কক্সবাংলা ডটকম(৫ আগষ্ট) :: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সুযোগ নিতে তৃতীয় পক্ষ নেমেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।প্রযুক্তির অপব্যবহার না করতে শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে আন্দোলন থেকে সরে এসে ঘরে ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় মনোযোগী হওয়ারও আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।সেই সঙ্গে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় থাকা ছেলেমেয়েদের ঘরে রাখতে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
গণভবনে আয়োজিত ১০টি জেলার ৩শ’টি ইউনিয়নে অপটিক্যাল ফাইবার কানেকটিভিটি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মানুষ যেমন সেবা পাচ্ছে, তেমনি মাঝে মাঝে কিছু ঝামেলাও পোহাতে হচ্ছে।
‘কারণ আমরা যত আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, ততই এসব প্রযুক্তি ও সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে নানা ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে দেশের ভেতর একটা অশান্ত পরিবেশ তৈরিরও কেউ কেউ চেষ্টা চালাচ্ছে। সেজন্য আমরা বলব, কেউ গুজবে কান দেবেন না, মিথ্যা অপপ্রচারে কেউ বিভ্রান্ত হবেন না। যা-ই দেখেন, শোনেন, আগে যাচাই করে নেবেন। যাচাই না করে যেন কিছু করবেন না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরাই আগামী দিনের ভবিষ্যৎ। আমরা দেশকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি । আগামী দিনে তোমরা আসবে। দেশকে এগিয়ে নেওয়ার দায়িত্ব তোমাদের ওপর পড়বে। শিক্ষা ছাড়া কোনও জাতি এগিয়ে যেতে পারে না।’এক্ষেত্রে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থী ও দেশের যুবসমাজের প্রতি বিশেষ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। তারা যেন কোনো রকম গুজব না ছড়ায় বা গুজবে বিভ্রান্ত না হয়।
তিনি বলেন, ‘ইন্টারনেট, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ইউটিউব যেন তারা ভালো কাজে ব্যবহার করে, নোংরা কাজে না। সেখানে নোংরা বক্তব্য দেয়া, নোংরা কথা বলা, অপপ্রচার চালানো, এগুলো পরিহার করতে হবে। কারণ মাঝে মাঝে যখন দেখি, অনেকসময় তাতে এমন ভাষা ব্যবহৃত হয়, যা নিজেদের পড়তে লজ্জা করে, ঘৃণা হয়। ওই ধরনের নোংরা কথা যেন কোনোভাবেই ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহার করে ছড়ানো না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একটা ডিজিটাল প্রযুক্তি, যা আধুনিক জীবন গড়ার কাজে, জীবনকে সুন্দর করার কাজে, শিক্ষা গ্রহণ করার কাজে ব্যবহার করতে পারে, সেটা যেন কোনোভাবেই অপব্যবহার না হয়।’
ছেলেমেয়েদের কেউ যেন সন্ত্রাস বা মাদকের সাথে সম্পৃক্ত হতে না পারে সেজন্য বাবা-মা ও শিক্ষকদের সতর্ক থাকতে বলেছেন তিনি।
ঘরের ছেলে ঘরে ফিরতে হবে
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা জানেন কিছুদিন আগে একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেছে। আমরা দু’জন শিক্ষার্থী হারিয়েছি। আমরা এজন্য অত্যন্ত দুঃখিত।’
‘সাথে সাথে আমরা ব্যবস্থাও নিয়েছি। কারণ আমি দীর্ঘদিন ধরে আহ্বান করে আসছিলাম। গাড়িচালকদের আমি বলেছি, তারা যেন ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালায়। পাশাপাশি পথচারীদের ও ট্রাফিক আইন মেনে চলতে হবে। ছাত্র-শিক্ষক সবাইকেই রাস্তায় চলাচলে কিছু নিয়ম আছে, সেগুলো মেনে চলতে হবে। যত্রতত্র হঠাৎ দৌড় মারা বা এ জাতীয় কিছু যেন না ঘটে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে এখন তৃতীয় পক্ষ ঢুকে গেছে। গাউসিয়া মার্কেট থেকে হঠাৎ করেই স্কুল ইউনিফর্ম বিক্রি হয়ে গেছে। পলাশি থেকে শিক্ষার্থীদের পরিচয়পত্র তৈরি হচ্ছে। এই তৃতীয় পক্ষ কোমলমতি শিশু-কিশোরদের নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করতে চাইছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
‘যারা আগুন দিয়ে মানুষ মারতে পারে, আগুন সন্ত্রাস করে অনিক, হৃদয়ের মতো মেধাবী ছাত্রদের পড়াশোনা বন্ধ করে দিতে পারে, তারা শিক্ষার্থীদের ওপরও যে কোনো সময় ভয়াবহ কিছু ঘটাতে পারে,’ বলেন তিনি।
অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আপনারা আপনাদের ছেলেমেয়েদের ঘরে রাখেন। তারা যেটুকু করেছে যথেষ্ট করেছে। এখন তৃতীয় পক্ষ যদি কিছু ঘটিয়ে ফেলে তার দায় কে নেবে?’
‘বাবা-মা, শিক্ষকদের অনুরোধ করছি কোমলমতি শিশুদের ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পড়াশুনায় মনোযোগ হতে বলেন।’
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের আহ্বান জানান শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফিরিয়ে নিয়ে তাদের পড়াশোনা আবার শুরু করতে।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তোমরা অনেকেই আমার নাতিপুতির বয়সী। তোমরা পড়াশোনায় ফিরে যাও।’
প্রধানমন্ত্রী অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে আরও বলেন, ‘আপনাদের সন্তানের নিরাপত্তার দায়িত্ব আপনার। তাদের রাস্তা থেকে তুলে তাদের স্কুলে কলেজে পাঠান। লেখাপড়ার পরিবেশ নিয়ে আসেন। তারা লেখাপড়া করুক। যথেষ্ট হয়েছে, আর না। এবার ঘরের ছেলে ঘরে ফিরে যেতে হবে। আর কোনো মায়ের কোল খালি হোক সেটা আমি চাই না,’ বলেন তিনি।
গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাসের জন্য অপেক্ষার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাসের চাকায় পিষ্ট হয় শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া ও রাজীব। ওই সময় কুর্মিটোলা ফ্লাইওভারের কাছে শিক্ষার্থীরা বাসের জন্য ফুটপাতে দাঁড়িয়ে ছিলে। দুটি বাসের রেষারেষিতে একটি বাস শিক্ষার্থীদের উপর উঠে যায়। ঘটনাস্থলেই তারা নিহত হয়। এ ঘটনার পর ফুঁসে ওঠে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। ধীরে ধীরে রাজপথে নামতে থাকে তারা।
Posted ১২:২৭ অপরাহ্ণ | রবিবার, ০৫ আগস্ট ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta