সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৬ই জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

সোমবার ২০শে মে, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশের শীর্ষ খেলাপির বেশিরভাগই সরকারি ব্যাংকের

বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭
437 ভিউ
দেশের শীর্ষ খেলাপির বেশিরভাগই সরকারি ব্যাংকের

কক্সবাংলা ডটকম(১৩ জুলাই) :: সংসদে অর্থমন্ত্রী দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের যে তালিকা প্রকাশ করেছেন, তার বেশিরভাগই সরকারি ব্যাংকের গ্রাহক। বছরের পর বছর চলতে থাকা অনিয়ম ও দুর্নীতি, ঋণ বিতরণে রাজনৈতিক প্রভাব, সুশাসনের অভাব, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ কম থাকাসহ নানা কারণে এসব ব্যাংক ইচ্ছাকৃত খেলাপিদের আশ্রয়স্থলে পরিণত হয়েছে। ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণও বেড়েছে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর কারণে।

গত সোমবার আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে দেশের শীর্ষ ১০০ ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠানের তালিকা প্রকাশ করেন। তালিকা ধরে অন্তত ৮০টি খেলাপি প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে খোঁজ নিয়ে কমপক্ষে ৫২টি প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যাংকের গ্রাহক বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। এর মধ্যে বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান আছে যারা একাধিক সরকারি ব্যাংকে খেলাপি। কয়েকটি প্রতিষ্ঠান সরকারি ব্যাংকের পাশাপাশি বেসরকারি ব্যাংকেও খেলাপি।

আর্থিক খাতের বিশ্লেষক ও ব্যাংকাররা বলছেন, অর্থমন্ত্রী যে তালিকা দিয়েছেন তারা বর্তমানে কাগজে-কলমে খেলাপি। কিন্তু আরও অনেক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা ঋণ পুনঃতফসিল ও পুনর্গঠন এবং আদালতে রিট করে খেলাপি তালিকার বাইরে রয়েছেন। এ ছাড়া ব্যাংকগুলো অনেক প্রতিষ্ঠানের ঋণ অবলোপন করে হিসাবের খাতার বাইরে রেখেছে। এগুলো বিবেচনায় নিলে খেলাপি ঋণের চিত্র আরও ভয়াবহ হবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সরকারি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্ণ ক্ষমতা না থাকা এসব ব্যাংকে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ। এ ছাড়া অদক্ষ ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের পরিচালনা পর্ষদে নিয়োগ, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক অপশক্তির কারণেই শীর্ষ খেলাপির অধিকাংশই সরকারি ব্যাংকে। এ অবস্থা পরিবর্তনের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের হস্তক্ষেপ বন্ধ এবং বাংলাদেশ ব্যাংককে পূর্ণ ক্ষমতা দেওয়ার সুপারিশ করেন তিনি।

জানতে চাইলে সরকারি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যাংক সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ বলেন, শীর্ষ খেলাপিদের একটি অংশ সরকারি ব্যাংকে থাকার বিষয়টি ইতিহাসগত। এসব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের পরিমাণ অন্য ব্যাংকের তুলনায় বেশি থাকায় এমন হয়েছে। তবে খেলাপিদের থেকে ঋণ আদায়ে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া সামাজিকভাবে খেলাপিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার সময় এসেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শীর্ষ খেলাপির তালিকায় থাকা খেলাপি প্রতিষ্ঠান চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের দাদা ব্র্যান্ডের সয়াবিন তেল রিফাইনারি প্রতিষ্ঠান ইলিয়াছ ব্রাদার্স অগ্রণী ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে অর্থ নিয়ে পরিশোধ করছে না। এ প্রতিষ্ঠানটি সরকারি-বেসরকারি ১৫টি ব্যাংক থেকে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। যার প্রায় পুরোটাই খেলাপি। ব্যবসায়ী টিপু সুলতানের মালিকানাধীন টিআর ট্রাভেলসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ঢাকা ট্রেডিং হাউস বিডিবিএল ও কমার্স ব্যাংকের গ্রাহক।

শীর্ষ খেলাপিদের তালিকায় রয়েছে সোনালী ব্যাংকের আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারি হলমার্ক গ্রুপের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম। হলমার্ক গ্রুপ সোনালী ব্যাংক থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। ব্যাংক কর্মকর্তারাও এ কাজে সহযোগিতা করেছেন। এই জালিয়াত প্রতিষ্ঠানের ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। তালিকায় রয়েছে সোনালী ব্যাংকের টিঅ্যান্ড ব্রাদার্স নামের আরেক আলোচিত প্রতিষ্ঠান।

আরেক আলোচিত ঋণ কেলেঙ্কারির হোতা বিসমিল্লাহ গ্রুপ জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। বিসমিল্লাহ গ্রুপের প্রতিষ্ঠান আলফা কম্পোজিট টাওয়েলস জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। জনতা ব্যাংকের আরেক খেলাপি প্রতিষ্ঠান শাহারিশ কম্পোজিট টাওয়েল রয়েছে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায়।

চট্টগ্রামের আগ্রাবাদের মোস্তফা গ্রুপের প্রতিষ্ঠান এম এম ভেজিটেবল অয়েল অগ্রণী, জনতা, বিডিবিএল, কমার্স, জনতা, রূপালী ব্যাংক থেকে কয়েকশ’ কোটি টাকা নিয়ে এখন খেলাপি। আরও কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংকেও এ প্রতিষ্ঠানটি খেলাপি। দীর্ঘদিন ধরে খেলাপি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আলোচিত নাম সালেহ কার্পেট। অগ্রণী, বিডিবিএল, সোনালী ও জনতা ব্যাংকের প্রায় ৩০০ কোটি টাকা আটকা পড়েছে এ প্রতিষ্ঠানের কাছে। বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমানের বন্ধু গিয়াসউদ্দিন আল মামুনের প্রতিষ্ঠান ওয়ান ডেনিমসও জনতা ব্যাংকের গ্রাহক।

ওয়ালমার্ট ফ্যাশন সোনালী ব্যাংকের পৌনে দুইশ’ কোটি টাকার খেলাপি। এমবিএ গার্মেন্টস জনতা ব্যাংক থেকে প্রায় একই পরিমাণ অর্থ নিয়ে খেলাপি। ম্যাক শিপ বিল্ডার্স অগ্রণী ব্যাংকের ১৬০ কোটি টাকার খেলাপি প্রতিষ্ঠান। হিন্দুল ওয়ালি টেক্সটাইল জনতা ব্যাংকের দেড়শ’ কোটি টাকা ফেরত দিচ্ছে না। মুন বাংলাদেশ অগ্রণী ব্যাংকের দেড়শ’ কোটি টাকা নিয়ে এক টাকাও পরিশোধ করেনি। এ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ বিতরণে কোনো ধরনের নিয়ম মানেনি অগ্রণী ব্যাংক। যে কারণে অগ্রণী ব্যাংকের তৎকালীন ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আবদুল হামিদকে অপসারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক।

তালিকায় থাকা অ্যাগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ রূপালী ব্যাংকের খেলাপি। জসিম আহমেদের মালিকানাধীন শফিপুরের ফেয়ার ট্রেড ফেব্রিক্স সোনালী ব্যাংকের দীর্ঘদিনের খেলাপি। রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংকের আলোচিত ঋণখেলাপি প্রতিষ্ঠান টেকনো ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, মা টেক্স, প্রফিউশন টেক্সটাইল, অলটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ, নিউ অটো ডিফাইন ও ডেল্টা সিস্টেম এসেছে শীর্ষ ১০০ খেলাপির তালিকায়। অর্জন কার্পেট অ্যান্ড জুট ওয়েভিং সোনালী, বিডিবিএল, জনতা থেকে ১২৫ কোটি টাকার ঋণ নিয়ে খেলাপি। জাতীয় পার্টি নেতা শওকত চৌধুরীর মালিকানাধীন নীলফামারীর সৈয়দপুরের বিসিক শিল্পনগরীর যমুনা অ্যাগ্রো কেমিক্যালস কমার্স ব্যাংকের খেলাপি।

জাপান বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিংয়ের রূপালী ব্যাংকে ১০০ কোটি টাকার বেশি খেলাপি। বেনেটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজও রূপালী ব্যাংকের খেলাপি গ্রাহক। সৌরবিদ্যুৎ স্থাপনে সরকারি প্রতিষ্ঠান বিআইএফএফএল থেকে ঋণ নিয়ে অন্য খাতে বিনিয়োগ করে আলোচিত প্রতিষ্ঠান হিলফুল ফুজুল সমাজকল্যাণ সংস্থাও এসেছে শীর্ষ খেলাপির তালিকায়। আসবাবপত্র ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান অটবীর কোয়ান্টাম পাওয়ারস সিস্টেমস সরকারি ইডকল থেকে ঋণ নিয়ে খেলাপি। সাইফুল ইসলামের মালিকানাধীন চট্টগ্রামের পটিয়ায় অবস্থিত জাহাজ ও নৌযান নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড অগ্রণী ব্যাংকের খেলাপি।

চট্টগ্রামের নূরজাহান গ্রুপের মালিকানাধীন জেসমিন ভেজিটেবল ও মেরিন ভেজিটেবল অয়েল এবং চট্টগ্রামভিত্তিক আরেক প্রতিষ্ঠান নূরজাহান সুপার অয়েল অগ্রণী, কমার্স ও সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক। খাতুনগঞ্জের জয়নাল আবেদীনের ম্যাক ইন্টারন্যাশনাল ও ম্যাক শিপ বিল্ডার্স অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক।

বিএনপির সাবেক এমপি হারুনুর রশিদ খান মুন্নুর মালিকানাধীন মুন্নু ফেবরিক্স বিডিবিএল, সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক। সোনালী জুট মিলস সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক। চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ী মুজাহের হোসেনের কোম্পানি ইয়াসির এন্টারপ্রাইজ রাষ্ট্রায়ত্ত কয়েকটি ব্যাংকের গ্রাহক। চৌধুরী নিটওয়্যারস জনতা ব্যাংকের গ্রাহক। নিউ রাখী টেক্সটাইলস মিলস সোনালী ব্যাংকের গ্রাহক। লাকি শিপ বিল্ডার্স অগ্রণী ব্যাংকের গ্রাহক। ওয়েল টেক্স বেসিকের গ্রাহক। অনিকা এন্টারপ্রাইজ কৃষি ব্যাংকের গ্রাহক।

শীর্ষ খেলাপির তালিকায় বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহকও রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কমপক্ষে ১৫টি বেসরকারি ব্যাংকের গ্রাহক রয়েছে অর্থমন্ত্রীর দেওয়া তালিকায়। রয়েছে কয়েকটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকও।

437 ভিউ

Posted ৯:৪৭ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ১৩ জুলাই ২০১৭

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com