রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

ডলার বাজার অস্থিতিশীল

বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯
159 ভিউ
ডলার বাজার অস্থিতিশীল

কক্সবাংলা ডটকম(৩ ডিসেম্বর) :: আমদানিকারকরা চাইছেন কম মূল্যে ডলার পেতে। রফতানিকারকরা ডলারের বেশি মূল্য পেতে রফতানি বিল নিয়ে এক ব্যাংক থেকে আরেক ব্যাংকে যাচ্ছেন। রেমিট্যান্স হাউজগুলোও বেশি মূল্যে রেমিট্যান্সের অর্থ বিক্রির জন্য ব্যাংকগুলোর সঙ্গে দরাদরি করছে। প্রতিনিয়ত চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের বেঁধে দেয়া দরে ডলার বিক্রি করছে না কেউ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী,৩ ডিসেম্বর প্রতি ডলারের সর্বোচ্চ বিনিময়মূল্য ছিল ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা। যদিও এ দামে দেশের কোনো প্রতিষ্ঠানেই ডলার পাওয়া যায়নি। আন্তঃব্যাংক লেনদেনেই ডলারের দর উঠেছে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা। এ দামেই রেমিট্যান্স হাউজ মানিগ্রাম ও ওয়েস্টার্ন ইউনিয়ন থেকে ডলার কিনেছে সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলো। আর খোলাবাজারে (কার্ব মার্কেট) প্রতি ডলার ৮৭ টাকা ৫০ পয়সারও বেশি দরে বিক্রি হচ্ছে।

যদিও ডলারের অব্যাহত চাহিদা সামাল দিতে প্রতিনিয়ত রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর কাছে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিক্রি করা হয়েছে ২৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তার পরও কেন্দ্রীয় ব্যাংককে টাকার অবমূল্যায়ন করতে হচ্ছে। গত তিন বছরে ডলারের বিপরীতে টাকার ৭ দশমিক ৮ শতাংশ অবমূল্যায়ন করা হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংক টাকার অবমূল্যায়ন ঘটালেও লাগাম নিজের হাতে রেখেছে। এজন্য ধীরলয়ে ৫ পয়সা করে ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করা হচ্ছে। ডলারকে বাজার পরিস্থিতির ওপর ছেড়ে দিলে পরিস্থিতি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে উঠতে পারে।

ডলারের দর বাজারের চাহিদা ও জোগানের ওপর ছেড়ে দেয়া দরকার বলে জানান ব্যাংক নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) চেয়ারম্যান ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের এমডি সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। তিনি বলেন, এতে বৈদেশিক মুদ্রার বাজার সমন্বয় হয়ে স্থিতিশীল হবে। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্সেও বড় প্রবৃদ্ধি আসবে। তবে এটি পুরোপুরি ছেড়ে দিলে বাজার অস্থিতিশীলও হয়ে উঠতে পারে। এজন্য প্রয়োজন যথাযথ সমন্বয় ও নিয়ন্ত্রণ।

কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঘোষিত দরে ডলার পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, রেমিট্যান্স হাউজগুলো থেকে বাড়তি দামে ডলার কিনতে হচ্ছে। একইভাবে রফতানিকারকরাও ডলারের দাম নিয়ে দরকষাকষি করছেন। এজন্যই কেন্দ্রীয় ব্যাংক নির্ধারিত দরে ডলার কেনা সম্ভব হচ্ছে না। দেশে একই সঙ্গে বিপুল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ চলছে। বড় বড় অবকাঠামোর জন্য এলসি খুলতে হচ্ছে। কিন্তু রফতানি আয় নেতিবাচক হওয়ায় ডলারের বাজারে স্থিতিশীলতা আসছে না।

সাধারণত বাংলাদেশ ব্যাংকের মূল্যের সঙ্গে খুচরা বাজারে ডলারের দর এক-দেড় টাকা পর্যন্ত ব্যবধান থাকে। বর্তমানে এ ব্যবধান ৩ টাকা ছাড়িয়েছে। ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের পর থেকে কার্ব মার্কেটে ডলারের চাহিদা অস্বাভাবিক বেড়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত অর্থ টাকার পরিবর্তে ডলার সংরক্ষণের প্রবণতা বৃদ্ধি ও দেশ থেকে নগদ ডলার পাচারের কারণেই এ তারতম্য তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলার’স অ্যাসোসিয়েশনের (বাফেদা) চেয়ারম্যান ও রূপালী ব্যাংকের এমডি ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, বাফেদা কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থা নয়। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার পর্যালোচনা করে সময় সময় সুপারিশ পেশ করে থাকে বাফেদা। বৈদেশিক মুদ্রাবাজার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যেসব নির্দেশনা দিয়েছে, অনেক বেসরকারি ব্যাংক তা পরিপালন করেনি। এজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক বিভিন্ন সময় তাদের নোটিসও দিয়েছে। তবে চাহিদা ও জোগানের মধ্যে তফাৎ থাকলে বাজারে কিছুটা অসামঞ্জস্যতা তৈরি হয়।

দিনের শুরুতেই ডলারসহ বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক মুদ্রাগুলোর দর ঘোষণা করে তফসিলি ব্যাংকগুলো। গতকাল বেসরকারি খাতের প্রাইম ব্যাংক আমদানি পর্যায়ে ডলারের (বিসি রেট) বিক্রয়মূল্য ঘোষণা করে ৮৪ টাকা ৯৫ পয়সা। আর নগদ ডলার ৮৫ টাকা ৫০ পয়সায় বিক্রির ঘোষণা দেয় ব্যাংকটি। প্রায় একই দর ঘোষণা দিয়েছে সাউথইস্ট, এনসিসি, সিটি, ব্র্যাকসহ দেশের প্রায় সব ব্যাংক। যদিও ঘোষিত দর নিজেরাই ধরে রাখতে পারেনি এ ব্যাংকগুলো। রফতানিকারক ও রেমিট্যান্স হাউজগুলো থেকে প্রতি ডলার কিনতে ব্যাংকগুলো ৮৬ টাকার বেশি ব্যয় করেছে।

পরিস্থিতির চাপেই ব্যাংকগুলো ঘোষিত রেট ধরে রাখতে পারছে না বলে মনে করেন এনসিসি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসলেহ্ উদ্দীন আহমেদ। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে প্রতিদিনই এলসির দায় পরিশোধের চাপে থাকতে হয়। এজন্য পর্যাপ্ত ডলার সংগ্রহেরও প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু মৌলিক উৎস থেকে নির্ধারিত দরে ডলার কিনতে না পারলে ব্যাংকগুলোকে বেশি দামে কিনতে বাধ্য হতে হয়।

এলসি পরিশোধে বড় ধরনের চাপে আছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোও। সরকারি খাতের সব প্রতিষ্ঠানের আমদানি এলসি এ ব্যাংকগুলোকেই খুলতে হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি), বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি), বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি), বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) ও প্রতিরক্ষা ক্রয় মহাপরিদপ্তরের (ডিজিডিপি)। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পেট্রোবাংলার অধীন এলএনজি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পদ্মা সেতু, মেট্রো রেলসহ দেশের বৃহৎ অবকাঠামো নির্মাণের এলসি। নির্ধারিত সময়ে এসব এলসির দায় পরিশোধে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ডলার ক্রয়ে অনৈতিক প্রতিযোগিতার কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে জানান অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শামস-উল-ইসলাম। তিনি বলেন, আমাদের সরকারি সব প্রতিষ্ঠানের এলসি খোলা ও দায় পরিশোধ করতে হচ্ছে। বেসরকারি ব্যাংকগুলো বেশি দামে রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স কিনে নেয়। কোনো কোনো বেসরকারি ব্যাংক সরকার ঘোষিত ২ শতাংশের অতিরিক্ত আরো ১ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। কিন্তু রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর পক্ষে এটি করা সম্ভব নয়। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো আমদানি এলসির জন্য এক পয়সাও বেশি দেয় না। ফলে দিন শেষে আমাদের লোকসান দিতে হচ্ছে।

ব্যাংকিং খাতে ডলার নিয়ে টানাটানির প্রভাব পড়েছে মানি এক্সচেঞ্জগুলোতেও। গতকাল হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে অবস্থিত ডায়মন্ড মানি এক্সচেঞ্জ প্রতি ডলারের বিক্রয়মূল্য দাবি করে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। রাজধানীর মতিঝিল, বসুন্ধরা সিটি, ধানমন্ডিসহ বিভিন্ন এলাকার মানি এক্সচেঞ্জগুলোও একই দামে ডলার বিক্রি করে। মতিঝিলের ভাসমান বৈদেশিক মুদ্রা বিক্রেতারা প্রতি ডলার ৮৭ টাকা পর্যন্ত কেনার প্রস্তাব করেন এ প্রতিবেদকের কাছে। ১০০ ডলার মূল্যের নোট পরিমাণে বেশি হলে আরো বেশি দর দেয়ার প্রস্তাব করেন তারা।

যদিও দর স্থিতিশীল রাখতে রিজার্ভ থেকে অব্যাহতভাবে ডলার বিক্রি করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাই থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করা হয়েছে। এর আগে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংককে রেকর্ড ২৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার বিক্রি করতে হয়। ২০১৭-১৮ অর্থবছরেও বিক্রি করতে হয়েছিল ২৩১ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বাজারে ১৭ কোটি ৫০ লাখ ডলার বিক্রির বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ১৯৩ কোটি ১০ লাখ ডলার ক্রয় করেছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তবে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বাজারে ডলার বিক্রির দরকার হয়নি। ওই অর্থবছর বাজার থেকে বাংলাদেশ ব্যাংক ৪১৩ কোটি ১০ লাখ ডলার কিনেছিল।

ধারাবাহিকভাবে ডলার বিক্রির প্রভাব পড়ছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে। এক বছর ধরে ৩১-৩২ বিলিয়ন ডলারের ঘরে ওঠা-নামা করছে রিজার্ভের পরিমাণ। যদিও প্রতিনিয়তই বাড়ছে দেশের আমদানি ব্যয়। এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে রূপপুর, রামপাল, এলএনজিসহ বৃহৎ প্রকল্পগুলোর পেমেন্ট।

159 ভিউ

Posted ২:২৫ পূর্বাহ্ণ | বুধবার, ০৪ ডিসেম্বর ২০১৯

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com