হওয়ার মিছিলে। ব্যবসায়ী হিসাবে অর্থবিত্ত গড়েছেন, জীবনে একবার এমপি হতে চান। রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা না থাক বিশ্বাস করেন অর্থের জোরে কি না হয়! খরচপাতি যেখানে যা লাগছে তা ব্যয় করতে শুরু করেছেন।
কেউ কেউ আবার সরকারের মন্ত্রী-এমপিদের ছায়ায় থেকে অতীতে বা বর্তমানে ব্যবসা, বাণিজ্য, ঠিকাদারি ভালোই করেছেন। টাকা অনেক হয়ে গেছে, টাকার জোরে দলের বিভিন্ন পদ-পদবী অর্জনও করেছেন। এখন এমপি হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ছুটছেন। এমপি হওয়ার মিছিলে অনুপ্রবেশকারীরাও আছেন।
দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ১০ নেতা এমপি হয়েছিলেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়ে তারা এখন আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। বিষয়টিকে বিদ্রোহীদের পুরস্কৃত করার মতো দেখছেন দলের অনুগতরা।
২০১৬ সালের ২৮ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচন। এই নির্বাচনে ১৩ জেলায় জয় পায় দলের বিদ্রোহীরা। অন্যান্য জেলায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। কারো বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
এদিকে ২০১৬ সালের ২২ মার্চ থেকে ৪ জুন পর্যন্ত ছয় ধাপে অনুষ্ঠিত হয় ৪ হাজার ১০৪ ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এসব নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতি একজন দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে গড়ে প্রায় ৩ জন করে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিল। দলের বাইরে নির্বাচন করে অনেকেই জয় পেয়েছেন।
স্থানীয়ভাবে অনেককে বহিষ্কার করা হলেও কেন্দ্রে তা ফাইলচাপা পড়ে আছে। আবার অধিকাংশ জেলা-উপজেলায় মন্ত্রী-এমপিদের আশীর্বাদে দলছুট নেতারাই বেশি দাপুটে। তারা কোণঠাসা করে রেখেছেন ত্যাগী নেতাদের।
ওই সময় বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগ ৫৮ জন, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগ ৩৫ জন, আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ ৫ জন পৌরসভা ও ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে সাময়িক বহিষ্কার করে। পরে তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের জন্য কেন্দ্রে আবেদন পাঠানো হয়।
একইভাবে সারাদেশ থেকে বহিষ্কারসহ নানা অভিযোগে অসংখ্য আবেদন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রে জমা পড়ে। কিন্তু বিদ্রোহী প্রার্থীর বিষয়ে কেন্দ্র সাংগঠনিকভাবে শাস্তি না দেওয়ায় তারা এলাকায় দাপটের সঙ্গেই আছেন। এই অবস্থায় মনোনয়ন প্রত্যাশীদের অনেকে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
Posted ৪:০০ পূর্বাহ্ণ | শনিবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta