কক্সবাংলা ডটকম(১৫ অক্টোবর) :: কৃষি ছাড়া দেশের অভ্যন্তরে সব ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে আনার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারি-২০১৩ প্রকল্পের আওতায় ‘স্ট্যাটিস্টিক্যাল বিজনেস রেজিস্টার’ নামে এ তথ্যভাণ্ডার করবে পরিকল্পনা কমিশন।
এতে দেশের অভ্যন্তরে প্রতিটি শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, প্রতিষ্ঠানের আইনগত ভিত্তি, সম্পদের পরিমাণ, ব্যবসা শুরুর তারিখ, বর্তমান অবস্থাসহ সব ধরনের মৌলিক তথ্য সংরক্ষণ করা হবে। আইন করে সব প্রতিষ্ঠানকে তথ্য প্রদানে বাধ্য করে প্রতি বছর এ তথ্যভাণ্ডার হালনাগাদ করা হবে।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয় বলছে, দেশের অভ্যন্তরীণ সম্পদের প্রকৃত তথ্য অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত করতে পুরো আর্থিক কাঠামোকে একটি তথ্যভাণ্ডারের মধ্যে নিয়ে আসতে চায় সরকার। বিদ্যমান অর্থনৈতিক শুমারি ১০-১৫ বছর পর একবার হওয়ায় অর্থনীতির প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায় না। ফলে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনা যথার্থ না হওয়ার পাশাপাশি জিডিপি প্রবৃদ্ধি নির্ণয়েও কিছুটা তথ্য ঘাটতি থাকে। এমতাবস্থায় হালনাগাদ তথ্যের ভিত্তিতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির প্রকৃত চিত্র নির্ধারণে দেশের সব শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ডাটাবেজ করবে সরকার।
এ বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, দেশ স্বাধীনের পর এখন পর্যন্ত মাত্র তিনবার অর্থনৈতিক শুমারি হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রকৃত চিত্র সরকারের হাতে নেই। ব্যক্তিপর্যায়ে ছোট ছোট বিনিয়োগে শহর ও গ্রামীণ অর্থনীতির একটা বড় অংশ সরকারের হিসাবের বাইরে থেকে যায়। ফলে সেগুলো অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত হয় না।
ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পূর্ণ চিত্র সরকারের হাতে না থাকায় উন্নয়ন পরিকল্পনার সুফলও সঠিকভাবে পাওয়া যায় না। এ বিষয়টি মাথায় রেখেই সম্পূর্ণ অর্থনীতিকে একটি কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডারে নিয়ে আসার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পরিসংখ্যান ব্যুরোর মাধ্যমে মাঠপর্যায়ের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। পরবর্তীতে প্রতি বছর স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে তথ্য হালনাগাদ করা হবে।
পরিসংখ্যান ব্যুরো জানিয়েছে, সর্বশেষ ২০১৩ সালে পরিচালিত অর্থনৈতিক শুমারিকে বেঞ্চমার্ক ধরে কেন্দ্রীয় তথ্যভাণ্ডার প্রণয়ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রাথমিকভাবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর নিবন্ধন কার্যালয় (আরজেএসসি), সিটি করপোরেশন, বাংলাদেশ রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ (বেপজা), বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বাবিউক), ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তথ্য নেয়া হবে। এসব প্রতিষ্ঠানের তথ্য একটি আইটি লিংকের মাধ্যমে সরাসরি এ তথ্যভাণ্ডারের সঙ্গে যুক্ত করা হবে।
এর বাইরে বিচ্ছিন্নভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করা প্রতিষ্ঠানগুলোকে মাঠপর্যায় থেকে তালিকাভুক্ত করা হবে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অভিজ্ঞতার আলোকে উন্নত সফটওয়্যার ব্যবহার করবে বিবিএস। সব প্রতিষ্ঠান থেকে একটি সুনির্দিষ্ট প্রশ্নপত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা হবে।
এ বিষয়ে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও স্ট্যাটিস্টিক্যাল বিজনেস রেজিস্টার প্রকল্পের পরিচালক মো. দিলদার হোসেন বলেন, আর্থিক কাঠামোকে একটি সুনির্দিষ্ট ফ্রেমে নিয়ে আসতেই আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিজনেস রেজিস্টার তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে বিবিএস। এটি মূলত দেশের সব শিল্প ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক তথ্যের কেন্দ্রীয় ভাণ্ডার।
এর মাধ্যমে তাত্ক্ষণিকভাবে দেশের শিল্প বা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান-সংক্রান্ত হালনাগাদ তথ্য পাওয়া যাবে, যার ওপর ভিত্তি করে এ-সংক্রান্ত নীতিনির্ধারণ ও পরিকল্পনা প্রণয়ন সহজ হবে। এটি তৈরিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ আন্তর্জাতিক অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো হচ্ছে।
Posted ১:৫৫ পূর্বাহ্ণ | সোমবার, ১৬ অক্টোবর ২০১৭
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta