রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২২শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

রবিবার ৫ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দুঃসাধ্য ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ : কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় ৩ সপ্তাহে ৬২ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮
404 ভিউ
দুঃসাধ্য ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ : কক্সবাজার সীমান্ত এলাকায় ৩ সপ্তাহে ৬২ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

কক্সবাংলা রিপোর্ট(১৩ জানুয়ারী) :: কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকায় লাখ লাখ রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগে ভয়ংকর রূপে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ছে মরণ নেশা ইয়াবা।প্রতিদিন ইয়াবার দু-তিনটি চালান ধরা পড়ছে। তাতে কোনো কোনো সময় বড় চালানে কোটি টাকার ইয়াবাসহ পাচারকারী আটক হলেও তার শতগুণ বেশি পাচার হয়ে যাচ্ছে। ফলে ইয়াবা পাচার থামছেই না। আর এসব ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে আছেন কক্সবাজারের সীমান্ত এলাকার লোকজনসহ জেলার প্রভাবশালী মহল। কতিপয় রাজনৈতিক নেতা, নামধারী সাংবাদিক, অসাধু আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, অর্থলোভী আইনজীবীসহ এরসঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে সমাজের উচ্চশিক্ষিত পরিবারের সন্তানেরা। নিত্য নতুন কৌশল ও নিত্য নতুন পথ ব্যবহার করে প্রতিদিন টেকনাফ থেকে কক্সবাজার হয়ে সারাদেশে পৌঁছে যাচ্ছে লক্ষ লক্ষ ইয়াবা।

সূত্র জানায়, ক্রেজি ড্রাগ’ ইয়াবা অনেকটা মহামারী রূপ নিয়েছে। টেকনাফ থেকে রাজধানী ঢাকার অলিগলি থেকে শুরু করে গ্রামের আনাচে- কানাচে পর্যন্ত বিস্তার ঘটেছে নীরব ঘাতক ইয়াবা ট্যাবলেটের। একশ্রেণির স্কুল, কলেজ, মেডিক্যাল কলেজ শিক্ষার্থী, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী, তরুণ-তরুণী, ব্যবসায়ী, ডাক্তার, সাংবাদিক, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, চাকরিজীবীসহ সব শ্রেণি-পেশার অনেকেই এখন ইয়াবায় আসক্ত।

ইয়াবায় আসক্ত নেই এমন কোনো পেশার লোক নেই। শ্রমজীবী থেকে শুরু করে একেবারে সব পেশার মধ্যে ইয়াবা আসক্ত রয়েছে।
মনোরোগ চিকিত্সকদের মতে, প্রতিদিন এসব পেশার লোক তাদের কাছে চিকিত্সার জন্য আসে। তাদের পরিচয় জানার পর চিকিত্সকরা হতবাক হয়ে পড়েন।রাষ্ট্রের এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির নিরাপত্তায় নিয়োজিত কর্মকর্তারাও ইয়াবায় আসক্ত হয়ে চিকিত্সা নিতে আসেন। তবে এদের মধ্যে ছাত্র-ছাত্রী তরুণ-তরুণীর সংখ্যাই বেশি।
ইয়াবার ভয়াবহ ধোঁয়া আগামী প্রজন্মকে ধ্বংসের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় ইয়াবা উপজেলা পর্যায়েও তৈরি হচ্ছে। এমনকি ওয়াশ রুমে তৈরি করা যায়। পিরোজপুরের ভাণ্ডারিয়া উপজেলায় ইয়াবা তৈরি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়,গত ২১ ডিসেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারী পর্যন্ত সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা ৩ সপ্তাহে ৬২ কোটি ৩০ লক্ষ টাকার মাদকের চালান জব্দ করলেও হঠাৎ মাদক দমনে পুলিশের অপারগতায় সাধারণ মানুষ হতাশ হয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ঘোষণায় মাদক চোরাকারবারী চক্র আরো উৎসাহিত হয়ে উঠবে বলে আশংকা প্রকাশ করা হচ্ছে।কক্সবাজারের উপকূলীয় সীমান্ত পয়েন্ট এবং পার্বত্য এলাকা হয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের সুযোগে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে ইয়াবাসহ বিয়ার জাতীয় মাদকের চালানের প্রবেশ।

গত ২ সপ্তাহে টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের নাজিরপাড়া বিওপি গত ২১ ডিসেম্বর ১০হাজার ইয়াবা, গত ২৪ ডিসেম্বর টেকনাফ সদর বিওপি ৯ হাজার ৮২১ পিস ইয়াবাসহ ১ জনকে আটক, ২৮ ডিসেম্বর হোয়াইক্যং বিওপি চেকপোস্ট ৯ হাজার ৭শ ৫পিস ইয়াবাসহ ১ জনকে আটক এবং এর আগে গত ৩০ ডিসেম্বর রাতে চট্টগ্রাম নগরীর কর্ণফুলীর মইজ্জারটেক হতে কক্সবাজার থেকে আসা একটি বাসে তল্লাশী চালিয়ে ৫০ হাজার পিস ইয়াবাসহ সেনা সদস্যকে আটকের ঘটনায় পুরো দেশব্যাপী তোলপাড়ের সৃষ্টি হয়। এরপর চলতি বছরের ২জানুয়রী হ্নীলা বিওপি ৭০ হাজার ইয়াবা, ৪ জানুয়ারি টেকনাফ বিওপি ১৪ হাজার ৫শ ৯৩ পিস, ৫ জানুয়ারী র‌্যাব-৭এর একটি দল বঙ্গোপসাগরে একটি ট্রলার হতে ৫লাখ পিস ইয়াবাসহ পাচারকারী চক্রের ৮ জনকে আটক করে,৬ জানুয়ারী টেকনাফে বিজিবি জওয়ানেরা পরিত্যক্ত ৭ লাখ ৪০ হাজার পিস ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করে,১২ জানুয়ারী টেকনাফে বিজিবি জওয়ানেরা অভিযান চালিয়ে পরিত্যক্ত অবস্থায় ৯৮ হাজার ৮শ ৯১পিস ইয়াবা বড়ি জব্দ করে,সর্বশেষ ১৩ জানুয়ারী টেকনাফে কোস্টগার্ড সদস্যরা গভীর সাগরে অভিযান চালিয়ে ৪লাখ ২০হাজার ইয়াবা বড়িসহ ট্রলার জব্দ করেছে।

এছাড়া জেলার বিভিন্ন স্থানে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, পুলিশ ও কোস্টগার্ডের অভিযানে মাদক উদ্ধার ও আটকের ঘটনা রয়েছে। কোনো কোনো সময় বড় চালানে কোটি টাকার ইয়াবাসহ পাচারকারী আটক হলেও কতিপয় দালালের মধ্যস্থতায় মোটাংকের বিনিময়ে প্রকৃত অপরাধীরা ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকায় মাদক চোরাকারবারী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা এ সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এটা তৈরি করতে ছোট একটা মেশিন লাগে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ কয়েকটি স্থানে ইয়াবা তৈরির কারখানার সন্ধান পেয়েছে র্যাব-পুলিশ। সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ তৈরিকৃত ইয়াবা, সরঞ্জামাদি জব্দ করা হয়েছে।
স্থানীয় রাজনৈতিক একশ্রেণির নেতাকর্মী এ ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত। তারা পুলিশসহ  স্থানীয় প্রশাসনের একশ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারীকে নিয়মিত মাসোয়ারা দেন। এ অবস্থায় আগামীতে দেশ মেধাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইয়াবার ভয়াবহ আগ্রাসন নিয়ে সরকার যেমন উদ্বিগ্ন, চিন্তিত অভিভাবক মহলও। ইয়াবা পাচারে একশ্রেণির আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা জড়িত থাকায় এটা নিয়ন্ত্রণ অনেকটা দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
র্যাব, পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, ইয়াবা এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। মসজিদে মসজিদে প্রতি জুম্মায় সচেতনতা বাড়াতে পদক্ষেপসহ ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি থাইল্যান্ডের মতো বড় ধরনের ক্রসফায়ারের সিদ্ধান্তই পারে ইয়াবার ছোবল থেকে দেশকে রক্ষা করতে।প্রসঙ্গত, ইয়াবা থেকে রক্ষা পেতে থাইল্যান্ড একসঙ্গে সাড়ে ৪শ’ ক্রসফায়ার দিয়েছিল।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, রাজনৈতিক কমিটমেন্ট ছাড়া ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব না। এই অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের মতে, ইয়াবায় আসক্তের সংখ্যা বর্তমানে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মিয়ানমার থেকে নৌপথে পাচার হয়ে আসছে ইয়াবার বড় বড় চালান। পুলিশ, বিজিবি, র্যাবসহ আইন-শৃংখলা রক্ষা বাহিনী সড়কপথে তত্পরতা বৃদ্ধি করায় ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বড় চালান পাচারের জন্য নৌপথকে নিরাপদ রুট হিসেবে বেছে নিয়েছে। মিয়ানমার সীমান্তে অবস্থিত ইয়াবা কারখানা থেকে চার দফা হাতবদল হয়ে নৌ-পথে এসব ইয়াবার চালান যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন স্থানে।
প্রশাসনের কড়াকড়ির কারণে সাগরপথে মানব পাচার বন্ধ থাকায় ইয়াবা পাচারে জড়িয়ে পড়েছে পাচারকারীরা। নৌ-পথে ইয়াবা পাচারে সহায়তা করছে কিছু ফিশিং ট্রলারের মালিক এবং জেলে।
এক শ্রেণির জেলে মাছ ধরার নামে তা বহন করে। তাদের হাত ধরে  ইয়াবার চালানগুলো কূলে উঠছে। সেখান থেকে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। বোট টু বোট ইয়াবার চালান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে। গভীর সমুদ্রেও ইয়াবা পাচারের হাত বদল হচ্ছে। চট্টগ্রাম বন্দরে জাহাজের মাধ্যমে, কন্টেনিয়ারের মাধ্যমেও ইয়াবা আসছে।
চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ছাড়াও টেকনাফ, খুলনা, বাগেরহাট, বরিশাল, ভোলাসহ দেশের প্রায় সব নৌ-পথ দিয়ে ইয়াবা পাচার হচ্ছে। পার্বত্য অঞ্চলের ২৫ কিলোমিটার বর্ডার অরক্ষিত। এখান থেকে প্রবেশ করে।
কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রাম, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় সড়ক পথে আসতে ১৪টি পয়েন্টে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে উেকাচ দিতে হয়। পণ্যবাহী ট্রাক, কাভার্টভ্যান, কোরিয়া সার্ভিসের মাধ্যমেও ইয়াবা আসছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াবা এখন দেশে উত্পাদিত হচ্ছে। তবে এটায় আসক্তির মাত্রা বেশি। কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জেলখানায় প্রায় ৭০ হাজার আসামি। এর মধ্যে ২৩ হাজার মাদক ব্যবসায় জড়িত আসামি।
জানা গেছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ইয়াবা ব্যবসায় জড়িতদের একটা তালিকা জমা দেওয়া আছে। এক সংসদ সদস্য, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতাসহ প্রায় সব পেশার লোকের নাম ওই তালিকায় উল্লেখ আছে; কিন্তু সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জড়িত থাকায় প্রশাসন এখন এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যারা করবে তারা জড়িত তাই এটা দুঃসাধ্য।

 সূত্র জানায়, মিয়ানমার পরিকল্পিতভাবে ইয়াবা বাংলাদেশে পাচার করছে। নাফ নদীর ওপারেই ইয়াবার কারখানা। তারা ইচ্ছা করলে বন্ধ করতে পারবে; কিন্তু তারা জ্ঞাতসারে এটা করছে।
মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানান, বিভিন্ন সময় মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সঙ্গে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য রোধ ঠেকাতে বৈঠক হয়। বৈঠকে যা কিছু সিদ্ধান্ত হয় শুধু কাগজ-কলমে। কোনো কিছুই বাস্তবায়ন করে না মিয়ানমার। কারণ মিয়ানমারের ইয়াবার বড় মার্কেট বাংলাদেশে।
স্থানীয় প্রশাসন সূত্র জানায়, সাগর ও সড়কপথে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, নয়াপাড়া, সাবরাং, মৌলভীপাড়া, নাজিরপাড়া, জালিয়াপাড়া, নাইট্যংপাড়া, জলিলেরদিয়া, লেদা, আলীখালী, হূলাসহ অন্তত ১১টি পয়েন্ট দিয়ে ইয়াবার চালান বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এসব ইয়াবা তৈরি ও পাচারে আন্তর্জাতিক মাদক ব্যবসায়ী যেমন জড়িত রয়েছে তেমনি বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের গডফাদারও রয়েছে। যারা সীমান্তে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত বিজিবি, কোস্টগার্ড, র্যাব কিংবা পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ইয়াবা পাচার করে আসছে।
কক্সবাজার ও টেকনাফের এক শ্রেণির লবণ ও মাছ চাষিরা ইয়াবা ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছে। এদের মধ্যে কয়েকজন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া লবণ ও মাছ চাষিরা জানায়, লবণ ও মাছের চাষ থেকে ইয়াবা ব্যবসায় অনেক লাভ। এ কারণে তারা এ ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন।
মাদক দ্রব্য অধিদপ্তরের বরিশালের বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক হাফিজুর রহমান বলেন, নৌ-পথ দিয়ে ইয়াবা পাচারের সংবাদ তারা পেয়েছেন। এ কারণে পুলিশসহ সকলকে এলার্ট করে দিয়েছি। তবে এখনো বড় ধরনের চালান ধরা পড়েনি। শুনেছি আসছে, এ কারণে পদক্ষেপ নিচ্ছি। এদিকে কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকেও প্রচুর ইয়াবা ধরা হয়েছে। তাদের কাছেও ম্যাসেজ আসে নৌ-পথে এখন ইয়াবা আসছে। বোট টু বোট হয়ে আসছে।
কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক রিয়াল এডমিরাল এএমএমএম আওরঙ্গজেব চৌধুরী জানান, ইয়াবার ছোবল থেকে দেশ ও সমাজকে বাঁচাতে হলে সমাজে সচেতনতা বাড়াতে হবে। এটা এক ধরনের বিষ। মানুষকে ধীরে ধীরে শেষ করে দিচ্ছে। এই বিষয়ে মসজিদে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সচেতনতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কোস্টগার্ডের পক্ষ থেকে সচেতনতা বাড়ানো হচ্ছে।
র্যাবের পরিচালক মুফতি মাহমুদ বলেন, ইয়াবা নিয়ন্ত্রণ করা খুবই কঠিন। সকলকে এর সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। জনমত ও সচেতনতা বৃদ্ধির কোনো বিকল্প নেই। ডাক্তাররা বলেন, ইয়াবা খায় না এমন পেশার মানুষ পায়নি।
প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানি অধ্যাপক ডা. মোহিত কামাল বলেন- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে সকল পেশার মানুষ এখন ইয়াবায় আসক্ত। তারা বিক্রিও করে। এমন কোনো পেশার লোক নেই খায় না। এতে আমরা উদ্বিগ্ন, এটা নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। মেধাবীরা ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে।
তার এক গবেষণার চিত্র তুলে ধরে মোহিত কামাল বলেন, হিরোইন, ফেনসিডিলে এখন আসক্ত ২৮ শতাংশ। আর ইয়াবায় আসক্তির হার ৫৮ শতাংশ। অনেকে অন্যান্য ব্যবসা বাণিজ্য ছেড়ে ইয়াবায় জড়িয়ে পড়ছে। এটা করতে গিয়ে যে পরিবার সমাজ ধ্বংস করে দিচ্ছে সেটা তারা বুঝছে না। তাই ইয়াবা নিয়ন্ত্রণে আনতে সচেতনতা বৃদ্ধির ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুর রহমান জানান, ইয়াবা থেকে দেশকে রক্ষা করতে ব্যাপক সচেতনতা প্রয়োজন। একসময় এইডস ব্যাপক হারে বেড়েছিল। কিন্তু সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এখন আর এইডস রোগী খুঁজে পাওয়া যায় না। সর্বস্তরের মানুষের মাঝে ইয়াবার বিরুদ্ধে এমন সচেতনতা বাড়ানো দরকার বলে তিনি জানান।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, লাভজনক ব্যবসায় পরিণত হয়েছে এই ইয়াবা ব্যবসা। মিয়ানমারের ৬০ টাকার এই ট্যাবলেট পাচার হয়ে এসে রাজধানী ঢাকায় বিক্রি হচ্ছে ৩০০-৪০০ টাকা। সরবরাহ কম ও চাহিদা বাড়লে মাঝে মাঝে ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। আর এ কারণে পেশা পরিবর্তন করে মাদক ব্যবসায় ঝুঁকছে অনেকে। এ সুযোগে সিন্ডিকেট হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার কোটি টাকা।
দীর্ঘদিন টেকনাফে চাকরি করেছেন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এমন একজন কর্মকর্তা জানান, টেকনাফের সীমান্তবর্তী এলাকার মাদক পাচারের পয়েন্টগুলোতে সর্বোচ্চ নজরদারি থাকলেও নানা কৌশলে ইয়াবার চালান আসছেই। মাছ ধরার ট্রলারে, জালে বেঁধে সাগরে ভাসতে ভাসতে ইয়াবার চালান আসছে দেশের ভিতর। হালে টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া পর্যন্ত দেশের সর্বত্র মহামারী রূপে ছড়িয়ে পড়েছে নীরব এই ঘাতক।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের এক কর্মকর্তা বলেন, দেশে এই মাদকের চাহিদা বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দিনে চাহিদা বেড়ে ৫০ লাখ থেকে ১ কোটি পিস দাঁড়িয়েছে। এই বিপুল সংখ্যক ইয়াবা প্রতিদিনই বিভিন্ন কৌশলে দেশে ঢুকছে। সেবনকারীরা প্রতি পিস ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে ইয়াবা কিনছেন। সেই হিসাবে প্রতিদিন এই মাদকের পেছনে খরচ করছে তারা পৌনে চারশ’ কোটি টাকা।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (অপারেশন) সৈয়দ তৌফিক উদ্দিন জানান, বর্তমানে ইয়াবার পরিস্থিতি ভয়াবহ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একার পক্ষে সম্ভব না। রাজনৈতিক ঐকমত্যসহ সকল পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে। সর্বস্তরের মানুষের জনসচেতনা বৃদ্ধি করতে হবে। এ ছাড়া কোনো বিকল্প নেই।
র্যাবের লিগ্যাল এন্ড মিডিয়া উইং এর পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান একই অভিমত ব্যক্ত করে বলেন, ইয়াবার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে। কোনো এক বাহিনীর পক্ষে এটা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব না। গ্রেফতারকৃতরা সহজে আদালত থেকে বের হয়ে আবার ওই পেশার জড়িয়ে পড়েন। দেশে যৌন নির্যাতন, ছিনতাইসহ এলাকাভিত্তিক অপরাধ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ ইয়াবা। পুলিশের পক্ষ থেকেও একই মত ব্যক্ত করা হয়েছে।
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার ড. এ এইস এম ইকবাল হোসেন জানান, সীমান্তবর্তী এ জেলার ভৌগলিক দিক দিয়ে পাচারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সাগর পথে আর পাহাড় পথে এখন থেকে সহজেই অন্যত্র চলে যাওয়া যায়। এছাড়া সীমান্ত সীমানায় দেয়াল কিংবা কাঁটাতারের বেড়া নেই। পাশাপাশি এখানকার জনগণ সচেতন নয়। সচেতনতা তৈরি করতে পারলে পাচার অনেকাংশে কমানো সম্ভব হবে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ইয়াবাসহ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে কঠোর অবস্থানে সরকার। মিয়ানমার এ বিষয় কঠোর হলে ইয়াবা সহজে নিয়ন্ত্রণে চলে আসতো। ইয়াবাসহ মাদক নিয়ে কোন ছাড় নেই বলে তিনি জানান।
404 ভিউ

Posted ১২:৫৪ পূর্বাহ্ণ | রবিবার, ১৪ জানুয়ারি ২০১৮

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com