রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টেকনাফের কাউন্সিলর একরাম ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না, মামলাও ছিল না : ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ

সোমবার, ২৮ মে ২০১৮
933 ভিউ
টেকনাফের কাউন্সিলর একরাম ইয়াবা ব্যবসায়ী ছিলেন না, মামলাও ছিল না : ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ

কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৭ মে) :: টেকনাফ সীমান্তে শনিবার রাতে র‌্যাবের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত টেকনাফ পৌরসভার কাউন্সিলর একরামুল হক (৪৬) ইয়াবার কারবারি ছিলেন না, বলছে এলাকার মানুষ। বরং তিনি স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি ও শীর্ষস্থানীয় ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিলেন বলে এলাকার সাবেক একজন সংসদ সদস্য জানিয়েছেন।

টেকনাফ থানার পুলিশ জানিয়েছে, কাউন্সিলর একরামুলের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তিনি ইয়াবা কারবারি ছিলেন বলে তাঁদের কাছে কোনো তথ্য নেই।

উপজেলার আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয় দলের নেতারাই বলছেন, একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন না, সেটা হলে তাঁরা জানতেন। তিনি অর্থনৈতিকভাবেও তেমন সচ্ছল ছিলেন না।

ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে আসার পর তিনবার নির্বাচিত এই কাউন্সিলরের নিহত হওয়ার ঘটনায় এলাকাবাসীর অনেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করে চলেছে। কোথাও ভুল হলো কি না সে সন্দেহ করছে অনেকে।

র‌্যাব একরামুলের নিহত হওয়ার বিষয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, তিনি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত শীর্ষ মাদক কারবারি এবং ইয়াবার শীর্ষ গডফাদার।

র‌্যাবের কক্সবাজারের কম্পানি কমান্ডার মেজর মো. রুহুল আমিন জানিয়েছেন, শনিবার দিবাগত রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মিঠাপানির ছড়া এলাকায় র‌্যাবের সঙ্গে এক বন্দুকযুদ্ধে একরামুল নিহত হন। পরে সেখান থেকে একটি বিদেশি রিভলবার, পাঁচটি গুলি ও ১০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করা হয়।

জানতে চাওয়া হলে টেকনাফ থানার ওসি রনজিত কুমার বড়ুয়া বলেন, ‘নিহত পৌর কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে ইয়াবাসংক্রান্ত কোনো মামলা নেই। তবে একটি মদের মামলা ছিল, সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে। ’ ওসি বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারি ছিলেন মর্মে পুলিশের কাছে তেমন কোনো রেকর্ড নেই। ’

এদিকে একরামের মৃত্যূতে প্রধানমন্ত্রী বরাবরে একটি আবেগঘন পত্র লিখেছেন কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও যুবলীগের সাবেত সা: সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী।

তিনি লিখেছেন……..মাগো,(প্রধানমন্ত্রী) আমি আমার কান্না রুখতে পারছি না। একরামের মৃত্যুতে আমার হৃদয়ে ক্ষণে ক্ষণে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এ হত্যা মানতে পারছি না। কি করে রুখব বলুন। আমি যখন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারন সম্পাদক, তখন একরাম টেকনাফ যুবলীগের সভাপতি। তাই সাংগঠনিক কারনেই আমি তাকে কাছ থেকে চিনি। একরামের কাথা ভাবলেই চোখের সামনে চলে আসে তার দুই মেয়ের ছবি। কি হবে এখন তাদের ? কি ছিল তাদের বাবার অপরাধ ? তবে কি বর্তমান প্রতিহিংসার রাজনীতি কেড়ে নিল আওয়ামীলীগের দু”সময়ের কান্ডারিকে। তিনি দুঃসময়ে আওয়ামী লীগেরএকজন খাঁটি নির্লোভ যোদ্ধা ছিলেন। হয়তবো এইকারণেই মাদক বিরোধী অভিযান প্রশ্ন বিদ্ধ করতে শকুনের দৃস্টি এড়াতে পারেনি একরাম। একরামের মৃত্যু আওয়ামী লীগের ত্যাগী বিশ্বত্বদের জন্যঅশনি সংকেত। একরামকে হত্যার মধ্য দিয়ে তবে কি টেকনাফকে আওয়ামীলীগ ‍শূণ্য করার কাজ শুর হয়ে গেল।

মেয়র আরও লিখেন, মা, একরামের পরিবার টেকনাফ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা পরিবার। এখানকার মুক্তিযুদ্ধে সংগঠকও তারা। টেকনাফের প্রথম বনেদি মুসলিম শাসকও তার দাদা।আপনি বলেন, আপনার যেই সন্তান আজন্ম বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ছড়িতে দিতে কাজ করেছে। আপনার যে সন্তান দু:সময়ের মধ্যেও টেকনাফ যুবলীগকে মডেল ইউনিটে পরিনত করেছিল। আপনার সেই সন্তান একরামুল হক কি ইয়াবার মত মরণ নেশার সাথে জড়িত থাকতে পারে। যার চাল চুলো নেই, থাকার জন্য বাড়ি নেই। পরিবার ও সন্তানদের লেখাপড়া চালানোর জন্য যাকে নির্ভর করতে হয় ভাইদের উপর, বন্ধুদের উপর। আওয়ামীলীগকে ভালবেসে জনগনকে সেবা করতে গিয়ে দেনার দায়ে যার সব শেষ তাকে বানানো হয়েছে ইয়াবা গড়ফাদার!

এদিকে একরামের মৃত্যুর ব্যাপারে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মোহম্মদ আলী বলেন, ‘টেকনাফের রাজনীতির মাঠে এমপি বদির পরিবার ও সাবেক এমপি গণির পরিবারের দ্বন্দ্ব দীর্ঘকালের। নিহত একরামুল হক ছিলেন বরাবরই এমপি বদিসহ স্থানীয় ইয়াবা ডনদের বিরুদ্ধে সোচ্চার। এ কারণেই একরামুলের মৃত্যুকে সীমান্তের লোকজন সহজভাবে মেনে নিতে পারছে না। ’

টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. নুরুল বশর বলেন, ‘পৌর কাউন্সিলর একরাম অত্যন্ত স্বচ্ছতার মাধ্যমে জীবন যাপন করতেন। দলের প্রতি তাঁর আনুগত্য ছিল অত্যন্ত চমৎকার। তাঁর ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার কথা কোনো দিনই শুনিনি। তদুপরি অর্থনৈতিকভাবেও তিনি ছিলেন অত্যন্ত দুর্বল। ’

টেকনাফ পৌর বিএনপির সভাপতি আবদুর রাজ্জাক মেম্বার বলেন, ‘একরামুল ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকলে আমরা অবশ্যই জানতাম। কিন্তু কোনো দিন শুনিনি তিনি ইয়াবা কারবারে জড়িত ছিলেন। ’

শনিবার রাতে বন্দুকযুদ্ধে টেকনাফ ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর একরামুল নিহত হওয়ার পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়েছে।

বলা হচ্ছে, ক্রসফায়ারের নামে ত্যাগী রাজনীতিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এসব ত্যাগী রাজনীতিকরা সারা জীবন ইয়াবার বিরুদ্ধে এবং আবদুর রহমান বদির পরিবারের ইয়াবা কারবারিদের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে আসছেন।

অথচ এক দিন আগে এমপি আবদুর রহমান বদির বেয়াই আকতার কামাল মেম্বারের বন্দুকযুদ্ধে নিহত হওয়ার ঘটনায় ফেসবুকে ‘সঠিক সিদ্ধান্ত’ বলে অনেকে মন্তব্য করেছিলেন।

র‌্যাবের দেওয়া তথ্যে কাউন্সিলর একরামুলের বাবার নাম ও ঠিকানা না মেলায় অনেকে সন্দেহ করছে, নিরীহ লোক বন্দুকযুদ্ধের শিকার হলেন কি না! র‌্যাব নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম-মোজাহার মিয়া ওরফে আব্দুস সাত্তার এবং তিনি কক্সবাজার জেলার টেকনাফের নাজিরপাড়া এলাকার বাসিন্দা বলে জানিয়েছে।

কিন্তু পরিবারের সদস্যরা জানায়, নিহত কাউন্সিলরের বাবার নাম আব্দুস সাত্তার এবং তিনি টেকনাফ পৌরসভার কাইয়ুকখালী (৩ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার বাসিন্দা।

টেকনাফ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. শফিক মিয়া বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাদকের তালিকায় টেকনাফের মৌলভীপাড়া এলাকার একজন একরামুল হকের নাম তালিকাভুক্ত রয়েছে। তাঁর বাবার নাম ফজল আহমদ। র‌্যাব সম্ভবত সেই একরামুলের নামের মিল থাকায় একজন নিরীহ ব্যক্তিকে বন্দুকযুদ্ধের নামে হত্যা করেছে। ’

শফিক মিয়া বলেন, তিনি একটানা ২১ বছর ধরে টেকনাফ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালনকালে একরামুল ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং পরে আওয়ামী লীগে যোগদান করে ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে রাজপথ কাঁপিয়েছেন। আজ এমন একজন রাজনৈতিক কর্মী ইয়াবার নামে খুনের শিকার হলেন। অথচ রাতারাতি কোটিপতি বনে যাওয়া অগণিত ইয়াবা কারবারি বহাল তবিয়তে রয়েছে।

নিহত একরামুলের জ্যেঠাতো ভাই, স্থানীয় সাবেক এমপি আবদুল গনির ছেলে সাইফুদ্দিন খালেদ বলেন, ‘আমার চাচাতো ভাই একরামুল হক বাস্তবে ইয়াবার বিরুদ্ধেই সোচ্চার ছিলেন সব সময়। আমাদের পরিবারের সঙ্গে এমপি বদির পরিবারের সম্পর্কও মোটেই ভালো নেই। এ কারণেই আমার ভাই বলি হলেন কি না আমাদের সন্দেহ। ’

অপরদিকে ফেসবুকে একরাম সম্মন্ধে সাংবাদিক নুরুল করিম রাসেল লিখেছেন- বিজিবি স্কুলে মাঝেমধ্যে বাচ্চাদের নিয়ে গেলে অনিবার্য ভাবে দেখা হয়ে যেত। কুশল বিনিময়ে যথারীতি সেই মুচকি হাসি ঠোঁটে লেগে থাকত। নিয়মিত মেয়েদের বাইকে স্কুলে আনা নেওয়া করতেন। বিজিবি স্কুলের পিকনিকে সারাদিন একসাথে ছিলাম। সবার অনুরোধে স্ট্যাজে গিয়ে চমৎকারভাবে কয়েকটা গানও করলেন। বুদ্ধি হওয়ার পর থেকে চিনলেও ঘনিষ্ঠতা প্রায় ২০ বছরের মতো পৌর যুবলীগ গঠনের পর থেকে। বাইক খুব ভালবাসতেন। নতুন আনকমন মডেলের বাইক চালানোটা ছিল হবি। দুহাতে সুন্দর বাইক চালাতেন। কিন্তু সেই দুহাতে দুটো পিস্তল নিয়ে বন্দুকযুদ্ধ করে নিহত হলেন RAB এর মতো একটা বাহিনীর সাথে। এতকিছু জানতাম কিন্তু এতবড় গান ফাইটার ছিলেন সেটা জানতাম না। হায় আফসোস … মানবতা আজ কোথায় ! মাদক ব্যবসায়ীর নামে মারা পড়লো কে। হায় আল্লাহ তুমি মহান বিচারক। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শুধু তালিকায় থাকার অপরাধে একজন নিরীহ ব্যক্তির মৃত্যুর দায়ভার কার!!!

সবমিলিয়ে চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের নির্বাচিত জনপ্রিয় কাউন্সিলর মো. একরামুল হকের কথিত ক্রসফায়ারে মৃত্যুতে সর্বত্র প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়রা দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে মাদককারবারির অভিযোগ নেই। এলাকায় সজ্জন হিসেবেই তিনি বেশি পরিচিত। ২০০৮ সালের একটি ষড়যন্ত্রমূলক মামলার রেশ ধরে তাকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়।

স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি অংশ বলছে, একটি সুন্দর উদ্যোগ নষ্ট করতে সরকারের ভেতর কূচক্রী মহল কলকাঠি নাড়ছে। এ ক্রসফায়ারের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি নেপথ্যে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন। বদির সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি হয়েছেন একরামুল। নিহত একরামুল টেকনাফ উপজেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ও টেকনাফ বাস স্টেশন ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি ছিলেন। এ ছাড়া ছিলেন টেকনাফ হাইয়েস মাইক্রো শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক আহ্বায়ক।

উল্লেখ্য দেশব্যাপী চলমান মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যে শনিবার গভীররাতে র‌্যাবের সঙ্গে কথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন কক্সবাজারের টেকনাফ পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তিনবার নির্বাচিত কাউন্সিলর মো. একরামুল হক।

 

933 ভিউ

Posted ৪:০৩ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৮ মে ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com