মঙ্গলবার ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৪ঠা আষাঢ়, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

শিরোনাম

মঙ্গলবার ১৮ই জুন, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

শিরোনাম

দেশে কমছে আবাদি জমি ও কৃষক : কমে গেছে চালের উৎপাদন

সোমবার, ২৭ মে ২০২৪
12 ভিউ
দেশে কমছে আবাদি জমি ও কৃষক : কমে গেছে চালের উৎপাদন

কক্সবংলা ডটকম(২৭ মে) ::  ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিতে ২০৩০ সালের মধ্যে দেশে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণে (২০১৫ সালের তুলনায়) নেয়ার লক্ষ্য রয়েছে সরকারের।

এজন্য নানা পরিকল্পনা ও উদ্যোগ নেয়া হলেও উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়।

বরং দেশে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার এখন নেমে এসেছে বার্ষিক জনসংখ্যা বৃদ্ধির হারের নিচে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০২৩’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশে বার্ষিক জনসংখ্যা স্বাভাবিক বৃদ্ধির হার (আরএনআই) ছিল ১ দশমিক ৩৩ শতাংশ, যা আগের বছরে ছিল ১ দশমিক ৪ শতাংশ। এছাড়া আন্তঃশুমারি গড় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ১২ শতাংশ।

আর কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য বিশ্লেষণে উঠে এসেছে, গত তিন অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার ছিল ১ শতাংশের নিচে।

চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধি এ মাত্রায় শ্লথ হয়ে আসার পেছনে বিশেষজ্ঞরা দায়ী করছেন আবাদি জমি হ্রাস ও কৃষিতে নতুন জনশক্তি যুক্ত না হওয়াকে।

এ বিষয়ে তাদের বক্তব্য হলো কৃষি খাতে কাঠামোগত পরিবর্তন ঘটছে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে। আবাদি জমির পরিমাণ কমছে। উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধি ও ধানের কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় কৃষক অন্য ফসলে ঝুঁকছেন।

আবার কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের গতিকে ধীর করে তুলছে ডলারের বিনিময় হারের অস্থিরতা। এ অস্থিরতার কারণে যান্ত্রিকীকরণে উৎপাদন ব্যয় কমার কথা থাকলেও সে সুযোগ নিতে পারছেন না কৃষক। এ অবস্থায় কৃষি ছেড়ে যাচ্ছেন অনেকেই।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশে চালের উৎপাদন হয়েছিল ৩ কোটি ৮৬ লাখ টন। আগের অর্থবছরেও দেশে একই পরিমাণ চাল উৎপাদন হয়েছিল। সে অনুযায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে চালের উৎপাদন প্রবৃদ্ধির হার ছিল শূন্য। এরপর ২০২১-২২ অর্থবছরে খাদ্যশস্যটির মোট উৎপাদন দাঁড়ায় ৩ কোটি ৮৯ লাখ টনে।

প্রবৃদ্ধির হার ছিল দশমিক ৭৮ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মাত্র দশমিক ২৬ শতাংশ বেড়ে চালের উৎপাদন দাঁড়ায় ৩ কোটি ৯০ লাখ টনে। প্রতিবারই দেশে চালের উৎপাদন হয়েছে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কম।

কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণের গতি বাড়ানোর পাশাপাশি ভর্তুকি ও প্রণোদনামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ ছাড়া চালের উৎপাদন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়ানো সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন কৃষি অর্থনীতিবিদ ড. জাহাঙ্গীর আলম খান। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির প্রভাবে যন্ত্রপাতির আমদানি ব্যয় বেড়েছে।

ফলে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের গতি কম। এটি দ্রুত হওয়া উচিত। আবার ধান উৎপাদনের ব্যয়ও বেড়েছে। সেচ ব্যয় বেড়েছে। ৬৫ শতাংশ কৃষক এখনো সেচের জন্য পেট্রলের ওপর নির্ভরশীল। তাই এখানে ভর্তুকি বাড়াতে হবে।’

কৃষিজমি হ্রাস ও তরুণদের কৃষিতে অনাগ্রহের কারণে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী চালের উৎপাদন বাড়ানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. এমএ সাত্তার মন্ডল। এমনকি এর উৎপাদন দ্বিগুণ করার লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়েও সংশয় প্রকাশ করেছেন তিনি।

এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘দেশে প্রতি বছর কৃষিজমি কমছে দশমিক ৫ শতাংশ হারে। আবার কৃষিতে তরুণদের আগ্রহ না থাকায় কৃষকের সংখ্যাও কমছে। এতে চালের উৎপাদন দ্বিগুণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিয়ে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে। যদিও কৃষিতে উন্নত প্রযুক্তি এসেছে। নতুন নতুন জাতও আসছে। আর তরুণ উদ্যোক্তারাও মাছ বা অন্য ফসলের চাষ করছে। তারা রফতানির কথা মাথায় রেখে আলু, ভুট্টা, গম ও টমেটো বা অন্য ফলন চাষ করছে। রবিশস্যের জমিতে তিল বা সরিষা চাষ হচ্ছে।

তাহলে কি আমরা অর্থকরী ফসল রফতানি করে চাল আমদানি করব? হয়তো তরুণরা বাণিজ্যিক কৃষিতে আসবে, তবে তারা ধান চাষে যাবে না। আর প্রান্তিক কৃষক হয়তো খোরপোশ বজায় রাখার জন্য কোনোমতে টিকে থাকবে। ফলে লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধানের উৎপাদন বাড়বে না।’

কৃষি যান্ত্রিকীকরণকে আরো ব্যয়বহুল করে তুলছে ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধি। সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য অনুযায়ী, যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে কৃষিতে উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর পাশাপাশি উৎপাদন ব্যয় অনেকখানিই কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ আমদানিতে ব্যয় বাড়ায় কৃষি যন্ত্রপাতির দামও বেড়েছে। ফলে চাইলেও কৃষকের পক্ষে এসব যন্ত্র কেনা কঠিন হয়ে পড়েছে।

কৃষি যন্ত্রপাতির মূল্যবৃদ্ধি কৃষককে যান্ত্রিকীকরণে অনাগ্রহী করে তুলছে বলে মনে করছেন এসিআই এগ্রিবিজনেস ডিভিশনের প্রেসিডেন্ট ড. এফএইচ আনসারী। তিনি বলেন, ‘ডলারের বিনিময় হার বাড়ায় ধান কাটার একটি হারভেস্টার মেশিনের দাম দাঁড়িয়েছে ৪২ লাখ টাকায়। ভর্তুকি পেলেও একজন কৃষকের পক্ষে ২০ লাখ টাকা জোগাড় করা কঠিন হয়ে পড়ছে। যন্ত্রের মাধ্যমে এক কেজি ধান উৎপাদনে ব্যয় হয় ১৮-২০ টাকা। কিন্তু প্রথাগত পদ্ধতিতে প্রতি কেজি ধানে ব্যয় হয় ৩০ টাকা।

তেমনি এক হেক্টর জমিতে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটালে ব্যয় পড়ে ৩০ হাজার টাকা। কিন্তু ভাড়া করে যন্ত্র ব্যবহার করলে ব্যয় অর্ধেক কমে ১৪ হাজার টাকায় নেমে আসে। আর নিজের মেশিন থাকলে এটা আরো কমে ৬-৭ হাজার টাকায় এসে পড়ে। কিন্তু ধান কাটায় আমরা মাত্র ১৪ শতাংশ ক্ষেত্রে যন্ত্র ব্যবহার করতে পারছি। ধান লাগানোর ক্ষেত্রে যান্ত্রিকীকরণ হয়েছে মাত্র ২ শতাংশ। তাই যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ধানের উৎপাদন ব্যয় কমাতে হলে সারা দেশে কৃষকদের ৮০ শতাংশ হারে ভর্তুকি দেয়া প্রয়োজন। এতে যন্ত্রের ব্যবহার দ্রুত বাড়বে, কমবে উৎপাদন ব্যয়ও।’

২০৩০ সালের মধ্যে ধানের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার জন্য কাজ করছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। ২০২১ সালে মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে ‘‌ডাবলিং রাইস প্রডাক্টিভিটি’ (ডিআরপি) শীর্ষক একটি কৌশলপত্র প্রণয়ন করে প্রতিষ্ঠানটি। এতে ২০৩০ সালের মধ্যে চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ করার মাধ্যমে উৎপাদন ৪ কোটি ৬৯ লাখ টনে নেয়া সম্ভব বলে জানানো হয়।

যদিও বাংলাদেশে একমাত্র চালের উৎপাদন নিয়েই স্বস্তির জায়গা আছে দাবি করছেন ব্রি মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবীর। তিনি বলেন, ‘দেশে একমাত্র চালের উৎপাদনই স্বস্তির অবস্থানে রয়েছে। আলুসহ অন্যান্য ফসলের উৎপাদন কমেছে। তবে আমরা আমাদের লক্ষ্যের দিকেই যাচ্ছি। আশা করছি ২০৩০ সালের আগেই চালের উৎপাদনশীলতা দ্বিগুণ হয়ে যাবে।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, ‘কৃষিতে কাঠামোগত পরিবর্তন আসছে। ধানের সঠিক দাম না পেয়ে কৃষক এখন ফলের চাষ করছে। উত্তরবঙ্গে আমের বাগান বাড়ছে। কোথাও মাল্টার চাষ হচ্ছে। জমিতে পুকুর হচ্ছে। কেউ পোলট্রি ফার্ম করছে। রাস্তার পাশে কৃষি জমিতে অবকাঠামো নির্মাণ হচ্ছে। ফলে জমিও কমছে।

মূল্যস্ফীতির কারণে সেচ ও সারের মতো কৃষি উপকরণগুলোর ব্যয় বেড়েছে। তাই ধানের চাষাবাদ লাভজনক করা না গেলে বর্তমান উৎপাদনশীলতা ধরে রাখাও কঠিন হবে। এজন্য উপকরণের দাম কমাতে হবে। যান্ত্রিকীকরণ বাড়াতে হবে। উন্নত উৎপাদনশীল বীজ উদ্ভাবন করতে হবে।’

12 ভিউ

Posted ৫:০০ অপরাহ্ণ | সোমবার, ২৭ মে ২০২৪

coxbangla.com |

এ বিভাগের সর্বাধিক পঠিত

এ বিভাগের আরও খবর

Editor & Publisher

Chanchal Dash Gupta

Member : coxsbazar press club & coxsbazar journalist union (cbuj)
cell: 01558-310550 or 01736-202922
mail: chanchalcox@gmail.com
Office : coxsbazar press club building(1st floor),shaheed sharanee road,cox’sbazar municipalty
coxsbazar-4700
Bangladesh
মোবাইল অ্যাপস ডাউনলোড করুন
বাংলাদেশের সকল পত্রিকা সাইট
Bangla Newspaper

ABOUT US :

coxbangla.com is a dedicated 24x7 news website which is published 2010 in coxbazar city. coxbangla is the news plus right and true information. Be informed be truthful are the only right way. Because you have the right. So coxbangla always offiers the latest news coxbazar, national and international news on current offers, politics, economic, entertainment, sports, health, science, defence & technology, space, history, lifestyle, tourism, food etc in Bengali.

design and development by : webnewsdesign.com