কক্সবাংলা ডটকম(১ আগস্ট) :: বাংলাদেশের দক্ষীণাঞ্চলের দ্বীপ জেলা ভোলার মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর ডেঞ্জার পয়েন্টের অন্তত ২২টি রুটে চরম ঝুঁকি নিয়ে চলছে যাত্রী ও মালপত্র পারাপার। সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে চালানো হচ্ছে ফিটনেসবিহীন ছোট ছোট ট্রলার। অবশ্য এসব রুটের অধিকাংশেই যথেষ্ট সংখ্যক নিরাপদ নৌযান না থাকায় বাধ্য হয়েই মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ ট্রলারে নদী পাড়ি দিচ্ছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্র জানায়, গত ১৫ মার্চ থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত ভোলাসহ দেশের দক্ষিণ উপকূলের আটটি পয়েন্টকে ডেঞ্জার জোন হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বর্ষা মৌসুমে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার বিভিন্ন পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। তাই নৌ-দুর্ঘটনা এড়াতে বরিশাল বিভাগের ভোলা ও পটুয়াখালী জেলার মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীর প্রায় তিন হাজার কিলোমিটারজুড়ে ছোট ছোট নৌযান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
এ সময় বে-ক্রুজিং সনদ ছাড়া এসব রুটে নৌযান চলাচল বন্ধ রাখতে মালিকদের ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে চিঠিও দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করলে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও জরিমানার নির্দেশনা রয়েছে।
ঝুঁকিপূর্ণ রুটগুলোর মধ্যে রয়েছে ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট, ভেলুমিয়া-ধুলিয়া, হাকিমুদ্দি-তজুমদ্দিন, চরফ্যাশনের কচ্ছপিয়া-ঢালচর-কুকরীমুকরী, বেতুয়া-মনপুরা, তজুমদ্দিন-মনপুরা-চরজহির উদ্দিন, নাজিরপুর-কালাইয়া, হাকিমুদ্দি-আলেকজান্ডার, মনপুরা-হাতিয়া, দৌলতখান-আলেকজান্ডার-মনপুরা, লক্ষ্মীপুর ছাড়াও ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলার হাজিরহাট-কলাতলীচর, রিজির খাল-চেয়ারম্যানের ঘাট (৪নং ঘাট), রামনেওয়াজ-কলাতলীচর, হাজিরহাট-চরফ্যাশন, জনতাবাজার-চরফ্যাশন, সাকুচিয়া-চরনিজাম, হাজিরহাট-মঙ্গলসিকদার, রামনেওয়াজ-চেয়ারম্যানঘাট, সাকুচিয়া-কলাতলীচর।
ভোলা-ঢাকা ও ভোলা-বরিশাল রুট ছাড়াও এ জেলার মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থায় আরো ২২টিরও বেশি রুট রয়েছে। যেসব রুটে একমাত্র বাহন লঞ্চ, ট্রলার কিংবা ছোট ছোট নৌকা।
কিন্তু দেখা যাচ্ছে, এসব রুটের মধ্যে ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট ও তজুমদ্দিন-মনপুরায় সরকারি সি-ট্রাক চলাচল করলেও বাকি সব রুটে চলছে ফিটনেসবিহীন ছোট ছোট লঞ্চ, ট্রলার কিংবা ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এসব রুটে নিরাপদ নৌযান না থাকায় যাত্রীদেরও বাধ্য হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিতে হচ্ছে।
গত রোববার বিকালে সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলা-লক্ষ্মীপুর রুটের ইলিশা ফেরিঘাটে দুটি ট্রলার প্রায় ৭০-৮০ জন যাত্রী নিয়ে মজুচৌধুরীর হাট যাওয়ার উদ্দেশে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রলার দুটির একটিতেও বয়া, লাইফ জ্যাকেট নেই। যদিও এ রুটে প্রতিদিন তিনটি সি-ট্রাক ছাড়াও চলাচল করছে নিরাপদ দুটি লঞ্চ।
নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কেন এ রুটে এসব ছোট নৌযান নামানো হয়েছে— এমন প্রশ্নে ট্রলারের চালক মাইনুদ্দিন মাঝি বলেন, মাঝেমধ্যে যাত্রীরা জোর করে আমাদের যেতে বাধ্য করে। তবে আবহাওয়া খারাপ থাকলে যাই না। ট্রলারে থাকা একাধিক যাত্রীর সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, দুপুর ১২টার পর থেকে এ রুটে নিরাপদ নৌযান থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই ট্রলারে উঠতে হয়।
একই অবস্থা দেখা যায় ভোলার বিচ্ছিন্ন দ্বীপ মনপুরা উপজেলায় যাতায়াতের ক্ষেত্রেও। একটিমাত্র সি-ট্রাক বেলা ৩টার দিকে তজুমদ্দিন থেকে মনপুরার উদ্দেশে রওনা হয়। আবার মনপুরা থেকে সকাল ৮টার দিকে তজুমদ্দিনের উদ্দেশে ছেড়ে আসে। ফলে এই রুটে চলাচলকারীদের বাধ্য হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ নৌযানে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিতে হয়।
মনপুরা উপজেলার চেয়ারম্যান মিসেস সেলিনা আক্তার চৌধুরী বলেন, ভোলার বিচ্ছিন্ন উপজেলা মনপুরার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম একটি সি-ট্রাক। দিনে একবার যাতায়াত করে এটি। সি-ট্রাক বা নিরাপদ নৌযানের অভাবে মনপুরা থেকে আরো দশটি রুটে ছোট ছোট লঞ্চ, ট্রলারের মাধ্যমে উত্তাল মেঘনা পাড়ি দিচ্ছে এ অঞ্চলের মানুষ।
এভাবে ইলিশা-মজুচৌধুরীর হাট ও তজুমদ্দিন-মনপুরা ছাড়াও জেলায় মেঘনা-তেঁতুলিয়ার ডেঞ্জার পয়েন্টের অন্তত ২০টি রুটে ছোট ছোট নৌযান চলাচল করছে।
এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির ভোলা জেলার দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক অফিসার এম নাসিম আহমেদ বলেন, ভোলার বিভিন্ন রুটে নিরাপদ নৌযান সংকটের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
Posted ২:০০ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০১ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta