কক্সবাংলা ডটকম(১ সেপ্টেম্বর) :: চলতি অর্থবছরের (২০১৭-১৮) প্রথম মাসেই রেকর্ড পরিমাণ সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, জুলাই মাসে ৭ হাজার ৩৫২ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র কিনেছেন গ্রাহকরা। এর মধ্যে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকা সরকার ঋণ হিসেবে নিয়েছে। অবশ্য পুরো অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার কথা ৩০ হাজার ১৫০ কোটি টাকা।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন মতে, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানো সংক্রান্ত অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের বক্তব্য সাধারণ মানুষকে প্রভাবিত করেছে। পরবর্তী সময়ে সুদের হার কমে যেতে পারে, এমন আশঙ্কা থেকেই তারা অর্থবছরের শেষ দিকে এসে সঞ্চয়পত্র কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার কমে যাওয়ার খবরে এর বড় প্রভাব পড়েছে জাতীয় সঞ্চয়পত্রে। এছাড়া অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন, হয়তো সঞ্চয়পত্রের সুদের হারও কমবে। ফলে সুদের হার কমার আগে আগেই গত দুই মাসে তারা বেশি করে সঞ্চয়পত্র কিনে রাখে।’
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিআইডিএসের গবেষক ড. জায়েদ বখত বলেন, ‘ব্যাংক আমানতের ওপর সুদের হার কমে গেছে। এছাড়া পুঁজিবাজারে এখনও আস্থা ফেরেনি। এসব কারণে নিরাপদ বিনিয়োগ মনে করা হচ্ছে সঞ্চয়পত্রকেই। তাই হয়ত সবাই ঝুঁকেছেন সঞ্চয়পত্রের দিকে।’
তিনি বলেন, ‘ব্যাংকের ডিপিএস ভেঙেও অনেকে বেশি লাভের জন্য সঞ্চয়পত্র কিনছেন। অনেকের মেয়াদ পূর্তির পর সেই টাকা আবারও সঞ্চয়পত্রেই বিনিয়োগ করেছেন।’
বিনিয়োগে মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন ধরেই ব্যাংকগুলোতে বিপুল অংকের অর্থ পড়ে আছে, যাকে ‘অলস অর্থ’ বলা হচ্ছে। এই অলস অর্থের কারণে আমানতের সুদ হার কমিয়েই চলেছে ব্যাংকগুলো। বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশের মধ্যে।
অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদ হার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও ১১ থেকে ১২ শতাংশ পর্যন্ত সুদ পাওয়া যায়।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, গত জুলাই মাসে আগের কেনা সঞ্চয়পত্রের মূল ও সুদ পরিশোধ বাবদ সরকারের ব্যয় হয়েছে ২ হাজার ২৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয় ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা।
প্রসঙ্গত, অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে গত ২০১৬-১৭ অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৭৫ হাজার কোটি টাকারও বেশি। এর মধ্যে শেষ মাস জুনে সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এসেছিল ৫ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জুলাইয়ে সবচেয়ে বেশি ঋণ এসেছে পরিবার সঞ্চয়পত্র থেকে। এর পরিমাণ ১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা। তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ এসেছে ১ হাজার ৩২০ কোটি টাকা। পেনশনার সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ এসেছে ৬৪৮ কোটি টাকার। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র থেকে নিট ঋণ এসেছে ৪৮০ কোটি টাকার।
কোন সঞ্চয়পত্রে কত সুদ:
পরিবার সঞ্চয়পত্র: পাঁচ বছর মেয়াদি পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি হয় ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের। এক নামে সর্বোচ্চ ৪৫ লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কেনা যায়। সবাই এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন না। কেবল ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সী নারী, শারীরিক প্রতিবন্ধী যেকোনও বয়সী নারী-পুরুষ এবং ৬৫ বা তার চেয়ে বেশি বয়সী নারী ও পুরুষ এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
পেনশনার সঞ্চয়পত্র: পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের পাঁচ ধরনের সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ আছে।
অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারী, অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি ও সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তানেরাই শুধু এ সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন।
বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র: পাঁচ বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশের যেকোনও নাগরিক এটা কিনতে পারেন। বাজারে ১০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকা; ১০০০, ৫০০০, ১০,০০০, ২৫,০০০ ও ৫০,০০০ টাকা এবং ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। ব্যক্তির ক্ষেত্রে একক নামে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কেনা যায়।
মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র: তিন বছর মেয়াদি এই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানে। এটিও সবাই কিনতে পারেন। এই সঞ্চয়পত্র একক নামে ৩০ লাখ টাকা পর্যন্ত কেনা যায়।
ডাকঘর সঞ্চয়পত্র: তিন বছর মেয়াদি ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। এটিও যে কেউ কিনতে পারেন।
Posted ১০:২৭ পূর্বাহ্ণ | শুক্রবার, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta