রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৫ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ১৯শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’

বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪
14 ভিউ
ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’

কক্সবংলা ডটকম(৮ মে) ::  মার্কিন ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি (দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি) চালু করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই পদ্ধতি চালু করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের বিপরীতে টাকার বড় ধরনের অবমূল্যায়ন করেছে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতির আওতায় ডলারের মধ্যবর্তী একটি দাম নির্ধারণ করে ব্যাংকগুলোকে এই দরের আশপাশে স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে বলেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মধ্যবর্তী এই দর নির্ধারণ করা হয়েছে ১১৭ টাকা।

এর সঙ্গে ১ টাকা যোগ কিংবা এক টাকা বিয়োগ করতে পারবে ব্যাংকগুলো। এর মানে ডলারের সর্বোচ্চ দর হবে ১১৮ টাকা। গতকাল বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের এমন সার্কুলারে আমদানি ব্যয় বেড়ে যাবে বলে মনে করছেন আমদানিকারক ও বাজারসংশ্লিষ্টরা।

অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা বলছেন, ডলারের বাড়তি দামে আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমদানি খরচ বেড়ে যাবে, দাম বাড়বে পণ্যের। চাপ বাড়বে সাধারণ মানুষের, মূল্যস্ফীতি আরো বেড়ে যাবে। নেতিবাচক প্রভাব পড়বে আমদানিতে।

জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, ১১৭ টাকা যে ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে; ক্রলিং পেগের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা গেলে ভালো। তবে এতে মূল্যস্ফীতি বাড়ার আশঙ্কা অবশ্যই রয়েছে।

তবে এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড ইকনোমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন বলেন, ডলারের এ পদক্ষেপ ইতিবাচক। কিন্তু আমরা পলিসি চেঞ্জ দেখতে চাই। ডলারের রেট হচ্ছে পলিসির একটা ফলাফল মাত্র। এতে নতুন করে কোনো পলিসি আসছে বলে আমার মনে হয় না। তিনি বলেন, নতুন সিদ্ধান্তে বাস্তবতার সঙ্গে দূরত্ব ৭ টাকা কমেছে। কিন্তু দূরত্ব এখনো আছে। আবার রেট নির্ধারিত করে দিলে বাজারে রেট ওঠানামা করতে না পারলে বাজারে সমস্যা আরো তৈরি হবে। এটাই আমার উদ্বেগ।

এ অর্থনীতিবিদ বলেন, বাজারে যে দরে ডলার বেচাকেনা হয় সেই দরের কাছে আমরা এখনো যাইনি। এর ফলে সরাসরি হয়তো জ¦ালানি তেল আমদানিতে প্রভাব পড়বে। ৭ টাকা বাড়লে যে প্রভাব পড়বে সেটা সহ্য করা যেত; যদি এজন্য আমি কিছু সুফল পেতাম। নতুন সিদ্ধান্তের কারণে যদি ডলারের সঙ্কট কমে যেত, জোগান বাড়ত- তাহলে ঠিক আছে। কিন্তু এখন যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে ডিজেলের দামও বাড়বে,

অন্যদিকে ডলার সংকটও থাকবে। তাহলে আমার নিট কোনো লাভ হলো না। বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ডলারের দাম একলাফে ৭ টাকা বাড়ানোর ফলে বাজারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। মানুষের কষ্ট বাড়বে। ডলারের দাম বাড়ানো হোক আর যা-ই হোক; মানুষকে দ্রুত স্থিতিশীল অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ফেরত দেয়ার তাগিদ দেন তিনি।

হেলাল উদ্দিন বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে মানুষ কষ্টের মধ্যে আছে। করোনা ভাইরাসের মধ্যে আমরা যে সংকটে পড়েছিলাম- পরবর্তী সময়ে যে কয়টি দেশ ঘুরে দাঁড়িয়েছিল, বাংলাদেশ তার মধ্যে সামনের সারিতে ছিল। কিন্তু এখন যে সংকটের মধ্যে আছি ঘুরে দাঁড়াতে পারছি না। আমাদের অনুরোধ, ডলারের দাম বাড়ানো হোক বা যা-ই হোক একটি সময়সীমা বেঁধে দিতে হবে, যেন একটি সময়ের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। বাংলাদেশ ব্যাংক ডলারের দাম এখন ১১৭ টাকা করেছে, কদিন পর ১২২ টাকা করুক। তবে ছয় মাসের মধ্যে যেন একটি স্থিতিশীল অর্থনীতির মধ্যে আসতে পারি।

বাংলাদেশ রিকন্ডিশন্ড ভেহিক্যালস ইম্পোর্টার্স অ্যান্ড ডিলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বারভিডা) সভাপতি হাবিব উল্লাহ ডন বলেন, ডলারের দাম সাত টাকা বাড়ায় নিত্যপণ্যের দাম বেড়ে যাবে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে দেশের মানুষ সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি দেখবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রজ্ঞাপন অনুসারে, ‘ক্রলিং পেগ’ হচ্ছে দেশীয় মুদ্রার সঙ্গে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার সমন্বয়ের একটি পদ্ধতি। এই পদ্ধতিতে একটি মুদ্রার বিনিময় হারকে একটি নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে ওঠানামা করার অনুমতি দেয়া হয়। এক্ষেত্রে মুদ্রার দরের একটি সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন সীমা নির্ধারণ করা থাকে। ফলে একবারেই খুব বেশি বাড়তে বা কমতেও পারবে না।

তবে নতুন এ পদ্ধতিতে ‘ক্রলিং পেগ মিড রেট’ বা ‘সিপিএমআর’ ১১৭ টাকায় নির্ধারণ করার কারণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের কাছে এবং আন্তঃব্যাংক চুক্তির ক্ষেত্রে সিপিএমআরের কাছাকাছি দামে মার্কিন ডলার ক্রয় বা বিক্রয় করতে পারবে। এই ১১৭ টাকা মূলত ডলারের বিপরীতে টাকার একটি মধ্যবর্তী হার। ব্যাংকগুলো এর চেয়ে কম-বেশি দাম নিতে পারবে; তবে সেটি খুব বেশি পার্থক্য করা যাবে না। ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিন ডলার কেনাবেচার দামের তথ্য বাংলাদেশ ব্যাংককে জানাতে হবে। বুধবার থেকেই মার্কিন ডলারের ক্রয় ও বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রলিং পেগ বিনিময় পদ্ধতি চালু হয়েছে।

ডলারে দাম বাড়া নিয়ে ভিন্ন কথা বলছেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক আহসান এইচ মনসুর। বাংলাদেশ ব্যাংকের পদক্ষেপকে সঠিক মনে করছেন তিনি।

ড. মনসুর বলেন, আমদানিতে একটি বিনিময় হার, রপ্তানিতে খোলা বাজারে আরেকটি বিনিময় হার। ভিন্ন ভিন্ন বিনিময় হারে একটি দেশের অর্থনীতি চলতে পারে না। বাজারে ডলারের দাম ইতোমধ্যে ১১৭ টাকা চলছে। খাতা-কলমে না থাকলেও বাজারে এটা ঠিকই চলছিল। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকের ঘোষণার ফলে প্রবাসী আয় আকর্ষিত হবে; পাশাপাশি রপ্তানি আয়ও দ্রুত দেশে ফেরত আসবে। এর ফলে বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরে আসবে।

তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের এ ভূমিকা ব্যালেন্স অব পেমেন্টকে সহায়তা করবে। আমরা এমন একটি সমন্বিত রেটের কথা বলছিলাম। আমাদের মতামতকে প্রাধান্য দিতেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক পদক্ষেপ নিয়েছে। বাংলাদেশে দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে ডলার সংকট চলছে। ডলারের আনুষ্ঠানিক দাম ৮৬ টাকা থেকে বেড়ে ১১০ টাকা হয়েছে আগেই। যদিও খোলা বাজারে লেনদেন হচ্ছিল আরো বেশি দামে। ডলার সংকটের প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভেও।

২০২১ সালের অগাস্টে যেখানে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ছিল প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার, সংকটের কারণে সেটি এখন বিশ বিলিয়ন ডলারেরও নিচে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আমদানি ব্যয় কমিয়ে আনাসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলেও বাজারে সংকট কাটেনি। এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

তখনই ডলারের বিনিময় হার নির্ধারণে ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতি ব্যবহারের চিন্তার কথা জানিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কীভাবে এ পদ্ধতি চালু হবে, তা নিয়ে আইএমএফের শরণাপন্ন হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মার্চের মধ্যে এ পদ্ধতি চালু করার কথা বলা হলেও মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে এসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এ সংক্রান্ত ঘোষণা দিল।

এদিকে গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে গতকাল বুধবার পর্যন্ত ডলারের দাম ছিল ১১০ টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডলারের দাম বেঁধে রাখায় খোলাবাজার অর্থাৎ কার্ব মার্কেটে এক ডলার বিক্রি হয়েছে ১১৮ টাকা থেকে ১১৮ টাকা ৫০ পয়সায়। নতুন পদ্ধতির কারণে এখন ডলারের দাম এক লাফে ১২৪ থেকে ১২৫ টাকায় উঠে যাবে, বলছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। ডলারের বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করার আগে এই পদ্ধতি চালুকে কার্যকরী একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেন বেসরকারি একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো এখন ১১৭ টাকার নিচে বা উপরে ডলার কেনাবেচা করতে পারবে। তবে এই দরের চেয়ে খুব বেশি কম বা বেশি দামে ডলার লেনদেন করা যাবে না। প্রতিদিন কত দামে ডলার কেনাবেচা করছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সেটা জানিয়ে দিতে হবে। তিনি বলেন, এখন ক্রলিং পেগ কতটা প্রভাব ফেলবে তার ওপর নির্ভর করবে ডলার ব্যবহারকারীরা কতটা আত্মবিশ্বাস পান। হুট করে কোনো বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্ত চাপিয়ে না দিয়ে বাজারকে স্বাধীনভাবে চলতে দিতে হবে।

জানা গেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে পরামর্শ করে আমদানি ও রপ্তানি থেকে শুরু করে সাধারণ গ্রাহকের কাছে কত দরে ডলার কেনাবেচা করা হবে, তা ঠিক করত বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)। এখন থেকে ডলারের দাম নির্ধারণে বাফেদা বা এবিবির কার্যত কোনো ভূমিকা থাকবে না বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

14 ভিউ

Posted ১:৫০ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০৯ মে ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com