হুমায়ূন রশিদ,টেকনাফ(১৬ ফেব্রুয়ারী) :: টেকনাফে আনুষ্ঠানিকভাবে ১শ ২জন ইয়াবা কারবারী আত্বসমর্পণ অনুষ্ঠান হয়েছে। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,পুলিশের আইজিপিসহ বক্তারা বলেছেন, দেশ ও জাতির স্বার্থ রক্ষায় সরকার জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস এবং মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। এই যুদ্ধে জয়ী না হওয়া পর্যন্ত আমরা পিছপা হবোনা। মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা পুনরায় তুলে ধরে বলেন, বিভিন্ন শর্তে আতœসমর্পণ করা ইয়াবা কারবারীদের মতো স্বাভাবিক, সুন্দর জীবন ও মাদকমুক্ত পরিবেশে বাঁচতে চাইলে অপরাপর মাদক কারবারীরা পর্যায়ক্রমে আতœসমর্পণ করতে পারেন।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি আইন-শৃংখলা বাহিনীর কোন সদস্য মাদক সংশ্লিষ্ট থাকলে তাদেরকেও কঠোর হাতে আইনের আওতায় আনা হবে। তখন সরকার তাদের পরিবার-পরিজনের মানবিক বিষয়টি বিবেচনা করবে। এই মাদকের কারণে দেশের সম্ভাবনাময় যুব সমাজ নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি গত ৩বছর ধরে নাফনদী নির্ভর জেলেরা বেকার হয়ে পড়েছে।
বিজিবির জিম্মায় হলেও তাদের মাছ শিকারের বিষয়টি বিবেচনার করার আহবান জানানো হয়। সুখী, সমৃদ্ধ ও উন্নয়নশীল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের মতো এই সর্বনাশা মাদকের বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
এই মাদকের কারণে টেকনাফের পরিচয় বহন করলে হয়রানির সম্মুখীন হতে হচ্ছে, অনেক ভাল ভাল পরিবারের সাথে বিয়ের সম্পর্ক ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। আমরা এই অবস্থা হতে উত্তরণ চাই। ইয়াবা ব্যবসায় সংশ্লিষ্টদের বয়কট করে মাদকমুক্ত টেকনাফ গড়ে তুলতে চাই। এইজন্য টেকনাফে কর্মরত সকল আইন-শৃংখলা বাহিনী, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, মিডিয়া-কর্মী ও সমাজের সচেতন মহলকে সম্পৃক্ত করে মাদক বিরোধী দূর্বার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। তাহলে দেশ উন্নত, সুখী ও সমৃদ্ধশালী হয়ে বিশ্ব দরবারে মাথা উচু করে দাড়াবে। সীমান্ত ব্যবস্থাপনা উন্নত করে বিজিবি জওয়ানদের আরো সর্তক এবং সজাগ থেকে নিষ্টার সাথে দায়িত্ব পালনের আহবান জানানো হয়।
১৬ ফেব্রুয়ারী সকাল পৌনে ১১টায় টেকনাফ পাইলট হাইস্কুল মাঠে বহু প্রতীক্ষিত ইয়াবা কারবারীদের আতœসমর্পণ অনুষ্ঠান জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। ডিআইজি অফিসের স্টাফ এএসপি চম্পার পরিচালনায় উক্ত আতœসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজামান কামাল। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজারের ৪ সংসদ সদস্য শাহিন আক্তার, জাফর আলম, আশেক উল্লাহ রফিক, সাইমুম সরওয়ার কমল, বিজিবির রিজিয়ন কমান্ডার জেনারেল সাজেদুর রহমান, পুলিশের চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম (বার) পিপিএম, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাক আহমদ চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মোঃ কামাল হোসেন, কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এডভোকেট সিরাজুল মোস্তফা, সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান।
আমন্ত্রিত অতিথি ছাড়াও উক্ত অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন টেকনাফ মডেল থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ,স্বাগত বক্তব্য রাখেন জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন, আতœসমর্পণকারীদের মধ্যে অনুভূতি প্রকাশ করেন এনামুল হক মেম্বার ও মোঃ সিরাজ।
আতœসমর্পণকারী ইয়াবা কারবারীরা হচ্ছে কক্সবাজার বাস টার্মিনালের শাহজাহান আনসারী,সাবরাং ইউনিয়নের সাহেদ রহমান নিপু, সাহেদ কামাল, সামশু মেম্বার, আবদুল হামিদ, মোয়াজ্জেম হোসেন প্রকাশ দানু মেম্বার, নয়াপাড়ার মোঃ তৈয়ব, আলীর ডেইলের জাফর আহমদ, মোঃ রাসেল, নুরুল আমিন, শওকত আলম, হোসেন আহমদ, আলী আহমদ, ডেইল পাড়ার মোঃ সাকের মিয়া, আলমগীর ফয়সাল, শামসুল আলম শামীম, মৌলভী বশির, রেজাউল করিম মেম্বার, নুরুল আলম,ডেইল পাড়ার নুরুল আমিন, মুন্ডার ডেইলের মনজুর, দক্ষিণ নয়াপাড়ার নূর মোহাম্মদসহ ২২জন।
টেকনাফ পৌর ও সদর ইউনিয়নের আবদু শুক্কুর, আমিনুর রহমান প্রকাশ আবদুল আমিন, দিদার মিয়া, আব্দুল আমিন, নুরুল আমিন, শফিকুল ইসলাম সফিক, ফয়সাল রহমান, আবদুর রহমান, জিয়াউর রহমান, পৌর কাউন্সিলর নুরুল বশর প্রকাশ নুরশাদ, দক্ষিণ জালিয়াপাড়ার ইমাম হোসেন, বড় হাবিব পাড়ার মোঃ ছিদ্দিক, পুরনো পল্লান পাড়ার শাহ আলম, অলিয়াবাদের মারুফ বিন খলিল বাবু, মৌলভী পাড়ার একরাম হোসেন, মধ্যম ডেইল পাড়ার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, চৌধুরী পাড়ার মংমং ছেং প্রকাশ মমচি, দক্ষিণ জালিয়া পাড়ার জুবাইর হোসেন, ঈমান হোসেন, মধ্যম জালিয়া পাড়ার মোজাম্মেল হক, নাজির পাড়ার এনামুল হক মেম্বার, আফসার, আবদুর রহমান, সৈয়দ হোসেন, মোঃ রফিক, মোঃ হেলাল, জামাল হোসেন, জাফর আলম, মৌলভী পাড়ার মোঃ আলী, নাইটং পাড়ার মোঃ ইউনুস, মাঠ পাড়ার কামাল হোসেন, উত্তর লম্বরীর আবদুল করিম প্রকাশ করিম মাঝি, সদর কচুবনিয়ার বদিউর রহমান, শীলবনিয়া পাড়ার আইয়ুব, রাজার ছড়ার আবদুল কুদ্দুস, জাহালিয়া পাড়ার মোঃ সিরাজ, নতুন পল্লান পাড়ার মোঃ সেলিম, চৌধুরী পাড়ার মোহাম্মদ আলম, তুলাতলীর নুরুল বশর, হাতিয়ার ঘোনার দিল মোহাম্মদ, মোহাম্মদ হাছন, রাজার ছড়ার হোসেন আলী, উত্তর জালিয়া পাড়ার নুরুল বশর মিজি, আবদুল গনি, জালিয়া পাড়ার মোঃ হাশেম প্রকাশ আংকু, আলম, পুরান পল্লান পাড়ার ইসমাইল, নাইট্যং পাড়ার আইয়ুব, মোঃ রহিম উল্লাহ, নুর হাবিব, মিঠা পানির ছড়ার মোঃ ইউনুছ, কামরুল হাসান রাসেলসহ ৫২জন।
বাহারছড়া ইউনিয়নের জাহাজ পুরার নুরুল আলম, শামলাপুর জুমপাড়ার শফি উল্লাহ, ছৈয়দ আলম, উত্তর শীলখালীর মোঃ আবু ছৈয়দসহ ৪জন।
হ্নীলা ইউনিয়নের হ্নীলা পশ্চিম লেদার নুরুল হুদা মেম্বার, আলী খালীর জামাল মেম্বার, শাহ আজম, পশ্চিম সিকদার পাড়ার ছৈয়দ আহমদ ছৈয়তু, রশিদ আহমদ, পশ্চিম লেদার নুরুল কবীর, পূর্ব লেদার জাহাঙ্গীর আলম, জাদিমোরার মোহাম্মদ হাসান আবদুল্লাহ, লেদার ফরিদ আলম, মোঃ হোছন, জহুর আলম, আবু তাহের, বোরহান, হামিদ, রবিউল আলম, আলীখালীর হারুন, হ্নীলা পশ্চিম সিকদার পাড়ার মাহাবুব, বাজার পাড়ার মোঃ শাহ, পূর্ব পানখালীর নজরুল ইসলাম, পশ্চিম পানখালীর নুরুল আবছার, ফুলের ডেইলের রুস্তম আলী, আলী নেওয়াজ, আবু তৈয়ব ও রমজানসহ ২৪জনসহ মোট ১শ ২জন আতœসমর্পণকৃত মাদক কারবারীকে ফুলের তোড়া দিয়ে বরণ করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং আইজিপি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী। আতœসমর্পণকৃত ইয়াবা কারবারীদের সাড়ে ৩লাখ ইয়াবা, ৩০টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র ও ৭০টি তাজা কার্তুজের পৃথক ২টি মামলায় আটক দেখিয়ে কক্সবাজার কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এদিকে আতœসমর্পণকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ীদের বেশীর ভাগই অভিযানের আগে স্বশস্ত্র গ্রুপের মাধ্যমে অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করলেও আতœসমর্পণে এসব উন্নত অস্ত্র জমা না পড়ায় সাধারণ মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গেছে।
Posted ১:২৮ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta