শুক্রবার ২৮শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ১৪ই আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

শুক্রবার ২৮শে জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দুর্নীতি করে সবই আছে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের

শনিবার, ২২ জুন ২০২৪
7 ভিউ
দুর্নীতি করে সবই আছে রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউরের

কক্সবাংলা ডটকম(২২ জুন) :: ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাতের ১৫ লাখ টাকার ‘ছাগল কেনা’ ইস্যুতে তোপের মুখে পড়েছেন রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান। ইফাতের ছাগল কেনার বিষয়টি প্রথমে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। এরপরই ‘টক অব দ্য কান্ট্রিতে’ পরিণত হয়। শুধু তাই নয়, বেরিয়ে আসে এই রাজস্ব কর্মকর্তা ও তার পরিবারের অঢেল সম্পদের চিত্র।

তবে চারিদিকে তাদের নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা চললেও তারা এখন কোথায় অবস্থান করছে কেউ বলতে পারছেন না কেউ।

ঈদের দিন বাড়িতে ছিল রঙিন আলোর ঝলকানি। বাড়ির নিচে বাঁশের খুঁটিতে বাঁধা ছিল বেশ কয়েকটি গরু-ছাগল। কোরবানি হয়েছে সব। কিন্তু এক ছাগলকাণ্ডে এখন সবই নিস্তব্ধ। বাসার মূল ফটক বন্ধ, খুলে রাখা হয়েছে নেমপ্লেট। রাজস্ব কর্মকর্তা মতিউর রহমান ও তাঁর ছেলে মুশফিকুর রহমান ইফাত কোথায়– নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউ।

রাজধানীর ধানমন্ডির ৮ নম্বর রোডে ৪১/২ নম্বর ইম্পেরিয়াল সুলতানা ভবনের পাঁচতলায় শুক্রবার গিয়ে জানা যায়, ইফাতের পরিবার সেখানে নেই।

বাড়ির নিরাপত্তাকর্মী জানান, মঙ্গলবার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর আর ফিরে আসেননি।

যে বাড়িতে ইফাতের জন্ম, সেই বাড়ি ছেড়ে তিনি কোথায় গেছেন তা জানা নেই। বাড়ির সামনে সাংবাদিকরা অবস্থান করায় এক পর্যায়ে ওপর থেকে মলমূত্র ছুড়ে মারা হয়। এই ভবনের পাঁচ তলার পুরো ফ্লোর মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতারের নামে কিনে দামি আসবাব দিয়ে সাজানো হয়েছে বলে জানা যায়।

একটি সূত্র জানায়, ইফাতের ছাগলকাণ্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ধানমন্ডির বাসা ছেড়ে কাকরাইলে নিজেদের আরেকটি ফ্ল্যাটে গিয়ে ওঠেন ইফাত, তাঁর মা শাম্মী আখতার ও ছোট ভাই। শুক্রবার দুপুরে কাকরাইলে স্কাইভিউ মমতা সেন্টার নামে ওই ভবনে গিয়ে জানা যায়, ভবনের ৭/ডি নম্বর ফ্ল্যাটটি তাদের। ফ্ল্যাটের নিরাপত্তাকর্মী রবিউল ইসলাম জানান, বুধবার গভীর রাত পর্যন্ত তারা এ বাসায় ছিলেন। এই ফ্ল্যাটে ইফাত, তাঁর মা ও ছোট ভাই মাঝেমধ্যে থাকেন। সেখানে আসেন মতিউর রহমান।

বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ৭/এ নম্বর রোডের ৩৮৪ নম্বর বাড়িতে ৫ কাঠা আয়তনের প্লটে তৈরি করা সাততলা ভবনের এক ফ্লোরে বাস করেন মতিউর রহমান ও তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি। এই বাড়িতে মতিউর, তাঁর স্ত্রী ও ছেলের ৫টি গাড়ি রাখা। কিন্তু শুক্রবার এই বাসায় মতিউর রহমানকে পাওয়া যায়নি। মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

একটি সূত্র জানায়, ছাগলকাণ্ডের পর ছেলেকে অস্বীকার করে এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে গা-ঢাকা দিয়েছেন। তবে ইফাত ইতোমধ্যে বিদেশ পাড়ি দিয়েছেন বলে দায়িত্বশীল একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে।

ছাগলকাণ্ড ছাপিয়ে এখন আলোচনায় মতিউরের সম্পদ। একজন সরকারি কর্মকর্তা কীভাবে এত টাকার মালিক হলেন– উঠেছে সেই প্রশ্ন। মতিউরের সম্পদের বিষয়ে পাওয়া গেছে নানা তথ্য। দুর্নীতি দমন কমিশনও (দুদক) মতিউরের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ বিষয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

কে এই মতিউর

তাঁর ডাক নাম পান্নু। স্কুল সা‌র্টি‌ফি‌কে‌টে ম‌তিউর রহমান। বাড়ি ব‌রিশালের মুলাদী উপ‌জেলার বাহাদুরপুর গ্রা‌মে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্স বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স করার পর এমবিএ করেন। ১৯৯০ সালে চাকরি নেন পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনে। ১৯৯৩ সালে ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে কাস্টমসে যোগ দেন এবং ২০১৫ সালে কমিশনার হিসেবে পদোন্নতি পান।

তিনি ব্রাসেলসে বাংলাদেশের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, চট্টগ্রাম কাস্টমসের কমিশনার, ভ্যাট কমিশনারসহ বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট আপিল ট্রাইব্যুনালের (সিইভিটি) প্রেসিডেন্ট। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসে যুগ্ম কমিশনারের দায়িত্বে থাকাকালে শুরু হয় তাঁর উত্থান।

এদিকে মতিউরপুত্র ইফাত মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল থেকে ২০২৩ সালে এসএসসি পাস করে এখন নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থী। মতিউর রহমানের দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আখতার শিবলীর আরও দুই সন্তান রয়েছে। এক মেয়ের নাম ইফতিমা রহমান মাধবী। তিনি বারডেম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী। আর ছোট ছেলে ইরফানের বয়স ৭ বছর। প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকি ছিলেন তিতুমীর কলেজের শিক্ষক।

বর্তমানে তিনি নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তাঁর ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব। আমেরিকায় শিক্ষাজীবন শেষে দেশে ফিরে ব্যবসায় যোগ দিয়েছেন। আর মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা কানাডায় থাকেন বলে জানা গেছে।

মতিউরের অঢেল সম্পদ

অনুসন্ধানে মতিউর রহমানের অঢেল সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। নরসিংদী, ময়মনসিংহের ত্রিশাল ছাড়াও গাজীপুরের পূবাইলে রিসোর্ট, শুটিং স্পট, বাংলো, জমিসহ নামে-বেনামে রয়েছে অনেক জমি ও স্থাপনা। বরিশালেও রয়েছে তাঁর সম্পদ। ঢাকায়ও আছে একাধিক প্লট ও দামি গাড়ি। স্ত্রী, সন্তান ও আত্মীয়স্বজনের নামে সম্পদ গড়েছেন মতিউর।

ঢাকায় মতিউর রহমানের স্ত্রী-সন্তান ও ঘনিষ্ঠদের নামে ২ ডজন বিলাসবহুল ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা যায়। বসুন্ধরার ডি-ব্লকের ৭/এ রোডের ৩৮৪ নম্বর ভবনের মালিক তিনি। সাততলা ভবনের প্রথম, দ্বিতীয় তলায় স্ত্রী লায়লা কানিজকে নিয়ে বাস করেন। গুলশানের সাহাবুদ্দিন পার্কের পাশে ৮৩ নম্বর রোডের ১১ নম্বর প্লটে আনোয়ার ল্যান্ডমার্কের বেগ পার্ক ভিউতে রয়েছে ৪টি ফ্ল্যাট। কাকরাইলে একটি ফ্ল্যাট রয়েছে ছোট স্ত্রীর নামে।

এ ছাড়া ধানমন্ডি ২৭ নম্বরে একাধিক ফ্ল্যাটের খোঁজ পাওয়া গেছে। বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ডেভেলপার কোম্পানি শান্তা ডেভেলপারের করা বিভিন্ন ভবনে তাঁর ৮টি ফ্ল্যাট রয়েছে বলে জানা গেছে। এসব ফ্ল্যাট প্রথম স্ত্রীর সন্তান ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা ও ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে কেনা হয়েছে।

টঙ্গীতে ৪০ হাজার বর্গফুটের এসকে ট্রিমস নামে ব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং ও অ্যাকসেসরিজ কারখানা আছে তাঁর। যদিও কাগজ-কলমে কারখানার মালিক তাঁর ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদার। টঙ্গী প‌শ্চিম থানাধীন সাতাইশ তিলারগা‌তি এলাকায় এস‌কে ট্রিমস কারখানাটিতে স্কুল ব‌্যাগ তৈ‌রি করা হয়। নিরাপত্তাকর্মী মা‌লেক মিয়া জানান, কারখানার মা‌লি‌কের নাম তিনি জানেন না, তবে এম‌ডির নাম কাইয়ুম হাওলাদার।

নরসিংদীর রায়পুরায় ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট রয়েছে মতিউরের। এসব রিসোর্টের মালিকানায় আছে তাঁর ছেলে ও মেয়ে। ময়মনসিংহের ভালুকার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ঝালপাজা মৌজায় একটি শিল্পগোষ্ঠীর সঙ্গে তাঁর আছে গ্লোবাল শুজ লিমিটেড নামে জুতার ফ্যাক্টরি। এখানে প্রায় ৩০০ বিঘা জমিজুড়ে রয়েছে গ্লোবাল শুজ লিমিটেড কারখানা, বাগানবাড়ি, দেশি-বিদেশি ফলের বাগান ও ফসলি জমি। জুতার ফ্যাক্টরিতে প্রায় ৪০০ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এ ফ্যাক্টরির উৎপাদিত জুতা রপ্তানি হয় বিভিন্ন দেশে।

কারখানার দায়িত্বে থাকা নিরাপত্তা কর্মীরা জানান, মাঝে মাঝে ফ্যাক্টরি পরিদর্শনে আসেন এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান। সকালে এসে বিকেলে চলে যান। ভালুকা উপজেলার হবিরবাড়ি ইউনিয়নের ঝালপাজা চেঁচ্চার মোড় থেকে বাম দিকে কিছুটা গেলেই দেখা মেলে মতিউর রহমানের বিশাল জুতার কারখানা। ভালুকা উপজেলা বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক মোর্শেদ আলম ওই জুতার কারখানা ও জমি দেখাশোনা করেন।

স্থানীয় বাজারদরে ওই ৩০০ বিঘা জমির দাম প্রায় ১০০ কোটি টাকা। শুধু ভালুকা নয়, গাজীপুরের পূবাইলেও রয়েছে মতিউর রহমানের বিশাল সাম্রাজ্য। পূবাইলের খিলগাঁওয়ের টঙ্গী-ঘোড়াশাল সড়কের দক্ষিণ পাশে বিশাল এলাকাজুড়ে গড়ে তুলেছেন ‘আপন ভুবন’ পিকনিক অ্যান্ড শুটিং স্পট। এই স্পটের তত্ত্বাবধায়ক মো. মাসুদ জানান, জমি লিজ ও বার্ষিক ভাড়ায় নিয়ে ২০১৮ সালের দিকে স্পটটি চালু করা হয়। রিসোর্টটি প্রায় ২৫ বিঘা জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত।

নিজ এলাকা মুলাদী উপজেলায় বাড়িঘর ছাড়াও তাঁর নামে প্রায় ১ হাজার ৫০০ বিঘা জমি রয়েছে। নরসিংদীর মরজালে তাঁর স্ত্রী উপজেলা চেয়ারম্যান লায়লা কানিজ লাকির নামে ১০০ বিঘা জমির ওপর রয়েছে ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট। তাঁর মেয়ে ফারজানা ঈপ্সিতার নামে মরজাল বাসস্ট্যান্ড ও আশপাশ এলাকায় ১০ বিঘা জমি রয়েছে। এ ছাড়া ছেলে তৌফিকুর রহমান অর্ণব ও মেয়ে ঈপ্সিতার নামে ৫০ বিঘা জমি রয়েছে। নাটোরের সিংড়ায় ২০ বিঘা জমি রয়েছে। স্ত্রী লায়লা কানিজ লাকির নামে নরসিংদীর রায়পুরার মরজালে ৪ বিঘা জমির ওপর রয়েছে অট্টালিকা।

এ ছাড়া গাজীপুর সদর, খিলগাঁওসহ বিভিন্ন এলাকায় ৬০ শতাংশ জমি আছে। সাভার থানার বিলামালিয়া মৌজায় ১২ দশমিক ৫৮ শতক জমি রয়েছে। লায়লা কানিজের নামে সাভার থানার বিলামালিয়ায় ১৪ দশমিক ০৩ শতাংশ জমি রয়েছে মতিউরের।

এনবিআর কর্মকর্তা মতিউরের ছেলে ইফাত পার্ল কালারের প্রাডো মডেলের যে গাড়ি (ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৫-৯৩২৭) হাঁকিয়ে বেড়ান, তার মালিকানা এসকে ট্রিম অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে। এটি গার্মেন্ট সরঞ্জাম তৈরি ও সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। টঙ্গীতে এ প্রতিষ্ঠানের স্পন্সর ডিরেক্টর হিসেবে মতিউর রহমানের ভাই এমএ কাইয়ুম হাওলাদারের নাম পাওয়া যায়।

প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, ১৪ দশমিক ৯৯ শতাংশ শেয়ারের মালিক তিনি। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালকও তিনি। আবার প্রাডো গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নথিতে এসকে ট্রিম ইন্ডাস্ট্রিজের ঠিকানা উল্লেখ করা হয়েছে নিকেতনের ই-ব্লক, ৮ নম্বর রোডের ৩৪ ও ৩৬ নম্বর প্লটে অবস্থিত মুন আইল্যান্ড নামক ভবনের স্যুট নম্বর ৮। ইফাত ও তাঁর মা শাম্মী আখতার প্রিমিও মডেলের (ঢাকা মেট্রো-গ ৩২-৬২৩৯) যে গাড়ি ব্যবহার করেন, সেটির মালিকানা গ্লোবাল ম্যাক্স প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের নামে।

নিকেতনের একই ঠিকানা ব্যবহার করা হয়েছে। গতকাল সেখানে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের সামনে সাইনবোর্ডে লেখা ওয়ান্ডার পার্ক অ্যান্ড ইকো রিসোর্ট। সাইট অফিসের ঠিকানা– মারজাল, রায়পুরা, নরসিংদী। এ রিসোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবুল খায়ের মানিক এবং পরিচালক মতিউর রহমানের প্রথম স্ত্রীর ছেলে তৌফিকুর রহমান ও মেয়ে ফারজানা রহমান।

মতিউর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের গাড়ি চালানোর জন্য পাঁচজন চালক আছেন বলে জানা যায়। প্রাডো, বিএমডব্লিউ, রেঞ্জ রোভারসহ বিলাসবহুল ৮ থেকে ১০টি গাড়ি আছে তাদের। তবে প্রায় সব গাড়ির মালিকানা তাদের বিভিন্ন কোম্পানির নামে। এ ছাড়া তাঁর মেয়ের ল্যাম্বারগিনি নামে বিলাসবহুল গাড়ি ব্যবহারের ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে, যার দাম প্রায় ৪ লাখ কানাডিয়ান ডলার, বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৪ কোটি টাকা।

শেয়ার কারসাজিতে শত শত কোটি টাকা লুট

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে হাজার কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তাদের একজন মতিউর রহমান। ঘুষ এবং শেয়ার ব্যবসা উভয় প্রক্রিয়ায় অঢেল টাকা কামাই করেছেন তিনি।

এখন পর্যন্ত শুধু প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় ২০ কোম্পানিতে নিজ নাম ছাড়াও স্ত্রী, ছেলেমেয়ে, বোন হাওয়া নূরসহ কয়েকজন নিকটাত্মীয় এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট কোম্পানির নামে ২০১০ সাল থেকে গত বছর পর্যন্ত শেয়ার নেওয়ার তথ্য মিলেছে।

অনুসন্ধান এবং শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি অনুমোদিত আইপিও প্রসপেক্টাস থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।

মতিউর নিজের ও আত্মীয়স্বজনের নামে যে পরিমাণ প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন, অভিহিত বা প্রকৃত মূল্য হিসাবে এসব শেয়ারের দাম অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা। এর দু-একটি বাদে সব কোম্পানি আগেই শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

তালিকাভুক্তির পর প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় নেওয়া এসব শেয়ার উচ্চ মূল্যে বিক্রি করে কয়েকশ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন মতিউর রহমান।

প্রাথমিক গণপ্রস্তাব বা আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ার বিক্রি করে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে অধিকাংশ কোম্পানি ব্যক্তিগত পর্যায়ে ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছে শেয়ার বিক্রি করে আগেই মূলধন বাড়িয়ে নেয়। এই প্রক্রিয়ায় বিক্রি করা শেয়ার প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার হিসেবে পরিচিত।

সেকেন্ডারি শেয়ারবাজারে শেয়ার কেনাবেচায় লাভ বা ক্ষতি উভয় সম্ভাবনা থাকলেও আইপিওতে আসা শেয়ারের দাম শুরুতেই অনেক গুণ মূল্যে কেনাবেচা হয়।

অর্থাৎ, প্লেসমেন্ট শেয়ার কেনা মানেই বিপুল মুনাফা। এ শেয়ার কিনতে অনেক চাহিদা থাকায় সবাই পান না। কেবল সংঘবদ্ধ প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবসার চক্র ও প্রভাবশালীদের ভাগ্যে এমন শেয়ার জোটে।

বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, মতিউর প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় যেসব কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন, সেগুলো হলো– এক্‌মি পেসটিসাইডস (৩৮ লাখ শেয়ার), অনিক ট্রিমস (৫৩.১৯ লাখ), অ্যাসোসিয়েটেড অক্সিজেন (১০ লাখ), বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার (৭৫ হাজার), সিএনএটেক্স (১০.৩০ লাখ), ডমিনেজ স্টিল (১৫.৮০ লাখ), ই-জেনারেশন (৫০ হাজার), ফরচুন সুজ (৪৩.১০ লাখ), কাট্টলী টেক্সটাইল (২১ লাখ), ল্যুবরেফ (৮ লাখ), মামুন এগ্রো (৩৭.৮৭ লাখ), এমএল ডাইং (১৬ লাখ), রিং শাইন (১০ লাখ), এসকে ট্রিমস (৯০ লাখ), টেকনো ড্রাগস (১.৫০ লাখ), ওয়েব কোস্টস (১৩.৯৭ লাখ) শেয়ার। প্যাসিফিক ডেনিম এবং সিলভা ফার্মারও কিছু শেয়ার আছে। এর মধ্যে এসকে ট্রিমস কোম্পানি নিজেই গড়েছেন মতিউর।

তবে এর বাইরেও তাঁর নামে  আরও শেয়ার থাকতে পারে, যেগুলোর সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি সমকালের অনুসন্ধানে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শেয়ারবাজার সংশ্লিষ্ট দুটি সূত্র জানিয়েছে, মতিউর এসব শেয়ারের কতটা টাকার বিনিময়ে কিনেছেন, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় যেসব শেয়ার তিনি পেয়েছেন, তার অনেকগুলোর বিরুদ্ধে আইপিও প্রক্রিয়ায় শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার আগে আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি করে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর অভিযোগ আছে। আর্থিক প্রতিবেদনে জালিয়াতি ঢাকতে এনবিআরে কর ও ভ্যাট দেওয়ার নথিও জাল করার প্রয়োজন পড়ে।

যারা জাল-জালিয়াতিতে পূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন তৈরি করেন এবং যেসব কর্মকর্তা এ কাজে সহায়তা করেন, তাদের অধিকাংশই ঘুষের পরিবর্তে শেয়ার নেন। এতে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির মালিকপক্ষের নগদে অনেক টাকা বেচে যায়।

আবার কোনো বিনিয়োগ ছাড়াই ভুয়া শেয়ার নিয়ে বিপুল অঙ্কের অর্থ শেয়ারবাজার থেকে হাতিয়ে নেন সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা। মতিউরের বিরুদ্ধেও এমন অভিযোগ আছে।

এমন অভিযোগের সত্যতাও মিলেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির এক তদন্ত এবং অডিট প্রতিষ্ঠান হুদা ভাসিকে দিয়ে করানো স্পেশাল অডিট রিপোর্টে। ২০১৯ সালে শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া রিং শাইন টেক্সটাইলের পরিশোধিত মূলধন আইপিওর আগে জাল-জালিয়াতি করে ৯ দশমিক ৯৫ কোটি টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৮৫ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়।

২৭৫ কোটি টাকার মূলধন বাড়ানো হলেও কোম্পানিটির অ্যাকাউন্টে একটি টাকাও জমা হয়নি। এভাবে সাড়ে ২৭ কোটি শেয়ার কোম্পানিটির উদ্যোক্তা এবং ফার গ্রুপের চেয়ারম্যান আব্দুল কাদের ফারুকরা নিয়েছেন।

এই জালিয়াতিতে যারা সহায়তা করেছেন, তারাও বিনা মূল্যে শেয়ার পেয়েছেন। এই রিং শাইন টেক্সটাইল কোম্পানির ১০ লাখ শেয়ার নিয়েছেন মতিউর। এর মধ্যে নিজের নামে আড়াই লাখ, মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে আড়াই লাখ এবং ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের নামে ৫ লাখ শেয়ার নিয়েছেন।

এমন ঘটনা বাংলাদেশের শেয়ারবাজারে ‘ওপেন সিক্রেট’ বলে জানান শেয়ারবাজার বিশ্লেষক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং অ্যান্ড ইনফরমেশন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. আল-আমীন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা মতিউর রহমান একজন বড় প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবসায়ী, এটা শেয়ারবাজার-সংশ্লিষ্ট অনেকেই জানেন।

প্রশ্ন হলো– একজন কর্মকর্তা হয়েও তিনি এত শেয়ার কী করে পেলেন, তিনি কি আদৌ এ শেয়ার টাকা দিয়ে কিনেছেন? নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির তদন্তে এরই মধ্যে প্রমাণিত, তিনি রিং শাইন টেক্সটাইলের যে ১০ লাখ শেয়ার নিয়েছেন, তার অভিহিত মোট মূল্য ১ কোটি টাকা। তবে তার জন্য কোনো টাকা দেননি তিনি। তাহলে তাঁকে কেন এ শেয়ার দেওয়া হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া দরকার।

সূত্র জানায়, এনআরবি ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিক কাজী সাইফুর রহমান এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের মালিকদের একজন মতিউর রহমানকে প্লেসমেন্ট শেয়ার পাইয়ে দিতে কাজ করেছেন। শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টের শেয়ারহোল্ডারদের একজন মতিউরের ছেলে অর্ণব।

মিথ্যা ও জাল-জালিয়াতিপূর্ণ আর্থিক প্রতিবেদন দিয়ে আইপিও অনুমোদন করানো চেষ্টার দায়ে ২০১৩ সালে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি তাঁকে ৫ বছরের জন্য এবং তাঁর মার্চেন্ট ব্যাংককে ১ বছরের জন্য শেয়ারবাজার থেকে নিষিদ্ধ করেছিল।

প্লেসমেন্ট শেয়ার ব্যবসা বিষয়ে ওঠা অভিযোগগুলো বিষয়ে জানতে গতকাল শুক্রবার মতিউরকে দফায় দফায় ফোন এবং এসএমএস করা হয়। তিনি ফোনও রিসিভি করেননি বা ফিরতি এসএমএস পাঠিয়ে কোনো উত্তর দেননি।

নিজ নামে প্লেসমেন্ট শেয়ার

প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় এখন পর্যন্ত মতিউর নিজ নামে ১১টি কোম্পানির শেয়ার নিয়েছেন বলে তথ্য পাওয়া গেছে। এ জন্য আইল্যান্ড, ইমতিয়াজ হোসাইন নামের দুইটি ব্রোকারেজ হাউস এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্ট নামে একটি মার্চেন্ট ব্যাংকে খোলা তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করেছেন।

আইল্যান্ড সিকিউরিটিজে খোলা বিও অ্যাকাউন্টটি হলো- ১২০১৯৬০০৪২২২৩৮০৬, ইমতিয়াজ হোসাইন সিকিউরিটিজে ১২০১৪৮০০৬৪৭১৮৯৮১ এবং শাহজালাল ইক্যুইটি ম্যানেজমেন্টে তাঁর বিও অ্যাকাউন্টটি হলো ১৬০৬০৬০০৪২২২৩৮০৬।

এর মধ্যে ২০২১ সালের অক্টোবরে আইপিওতে আসা একমি পেস্টিসাইডস কোম্পানিতে সর্বাধিক ৩৭ লাখ শেয়ার নেওয়ার তথ্য পাওয়া গেছে। অভিহিত মূল্য বা শেয়ারের প্রকৃত মূল্য বিবেচনায় এ শেয়ারের দাম ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ওই বছরের নভেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে তালিকাভুক্তির মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ১০ টাকা দামের শেয়ারটির দর ৩৭ টাকায় উঠেছিল।

মাঝে কিছুটা উত্থান-পতনের পর ২০২২ সালের মে মাসের শুরুতে ৪৫ টাকা পর্যন্ত দর উঠেছিল। মতিউর যদি ৩০ টাকা দরেও শেয়ারগুলো বিক্রি করে থাকেন, তাহলেও এখান থেকেই তিনি মুনাফা পেয়েছেন ১১ কোটি টাকা।

গত বুধবার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মতিউর নিজেই স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, ফরচুন সুজের মালিক মিজানুর তাঁর বন্ধু। তাঁকে ১০ টাকা দামের শেয়ার ৮ টাকা দরে দিয়েছেন। এই শেয়ার বিক্রি করেই ১৪ কোটি টাকা মুনাফা করেছিলেন।

সমকালের অনুসন্ধানে দেখা যায়, মতিউর শুধু তাঁর নিজের নামে নেওয়া শেয়ার বিক্রি করেই অন্তত ৫০ কোটি টাকা মুনাফা করেছেন।

ইফাতের মায়ের নামে ২৫ কোটি টাকার শেয়ার

মুশফিকুর রহমান ইফাত নামের যে ছেলেকাণ্ডে আলোচনায় মতিউর, সেই ছেলের মায়ের নাম শাম্মী আক্তার (শিবলী)। বিডি ফাইন্যান্স সিকিউরিটিজ নামের ব্রোকারেজ হাউসের ১২০৫১৫০০৪৭১০৩১৬২ নং এবং ইমতিয়াজ হোসাইন নামের ব্রোকারেজ হাউসের ১২০১৪৮০০৬৪৮২৮০৯৭ নং বিও অ্যাকাউন্ট দুটি শাম্মী আক্তারের নামে খোলা হয়েছে।

মতিউর তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী শাম্মী আক্তারের নামে এই দুই বিও অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে যেসব কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার কিনেছেন বা ঘুষ হিসেবে পাওয়া শেয়ার নিয়েছেন, সেগুলো হলো– ফরচুন সুজ (১০ লাখ শেয়ার), কাট্টলী টেক্সটাইল (১০ লাখ), এসকে ট্রিমস (৩৪ লাখ), অনিক ট্রিমস (২৩.১৯ লাখ), ল্যুব-রেফ (২.৫০ লাখ শেয়ার)। এসব শেয়ারের প্রকৃত মূল্য আট কোটি টাকা। তবে প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় স্ত্রীর নামে নেওয়া শেয়ারগুলো মতিউর এরই মধ্যে বিক্রি করে থাকলে অন্তত ২৫ কোটি টাকা আয় করেছেন।

অর্ণবের নামে শত শত কোটি টাকার ব্যবসা

মতিউর নিজের নামে শেয়ার কিনলেও সরাসরি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে বসেননি। কারণ সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যবসা করায় বিধিনিষেধ আছে। এ কারণে বিনিয়োগের নামে তিনি শেয়ার ব্যবসা করলেও পরে ছেলে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকেই  মালিক করে একের পর এক কোম্পানি খুলেছেন। মতিউর এবং তাঁর প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজের সন্তান অর্ণব এবং এ ঘরে আরও রয়েছে মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতা।

গতকাল পর্যন্ত পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, অর্ণবের নামে আইল্যান্ড এবং ইমতিয়াজ হোসাইন নামের দুই ব্রোকারেজ হাউসে খোলা দুটি বিও অ্যাকাউন্টে ৯ কোম্পানির প্লেসমেন্ট শেয়ার নামমাত্র মূল্যে বা কোম্পানিগুলোর আর্থিক প্রতিবেদন জালজালিয়াতিতে সহায়তার বিনিময়ে পাওয়া শেয়ার নিয়েছেন। বিও অ্যাকাউন্ট দুটি হলো- ১২০১৪৮০০৬৪৭৮৬০৩৯ এবং ১২০১৯৬০০৫৮৩৮৪৭৯৪।

মতিউরের ছেলের নামে বহু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। যেমন– ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী আইডব্লিউজি কোম্পানি, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্থাপন সেবা প্রদান ও মালপত্র সরবরাহকারী কোম্পানি, জুতা প্রস্তুতকারী ও ট্রেডিং ব্যবসা, এম পিকনিক ও শুটিং স্পট, ওয়ান্ডার পার্ক, ইকো রিসোর্ট ইত্যাদি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অর্ণব আইপি কমিউনিকেশনস লিমিটেড, এনআরবি টেলিকম লিমিটেড এবং ভারগো কমিউনিকেশন লিমিটেড নামের কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার পরিচালক। এর মধ্যে আইপি কমিউনিকেশনস কোম্পানিটি দেশব্যাপী ইন্টারনেট সেবা প্রদানে বিটিআরসি থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত। এ কোম্পানি সারাদেশে ফাইবার অপটিক, ওয়্যারলেস এবং স্যাটেলাইট প্রযুক্তি ব্যবহার করে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট এবং প্রাইভেট ডাটা কমিউনিকেশন সলিউশন সেবা বিক্রি করে।

মেয়ে ঈপ্সিতার নামে ১৫ কোটি টাকার শেয়ার

মতিউর তাঁর মেয়ে ফারজানা রহমান ঈপ্সিতার নামে বিডি ফাইন্যান্স, আইল্যান্ড এবং ইমতিয়াজ হোসাইন নামের তিন ব্রোকারেজ হাউসে তিনটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্লেসমেন্ট শেয়ার নিয়েছেন। বিও অ্যাকাউন্ট তিনটি হলো– ১২০৫১৫০০৪৭১০৩১৫৪, ১২০১৯৬০০৪৭১০৩১৫৪ এবং ১২০১৪৮০০৬৪৭১৮৮৭২। প্রাইভেট প্লেসমেন্ট প্রক্রিয়ায় আট কোম্পানির ৬৪ লাখ শেয়ার নিয়েছেন মতিউর। অভিহিত মূল্যে এসব শেয়ারের মোট মূল্য ৬ কোটি ১৫ লাখ টাকা।

বোনের নামে ১০ কোটি টাকার শেয়ার

মতিউর তাঁর বোন হাওয়া নূর বেগমের নামে দুটি বিও অ্যাকাউন্ট খুলে প্রাইভেট প্লেসমেন্ট শেয়ার অভিহিত মূল্য ১০ টাকা দরে মোট ৫ কোটি টাকার শেয়ার নিয়েছেন।

অ্যাকাউন্ট দুটি হলো– আইল্যান্ড সিকিউরিটিজের ১২০১৯৬০০৫৪৭৯২৯৭১ নং এবং ইমতিয়াজ হোসাইন সিকিউরিটিজের ১২০১৪৮০০৬৪৭৮৬৫৪২ নং বিও অ্যাকাউন্ট।

স্কুল শিক্ষক বাবাকে বানিয়েছেন ইউপি চেয়ারম্যান

বাহাদুরপুর গ্রামের হাকিম হাওলাদার পরিবারের বাহাদুরি একবার দেখেছে মুলাদীর কাজীরচর ইউনিয়নবাসী। রাজনৈতিক পরিচয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক হাকিম হাওলাদার প্রথমবার চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েই পরাজিত করেন তখনকার শক্তিশালী চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলীকে।

২০০৩ সালের নির্বাচনে ওই ঘটনা উপজেলার রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোড়ন তোলে। ২০ বছর পর এখনও গ্রামবাসীর বিশ্বাস– ছেলের অগাধ টাকার জোরে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হয়েছিলেন বাবা হাকিম। গ্রামে এ পরিবারটি বিএনপিপন্থি হিসেবে পরিচিত।

হাকিম হাওলাদারের ৩ ছেলে ও ৩ মেয়ের মধ্যে বড় মতিউর। বাড়িতে থাকেন শুধু ছোট ছেলে নুরুল হুদা। তাঁর মেজো ভাই যুবদল নেতা কাইয়ুম হাওলাদার ঢাকার ধনাঢ্য ব্যবসায়ী বলে জানেন গ্রামের মানুষ।

শুক্রবার বাহাদুরপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামে বাবার ভিটেয় দুই তলা ভবন করেছেন মতিউর। ২০০৩ সালের নির্বাচনে মতিউরের বাবা হাকিম হাওলাদারের কাছে হেরেছিলেন বর্তমানে মুলাদী উপজেলা ১৪ দলের সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার ইউসুফ আলী।

তখনকার উপজেলা বিএনপি সভাপতি ও বর্তমানে উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুস সাত্তার জানান, হাকিম হাওলাদার বিএনপি প্রার্থী ছিলেন। দলে তাঁর প্রাথমিক সদস্যপদ ছিল। তাঁর মেজো ছেলে ঢাকার ব্যবসায়ী কাইয়ুম হাওলাদার এখনও কাজীরচর ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। হাকিমের আরেক ভাই এবিএম সিদ্দিক হাওলাদার ইউনিয়ন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক। বাড়ির সবাই বিএনপিপন্থি।

হাতে আসা মুলাদী উপজেলা বিএনপির একটি প্যাডে দেখা গেছে, ২০১০ সালের ৬ জুন গঠিত কাজীরচর ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির তৃতীয় যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন মতিউরের ভাই কাইয়ুম। ওই কমিটি এখনও বহাল বলে জানা গেছে।

মতিউরের আপন চাচাতো ভাই আবদুল্লাহ হাওলাদার ও মাসুম হাওলাদার ঢাকায় থাকেন। ঈদ করতে বাড়ি এসেছেন। একই শহরে থাকলেও মতিউরের সঙ্গে তেমন যোগাযোগ নেই বলে জানান।

মাসুম জানান, মতিউরের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ দেখা হয় ২৭ বছর আগে ১৯৯৭ সালে। আবদুল্লাহ জানান, ২০১৮ সালে পিতা হাকিম হাওলাদারের মৃত্যুতে বাড়ি এলে মতিউরের সঙ্গে তাঁর সর্বশেষ দেখা হয়।

7 ভিউ

Posted ৫:১১ অপরাহ্ণ | শনিবার, ২২ জুন ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com