মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ২৪শে বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ৭ই মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের অর্থনীতিতে মন্দার ঢেউ

সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭
361 ভিউ
দেশের অর্থনীতিতে মন্দার ঢেউ

কক্সবাংলা ডটকম(২৬ নভেম্বর) :: দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে এখন মন্দার ঢেউ। বৈদেশিক মুদ্রার আয় বাড়ার চেয়ে ব্যয় হচ্ছে বেশি। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স আয়ে নিম্ন প্রবৃদ্ধি, আমদানি ব্যয়ে উচ্চ প্রবৃদ্ধি। এ অবস্থা বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবস্থাপনাকে চাপে ফেলেছে। কমে যাচ্ছে টাকার মান। মূল্যস্ফীতির হারের ঊর্ধ্বগতি মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে ফেলছে।

অব্যাহতভাবে বিনিয়োগে মন্দার কারণে নতুন কর্মসংস্থানের গতি হয়ে পড়েছে মন্থর। শেয়ারবাজারে আস্থাহীনতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চলছে পণ্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতি। কিছু সূচক ভালো দেখালেও অর্থনীতির বাস্তবতার সঙ্গে মিলছে না। এসব জনজীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে।

এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষ। সম্প্রতি পণ্যমূল্য যেভাবে বেড়েছে, সে তুলনায় মূল্যস্ফীতির হার বাড়েনি। ফলে সংশয় দেখা দিয়েছে মূল্যস্ফীতির হার হিসাব কষার পদ্ধতি নিয়ে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শক্ত অবস্থানে থাকলেও ডলারের চাহিদা সামান্য বাড়লেই টাকার মান দ্রুত পড়তে থাকে।

উচ্চ রিজার্ভ দিয়েও বাংলাদেশ ব্যাংক তা সামাল দিতে পারে না। উন্নয়ন প্রকল্পে টাকা ব্যয় হচ্ছে; কিন্তু সুফল পাচ্ছে না মানুষ। প্রকল্প বাস্তবায়ন বাড়লেও সরকারের ঋণের অঙ্ক না বেড়ে আগের ঋণ শোধ হচ্ছে। বাস্তবে উন্নয়ন প্রকল্পে খরচ বাড়লে সরকারের ঋণের অঙ্ক বাড়ার কথা। ফলে তথ্য-উপাত্ত ইতিবাচক বার্তা দিলেও বাস্তব বলছে ভিন্ন কথা।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতির সূচকগুলোয় তালগোল পেকে গেছে। একটির সঙ্গে আরেকটি মিলছে না। গলদ বের করে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। তা না হলে যে কোনো দিক দিয়ে বিষফোঁড়া হয়ে বের হবে। তখন সামাল দেওয়া সম্ভব হবে না।

তিনি আরও বলেন, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানি বাড়ছে। এর ইতিবাচক প্রভাব নেই শিল্প খাতে। এর মাধ্যমে টাকা পাচার হচ্ছে কিনা তা দেখা দরকার। অর্থনীতি থেকে যে টাকা পাচার হয়ে বাইরে চলে যাচ্ছে, তা আঁচ করা যাচ্ছে। বিভিন্ন সূচকের সমন্বয়হীনতাই এর প্রমাণ।

গত অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে রপ্তানি আয় বেড়েছিল ৬.৫২ শতাংশ। চলতি অর্থবছরের একই সময়ে বেড়েছে ৭.০৩ শতাংশ। গত অর্থবছরের তুলনায় রপ্তানি আয় বাড়লে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে আয়ের হার কমে গেছে। এর মধ্যে কাঁচাপাট রপ্তানিতে ৩৫ শতাংশ, চামড়া খাতে ৩১ শতাংশ এবং প্রকৌশল পণ্যে ২২ শতাংশ কমেছে। রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ তৈরি পোশাকশিল্পের ওপর নির্ভরশীল। পোশাক রপ্তানি বাড়ার কারণে অন্য খাতে কমলেও মোট রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে না

। তবে এক পণ্যের ওপর রপ্তানি আয় নির্ভরশীল হওয়ায় খাতটি ঝুঁকিতে আছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে আমদানি ব্যয় বেড়েছে ২৮.৩৮ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময় এ খাতে ব্যয় বেড়েছিল মাত্র ৮.৪৫ শতাংশ। ওই সময় প্রায় ২০ শতাংশ বেড়েছে আমদানি ব্যয়।

অথচ গত অর্থবছরের আমদানি ব্যয় বেড়েছিল ৯ শতাংশ। সবচেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হচ্ছে চাল ও গম আমদানিতে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে চাল ও গম আমদানির জন্য এলসি খোলা বেড়েছে ২৫৬ শতাংশ এবং আমদানি বেড়েছে ১৮৬ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময় এসব পণ্যের এলসি খোলা বেড়েছিল ৩৪ শতাংশ এবং আমদানি কমেছিল ৩৬ শতাংশ। গত পুরো অর্থবছরে খাদ্য আমদানি বেড়েছিল ২.৭৮ শতাংশ। শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানির এলসি খোলা সাড়ে ২৭ শতাংশ বাড়লেও আমদানি কমেছে প্রায় ২৯ শতাংশ।

গত অর্থবছরে এলসি খোলা বেড়েছিল ১৮ শতাংশ, আমদানি বেড়েছিল ১২০ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানির এলসি খোলা বেড়েছে ১৬ শতাংশ, আমদানি বেড়েছে সাড়ে ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে এলসি খোলা কমে সাড়ে ৩ শতাংশ এবং আমদানি হয়েছিল সাড়ে ১১ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, খাদ্য আমদানি বাড়ার কারণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় বেড়ে যাবে। শিল্প খাতে যেসব আমদানি বেড়েছে, তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। বলা হচ্ছে, শিল্পের যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানির নামে দেশ থেকে টাকা পাচার হচ্ছে। কেননা কয়েক বছর ধরে শিল্পের যন্ত্রপাতি আমদানি বাড়ছে, কিন্তু নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে না। গত সেপ্টেম্বরে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার ছিল ৬.১২ শতাংশ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ছিল সাড়ে ৫ শতাংশ। এর মধ্যে খাদ্য খাতের মূল্যস্ফীতির হার বেশি বেড়েছে।

বাস্তবে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম যেভাবে বেড়েছে, তার প্রভাব আসছে না মূল্যস্ফীতিতে। ফলে এ হার নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে কৃষি ঋণ বিতরণ বেড়েছে ২৮ শতাংশ, আদায় বেড়েছে ৩১ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময় বিতরণ বেড়েছিল ৯ শতাংশ এবং আদায় বেড়েছিল ১৪ শতাংশ।

একই সঙ্গে গ্রামের অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্পে ঋণের প্রবাহ কমেছে। চলতি অর্থবছরে ঋণ কমেছে ২৭ শতাংশ, আদায় বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণ কমেছিল সাড়ে ৪ শতাংশ এবং আদায় বেড়েছিল ৭ শতাংশের বেশি। কৃষি ঋণের একটি বড় অংশ যাচ্ছে অকৃষি কাজে। ফলে কৃষিঋণ বাড়লেও এর পুরো অংশ কৃষকদের কাছে যাচ্ছে না। কৃষিঋণ আদায়ের নামে উল্টো গ্রাম থেকে টাকা চলে আসছে শহরে।

গত অর্থবছরে রেমিট্যান্সপ্রবাহ কমেছিল সাড়ে ১৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবর সময়ে কমেছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে অক্টোবরে বেড়েছে প্রায় ৭ শতাংশ। ১৫ শতাংশ কমার ওপর ৭ শতাংশ বেড়েছে। প্রকৃত হিসাবে এখনো বৃদ্ধির হার নেতিবাচক। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ এখন নিম্নমুখী। আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের মধ্যে ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে রেকর্ড পরিমাণ হয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৫৩ কোটি ডলার।

চলতি অর্থবছরের একই সময় এ ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮১ কোটি ডলার। বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের তুলনায় ব্যয় বেড়ে গেছে। ফলে চলতি হিসাবে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্টে উদ্বৃত্ত ছিল ৮১ কোটি ডলার। চলতি অর্থবছরের ঘাটতি হয়েছে ৪৫ কোটি ডলার। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়লেও তার বেশিরভাগই হয়েছে কোম্পানিগুলোর মুনাফা থেকে। নিট বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বরে বেসরকারি খাতে ঋণপ্রবাহ বেড়েছে মাত্র ৩.২৪ শতাংশ।

গত অর্থবছরের একই সময় বেড়েছিল ১.৩৬ শতাংশ। বেসরকারি ঋণের বড় অংশই খেলাপি ঋণ নবায়নকে নতুন ঋণ দেখানো হয়েছে। ওই সময় নতুন ঋণ তেমন বাড়েনি; বেড়েছে আগের ঋণ। সরকারি খাতে ঋণ গত অর্থবছরের একই সময় কমেছিল ০.৪৯ শতাংশ এবং চলতি অর্থবছরের ওই সময় কমেছে ২.৯৭ শতাংশ। সরকারি ঋণ কমার কারণে উন্নয়নে প্রকল্পে ভাটা পড়েছে। ফলে গ্রামে টাকা যাচ্ছে কম।

এদিকে মুদ্রানীতিতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি ঋণ ৩.৮ শতাংশ এবং বেসরকারি ঋণ ১৬.২ শতাংশ বাড়ানোর কথা।

361 ভিউ

Posted ১:১৯ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ২৭ নভেম্বর ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com