বার্তা পরিবেশক(১৫ অক্টোবর) :: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাঙালি জাতীয়তাবাদ নির্ভর শুদ্ধ সংস্কৃতি চর্চার অন্যতম লালন ক্ষেত্র জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠন। বিগত ২ যুগ ধরে প্রাচ্যের অক্সর্ফোড ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অংগনে প্রতিনিধিত্ব করে চলছে জয়ধ্বনি। শুদ্ধ সংস্কৃতিক চর্চার মধ্যে দিয়ে অপসংস্কৃতি দূর হোক এই মূল মন্ত্রকে ধারণ করে বিভিন্ন সামাজিক দায়িত্ব পালনসহ আবহমান বাংলার সংস্কৃতি চর্চায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
তারই ধারাবাহিকতায় ১১ অক্টোবর টিএসসি মিলনায়তনে জয়ধ্বনি আয়োজন করেছিল শরৎ উৎসব-২০১৮।
শরৎ উৎসবে অংশগ্রহণ করতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন বিশিষ্ট বাচিক শিল্পী, তারা বাংলার সাবেক উপস্থাপিকা ও লেখক রিনি বিশ্বাস। কানায় কানায় পূর্ণ মিলনায়তনে রিনির ২৫ মিনিটের অনবদ্য আবৃত্তি পরিবেশনা শ্রোতারা মন্ত্রমূগ্ধ হয়ে উপভোগ করে।
কক্সবাজারের কৃতি সন্তান, বর্তমানে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ উপ কমিটির অন্যতম সদস্য বাবু সুজন শর্মা ১৯৯৮ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকাকালীন সময়ে তাঁরই হাত ধরে জয়ধ্বনির গোড়াপত্তন। নিজস্ব সংস্কৃতি চেতনাবোধ, আবহমান বাংলার সংস্কৃতি ধারণ- পালন তথা স্বাধীনতার স্বপক্ষের প্রতিটি প্রয়োজনীয় মূহুর্তে নিজেকে প্রমাণিত করে গুনে গুনে সংগঠনটি ২০ বছরে পর্দাপণ করেছে। জয়ধ্বনির প্রতিষ্ঠাতা সুজন শর্মার পরিকল্পনায় এবার বেশ আড়ম্বরপূর্ণ ভাবে উদ্যাপিত হয় শরৎ উৎসব- ২০১৮।
দলীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে উৎসব শুরুর পর আলোচলা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য জনাব অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আকতারুজ্জামান বলেন, “শরৎ আমার পছন্দের ঋতু। তপ্ত গরমের পর শীতের আগেই শরৎ এর আগমন। নীল আকাশ, সাদা কাশফুল বাংলা মায়ের প্রকৃতিতে অপরুপ এক ¯িœগ্ধতা কাজ করে”। উনি জয়ধ্বনির কার্যক্রম বেগবান করতে সব ধরণের সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
সংগঠনের সভাপতি সাব্বির হোসেনের সভাপতিত্বে ও সিদ্দিকুর রহমান সজিবের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় অনান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম, অধ্যাপক ড. সৌমিত্র শেখর, সংগঠনের মডারেটর সহকারী অধ্যাপক দেব প্রসাদ দাঁ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সাংস্কৃতিক কর্মী সুজন শর্মা বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক অংগন সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে জয়ধ্বনির অবদান অনস্বীকার্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বসন্ত উৎসব পালন শুরু করে জয়ধ্বনি, প্রথম শরৎ উৎসব ও চৈত্র সংক্রান্তি উৎসব উদযাপন করে জয়ধ্বনি। স্বাধীনতার পর প্রথম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২রা মার্চ পতাকা উৎসব পালন শুরু করে জয়ধ্বনি। এছাড়াও ১৯৯৮ সালের বন্যায় মাস ব্যাপি ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা, সংগীতকে হাতিয়ার করে প্রতি বছর শীত বস্ত্র বিতরণসহ সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে নানা রকমের কার্যক্রম পরিচালনা করে চলছে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আগামিতে জয়ধ্বনির কার্যক্রম আরো বেগবান হবে বলে আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।
সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে শুরু হয় শরৎ এর মূল পরিবেশনা। দলীয় সংগীত ছাড়াও পরিবেশিত হয় নৃত্য, আবৃত্তি, একক সংগীত। অনান্যদের মধ্যে সংগীত পরিবেশন করেন টিএসসির পরিচালক বিশিষ্ট রবীন্দ্র সংগীত শিল্পী মহিউজ্জামান ময়না, শিক্ষক ড. প্রদীপ কুমার নন্দী, শিক্ষক দেব প্রসাদ দাঁ, শিক্ষক দেবাশীস ব্যাপারী, জনপ্রিয় শিল্পী মাহমুদা মৌমিতা, পারভেজ সাজ্জাদ প্রমূখ। সর্বশেষে সমসাময়িক জনপ্রিয় বাওল শিল্পী, জয়ধ্বনির প্রতিষ্ঠা কালীন সদস্য প্রকাশ কুমার বণিকের “বাওলা” দল অনুষ্ঠানের শেষ পর্যন্ত দর্শক শ্রোতাদের মাতিয়ে রাখেন। উৎসব আয়োজনে চিত্রশিল্পী শফিক শাহীন, মেহেদী হাসান শিশির ও অন্তরা বিশ্বাসের এর নেতৃত্বে অনান্যদের মধ্যে বিশেষ অবদান রাখেন কিশোর ক্লডিয়াস, রাকিবুল হাসান, খুশী খাতুন, আবদুর রহমান, শ্রাবণী চৌধুরী, এস এম আজিজুল হাকিমসহ এক ঝাঁক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান ছাত্র ছাত্রী।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সঞ্চালনার দায়িত্বে থাকা নাহিদা আফরোজ সুমি বলেন তাঁর সঞ্চালনা পেশার অন্যতম অনুপ্রেরণা রিনি বিশ্বাস। রিনি তাঁর ৫ দিনের ঢাকা ঢাকা সফরে বিভিন্ন টেলিভিশনে ও পত্রিকায় স্বাক্ষাতকার দেওয়া, আবৃত্তি কর্মাশালা পরিচালনাসহ কক্সবাজারের বাৎসরিক শারদীয় সংখ্যা “প্রতিমা” স্বরণীকায় লেখা দেওয়া ছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বের সাথে মত বিনিময় করেন।
রিনি কক্সবাংলাকে বলেন, বাংলাদেশের সাথে আমার রয়েছে নাড়ির টান। তাই শত ব্যস্ততার মঝেও সুযোগ পেলে বাংলাদেশে ছুটে আসি। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে ঢাকায় অন্য একটি অনুষ্ঠানে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। উনি সবাইকে শারদীয় শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক উন্নতির পাশাপাশি নিজস্ব ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে অনন্য সমৃদ্ধ জাতি হিসেবেই বিকশিত হবে।
Posted ৬:৪৬ অপরাহ্ণ | সোমবার, ১৫ অক্টোবর ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta