কক্সবাংলা ডটকম(৩০ সেপ্টেম্বর) :: দিন দিন ইসলামী ব্যাংকিংয়ে আগ্রহ বাড়ছে। দেশে ৫৭টি ব্যাংকের মধ্যে পুরোদমে ইসলামী ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাচ্ছে আটটি ব্যাংক। এ ছাড়া ৯টি প্রচলিত (কনভেনশনাল) ব্যাংকের ১৯টি শাখা এবং ৮টি প্রচলিত ব্যাংকের ২৫টি উইন্ডোর মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকিং চলছে।
এসব ব্যাংক, শাখা এবং উইন্ডোতে মোট আমানতের পরিমাণ এক লাখ ৯৯ হাজার ৪২৫ কোটি টাকা। যা দেশের সব ব্যাংকের মোট আমানতের ১৮ দশমিক ২৮ শতাংশ। ২০১৪ সালে এর পরিমাণ ছিল এক লাখ ৩৩ হাজার ৫৬০ কোটি টাকা। একইভাবে বিনিয়োগের পরিমাণও বাড়ছে।
ইসলামী ব্যাংকিং প্রসার পেলেও দেশে এখন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য পূর্ণাঙ্গ কোন নীতিমালা নেই। সাধারণ ব্যাংকিংয়ের পাশাপাশি এ বিশাল অংশের প্রতিনিধিত্ব করছে ইসলামী ব্যাংক। তাই শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা দাবি করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের জুন শেষে দেশের ব্যাংকগুলোতে এক হাজার ১১২টি ইসলামী ব্যাংকিং শাখা রয়েছে। ২০১৪ সালের জুন শেষে এ পরিমাণ ছিল ৮৮৭টি। অর্থাৎ এ সময়ে বেড়েছে ২২৫টি। বর্তমানে ইসলামী ধারার আটটি ব্যাংকে শাখা রয়েছে এক হাজার ৬৮টি। ইসলামী ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে বর্তমানে বিনিয়োগ হয়েছে এক লাখ ৮৫ হাজার ২৪৫ কোটি টাকা। তিন বছর আগের একই সময়ে যা ছিল এক লাখ ১৩ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা।
এ সময়ে বেড়েছে বিনিয়োগ এবং কমেছে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ। বর্তমানে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজার ৮৮৬ কোটি টাকা। তিন মাস আগে যা ছিল আট হাজার ৩২ কোটি টাকা। আর তিন বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১০ হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা।
এছাড়া বিনিয়োগ/আমানতের অনুপাত তিন বছর আগের চেয়ে বেশ পরিবর্তন হয়েছে। তিন বছর আগে ছিল শূন্য দশমিক ৮৫ শতাংশ আর এখন তা শূন্য দশমিক ৯৩ শতাংশ হয়েছে।
ইসলামিক ধারার ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে দেশে বেশি রেমিট্যান্স আসে। বিশেষ করে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের মাধ্যমে।
জুন মাস শেষে দেখা গেছে, আট হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা এসেছে ইসলামিক ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে। যা গত তিন মাস আগের চেয়ে ৩৩ দশমিক ১৩ শতাংশ বেশি।
ইসলামী ব্যাংকিংয়ের গুরুত্ব অনুধাবন ও কনভেনশনাল ব্যাংকিংয়ের চেয়ে লাভজনক হওয়ায় অনেক ব্যাংকই কনভেনশনাল ব্যাংকিং থেকে শরিয়াহ ভিত্তিক ব্যাংক হওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছে। আর যেসব কনভেনশনাল ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকিং করছে তারা ইসলামী ব্যাংকিংয়ে তাদের জনশক্তি বাড়াচ্ছে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংকিংয়ে মোট জনশক্তি রয়েছে ৩০ হাজার ৩৩৬ জন।
জানা গেছে, ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বা গ্রাহক পর্যায়ে হস্তক্ষেপ-সক্ষমতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যাংকিং অ্যাপ্রোচ এবং ধর্মীয় ও কল্যাণমূলক প্রণোদনার কারণে ইসলামী ব্যাংকগুলো তরুণ-যুবকসহ বিপুলসংখ্যক গ্রাহক আকর্ষণ করতে পারছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, কল্যাণ ও গ্রাহককেন্দ্রিক মডেলের কারণে অনেক ঋণগ্রহীতা ও আমানতকারী ইসলামী ব্যাংকিং পছন্দ করেন।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ইসলামী অর্থায়ন নিয়ে বলা হয়েছে, প্রচলিত ব্যাংকিংয়ের তুলনায় ইসলামী অর্থব্যবস্থা এখনো সামান্য। তবে আস্থা ও ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে এ খাতে মুসলিম বিশ্বের যে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে তাতে এটি অনেক সম্ভাবনাময়।
বাংলাদেশের ৮টি পূর্ণাঙ্গ ইসলামী ব্যাংক হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, ফার্স্ট সিকিউরিটিজ ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক লিমিটেড, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড, এক্সপোর্ট ইম্পোর্ট ব্যাংক অব বাংলাদেশ লিমিটেড (এক্সিম), সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড ও ইউনিয়ন ব্যাংক লিমিটেড।
এক্সিম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী ড. মোহাম্মদ হায়দার আলী মিয়া বলেন, বাস্তবভিত্তিক ব্যাংকিং এবং যথাযথ নিয়ম মেনে ঝুঁকি মোকাবিলা করার কারণে টেকসই ব্যাংকিং হিসেবে ইসলামী ব্যাংকিং প্রতিষ্ঠা পাচ্ছে। আর এরই ধারাবাহিকতায় ইসলামী ব্যাংকগুলোর সাফল্য দেখে এর প্রতি মানুষের আগ্রহ বাড়ছে। এ আগ্রহ শুধু মুসলিমপ্রধান দেশে হচ্ছে তা নয়, অমুসলিমপ্রধান রাষ্ট্রেও ইসলামী ব্যাংক গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। ব্যবসায়িক মুনাফা নয়, সমাজ উন্নয়ন ও মানবতার সেবাই ইসলামী ব্যাংকিংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য বলে জানান তিনি।
সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ইসলামিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেডের চেয়ারম্যান আবুল কাসেম হায়দার বলেন, দেশের অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইসলামী ধারায় বিনিয়োগ করছে। সাধারণ ধারার ব্যাংকগুলোও ইসলামিক উইন্ডো ও শাখা খুলে ইসলামী ব্যাংকিং করছে। তবে এখন পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকিংয়ের পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা নেই। শিগগিরই একটি পূর্ণাঙ্গ নীতিমালা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।