বিশেষ প্রতিবেদক(১২ মে) :: থামছে না শীর্ষ সন্ত্রাসী রাইফেল মোস্তফার অপরাধ কর্মকান্ড। কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের তেতৈয়া এলাকায় অস্ত্র, মারামারি ও ইয়াবা-সহ একাধিক মামলার আসামী সিরাজুল মোস্তফা প্রকাশ রাইফেল মোস্তফার অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ এলাকার সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও অতিষ্ঠ বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, রাইফেল মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে একই এলাকার প্রবাসী জাহেদা বেগম নামে এক মহিলাকে নানাভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো।
এরই ধারাবাহিকতায় ১১ মে রাত সাড়ে ১১ টার দিকে জাহেদা বেগমের বাড়ির দরজা খোলা পেয়ে তার শয়ন কক্ষে অনধিকার প্রবেশ করে ধর্ষণের উদ্দেশ্যে ঝাপটাই ধরে। ইচ্ছার বিরুদ্ধে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে। ওই সময় তার শোর চিৎকারে করলে রাইফেল মোস্তফা পালিয়ে যায়।
একই দিন আবারও ১২ টার দিকে অজ্ঞাতনামা ৪/৫ অস্ত্রশস্ত্রে নিয়ে তার বসতবাড়ির বাউন্ডারীর দেয়াল ভাংচুর করে ৫০ হাজার টাকার ক্ষতি সাধন করে। তখন জাহেদা বেগম প্রতিবাদ করিলে তাকে এলাপাতাড়ি কিল, লাথি ঘুষি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম করে। এসময় তার গলায় থাকা ১ ভরি ওজনের একটি স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়।
প্রাপ্ত সূত্রে জানা গেছে, সে অস্ত্র ব্যবসাসহ নানা ধরণের অপরাধে লিপ্ত রয়েছে। ১৯৯১ সাল থেকে তার নেতৃত্বে হাতে গড়া একটি বাহিনী মোজাহিদ সমিতি নাম ব্যবহার করে থাকে। সেটা খুরুশকুলের সর্ব সাধারণের ও প্রশাসনিক ক্ষেত্রে সবাই অবগত রয়েছে।
এ ছাড়াও রাইফেল মোস্তফা কক্সবাজার সদরের আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী সদস্য কামাল উদ্দীন কামালকে দিন-দুপুরে হত্যার উদ্দেশে গুলি করে। সে বিষয়ে দ্রুত বিচার আইনে একটি মামলা হয়। সে মামলায় তাকে হাতে নাতে অস্ত্রসহ আটক করেছিল পুলিশ। ওই মামলা নং জি আর ২৫৬/২০১০।
এরপর জি আর ৬১/২০১৮ ইং, সালে একই এলাকার সৌদি প্রবাসী মৃত মমতাজ আহমদের ছেলে নুরুল আজিম কাছ থেকে ২ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবিতে না পেয়ে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। এছাড়াও তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক থেকে শুরু করে একাধিক মামলা রয়েছে।
মামলাগুলো হলো, জি আর ২৯৩/১৯৯৮ ইং, জি আর, ২৫৯/২০১০ ইং, জি আর ১৩০/২০১০ ইং, জি আর ৪৮/২০১০ইং, এস পি টি ১১৭/২০০৯ ইং, বিস্ফোরক মামলা দ্রব্য আইনের ৩ ধারায় মামরার চার্জ সীট করা হয়। এস টি ১৯/২০০৭ ইং, জি আর ৯৪৩/২০১২ ইং, সি আর ৫৮৫/২০০৯ ইং।
তার অত্যাচারের অতিষ্ঠ হয়ে একই এলাকার প্রবাসী মোহাম্মদুল হকের স্ত্রী জাহেদা বেগম বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন ধরে সৌদি আরবে রয়েছে। এক সন্তান ছাড়া কেউ নেই আমার। এ জের ধরে রাইফেল মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে আমাকে বিভিন্নভাবে কু-প্রস্তাব দিয়ে আসছিলো। রাজি না হলে প্রকাশ্যে আমাকে বিভিন্ন ধরণের হুমকি ধমকি দিয়ে আসত।
এরই ধারাবাহিকতায় গত ১১ মে অনধিকারভাবে আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়ে আমার বসতবাড়ির বাউন্ডারীর দেয়াল ভাঙচুরসহ আমার গলার ১ ভরি ওজনের স্বর্ণের চেইন ছিনিয়ে নেয়। এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানায় মামলার পক্রিয়া চলছে।
এদিকে দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে যে বাড়িতে আমি বসবাস করে আসছি সে বাড়ির চতুর্থ পাশে কোন ধরণের সীমানা নেয়। নিরাপত্তার জন্য কিছু দিন আগে থেকে বাড়ির চতুর্থ পাশে সীমানা দেওয়ার ব্যবস্থা করলে সে আমার থেকে চাঁদা দাবি করে আসছে। চাঁদা দিতেও অস্বীকৃতি জানালে রাইফেল মোস্তফা কাজ করতে আসা লোকজনকে তাড়িয়ে দেয়। এভাবে প্রতিনিয়তেই বাঁধা দিয়ে আসছে সে।
এবিষয়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন ও ইউপি সদস্য শেখ কামালকে অবগত রয়েছে। সে তাদেরকে কোন ধরণের পাত্তা দিচ্ছে না বলে জানা গেছে।
প্রাপ্ত সুত্রে জানা গেছে, রাইফেল মোস্তফা এলাকার একজন কু-খ্যাত সন্ত্রাস। সে একই এলাকার মৃত বাঁচা মিয়ার ছেলে। এলাকায় তার একটি সিন্ডিকেট রয়েছে। সে সিন্ডিকের প্রধান। তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় নানা অপরাধে একাধিক মামলা রয়েছে।
এবিষয়ে খুরুশকুল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, রাইফেল মোস্তফা এলাকার একজন খারাপ প্রকৃতির লোক। জাহেদা বেগমের স্বামী বিদেশ থাকায় তাকে বিভিন্ন ধরণের হয়রানি করেছে বলে শুনেছি। পরবর্তীতে ১১ মে যে ঘটনা ঘটেছে তার ব্যাপারেও জাহেদা বেগম আমাকে অবগত করেছেন।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মাজেদুল ইসলাম বলেন, জাহেদা বেগম নামে এক মহিলা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। তাদের উভয়ের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বসতবাড়ির বিরোধ রয়েছে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে বসতবাড়ির বাউন্ডারীর ভাংচুর তা দেখা গেলেও বাকী অভিযোগের তদন্ত চলছে বলে জানান, তিনি।
Posted ১১:৩০ অপরাহ্ণ | শনিবার, ১২ মে ২০১৮
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta