কক্সবাংলা ডটকম(১৮ ডিসেম্বর) :: কম ঝুঁকিতে বিনিয়োগ পছন্দ যাদের, সেই ক্ষুদ্র পুঁজির লোকেরা কোথায় নিশ্চিন্তি খুঁজছেন—এমন প্রশ্ন এখন ঘুরেফিরে আসছে। শেয়ারবাজারে যাওয়া মানেই যেন পুঁজি হাওয়া—এই যখন অবস্থা, তখন বিনিয়োগকারীদের সামনে বিকল্প কী? আস্থাহীনতার রাহুগ্রাসে নিয়তই পতনমুখী শেয়ারবাজার। কেউ ইতিমধ্যে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। কেউবা ওদিকটায় আর পা মাড়াচ্ছেন না। বারবার ধরাশায়ী হওয়ার পর বাজার থেকে বেরিয়ে আসার প্রাণান্তকর প্রচেষ্টাও বিফলে যাচ্ছে অনেকের। প্রশ্ন, এই পতনের শেষ কোথায়? বাজারে না হয় পতনের ধারাই চলছে কিংবা চলবে, কিন্তু ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরা কোথায় লগ্নি করে দুটি পয়সা আয় করবেন? ঊর্ধ্বমুখী নিত্যমূল্যের বাজারে জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে হিমশিম খাওয়া এই বিশাল গোষ্ঠীর কি তবে পরিত্রাণ নেই?
বলা হয়, পুঁজি সংগ্রহের বিকল্প উত্স শেয়ারবাজার। এর গভীরতা বাড়লে, বাজারে আস্থার সংকট কাটাতে পারলে এটিই হতে পারত প্রায় ৩২ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর রুটিরুজির অন্যতম উত্স। সেই উেস যখন অনাগ্রহ কিংবা বিনিয়োগকারী আকর্ষণে ব্যর্থ হচ্ছে, ঠিক সেই সময়ে কমছে ব্যাংকের সুদও। আমানতে এখন আর ব্যাংকগুলোর আকর্ষণীয় মুনাফার অফার নেই।
অর্থনীতিকে টেনে তোলার প্রয়াসের মধ্যেই বিশ্ব জুড়ে মন্দার আভাস। চলছে চীন-মার্কিন বাণিজ্যযুদ্ধ। দুটির হাওয়া পতনমুখী করার আশঙ্কা সর্বত্র। পরিস্থিতি সামাল দিতে যখন ধনী দেশগুলোতে সুদের হার কমানো হচ্ছে, তখন বাংলাদেশও এর বাইরে থাকছে না। যদিও বাংলাদেশে এতদিন ধরেই উত্পাদনশীল খাতে উচ্চ সুদের অভিঘাত চলছে।
অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এই অভিঘাত থেকে অর্থনীতিকে রক্ষা করতে মরিয়া। তিনি কার্যকর করতে যাচ্ছেন এক অঙ্কের সুদের হার এবং সুদ গণনায় সরল সুদের ব্যবস্থা, যা অর্থনীতিতে নতুন দিগন্তের উন্মোচন করবে বলে মনে করছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। নানা গরিমসি করলেও উত্পাদনশীল খাতকে চাঙ্গা করে কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য ব্যাংকগুলোকে নতুন বছরের প্রথম দিন থেকেই ঋণের সুদের হার সিঙ্গেল ডিজিটে আনতে হচ্ছে। ব্যাংকগুলো সে কারণে অনেক রকম সুবিধাও নিয়েছে সরকারের কাছ থেকে।
ব্যাংকে স্থায়ী আমানত না রেখেও ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের অনেকে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। নিরাপদ বিনিয়োগ হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত কিংবা স্বল্প আয়ের মানুষ তাদের জমানো টাকা সঞ্চয়পত্রে খাটাতেন। সেখানেই সুযোগ সীমিত হয়ে আসছে। কর না দিলে কিংবা কর শনাক্তকরণ নম্বর না থাকলে সঞ্চয়পত্র আর কেনা যাচ্ছে না। যারা কেনার সুযোগ পাচ্ছেন, তাদের আগ্রহেও ভাটা পড়ছে কম সুদের কারণে। সুদ কমার পাশাপাশি উেস কর কেটে নেওয়ার পর যা থাকে, তাতে সন্তুষ্ট নন বিনিয়োগকারীরা। ফলে সঞ্চয়পত্র বিক্রির হারও কমেছে।
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত অক্টোবরে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে ৮২২ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। একক মাস হিসেবে নিট সঞ্চয়পত্র বিক্রির এই হিসাব সবচেয়ে কম, আগের অর্থবছরের একই মাসে যা ছিল ৪ হাজার ৪১৬ কোটি টাকা। অর্থাত্, আগের বছরের একই মাসের চেয়ে অক্টোবরে নিট বিক্রি ৩ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা কমেছে। গত চার মাসে ধারাবাহিকভাবে কমেছে সঞ্চয়পত্র বিক্রি। অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে বিক্রি হয়েছিল ২ হাজার ১৬০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। আগস্টে বিক্রি হয়েছে ২ হাজার ২০৫ কোটি টাকার, সেপ্টেম্বরে বিক্রি হয়েছে ৯৮৫ কোটি টাকা।
এদিকে মূল্যস্ফীতির ঊর্ধ্বগতি পরিলক্ষিত। ঢাকার বাজারে বাড়িভাড়া থেকে শুরু করে সন্তানের লেখাপড়ার খরচ কিংবা দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ব্যয় মেটাতে গিয়ে দিশেহারা স্বল্প আয়ের মানুষ। কষ্ট করেও কটি টাকা যখন সঞ্চয় করেছেন, খুঁজছেন বিনিয়োগের বিকল্প উত্স বা নির্ভরযোগ্য জায়গা। কিন্তু আশ্বস্ত হতে পারছে না কোথাও। যদিও এই সুযোগে কিছু হায়হায় কোম্পানির খপ্পরে পড়ছেন কেউ কেউ। কেউবা সমবায় সমিতির নামে কিছু সংগঠনে বেশি সুদে টাকা খাটানোর লোভ করতে গিয়ে ধরাশায়ী হচ্ছেন। সেখানেও প্রতিকার পাচ্ছেন না ভুক্তভোগীরা। সব মিলিয়ে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের সামনে নেমে এসেছে দুর্দিন। তাদের যেন আজ ত্রাহিদশা।
Posted ২:৪৪ অপরাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta