মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

টেকনাফে অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা পাচার : ৬২ গডফাদার চিহ্নিত

সোমবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮
321 ভিউ
টেকনাফে অপ্রতিরোধ্য ইয়াবা পাচার : ৬২ গডফাদার চিহ্নিত
কক্সবাংলা রিপোর্ট(২৮ জানুয়ারি) :: সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের সব আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ইয়াবা প্রতিরোধে ‘জিরো টলারেন্স’ ঘোষণা করলেও নেশার ভয়ানক ছোবল ক্রেজি ড্রাগ হিসেবে পরিচিত ছোট্ট আকারের এই বড়ি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, উদ্ধার হওয়া ইয়াবা বড়ির সংখ্যা বছরে প্রায় চার কোটিতে এসে ঠেকেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, স্থল ও নৌপথে ইয়াবার পাচার হচ্ছে। আর ইয়াবা পাচারের সঙ্গে ৬২ জন গডফাদারের সন্ধান পাওয়া গেছে। দেশের কোথাও না কোথাও প্রতিদিন ইয়াবার বড় বড় চালান ধরা পড়ছে। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী ও বিজিবি এসব চালানের সাথে যাদের গ্রেফতার করছে তারা বহনকারী।
কিন্তু নেপথ্যেই থেকে যাচ্ছে ইয়াবা নামক মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত এই গডফাদাররা। এসব গডফাদাররা দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোয়ার বাইরে।
ইয়াবার উত্সভূমি হিসেবে পরিচিত মিয়ানমার। তবে বাংলাদেশেও এখন এটা উত্পাদন হচ্ছে। জানা গেছে, ইয়াবা বড়ির পেছনে মাদকসেবীদের বছরে যে খরচ, তা বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বার্ষিক বাজেটের প্রায় দ্বিগুণ (২০১৭-১৮ অর্থবছরে   বিজিবির বাজেট ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা)।
আর পুলিশের বাজেটের প্রায় অর্ধেক। আর্থিক, সামাজিক, মানবিক নানাভাবে ইয়াবার আগ্রাসন দেশজুড়ে ছড়ালেও তা নিয়ন্ত্রণে সরকারের উদ্যোগ খুব সামান্য। ইয়াবা বন্ধে মাদকদ্রব্য ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিয়মিত অভিযান ছাড়া আর কোনো তত্পরতা নেই।
অন্য বাহিনীগুলোর তত্পরতা শুধু উদ্ধারের ভেতরেই সীমাবদ্ধ। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, বরাবরই গডফাদাররা রক্ষা পাওয়ায় দেশে ইয়াবা ভয়াবহ আকার ধারন করেছে। শহর কিংবা গ্রাম দেশের এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইয়াবা পাওয়া যায় না। ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদারা ধরা না পড়ায় এর বিস্তার রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।
সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে একাধিকবার ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত গডফাদারের নতুন নতুন তালিকা তৈরি করা হলেও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় অপারেশন কার্যক্রম নেই। এরই মধ্যে ইয়াবা ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত ৬০ জন গডফাদার ও ১২ শতাধিক ব্যবসায়ীর নতুন তালিকা রয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। গডফাদাররা গ্রেফতার না হওয়ায় তালিকা এখন অনেকটাই ফাইল বন্দী হয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। ‘
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র্যাব, পুলিশ, মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও গোয়েন্দা সংস্থার সমন্বয়ে ইয়াবা গডফাদারের তালিকা তৈরি করা হয়।
গডফাদার যারা
ইয়াবা পাচারে জড়িত ৬০ জন গডফাদার দীর্ঘদিন ধরে ধরাছোয়ার বাইরে। এসব গডফাদাররা হলেন, কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থানার আলিয়াবাদ গ্রামের মৃত এজাহার মিয়া কোম্পানীর চার ছেলে আব্দুল আমিন (৩৫), মো. আব্দুস শুক্কুর (৩৮), মো. সফিক (২৩) ও মো. ফয়সাল, টেকনাথের সাবরাং পৌরসভার বাজারপাড়া গ্রামের ওসি আব্দুর রহমানের পুত্র সাহেদুর রহমান নিপু (২৪), পৌর কাউন্সিলর সৌলভী মুজিবুর রহমান (৩৪), সাবরাং পৌরসভার আলীর ডেইল গ্রামের মৃত নজির আহমদ মেম্বারের দুই পুত্র আকতার কামাল (৩৬) ও শাহেদ কামাল (৩০), টেকনাফ সদরের খাকারপাড়া গ্রামের হায়দার আলীর পুত্র কামরুল হাসান রাসেল (৩২), টেকনাফ পৌরসভার অলিয়াবাদ গ্রামের মৃত ইব্রাহিম খলিলের পুত্র মারুফ বিন খলিল (২৯), টেকনাফ সদরের শীবনিয়াপাড়া গ্রামের ডা. হানিফের পুত্র হাজী সাইফুল করিম (৩০), একই গ্রামের কালা মিয়ার পুত্র সাইফুল ইসলাম (৪২), সাবরাং পৌরসভার আচারবনিয়া গ্রামের সৈয়দুর রহমানের পুত্র আবুল কালাম (৫০), হূীলা পৌরসভার পশ্চিম লেদা গ্রামের মৃত আবুল কাশেসের পুত্র মো. নুরুল হুদা (৩৫), টেকনাফ সদরের লেঙ্গুরবিল গ্রামের মৃত সুলতান আহম্মদের পুত্র টেকনাফ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জাফর আহমেদ (৫১), একই গ্রামের জাফর আহমদ চেয়ারম্যানের তিন পুত্র মোস্তাক মিয়া (৩৪),  দিদার মিয়া (৩২), মো. শাহজাহান (৩০),
টেকনাফ থানার ডেইলপাড়া গ্রামের কালা মোহাম্মদ আলীর দুই পুত্র মো. আমিন (৩৭) ও নুরুল আমিন (৩৪), মৌলভীপাড়ার মো. একরাম হোসেন (৩০), আব্দুর রহমান (২৭), ছৈয়দ হোসেন মেম্বার (৪৩), নয়াপাড়ার শামসুল আলম মার্কিন (৪৭), বাহারছড়া ইউপি চেয়ারম্যান মৌলভী আজিজ (৪০), শামলাপুরের হাবিব উল্লাহ হাবিব (৩৫), কচুবনিয়ার মৌলভী বশির ডাইলা (৪৪), খানকারপাড়ার মৌলভী বোরহান (৪৬), শাহ আলম (২৮), নাজিরপাড়ার জিয়াউর রহমান, নাজিরপাড়ার আব্দুর রহমান (২৬), জালিয়াপাড়ার মোজাম্মেল হক (২৫), জোবাইর হোসেন (৩৩), কুলালপাড়ার নুরুল বশর নৃশৃসাদ (৩২), পল্লানপাড়ার আব্দুল হাকিম (৪০),  হাতিয়ারঘোনার মো. আব্দুল্লাহ (৩১), নাপাইগার জাফর আলম (৩০),  গোদারবিলের আব্দুর রহমান (৩২), জিয়াউর রহমান (২৮), নুরুল আলম চেয়ারম্যান (৪৩),  ফুলের ডেইলের মো. রাশেদ (৩২), বাজারপাড়ার মোহাম্মদ শাহ মালু (৫০),  নির্মল ধর (৫৫), পশ্চিম লেদার মো. নুরুল কবির (৩৬), হাবিবপাড়ার ইউছুফ জালাল বাহাদুর (৩০), নাইট্যাংপাড়ার মো. ইউনুছ (৫০), উলুমচামরীর আব্দুল হামিদ (৩৫), পশ্চিম সিকদারপাড়ার ছৈয়দ আহমদ ছৈয়তু (৫৪), রঙ্গীখালীর হেলাল আহমেদ (৩৪), জাদিমুরার মো. হাসান আব্দুল্লাহ (৩৩), ফুলের ডেইল’র মাহবুব মোর্শেদ, উত্তর জালিয়াপাড়ার মোস্তাক আহমেদ (৩৫), হাজিরপাড়ার জহির উদ্দিন (৩৬), জয়নাল উদ্দিন (৩৩), মো. আলী (৩২), আবুল কালাম, জুমছড়ির সুরত আলম (৫৫), কমলাপাড়ার নুরুল আলম (৩৫), ভালবাশার জসিম উদ্দিন (৪৫), থালিপাড়ার আব্দুর রহিম (৩৫)সহ বর্তমান ও সাবেক দুই সংসদ সদস্য।
তালিকায় জড়িত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যের নামও উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া জেলা ভিত্তিক ইয়াবাসহ মাদক পাচারের জড়িতদের আলাদা তালিকা করেছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
ইয়াবা পাচারের নৌ ও স্থল পথের রুটগুলো
নৌপথেই ইয়াবা এখন বেশি পাচার হচ্ছে। এসব রুটগুলো হলো- মিয়ানমারের বিভিন্ন কারখানায় প্রস্তুতকৃত ইয়াবা উত্পাদনের পর অধিকাংশই ফয়েজীপাড়া, মগপাড়া, চকপ্রু, তমব্রু, ইয়াঙ্গুন ও মংডুর সীমান্তবর্তী এলাকা যেমন সিকদারপাড়া, ফয়েজীপাড়া, মগপাড়া, সুদাপাড়া, উকিলপাড়া, গজাবিল, মাস্টারপাড়া, কাদিরবিল, ধুনাপাড়া, ম্যাংগালাসহ বিভিন্ন এলাকার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশের টেকনাফের বিভিন্ন রুটে আসে।
টেকনাফের এসব রুটগুলো হলো শাহপরীরদ্বীপের মিস্ত্রীপাড়া, জেটিঘাট, জালিয়াপাড়া, টেকনাফ সদরের মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, টেকনাফ পৌরসভার ১ নম্বর স্লুইস গেইট, আড়াই নম্বর স্লুইস গেইট, পুরাতন ট্রানজিটঘাট, নাইট্যাংপাড়া, হীলার জাদিমুরা, নয়াপাড়া, মৌচনী, লেদা, রঙ্গীখালীর এস কে আনোয়ারের মাছের প্রজেক্ট, চৌধুরীপাড়া, জালিয়াপাড়া, ফুলেরডেইল, কাস্টমঘাট, ওয়াবরাং, মৌলভীবাজার, হোয়াইক্যং এর খাবাংখালী, মিনাবাজার, ঝিমংখালী, কাঞ্জরপাড়া, লম্বাবিল, উনছিপ্রাং, উলুবনিয়া, টেকনাফের কাটাবনিয়া, খুরেরমুখ, মুন্ডারডেইল, কচুবনিয়া, মহেশখালীয়াপাড়া, লেঙ্গুরবিল, লম্বরী, রাজাছড়া, শামলাপুর প্রমুখ।
এসব রুটসহ সাগর উপকূলীয় এলাকা এবং উখিয়া ও বান্দরবনের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের বিভিন্ন পয়েন্ট ও নাথ নদীর দিয়ে বাণিজ্যিক পন্যবাহী ইঞ্জিন ট্রলার, বোটে ইয়াবার ছোট/বড় চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
টেকনাফে ইয়াবা বিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ার কারণে ইয়াবা পাচারকারীরা প্রায় মিয়ানমারের আকিয়াব, চকক্রু, তমব্রু ও ইয়াঙ্গুন হতে থেকে সরাসরি বঙ্গোপসাগর দিয়ে মাছ ধরার ট্রলারের মাধ্যমে কক্সবাজার জেলার মহেশকালী ও কুতুবদিয়া সমুদ্র এলাকা হয়ে সাগর/নদী পথে চট্টগ্রাম, বরিশাল, পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার মাছুয়া রকেট ঘাট, তুষখালী লঞ্চ ঘাট ও ভান্ডারিয়ার তেলিখালী, নারায়ণগঞ্জ, খুলনা ও ঢাকার সদরঘাটসহ বিভিন্ন নদী/সাগর তীরবর্তী জেলাসমূহে বড় বড় চালান পাচার হয়ে আসছে।
স্থলপথগুলো হলো, টেকনাফ, কক্সবাজার মহাসড়কের টেকনাফ, উখিয়া ও কক্সবাজার সদর পয়েন্ট হয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাচার হয় ইয়াবা। পরবর্তীতে ইয়াবা সড়ক ও আকাশ পথে দেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
কক্সবাজারের টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মানব পাচারকারী ও ইয়াবা পাচারকারীরা একই চক্র। যারা সমুদ্রপথে মানব পাচার করে, তাদের বেশিরভাগই এখন ইয়াবা পাচারে জড়িত।
321 ভিউ

Posted ৩:৫০ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৯ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com